জ্বলদর্চি

সুনীল মাজি


সু নী ল  মা জি


শারদীয়া 

জলের ভেতর শুয়ে আছেন আমাদের মা।
একান্নটি তীর্থপীঠ মিশে গেল জলের ভেতর।
জল তীর্থপীঠ হল আজ --
তবু জলের ভেতরে ডুবে কতক্ষণ নিতে পারি শ্বাস?
স্মৃতিভর সৃজনের প্রতীক্ষায় কবে গাইব মহালয়ার গান ?
মাকে বুকে নিয়ে জন্ম নিক আমার সন্তান।

 বন্দুক 

আমার ভারতবর্ষের কালো কালো পাগুলাে
কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং
ভূত ভূত চেহারার শ্যাওড়া গাছ
বছর বছর ভােট দেওয়ার পরও
নামতা পড়ার মতাে স্লোগান দেওয়ার পরও
এল খুড়াে গেল খুড়াে
কী যে বলি লজ্জা করে :
আমার মূত্রনালী থেকে পাথর ফেলতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ
সােম থেকে শুক্র সরকার ঠিকাদার
এত বিদ্যুৎ এত জল সরবরাহের পরও
এত যে শব্দ শুনি অর্ডার অর্ডার : হায় হায়
গঙ্গা আর বইতে পারে না ময়লা
আমার ভারতবর্ষ এখন চর,ঘর
পেটের জ্বালা ভুলতে মােবাইলে গান বস্তি, মস্তি
তার চোখে মুখে ভাঙা কাঁচ
তার বুকে কানে ধর্মঘট
কালো কালো হাত গুলো ছিড়ে ফেলছে রেশন কার্ড
কি যে বলি বড্ড ভয় করে :
প্রতিদিন লাইসেন্সহীন বন্দুক হয়ে যাচ্ছে আমার ভারত


বীজ 

বীজ চারার অন্বেষণে আমরা নানা বাগানে
ঘুরে বেড়াই, এবং চারা বীজ নিয়ে শুরু করি মাটির খনন।
বুকের ভেতর দিপ দিপ বীজ পাথর কতটা ছড়াতে পারে জ্যোতি
এগুলাে কোন বাগানের চারা ? কার পূর্বজন্ম? 
মােহময় এক আকর্ষণ ছাড়া আমাদের চোখে আর কিছু কি থাকে?
তারপর অনেক সূর্য ডুবেছে পশ্চিম দিগন্তে
নানা স্বাদের গাছের বাগানের নীচে
আমরা কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে থেকেছি অনন্ত।
কলম 

ঝড় এলে আমি একা থাকি।

একা নই। গাছেরা ঝােড়াে হাওয়ার সঙ্গে যে লড়াই করে
তারই অংশ হই। তীব্র ভাবে ধরে থাকি শ্বাস
দু আঙুলে কলম ধরি-মধ্যমা তখন তর্জনীর প্রহরী।
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ আমার চিরকালের একলব্য
মাঝে মাঝে বেদনায় কলম দিয়ে ঝরে তার উত্তর পুরুষের রক্ত
ক্ষত বিক্ষত সৈনিক আমি মেনে নিই সময়ের নির্দেশ।
সেতার বাজাতে বাজাতে যখন তার ছিড়ে গেল
বুঝলাম, উত্তম চলে যাবে-সেতার আর ওর ভার নিতে চাইছে না।
ভয়ংকর এক খরার দিনে পিতামহ গেলেন।
নদী শুষ্ক পুষ্করিণীতে জল নেই–মেঘ জল ঢেলে শেষ আগুন নেভাল।
পিতৃদেব কখন গিয়েছিলেন আমরা টের পাইনি
তখন মধ্য রাত তখন তিন প্রহর!
কলম নানা রূপে তুলে নেয় ভার
যে যাকে ভালোবাসে সে-ই তার দায়িত্ব নেয়।
কলম কারও যুদ্ধ কারও সঙ্গীত
আমি তাকে মুণ্ডেশ্বরী করে আছি চোরাবালিতে জলে
চলাে মন নিজ নিকেতনে।


 নিষিক্ত কথা 

বুকেই জন্ম তােমার। আমার অন্ধকার পাথরের বুকে।
বুকের গভীর স্রোতে আসা ফুল, অক্ষরের শিলালিপি।
ভেসে যাও মােহনার আলোর প্রবাহের মতাে
এই তো আছি বিষাদের পট জুড়ে যন্ত্রণার ক্রস চিহ্ন....
পৃথিবীর সমস্ত ধর্মগ্রন্থে মাথা রেখে আমার বুকে জন্ম তােমার।
ধতুরা বীজ খেয়ে নেশাগ্রস্ত পুরুষ আমি। অন্ধকার ঘষে
ঘষে ছুঁয়ে ফেলি শরীরের বৃতি। অনন্ত নেশা ঘাের চোখ নীল
নীল --অঙ্গদেশের মানচিত্র ছুঁয়ে যেখানে সমাধি নেই
সেই আমার পুরুষ চক্র সে তােমার গর্ভচক্র নিষিক্ত
সময়ের প্রতিধ্বনি : কবে আসছ, আসাে না কেন ?
অপার্থিব ভাষা কাছে ডাকে খণ্ড আকাশ থেকে ভাসে প্রতিচিত্র।
রােমের যুদ্ধে আমার পোড়া দেহ। মিশরের যুদ্ধে আমার সাজানাে পিরামিড।
যেখানেই শুকিয়ে গেছে কান্না সেখানেই নদীর বুকে চড়া।...
স্কাইলাইনে জেগে থাকে বুকের দাগ। দাগে লেখা থাকে জন্মকথা।
অনেক জন্মের কথা বুকে নিয়ে তােমাকে আঁকছি রামধনু।

---------

Post a Comment

0 Comments