জ্বলদর্চি

সাদাবোঁদের ইতিকথা

সাদাবোঁদের ইতিকথা
                    

হি র ণ্ম য়  ধা ড়া


লোকায়ত চর্চার অন্যতম বিষয় হল খাদ্যাভ্যাস। বাংলার গ্রামে গঞ্জে এমন হরেক ধরনের খাবার আছে যেগুলোর সঙ্গে লোকসংস্কৃতি ও ইতিহাস  জড়িয়ে আছে। কোনো এক অখ্যাত মিষ্টান্ন কিংবা পদব্যঞ্জন ও বিখ্যাত হয়ে ওঠে তার লোকায়ত খ্যাতির কারণে। তেমনি আজ এক অভিনব মিষ্টির কথা বলব। 

হুগলি , বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের সীমান্ত লাগোয়া কামারপুকুর- জয়রামবাটী অঞ্চল আজ যুগাবতার রামকৃষ্ণ মাসারদার পুণ্যমাহাত্মে আজ সর্বজন বিদিত। এই অঞ্চলেরই এক অভিনব মিষ্টি হলো 'সাদাবোদে'।

সাদাবোঁদে শুনে হয়তো অবাক হবেন কিন্তু সত্যি এই বোঁদে আমার আপনার আবাল্য পরিচিত হলুদ বোঁদের মতোই কিন্তু রঙে ধবধবে সাদা। কোনো কৃত্রিম রঙ ব্যবহার না করেই তৈরী হয় এই মিষ্টান্ন। 

সাধারণ বোঁদে তৈরি হয় বেসন থেকে। ছোলা কিংবা মটরের বেসনের লেই বানিয়ে ছান্তার মধ্যে দিয়ে বিন্দু বিন্দু করে গরম তেলে ভাজলে তৈরী হয় বোঁদে । তারপর তা চিনির রসে রাখা হয় মিষ্টি স্বাদের জন্য। 
বেসন তেলে ভাজলে হলুদ রঙের হয় তাই সাদা বোঁদে তৈরী করা হয় বরবটি বীজের গুড়ো আর আতপচাল বাটা মিশিয়ে। আর ভাজার জন্য ব্যবহার করা হয় গাওয়া ঘি। 
স্বাদে গন্ধে আর রঙের বৈচিত্র্য এই সাদাবোঁদে সত্যিই অনন্য এবং অভিনব। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় পাল পদবীর জনৈক ময়রা প্রথম এই মিষ্টান্ন তৈরী করেন। আজও পালেদের মিষ্টির দোকান রয়েছে কামারপুকুরে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পরমপ্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন। আজও কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠের প্রাঙ্গণের রামকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরে এই মিষ্টান্ন বিশেষ ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। 
বিশ্বায়নের যুগে হরেক রেসিপির খাবার এসেছে বাঙালির খাদ্য তালিকায়। কিন্তু আজও সাবেকিয়ানা আর ঐতিহ্য বজায় রেখে বাংলার আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে এমন নানান ধরণের মিষ্টি, পিঠা , পদ ও ব্যাঞ্জন....এগুলো সবই লোকায়ত জীবনের এক একটি খণ্ড।

Post a Comment

0 Comments