জ্বলদর্চি

অপর্ণা দেওঘরিয়া


অ প র্ণা  দে ও ঘ রি য়া


দেবী

বাসনার খেলাঘরে নান্দনিক দুঃখগুলো কাঁদে, 
জীবন ও যাপনের গাছ যদি হয় ঋতু রঙে,
স্মৃতিময় কাতরতা , মেঘ যেন হাতছানি, সাথী…
নিরাময় সংগীতে হৃদয় সাজিয়ে রাখে মাটি।

অপেক্ষার হোমানলে যুদ্ধের উল্লাস থাকে, 
গোপনীয় কথামালা লতা গুল্মে খুঁজেছে জীবন, 
স্বস্তির বৃষ্টিকনা,  শান্তির অভিমুখে গেলে,  আঁজলা ভর্তি সুখ আদিগন্ত নদীর মতন--

স্বরলিপি লিখে রাখে,  আলস্যের বিমুগ্ধ বাতাস ---
সমবেত প্রার্থণায় ছন্দময় বৈতালিক সুরে 
দুঃখের প্রলেপনে জেগে ওঠা চরাচর ভূমি; 

দেবীপ্রতিমাকে ছুঁয়ে আঙিনায় দাঁড়িয়েছ তুমি।
অর্ন্তযামী

জীবনের ছেঁড়াপাতায় আকাঙ্খায় মুখ ঘুরে  যায়, 
অবিশ্রান্ত সুধায়, এই জন্মে হলোনা কিছুই, 
দিশাহারা অনুভবে, রঙে রঙে অভিমানে, হায় ---
কত মন্দিরের চাতাল, ঠাকুর দালানে ঘোরে মন। 

পথের অজস্র বাঁকে, বৃষ্টি খোঁজে মায়াময় মেঘ, 
যাপনের ছন্দ গুলি সম্প্রীতির জ্যামিতিক ছকে--
জ্যোর্তিময় আলোকের দেবতারা পুষ্প ছড়ায়;
বড় ক্লান্ত পরাজিত অন্তরে ভরসা মায়ের … 

কোথাও সাইরেন সুর,  বাবা ওই আসবেন ফিরে, 
খুশিময় পাঠশালায় চোখে  আঁকা ধ্রুবতারা আজ 
স্লেটের উপরে হাত, বুলিয়ে বুলিয়ে কত শেখা,  
ভলোবাসার বর্ণমালা,  আনন্দের মুক্ত বাতাস…

পাখিরা অম্বরচারী,  বিষাদের স্রোতে ভাসে জীবন, 
রাঙাদি র ঝালমুড়ি,  যাবতীয় সুখের প্রশ্ন আঁকে  
তোমার চরণ তলে বসে যদি দগ্ধ হই আমি.. 
হতাশার অহং যায়,  আরশি তে হাসে অর্ন্তযামী।


প্রতিমা 

দিন চলে যায় গোপন সিঁড়ির বেয়ে 
পরিযায়ী পাখি উড়ে যায় বহু দূরে 
অভিমানী মেঘ প্রান্তিক, যেন একা 
ঝড়ে ঝঞ্জায় মাতাল সমুদ্দুর।

রহস্যময় দীর্ঘশ্বাসের দুখে 
হাতের পাতায় অলীক সাজানো, স্থির…
আলস্যময় স্বপ্ন খুঁজেছে জীবন 
বৃক্ষ সাজায় অন্তর পৃথিবীর। 

বিবেকের ডাকে মায়ের পেয়েছি সাড়া 
মহাযুদ্ধের উল্লাস ধ্বনি শুনি,  
পীড়নের কালে দেবী প্রতিমার মায়ায় 
উদ্বোধনে শপথের জাল বুনি


কাঙাল

রাত্রি গভীর হলে অহঙ্কার সামনে এসে দাঁড়ায় 
জমে থাকা স্রোতে ও প্লাবনে যন্ত্রণার মেঘ, 
দানপত্রে নেচে ওঠে সুরক্ষিত আনন্দ, 
বহমান প্রতিশ্রুতির স্রোতস্বিনী নদী 
প্রতিক্ষায় ভাসে। 

গাছালির ফাঁকে,  ছায়াপথে,  স্বপ্নের সাক্ষীরা 
নতুন বর্ণমালায় ভরে তোলে তোমার শরীর 
অরণ্যের লাবণ্য জুড়ে জোনাকির খেলা সগৌরবে -
জীবনবোধের সুরে সংঘাতের বীজ বোনে 
দুর্বিপাকের কুড়ি…

সাবলীল ছন্দময় বিশ্বস্ত হৃদয় 
সম্মোহিত গগনে যজ্ঞটিকা আঁকে 
শান্তির অন্তরায় সেজে ওঠে বিজয় উল্লাস 
খুশির অন্তরে মায়াময় বিস্তারে 
   অস্পষ্ট কলতান,  কাঙলের মতন ডাকে।

ডাক

এক বার একান্ত ডাক চাইছি 
সূর্য বন্দনার শুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণে আত্মজ সুখে। 
গভীর গোপনে অবিশ্রান্ত ধারায় 
আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নের মতন ভাদু টুসুর গানে।

সর্ম্পকের সন্ধানে শেকড়ের গল্প ছড়ায় 
হৃদয়ের পুষ্পরেণু,  হস্তবন্ধনের হাতছানি
হয়তো বা গভীর রক্ষা কবজের ন্যায়…

তবে ওই নীল শাড়ি,  ঢেউ দোলা চিরায়ত 
শোক তাপ দগ্ধ জ্বালায় 
চির ধরা দেয়ালের পাশে 
ধ্যান জ্ঞানে প্রান্তিক ক্লাসে 
ভূগোল পড়ানো দিদিমনির আজীবন সাথী হয়ে থাকি। 

চিরতরে এই মন পাখি হয়ে যায় 
যদি ওই ডাক আসে চিরন্তন অগ্নির আভায় 
শেকে নিতে পারি ভুলের আঙুল
অপরাধীর এই দুটি হাত।

------

Post a Comment

3 Comments

  1. দুর্দান্ত কবিতা। ভালো লাগলো/ পার্থপ্রতিম আচার্য

    ReplyDelete
  2. দুর্দান্ত। ভালো লাগলো / পার্থপ্রতিম আচার্য

    ReplyDelete
  3. প্রত্যেকটি কবিতা খুব ভাল।

    ReplyDelete