জ্বলদর্চি

তাপস কুমার দত্ত


তা প স কু মা র  দ ত্ত


মৃত্যু যুদ্ধ

সৈনিক সেজে মৃত্যু যুদ্ধে নামি
রক্ত বলছে আত্মীয়তার শ্লোক, 
তোমার যুদ্ধে নীরিহ’র প্রাণহানি
আমার জঠরে প্রাণের মৃত্যু শোক। 

তোমার শক্তি হাওয়ায় উড়ায় ধোঁয়া 
আমার অস্ত্র জলের ধারায় ভাসে,
নীরব ছায়া বিষবৃক্ষে দোলে
 হত্যা তখন রাষ্ট্রের করতলে।

আমার স্বপ্ন লাল ঈগলের চোখে 
ডঙ্কা যখন শঙ্কার পদতলে,
শান্তি সেখানে রাত্রির করে সেবা
লাল সূর্য বিপদের ঢেউ তোলে।

আমার হত্যা তোমার অস্ত্র বলে
তোমার স্বপ্নে কুৎসিত চোরাবালি
লাল রক্তে বীজ বুনছি আমি
শান্তি সেখানে জলের স্রোতে ভাসে।


চৈত্র চোরাবালি  

মেঘের কোলে তােমার নীরবতায় 
ইতি টেনেছি বৃষ্টি ভেজা খাতায়, 
ধূসর স্বপ্নে ফাগুন হাসে হায়
জমছে ব্যথা রাতের তানপুরায়।
এক জীবনের গহনে যত স্পর্শ
লাল মাটিতে আঁচড় কাটে শর্ত,
যন্ত্রণা যত বর্ণ নিয়ে ফেরে
আমার ব্যথা শ্রাবণের ঘরে বদ্ধ।
এক প্রস্থ স্বপ্ন শুধু আলো 
আলাের মাঝে, আলেয়ার দাপাদাপি
সব প্রশ্ন এক হৃদয়ের টানে
দুই চোখে তার স্বপ্নে বধ্যভূমি।
আঁধার নিয়ে ডাংগুলি করি খেলা 
হৃদয়ের মাঝে ঝরছে লাল রক্ত,
আমার পথে কেবল চোরাবালি
তােমার হাসিতে লুকিয়ে শুধুই চৈত্র।

ব্রহ্ম
 
আ-কার, ও-কার দুই জানি না 
খােলা চোখে অন্ধ, 
শব্দ জব্দ করতে এবার
উদয় হলাে ব্রহ্ম।
এই যে 'সাকার', ওই ‘গােলাকার' 
নীরবতায় স্তব্ধ,
শব্দ এবার রক্ত মাখে 
সবাই হবে জব্দ। 
বর্ণ বর্ণ বজ্র মালায় 
তা-থৈ তা –থৈ নৃত্য
হৃৎপিণ্ডের রক্ত মেখে
নাচে যে ব্রহ্ম বৃক্ষ।
ওই যে আগুন, এই যে ফাগুন 
একই রঙের পেয়ালা 
মা-ভৈ মা-ভৈ শব্দে নামে
বিষাদ ব্ৰহ্ম চ্যালা।
এক তারা তে ভুবন আলো, 
এক চোখেতে ব্রহ্ম। 
এক প্রেমেতে হৃদয় ভালাে,
গণিকালয়ে অন্ধ।
আয়রে আকাশ, আয়রে বাতাস
আয় ছুটে সক্কলে
বিষাদ ব্রহ্মে শব্দ মালায় 
আহুতি দিই সব ভুলে।
প্রেম পরিণয়, ভাব বিনিময় 
একই সুতাের মালা 
বর্ণে বর্ণে শব্দ ধারায় 
পরায় ব্ৰহ্মমালা।


মৃতজন্ম
 
দেখছি মিছিল অবাক চোখে 
নিঃশব্দে মৃত্যু হাঁটে
শোক জলে আজ খুঁজছি আয়ু
বন্ধ ঘরের খাঁচায় বসে । 

এক পৃথিবী এক জানালায়
সব ভাষা ভাষী এক সীমানায় 
কেবা বড় ছিলো,কেবা হলো ছোটো
এক ই কান্না আঁধারে সমান । 

ধর্মা ধর্ম নয়, সবাই মানুষ
সেই যে কবে শুনেছিলাম 
আজ দেখছি হুঁশ ফিরছে
যেন,এই স্বর্গে সবাই সমান । 

ক্ষুধার্ত শিশু সাইরেন ভুলে
শ্বাস নেয় জোরে জোরে 
কাল রাতে ওরা, মরা  মা’কে নিয়ে গেছে
দরজায়  তালা মেরে । 

থমথমে মুখে হাঁটছে দেখ
পরিযায়ী নাম নিয়ে
কোনটা বিদেশ কোনটা যে দেশ
কাঁদছে আত্মজনে । 

দম্ভ যুদ্ধে করি হানাহানি 
‘অতিমারি’ করে নৃত্য 
গুনছে মাসুল বিশ্বজুড়ে
ছাড় পায় না প্রাচ্য,না পাশ্চাত্য ।
রংধনু বসন্ত 

এবার শুধু বসন্তের রং মাখাবাে 
সব অভিমান চালান করব নিরুদ্দেশের ঠিকানায় সব স্বপ্নগুলােকে এক-এক করে 
আলােয় স্নান করাবাে 
তারপর, কালের গর্ভ থেকে তুলে আনব তােমায়!
প্রশ্ন নিক্ষেপ করব 
কেন এতদিন অন্ধকারে ?
কেন এতদিন বদ্ধকুয়াশায় ?
কেন? কেন এতদিন বর্ষনে ভিজিয়েছ?
উত্তর নিরুত্তর এর দোলনায় 
এখন আর গাল লাল করা –
লজ্জা গুলো আসে না।
লজ্জাগুলাে কবেই শাল মুড়ি দিয়ে মর্গে বেঁহুশ, এখন আর কেউ অর্থ ধরে না,
এখন আর কেউ বায়না করে না,
এখন অনেক বসন্ত বন্ধ ঘড়ির ঠিকানায়।  প্রেমহীন পরকীয়ায়,
এখন অনেক বসন্ত, স্বপ্ন বােনে মৃত ছন্দের হাততালিত!
এখন অনেক বসন্ত, বােঝে না তােমার অর্থ 
তাই গরল হাতে দাঁড়িয়ে আজও রঙ ধনু বসন্ত।

-------

Post a Comment

10 Comments