জ্বলদর্চি

চিরপ্রশান্ত বাগচী


চি র প্র শা ন্ত  বা গ চী


শব্দতত্ত্ব  : একটি প্রকাশ্য বার্তা 

শব্দ; যদি আকাশ বিদীর্ণ করে কিংবা তার কম্পনে তোমার বুক কেঁপে ওঠে,  যদি সে শব্দে কেউ উল্লসিত হয়ে এক বা একাধিক স্ত্রী -পুং পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে ,  মুখ-গহ্বরের দুর্গন্ধ ভুলে গিয়ে প্রায় চুম্বন বিনিময় করে কিংবা গায়ের পোশাক খুলে এগিয়ে যায়; সশস্ত্র; সেইসঙ্গে বাজি-বারুদগন্ধ আর ঢক্কানিনাদ --- অন্তত কোনো বাক্য উচ্চারণ না করে ট্রাফিক জ্যামে  ভীড় বাসের ভিতর অল্পস্বল্প ন্যাপ নিতে পারো তুমি । বাস্তবিক ,  এই দৃশ্যের নেপথ্যে জনগণের সম্পর্ক খুবই গভীর আর বিজ্ঞানসম্মত । তাই কোনো অসন্তোষ নয় ; বরং সহিষ্ণু হও  ; সম্ভব হলে এই রাজপথের সংযোগস্থলে; সবুজ সংকেত দেখে যে কোনো লরিতে উঠে যাও ; তারপর রং নিয়ে গবেষণা কোরো একা , রাতের অন্ধকারে । 
ফ্যানটাসি 

বরাভয়ের পোশাক খুলে ফেলে, যখন তিনি দুর্ধর্ষ পেঁচার পোশাক পরে একদিকে সাপ ও অন্যদিকে ব্যাঙকে রেখে শুরু করেন অক্ষক্রীড়া  ; আমরা তখন সমগ্র চাঁদকে সোনার গোল্লা মনে করে শুরু করে দিই খেলা । 
অকস্মাৎ চাঁদটা চূর্ণ -বিচূর্ণ হয়ে আক্ষরিক সোনার ফসল হয়ে ওঠে । শার্টের বোতাম খুলে ফিল্মি গান গাইতে গাইতে শূন্য থেকে দেখতে পাই আমরাই প্রথম বিশ্ববাসী । 

আমাদের মুহুর্মুহু বাম তর্জনিতে বিশেষ অভিজ্ঞান দেখে এইসবই মনে হতে পারে । কিন্তু রং যেই নিষ্প্রভ হতে থাকে, লক্ষ্য করি অন্ধকারে এইসব নিশাচর ডানা ঝাপটায়  ; ওদের ব্যক্তিগত প্রথম বিশ্বগুলি আমাদের দিবাস্বপ্নে শুধু হা হা হাসে । 


ঘুম 

দীর্ঘকাল আগে আমি আমার কন্যাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছিলাম উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা একটি ভিক্ষুর উপর । যেন ঘুমে আচ্ছন্ন, একটি চাকা লাগানো খেলনা গাড়ির উপর, যাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল আর-একটি লোক , পাশেই সানকির ভিক্ষাপাত্রে জ্বলছিল একটি লন্ঠন, ব্যস্ত শহরে শীতের প্রগাঢ় সন্ধ্যায়  ; যখন সকলেই স্টেশন থেকে বাড়ি অভিমুখে 
দীর্ঘকাল পর আমি আমার পুত্রকে দেখলাম একটি সমুদ্রতীরে সুদীর্ঘ ঘুমে আচ্ছন্ন,  যে কিনা ছুঁয়ে ফেলেছে সমগ্র বিশ্বের বহু মানুষের হৃৎপিণ্ড, যার মধ্যে নিহিত ছিল, হয়তো -বা পাখিদের মতো স্বাধীনতা, যেখানে মানচিত্ররেখা , সীমান্তরক্ষীর শ্যেন দৃষ্টি, কিছুই বিবেচ্য নয় । ছিল আরও অনেক কিছু, অন্তত হাতের মুঠোয় নীল ঘুড়ির সুতো, দু'একটি প্যাস্টেল সাদা পাতা 
এভাবেই তালিকা দীর্ঘ হতে পারে,  কিন্তু যা বিধৃত আমার গূঢ়ভাষণের রেখাচিত্রে , সেখানে পৃর্ববৎ কোনও বিরতিচিহ্ন নেই, নেই, নেই । 


একই নৌকার এক যাত্রীর কথা

শুয়ে পড়লেও ঘুম নেই চোখে । আবার সেই অদৃশ্য ঘাতক ! যার কাছে পৃথিবীর সমস্ত  আয়ুধ তুচ্ছ, নগণ্য । যার মর্জির ওপরেই নির্ভর করে আলো-আগুনের প্রজ্বলন -নির্বাপণ । পাখির বৃন্দগানে ক্রমে 
সামান্য অন্ধকার থেকে আমি যেই উঠে আসি ভোরের আলোয় ; নিজেকে গোপন রাখার জন্য নির্মাণ করি অলৌকিক রম্য দৃশ্যপট । 
অথবা বিপ্রতীপ গমন  ; জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণের প্রত্নপৃথিবী  ; যেখানে শুধুই প্রাণকণার সংঘর্ষ মধুরতম  ; যেখানে কোনো অশুভ দাঁত -নখ , রক্তচক্ষু নেই ; যেখানে জল আগুন মাটি মরুৎ শূন্য একটা অবয়ব গড়ে তোলে শস্য ও  শস্যবীজের মতো । 
ঘাতক  ; প্রতিটি মুহূর্তে গ্রাস করে ফেলছে আমাদের অশনবসনরমণের সুখ । 
আমাদের রসশিল্পের প্রতিটি বর্ণে , শব্দে , সুরে , চিত্রকল্পের নেপথ্যে তার হা হা হাসি । 
আমাদের প্রত্যেকের মুখে এক আশ্চর্য সেলোটেপ । 
আমাদের যাত্রাপথ সতত প্রমাণিত মৃত্তিহীন , শূন্য আর সেখানে কন্টকিত সমূহ প্রশ্ন পূর্বাপর ।
কে জানে, এই ঘাতকেরই হাতে প্রোথিত হবে কিনা,  এই সভ্যতার শেষ মাইলফলক !
নন্দনতত্ত্ব 

সেদিন জ্যোৎস্না, জোনাকি ও তারার আলোর কথা বলতে গিয়ে 
ইতিউতি চোখ মেলে খুব অস্ফুটে উচ্চারণ করি  
সবসময় শুধু আলো নয় ; তারও অধিক গাঢ় অন্ধকারও অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত মনে হয় 
বস্তুত, তারই ভিতরে আলোর উদ্ভব -ক্রমবিকাশ, প্রজ্বলন আর বিস্ময় যেভাবে ওতপ্রোত  ; সেসব কোনো অর্থে বিনিময়যোগ্য নয় একেবারেই 

একারণেই আমরা কেউ কেউ সাংকেতিক ও আক্ষরিক বর্ণের ব্যবহারে খুব তৎপর হয়ে উঠি 
আর সৃষ্টি ও নির্মাণের সম্পর্ক নিবিড় হয়ে ওঠে এইভাবেই। 
--------

Post a Comment

2 Comments

  1. পাঁচটি কবিতাই খুব সুন্দর।মনের প্যাঁচাটা দাঁড়িয়ে গেলো নন্দনতত্ত্ব এ।খুব খুব ভালো লাগলো।ঘুম ঘুম চোখে খুব উপভোগ করলাম। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো কবি।
    আমার পুরো নামটা
    গৌতম বাড়ই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।।

      Delete