জ্বলদর্চি

আবির্ভাব ভট্টাচার্য


আ বি র্ভা ব  ভ ট্টা চা র্য


মেঘদূত

বিষাদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে,
যে-মানুষ ঠোঁটে ও আঙুলে
ধূমায়িত অমৃত মাখে,
তার আস্তিন ছুঁলে দেখবে
সেখানে থেমে আছে রামধনু রং।
চূড়ান্ত বিস্বাদ কোনও বিকেলেও
চিবুকের  ভার হাতের তালুতে রেখে,
সে শূন্যে ভাসিয়ে দেয় দৃষ্টি।
কখনও তার পাঁজর ছুঁলে দেখবে,
রুক্ষ পাঁজরে বৃষ্টির আহ্বান।

ছোঁয়া

মৃত মানুষের পায়ের পাতা, সদ্য জল শুকিয়ে যাওয়া-
ছিপনৌকার সরু হয়ে আসা পাটাতনের মতো
সমভাবে শীতল ও তৃষিত।
সেখানে হাত ছোঁয়ালে- পাটাতনের- সেই যে শিহরন
কেউ কখনো বোঝেনি, বোঝে না।
একতারার তারে যত্নে বোলানো আঙুল, সেখানেও-
খুঁজে পায় মৃদু স্পন্দন।
শেষ একবার একটুখানি হাতের ছোঁয়ার কাঙাল হয়-
এইরকম পা আর পাটাতনের কোনগুলি,
শেষ ছোঁয়াটুকু নিয়ে দিগন্ত পাড়ি দেবে বলে।


ধানগাছ

আমন ধানের শীষে, লেখা হয় সোনালী ইতিহাস।
ধানের গভীর মূল, জানে- যুদ্ধের জয়গাথা চিরস্থায়ী নয়।
শান্তির বানী নিয়ে ধর্ম আসে একসময়-
ক্ষুধা ও বেদনায় মলমের আস্তরণ দিতে।
সেই ধানগাছই দেখেছে বসন্তে অনিবার্য রক্তপাত-
ধর্মের ক্লেদাক্ত হাত, পাড়ে নি শান্তি আনতে।
এনেছে বিভেদ, আর অস্ত্রের আঘাত হেনেছে।
শুধু ধানগাছ জানে- জয়গাথা চিরস্থায়ী নয়, তাই-
কাস্তের প্রতিটি আঘাতে সে কেবল বলে গেছে- শান্তি!


অসমীকরণ

অসুখের সাথে আত্মীয়তা দীর্ঘস্থায়ী হলে
শুশ্রূষার আলোগুলি ক্রমশই কমে আসে।
সেই আলো কমতে কমতে দিন ও রাতগুলি
ধীরে ধীরে হয়ে পড়ে আলো-ভালোবাসাহীন।
ব্যাস্তানুপাতিক এই সমীকরণের রেখচিত্র পেরিয়ে 
কারও কারও কপালের ভাঁজে
জুটে যায় অন্যরকম কোনো হাত।
সেই হাত ও কপালের সম্পর্ক সমীকরণে আঁকা যায় না।
শারিকা

বুকের উপর যার যেটুকু সুখের উঠোন
সবটুকু জুড়ে ধান মেলে বসে আছে।
শহরে ও গ্রামে সব দেশে সবখানে
একটু খুঁজলে প্রতীক্ষাগাছ পাবে।
পৃথিবীর সমস্ত মায়াখামারে এভাবেই-
ধান মেলে, বুকে নিয়ে সেই গাছের ছায়া
হা-হা রোদে, ঠায় বসে আছে
বিরহী যত বৃন্দাবনী শারিকা।
কবে তার প্রিয় শুকপাখি
পৃথিবী পরিক্রম করে এসে
স্নিগ্ধ-স্নাতক ও অবধুতবেশে
শুকনো ধানের পাশে সিক্ত স্পর্শ রাখবে বলে।
------





Post a Comment

1 Comments

  1. দারুণ দারুণ লেখা এবং নির্বাচন খুব সুন্দর। কবি কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ব্লগ কেউ আমার তরফ থেকে অভিনন্দন জানাই...

    ReplyDelete