ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা
পর্ব- ২
সৌ ম্য দী প চ ক্র ব র্ত্তী
মিডল ইংলিশ পিরিয়ড:
প্রথম পর্বের আলোচনার সাথে এই পর্বের নিবিড় সংযোগ তৈরী করে ১০৬৬ এর 'নরম্যান কংকোয়েস্ট' এর প্রভাব যার হাত ধরেই ইংরেজি সাহিত্য মিডল ইংলিশ পিরিয়ড বা মেডিয়েভ্যাল পিরিয়ড বা মধ্য যুগের পথে পাড়ি দেয়I ব্রিটেনে 'নরম্যান কংকোয়েস্ট' এর ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় সমাজ-জীবন, ভাষা ও সাহিত্য এই তিন ক্ষেত্রেইI অ্যাঙ্গলো-নরম্যান রাজাদের হাত ধরে নর্মানডি তথা ফ্রান্স এর সুনিয়ন্ত্রিত আর্থ-সামাজিক সামন্ততান্ত্রিক বিন্যাস ব্রিটেনে বলবৎ হয়, ফরাসি শব্দের যোগদানে এবং সংমিশ্রনে ইংরেজি ভাষা ও শব্দকোষের আকার ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে এবং ইংরেজি সাহিত্যে ফরাসি 'রোম্যান্স' এর অনুকরণে সাহিত্য রচনার এক ঝোঁক দেখা যায়I আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় স্তরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এ সময়ের সাহিত্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব ফেলেI এর মধ্যে অন্যতম ১৩৪৮ এর প্লেগ ঘটিত মহামারী 'ব্ল্যাক ডেথ', ১৩৮১ সালে ওয়াট টাইলারের নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া কৃষক বিদ্রোহ এবং স্যার জন ওয়াইক্লিফের নেতৃত্বে 'লোলার্ড' দের ধর্মীয় সংস্কারমুখী আন্দোলনI এই যুগের সাহিত্যের প্রাণ-পুরুষ জিওফ্রে চসার-কে মাইলফলক ধরে একালের সাহিত্যকে আমরা আমাদের সুবিধের তাগিদে তিন পর্যায়ে ভাগ করতে পারি: ১) চসার পূর্ববর্তী কালের সাহিত্য, ২) চসার ও তাঁর সমসাময়িক কালের সাহিত্য এবং ৩) চসার পরবর্তী কালের সাহিত্যI
চসার পূর্ববর্তী কালে আমরা যে তিন রকম সাহিত্য দেখতে পাই তা হলো কাব্য-কবিতা, রোম্যান্স এবং আখ্যান-গদ্যI কাব্য-কবিতার ক্ষেত্রে আবার মূলত তিন রকমের ধারা বা উপধারা চোখে পড়েI বেশ কিছু ইতিহাসাশ্রিত কাব্য আমরা দেখতে পাই এসময়ে যার মধ্যে অন্যতম প্রায় ৩০,০০০ লাইন সম্বলিত, আনুমানিক ১২০৫ সালে লেখা "লেমন'স ব্রুট"I এই সময়ে প্রসার ঘটে ধর্মীয় উপদেশ মূলক কাব্য-কবিতার যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আনুমানিক ১২০০ সালে লেখা "দি ওরমুলাম" এবং আনুমানিক ১২২০ সালে বিরচিত "দি আউল এন্ড দি নাইটিংগেল"I এছাড়া এই সময়ে বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় 'স্বপ্ন-রূপক' আঙ্গিকে লেখা অ্যালিটারেশন বা অনুপ্রাস অলংকারে মোড়া কিছু কবিতা যেমন "পার্ল" এবং "স্যার গাওয়েন এন্ড দি গ্রীন নাইট"I সমালোচকেরা বলে থাকেন পরিচয় না জানা গেলেও এই কবিতাগুলি একই কবির লেখাI এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো "স্যার গাওয়েন এন্ড দি গ্রীন নাইট" এর মধ্যে বিপুল রোম্যান্সধর্মিতাও রয়েছেI এসময়ে রোম্যান্স এর প্রভূত জনপ্রিয়তা দেখা যায়I বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে একালের রোম্যান্স কে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায় : ব্রিটেন কেন্দ্রিক, ফ্রান্স কেন্দ্রিক এবং রোম কেন্দ্রিক রোম্যান্সI এসময়ে লেখা আখ্যান-গদ্যের সংখ্যা কম হলেও ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়ায় বিশপ পাওয়েরের লেখা "অ্যানক্রিন রিউলে" এই ধারার এক প্রতিনিধি স্থানীয় লেখাI
১৩৪০ সালে আবির্ভাব ঘটে এযুগের শ্রেষ্ঠ কবি জিওফ্রে চসারেরI চসার এমন সময়ে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন যখন ইংল্যান্ড ফ্রান্সের সাথে 'শতবর্ষের যুদ্ধে' (১৩৩৭-১৪৫৩) লিপ্তI এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির হাত ধরে প্রাথমিক ভাবে যোদ্ধা এবং পরবর্তীতে রাজকর্মচারী ও কূটনীতিক হিসেবে বেশ কিছুকাল চসারের ফ্রান্স ও ইতালিতে থাকার সুযোগ হয়I তাঁর কাব্যকৃতির প্রথম দুই পর্ব তথা ফরাসি পর্ব ও ইতালিয় পর্বের কাব্য-কবিতার (যেমন ফরাসি পর্বের "রোমান দে লা রোজ", "দি বুক অফ দি ডাচেস" বা ইতালিয় পর্বের রূপক ধর্মীয় "দি হাউস অফ ফেম", রোম্যান্স ধর্মীয় "ট্রয়লাস এন্ড ক্রিসেইড") রসদ তিনি এসময়েই সিঞ্চন করেনI তবে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ইংলিশ পর্বের "দি ক্যান্টারবেরী টেল্স"I তীর্থযাত্রার আঙ্গিকে লেখা, চসারের বিপুল অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, হাস্যরস, বিদ্রুপ, সূক্ষ্ম সমালোচনা সম্বলিত "দি ক্যান্টারবেরী টেল্স" তৎকালীন সমাজের এক সামগ্রিক চালচিত্রI কাব্য-কবিতার সাথে চসার "দি টেল অফ মেলিবাস" এবং "দি পার্সন'স টেল" নামে দুটি দীর্ঘ গদ্যও রচনা করেনI চসারের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে উইলিয়াম ল্যাংল্যান্ড ও জন গাওয়ার-এর নাম বিশেষ ভাবে উঠে আসেI চসারের সমসাময়িককালে বিরচিত গদ্যের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায় স্যার জন ম্যান্ডেভিলের ভ্রমণমূলক "ট্রাভেলস" এবং স্যার জন ওয়াইক্লিফের "দি হোলি বাইবেল" এর গদ্যানুবাদের কথাI
চসারের কাব্যসৃষ্টির প্রভাব ও তার অনুসরণ চলে চসার পরবর্তী বেশ কিছু কাল ধরেI চসারের কাব্যশৈলীকে অনুসরণ করে স্কটল্যান্ডে একদল কবি কাব্য রচনা ও চর্চা শুরু করেন; এঁরা 'স্কটিশ চসারিয়ান' নামে পরিচিতI স্যার ডেভিড লিন্ডসে, রবার্ট হেনরিসন, উইলিয়াম ডানবার এঁদের মধ্যে অন্যতমI ওয়াইক্লিফের মৃত্যুর পর লোলার্ডদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলেও এই সময়ে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে "দি হোলি বাইবেল" এর অনুবাদের মধ্যে দিয়ে ধর্মীয় সংস্কারের প্রচেষ্টাI তবে চসার পরবর্তীকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ১৪৭৬ সালে উইলিয়াম ক্যাক্সটন কর্তৃক ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনস্টারে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা যা ইংল্যান্ডে সাহিত্য রচনা ও প্রজ্ঞাচর্চার জগতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে, চিন্তাক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আভাস দিয়ে যায়I সম্ভবত এই কারণেই অনেক পন্ডিত ও সমালোচক চসার ও তাঁর পরবর্তী সময়কালকে নবজাগরণের উন্মেষকাল বলে অভিহিত করেছেন। সীমিত কথায় মিডল ইংলিশ পিরিয়ডের কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করলাম এই পর্বে।
-----
2 Comments
অপূর্ব তথ্য সহ সুন্দর উপস্থাপনা।
ReplyDeleteএই পর্বটি বেশ ভালো হয়েছে সৌম্য 😍
ReplyDelete