য শো ধ রা রা য় চৌ ধু রী
লকডাউন
এইরূপে অসাড়তা প্রাপ্ত হলে অন্ধকার গাঢ়তর হয়
চরাচরে লেগে থাকে অন্তহীন প্রচণ্ড শূন্যতা
এইরূপে অসাড়তা প্রাপ্ত হলে গভীর গ্রীষ্মের দিন জাগে
মনে হয় গভীর শীতের দিন কোনদিকে পৃথক হত না
বরফের ছাল ঝরে পড়েছে চতুর্দিকে - মানুষ চতুষ্পদ হাঁটে
নিচু হয়ে নড়ে চড়ে হামাগুড়ি হাঁটে আর ক্ষুধার্তের মত
এলোমেলো শস্য ঘেঁটে খুঁজে নেয় খাদ্য যত কিছু
এইরূপে অসাড়তা প্রাপ্ত হলে গ্রীষ্মের দুপুরে
হোগলাপাতায় ছাওয়া ছোট ঘর ইগুলু মনে হয়
প্রতিদিন সকালেই ইতস্তত খাদ্য অন্বেষণ
ক্রমশ রোদ্দুর বাড়লে লুকিয়ে ও এড়িয়ে পালানো
ক্রমশ ঘরের মধ্যে ঢুকে যাওয়া ইঁদুরের মত
থাকা এক পারম্পর্যে প্রতিদিন অন্ধকারে সেঁধিয়ে কাতর
এইরূপ অসাড়তা প্রাপ্ত হলে অসাড়তা জানে
এখন তাকেও আর চিনে নিতে পার না সজ্ঞানে
এখন অসাড়ভাবে অসাড়তা পালন করেছি
এখন শীত ও গ্রীষ্ম একইভাবে গা সওয়া হয়েছে।
এখন যেমন আছি
১
এখন যেমন আছি,
সেটা লেখা যায়না এখনই।
এখনকে এখন বলে চেনা যাবে এমনকি এখনই
এই আশা করা খুব ভুল হবে... সুতরাং আমি
খুব দ্রুত লিখে ফেলি আমার নিজস্ব সময়ের
অতীত প্রাচীন আর আলোমেলা ভবিষ্যৎখানি।
এখন যেমন আছি, সকাল ও বিকেলের মধ্যবর্তী স্থানে
সাবানের জল দিয়ে স্নাত করে দিয়েছি সকলই
যাকিছু থাকার মত, ঘড়ি হাঁড়ি বালতি ও কাপড়
দরজাজানালা আর টেবিলের প্লাস্টিক কাভার
সাবানের বুদবুদে ঢেকে যাওয়া প্রতিটি পলক
সে পলক ছেড়ে দিয়ে এবার ঘুমাই যদি নিচু
আজকে ও এখনের ছোট্ট চৌকিতে?
সমুদ্রের কাছাকাছি ফেনা আছে, স্বপ্নে আছে ফেনার আশ্রয়।
২
দল থেকে দলে ছুটে যাচ্ছে ভয়।
লাফিয়ে যাচ্ছে ভয়
কফের দলার মতন।
ভাইরাসের মতন ছোঁয়াচে
গিরগিরে পুঁজ ওগরানো ফোঁড়ার মত বীভৎস
সাদা তথ্য আর বাঁকানো, ঘোরানো, ডাইনির নখের মত
অর্ধসত্য
গ্রুপ থেকে গ্রুপে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে।
যদি অন্ধকার আর কালো বলো তাকে,
পুরোটা বলাই হবে না।
যদি মন্দ আর রক্তাক্ত ভাব তাকে
পুরোটা ভাবাই হবে না
এই বেদনা হাসিতে মেশানো
এই খুন সুড়সুড়ি দিয়ে দিয়ে খুন
এই অত্যাচার ধীর ও অসম্ভব দীর্ঘসূত্রী এক প্রক্রিয়া
বিভীষিকার আমদানিকারিরা
যেভাবে চামড়া তুলে নেয় আর নুন ঘষে দেয়
সেভাবেই ভয় গড়িয়ে যাচ্ছে,
ভয় ঘষে দেওয়া হচ্ছে খারাপ থাকার মধ্যে
ভয় এখন সবচেয়ে দামি পণ্য।
ভয়কে নানাভাবে ভাঙিয়ে বেঁচে আছে সবাই
একজনকে লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আরেকজনের সঙ্গে
এভাবেই ভয় দিয়ে ইঁট তৈরি হয়,
ইঁট বসিয়ে বসিয়ে দেওয়াল তৈরি হয়
দেওয়াল চাপা দিয়ে দিয়ে তৈরি হয়
মস্ত বড় একটা চুপ।
আমাদের এক দিন
সকালবেলাটা ছত্রখান করে দিলে ঘর ময় উড়ে বেড়ানো
খবরের কাগজের মত।
তারপর সারাদিন কী করে ফিরে আসি নিজের কাছে।
সারা সকাল বিষণ্ণ আলোচনা মৃত্যু নিয়ে
বন্ধুদের এখন এই কাজ।
ত্রিশ সেকেন্ডের ভিডিওর দিনকাল
বীভৎস গণপিটুনি
সম্ভাব্য ধর্ষণ
ভেঙে পড়া সেতু
নিবিড় অবিশ্বাস
এই সমস্তকিছুর ভিডিও বার বার শেয়ার করি আমি।
দিবসের আদ্ধেক অংশ ছিঁড়েখুঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে অতন্দ্র সমাজ
বুভুক্ষু সমাজ
তথ্য চেটে খায়, জিভে লেগে থাকা অর্ধসত্য
দাঁতার ফাঁকে আটকানো নাড়িভুঁড়ির মত মিথ্যা
কাঁচা খবর ভক্ষণে অতি অগ্নিমান্দ্য এসেছে যাদের
তারা চাটনির মত চেটে তুলছে ফাজলামি আর ইয়ার্কি
সকালের অনন্ত সম্ভাবনাকে এভাবেই আমি চায়ের কাপের সঙ্গে
ঠকাশ করে সিংকে নামিয়ে রাখি
তারপর বাকি দিনের কাজ শুরু হয়
তেতো, অকথ্য, ভালোবাসাহীন।
কী বিস্ময়! কী বিস্ময়!
ক্রিসমাসের কবিতা
মন একটি বেলুন।
ওপরেই উঠতে চায়।
তবু তাকে নামিয়ে নামিয়ে আনো।
নভেম্বরে নামিয়ে আনলে মেয়েটির পেট্রোলে পোড়া শরীরের গন্ধে।
ডিসেম্বরে নামালে একটা মাত্র প্লাস্টিকের গুলিতেই মরে যাওয়া ১৫ টা লোকের মৃতদেহের শাদা চাদরে।
জনগণ দিন দিন এত অসভ্য হয়েছে।
আপনারাও কম না।
এইসব অকল্যাণের ভেতর স্যাঁতসেঁতে দুঃখ চাপান
ভার চাপান।
বেলুন নীচে নেমে যায়।
মন একটি বেলুন।
রোজ সে ফেসবুকে পোস্ট দিতে চায়।
কখনো খাবার, কখনো বেড়ানো, কখনো বন্ধুরা।
সারা বছরে যতবার বেলুন ওপরে উঠল
তোমরা তালি দিলে
বাকিসময় নির্বান্ধব, হালকা মশলার স্বাদহীন খাবার
দিন্নের পর দিন বাড়িতে বসে ডিপ্রেশন
এইসব দেখলে না
মন একটি বেলুন।
আমাকে সহজে ওঠাতে পারনা আজ
যত ফুঁ দাও
যত আগুন জ্বেলে দাও মনোবাসনায়
যত হাওয়া দিক শীতল উত্তর থেকে
কাঁটাতার ও শূন্যতার আশপাশ থেকে
মন যে উড়ত আগে
সে ত ছিল সহজ এক সাধন।
ক্রিসমাসের দিনগুলোতে সেইসব কথা মনে পড়ে
কেকের গন্ধ আর মোমবাতির ইনোসেন্স
তারপর কবে থেকে যেন ডিসেম্বরের সকালে
ফাঁসি হওয়া সাদ্দাম হুসেনের গলার নলী , দাড়ি না কাটা মুখ
বিষণ্ণ একরাশ সুনামিতে ভেসে যাওয়া মানুষ
জ্যোতি সিংহের সিনেমাফেরত বাসে চাপা আর লোহার রড...
মিশে যেতেই
বেলুনের নিচে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি জানতে পারি
কালোমানুষদের গির্জেতে এখন খ্রীষ্টের গায়ের রং যেহেতু কালো
হারিয়ে যাওয়া ধর্মযুদ্ধের বাজনা থেকে উঠে আসা অত্যাচারের উত্তরে
আমাদেরো বাংলা প্রার্থনাসংগীত গাওয়া প্রয়োজন
ফিরে আসতে হবেই বেলুনে নতুন এক বাতাস ভরে
যে বাতাস অপমানহীন এক পথ থেকে আসবে
তরুণের প্রতিবাদ থেকে আসবে
নির্মোহ তাকানো থেকে আসবে
আমার অপেক্ষা না করার প্রাপ্তবয়স্কতা থেকেও আসবে
-------
3 Comments
শেষের কবিতাটি বেশ সুন্দর। মানুষ আর মানবতা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কবির ভাষায় সেই জ্বলন্ত রূপ ফুটে উঠেছে।
ReplyDeleteঅসাধারণ কবিতা, কবি ভালো থাকু।
ReplyDeleteএই কবির কবিতা আমার প্রাণের আরাম
ReplyDelete