হ রিৎ ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
শতাব্দী প্রাচীন বাড়িতে
শতাব্দী প্রাচীন বাড়িতে
মাঠের রাত্রির মতো শুয়ে আছে গোপন বিড়াল
কালো পথে এসেছিল
কালো ঘাড় বেয়ে উঠেছিল বসতি প্রদেশে
তবু কেউ দেখেনিকো
পথে পথে পায়ে পায়ে পড়েনিকো দাগ
মরুঝড় থেমে গেলে
ক্ষতে ক্ষতে ফুলে ওঠে রোগের প্রদেশ
শুধু এইটুকুতেই পড়ে ফেলা যায়
কোনো একদিন দুপুরের মাঝে উঠেছিল ঝড়
ঝড় থেকে পেড়ে নেবে জল -----
এই পথে হেঁটেছিল যারা
তারা সব চোখ বুজে নিয়েছিল ভেবে
বিনা রক্তপাতেই বুঝি দেখে নেওয়া যাবে
রক্ত মাংসের ভিন্ন ভিন্ন সংসার
মাটির বুকে যারা কান পেতেছিল
শিশিরপাতের শব্দের মতো মাংসল পায়ের যাতায়াতে
তারা জেনেছিল, কালো কাপড়ের ভেতরের রাজ্যে
ব্যক্তিগত জীবনের স্বৈরাচারী আঁশটে গন্ধের রহস্য
সমতলের নিম্নগতির সকালে
নদীপথ জুড়ে জড়ো হয়ে থাকে
মাংস রক্তের খণ্ড খণ্ড কেলাসিত রূপ
নববধূর ঘোমটার আড়াল থেকে
মুহূর্তের সকালের মতো আকাশের রুগ্ন আলোয়
দেখা যায় শতাব্দী প্রাচীন বাড়ির পাণ্ডুর রূপ।
দুঃখঘর
মাটির যাবতীয় দুঃখঘর আমাদের ব্যর্থতা
সাতসকালে গান গেয়ে যে মাঝি চলে গেছে
আলোর দুয়ার দিয়ে ঝরনা রোদের পাতায় পাতায়
তাকে দেখেনিকো কেউ
দুঃখদুয়ারে যাদের রোজ নামতা মুখস্থ
তারা তার পায়ের শব্দ শুনেছিল
গিঁট খোলা নেই বলে যারা বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে
তারা মাঝরাতে স্বপ্ন দেখেছিল
কুয়াশায় ঢেকেছিল সবগুলো খোড়ো চাল
চাঁদ ফুটো হয়ে জ্যোৎস্নার জল এসে
ধুয়ে দিয়েছিল সবকটি কলাপাতা
ভাতের গন্ধ এসে কড়া নেড়েছিল
ঘুম ঘুম চোখে জেগেছিল যারা
তারা সব দুঃখের আত্মীয় হয়ে কলাপাতায় গল্প লেখে
দুঃখকথা বেশি পড়ে গেলে
পাতার ক্যানভাস জুড়ে শুধু কালো কালো দাগ
বুক পেট জুড়ে হাজার ক্ষত
হাঁড়ি জুড়ে আল্পনা তবু বেড়ে যায় খাওয়া খুব
খেতে খেতে আকাশ ছাদে চাঁদ দেখেছিল যারা
সব গাছ খুলে দিয়ে তারা ভেসে যাবে আলোগান নিয়ে।
সব নদী গাছ
সবুজ দুপুরের পাশ দিয়ে যত নদী বয়ে গেছে
কোনো পান্থশালা থেকে তাদের ডাক আসে নি
বাসস্ট্যান্ড থেকে চেনা পথের বন্ধু
হাতনাড়া দিয়ে ঝড়ের পথে কথা বলে নি
যত উপনদী শাখানদী সব এক একটা গাছ
বাড়ির পাশ দিয়ে এলেও এখন হাতের নাগালের বাইরে
শাসকের ভোঁতা বইয়ে নদীর সংজ্ঞায়
আগামীর সারা মন আর্দ্র হয়ে উঠতে দেখে
পাঠ থেকে নদীনাম উঠে গেছে সব
ভুলে গেল প্রতি পথে জল দিয়ে মুখ দেখেছিল সে
জলের ভুল নামতায় মাটি তো মরুভূমি
নদীপথে ছাড়া বৃষ্টির গান কোথায় ?
এখনও কেউ কেউ জলে জলে কথা বলে
নদীপথে উড়ে যায় সব পাখি
মাটি তার হারিয়েছে ডানা
সব ছেড়ে মাঝরাতে মুখোমুখি হয়েছে শাসক যখন
সব নদী হয়ে গেছে গাছ ।
মাটির স্টপেজে নেমে
মায়ের হাত ধরে হঠাৎ করে
বাস থেকে নেমে পড়তাম মাটির স্টপেজে
একটা গল্পবলা সোজা রাস্তা
হ্যারিকেন জ্বলা চায়ের দোকানটা
মাথায় বসে থাকে দাদুর মতো
একটু এগিয়ে যেতেই কামার কাকা
লোহা পেটাতে পেটাতে মুখ তুলতো
হাতুড়ির নিচে দেখতাম
সাঁড়াশিতে ধরা রাস্তা
পাঠশালা ছড়িয়ে আছে দিগন্ত জুড়ে
মাথা নিচু করে সুর দিয়ে সবাই পড়ছে নামতা
হাত ধরে ধরে হাঁটি
চায়ের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হলে
চাঁদ তারা পথে আলো জ্বালে
কোনো মুখে নেই ঘুমকথা
হাঁটতে হাঁটতেই ঘুম পাড়ায় মা
ঘুমের মধ্যে দেখি খসে গেছে হাত
হাঁটার উৎসবেই খুশি ঝরে পড়ে
প্রায় ত্রিশ বছর পরে
আজ সকালে মায়ের কুলুঙ্গির কৌটো থেকে
বার করেছিলাম হাঁটার গল্প
আবার সাজিয়ে রাখলাম
মাটির স্টপেজে নেমে দিগন্তের সবুজের ওপারে
হারিয়ে যাওয়ার নদী।
মাটির দিনের গল্প
এইমুহূর্তে পৃথিবীর কোনো স্কুলে
মাটির দিনের গল্প হচ্ছে
ঘরের যত আরশোলা মাছি
দমবন্ধের পরিবেশের সমীকরণে
পা মেলাতে কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে
জানলা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
মাটির দিনে বন্যা নামে
আজকের অপলকা পায়ের পৃথিবী
বন্যার জলে গুলে যায়
কেউ একজন হাত তুলতে নদী বাঁক নেয়
দাদুর গল্পের চরিত্ররা
মাটির দিনের গল্পে হেঁটে যায়
অনেকেরই মনে পড়ে যায়
কেউ যেন তাদের গল্পে
এইসব লোকেদের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল
ডাকলেই তারা ফিরে চাইবে
কিন্তু কি হবে তাদের ডাকনাম ------
এসব ভাবতে ভাবতে তারা
আরও অনেকটা এগিয়ে যায়
কেউ কেউ অন্য মুখে
অন্য গল্পের ঘরে ঢুকে পড়ে
আগুন ডাকতে জানে না বলে
পৃথিবীতে অন্ধকার নামে ।
------
2 Comments
খুব ভালো লিখছো হরিৎদা।
ReplyDeleteভালো লাগলো হরিৎ দা
ReplyDelete