ঋ ত্বি ক ত্রি পা ঠী
এই কবিতাগুচ্ছ তাঁদের জন্য যাঁরা আমাকে ইচ্ছামৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এই কবিতাগুচ্ছ তাঁদের জন্য যাঁরা জানতেন না শেষ হয়ে যাওয়া মানুষেরও এক মরণপণ লড়াই থাকে। এই কবিতাগুচ্ছ তাঁদের জন্য যাঁরা আমাকে অতলে ঠেলে দিতে গিয়ে আমার প্রিয় আশ্রয়, প্রিয় জঠরের সন্ধান দিয়েছিল। এই কবিতাগুচ্ছ তাঁদের জন্য কারণ তাঁরা এখনও আছেন। এই কবিতাগুচ্ছ আমারও জন্য, যেহেতু আজ আমিও আছি।
ইচ্ছামৃত্যু
এক
সারাজীবন মূর্তির পায়ে আশ্রয় নিতে নিতে
সারাজীবন অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র শান দিতে দিতে
সারাজীবন বৈষম্যের গান গাইতে গাইতে
যে রাষ্ট্র এখন সংক্রমণের পায়ে মাথানত
সে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি আমি ও আমরা
কেঁদে আকুল রাষ্ট্রের নামেই মানত করছি
দুই
ইচ্ছামৃত্যুর পর আমি সেই নদীটি কাছে
গিয়ে প্রথম যে কথা বলি: জারজ সন্তান
একাই পুড়েছে নিঃস্ব আগুন, অসুখী দালান
ফুটিফাটা হয়ে তারা সব চৌচির হাঁ
সেখানেই ঝুলে আছে আধপােড়া সূর্যমাংস কার্বাংকল
অথচ বটপাকুড় ডালে দুলছে যে পাখি
সে বলছে : সময় ভাঙচুর, মায়া, নদী
সে জানে এই সব শরীরীমৃত্যু সে কিছু নয়।
তিন
নদী জানিয়েছে শরীরীমৃত্যু সে কিছু নয়
সম্ভবপর প্রসারিত হাতে নিরপেক্ষ জল
জলেরও থাকে কাঙালপনা, তরঙ্গ, আগুন
আগুনের খোঁজে আগুন হয়ে নিঃস্ব হওয়া
তাই রােজ ইচ্ছামৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে
ভাবি : অক্ষর শোক, সমাহিত এক দূরত্ব
দূরত্বে জাগে সীমাহীন গতি, অলীক মােহ
পালাবাে কোথায়! মনখারাপের ঘরে হাহাকার।
চার
হাওয়ায় হাওয়ায় কিশোরবেলার আগুন
প্রথম শরীর সীমাহীন গল্পমালা
পদ্ম, শালুক, তরঙ্গ পুকুর অতল
দৌড়ে কে কোথায় চলে যাচ্ছে, যাক
শুভ উৎসে কল্পকাহিনি, গােপন হাত
নিবৃত্তির কোলে ফুল রাখা দায়
ঝাঁপ দিই গুচ্ছমূলে, এক পশলা বৃষ্টি
বাড়ি ফিরি সন্ধেবেলা, বেজায় অভিমান
মধ্যে আছো আগুন! পুড়িয়ে দাও পাপ
মধ্যগগন এখন, তারা কই শুধু নক্ষত্র
সন্ধে হােক, আকাশে আকাশ, নগ্ন আমি
উৎসে দাঁড়িয়েছি, দৌড়ে পালাব না আর।
পাঁচ
এখন অন্য মুখ ভিন্ন চরিত্র
এখন ধর্মরাজ্য ভিটেমাটি ছেড়ে
সর্বময় গ্রাস করুক মরীচিকা
দৌড় দৌড় আর দৌড়
কী অসম্ভব মায়া!
স্ফুলিঙ্গ মনে রেখো আমাকে
লেলিহান মনে রেখো আমাকে
স্পর্শ মনে রেখো আমাকে
সংক্রামক মনে রেখো আমাকে
এখন অন্য মুখ ভিন্ন চরিত্র
ছয়
আজ সন্ধেতে আবার সেই মনখারাপ
যেন কিছু নেই। একটা প্রান্তহীন শ্মশান
একটা দিগন্তহীন বিকেল গুমােট অন্ধকারের কোলে
মৃত্যুর মতো ঘুমিয়ে পড়েছে
এই সেই রাত্রি অজগর
যার সামনে দাঁড়িয়েছি, তার
এক লক্ষ জিহ্বা এক লক্ষ আক্রোশ
প্রকাণ্ড তার জঠর কুসুমিত হয়ে ডাকছে
ক্লান্তিহীন সে শুষে নিতে পারে সাতপ্রজন্ম
অথচ মন কেমন, দয়া মায়ার স্পর্শ নেবে না সে কিছুতেই
মরণপণ করেছে যে, তাকে আমি কী করে বোঝাই
এই যে আমি ক্রমশ শীতল থেকে শীতলতম,
একটু উষ্ণতার জন্য যে কোনও জঠরই আমার অভিপ্রেত।
4 Comments
খুব ভাল কবিতাগুলি।
ReplyDeleteঅপূর্ব কবিতা।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো কবিতাগুলি।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল কবিতাগুলো । শুভেচ্ছা ।
ReplyDelete