ডিটেকটিভ, একটি অগোছালো কমেডি ছবি
পী যূ ষ প্র তি হা র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোটগল্প নিয়ে 'ডিটেকটিভ' নামে ছবি তৈরি করে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম 'হইচই' এ রিলিজ করে ইতিহাস তৈরী করলেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। এই সময়ের দাবি মেনে তার অন্য কোন উপায় ছিল না। একদিকে করোনা অতিমারির দাপট অন্যদিকে ব্যস্ততম জীবনযাত্রা মানুষকে ও টি টি-র সুবিধা নিতে বাধ্য করছে। সিনেমাটি রিলিজ হয়েছে ১৪ই আগষ্ট ২০২০, যা সম্ভবত কোন আঞ্চলিক ভাষার প্রথম ওটিটি রিলিজ ছবি। সেদিক থেকে ঐতিহাসিক তো অবশ্যই।
এ ছবির গল্পেও ইতিহাস। বঙ্গভঙ্গের উত্তাল সময়, রাখীবন্ধন এ ছবির সময়কাল। নায়ক মহিমচন্দ্র, যিনি ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরের একজন কর্মী ভার পান বাঙালি বিপ্লবীদের ধরার। তিনি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান গোয়েন্দা ভাবেন আর বলেন এ দেশের ক্রিমিনালদের কোন বুদ্ধি নেই, এমন একটা কেস তিনি পান না যেখানে তার বুদ্ধিতে পুষ্টি জোগায়। তার চাই এমন কেস যার 'প্লটে থাকবে ভাঁজের পর ভাঁজ,প্যাঁচের পর প্যাঁচ'। তিনি নিজেকে শার্লক হোমস ভাবতে ভালোবাসেন তাই সহকারী হুতাসন কে ডাকেন ওয়াটশন বলে। অন্যদিকে মন্মথ, যিনি মহিমচন্দ্রের স্ত্রীর প্রাক্তন প্রেমিক, তিনি লুকিয়ে দেখতে আসেন সুধামুখী কে। এবং মহিমচন্দ্রের চোখে পড়ে যান। ভুল সন্দেহ ও অলীক কল্পনায় মহিমচন্দ্র তাকে অনুসরণ করে পৌঁছে যান তার মেসবাড়িতে। সেখানেই শেষমেশ জানতে পারেন যে,এই মন্মথকেই বিপ্লবীদের তরফে মাস্টারমশাই ভার দিয়েছেন তাকে নিকেষ করার। সুধামুখীর সঙ্গে গোপনে মন্মথর সাক্ষাৎ করা এবং তাকে তার স্বামীর গোপন কাজকর্ম সম্বন্ধে জানিয়ে চিঠি দিয়ে একজায়গায় আসতে বলে আসলে গল্পের রহস্য উন্মোচন করার প্লট তৈরি করা হয়। এখানে চিত্রনাট্যকার সৌগত বসু একটু খেই হারিয়ে ফেলেন। মূল গল্পে মন্মথকে যেখানে শেষে জানা যায় মহিমচন্দ্রের স্ত্রীর প্রেমিক হিসেবে সেখানে এই সিনেমায় তা প্রথমেই বুঝে যান দর্শক। অন্যদিকে ডিটেকটিভের স্ত্রী হিসেবে যে চরিত্র মূল গল্পে রয়েছে তার নবনির্মান করতে চেয়েছেন চিত্রনাট্যকার সুধামুখী হিসেবে, যে লেখাপড়া জানা, বিপ্লবী কর্মকান্ডে যুক্ত। মাস্টারমশাই এর সহযোগী মন্মথ এবং সুধামুখী একসময় প্রেমে পড়ার অপরাধে দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিল তারাই হয়ে ওঠে তার মূল হাতিয়ার। এই শেষ দৃশ্যটি বড় অগোছালো লাগে।
সংলাপ এ ছবির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা বলে মনে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের যে ধরনের সংলাপ আশা করেছিলাম তা পাইনি। হয়তো 'নৌকাডুবি', 'চোখের বালি' বা 'ঘরে-বাইরে' র মতো ছবি দেখা আছে বলেই এ ছবির সংলাপ ভালো লাগলো না। যদিও কৌতুক পূর্ণ সংলাপ লেখার চেষ্টা এবং তাকে সফলভাবে রূপদান ভীষন জটিল,বিশেষত সিনেমার মতো অডিও ভিস্যুয়াল মাধ্যমে। তবুও কোন কোন যায়গায় জোর করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা হাস্যকর লাগে।
অভিনয়ে মহিমচন্দ্র হিসেবে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সাবলীলতা দাগ কেটে যায়। হুতাসন চরিত্রে অম্বরীশ ভট্টাচার্যের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, বাচনভঙ্গি এবং কমিক টাইমিং অসাধারণ। সুধামুখী হিসেবে ইশা সাহা যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন ভালো করেছেন, আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে পাওলি দামের ছাপ রয়েছে তাঁর মধ্যে। মন্মথ হিসেবে সাহেব ভট্টাচার্যের অভিনয় নজর কেড়েছে। মাস্টারমশাই হিসেবে কৌশিক চট্টোপাধ্যায় আরো বেশি যায়গা পেলে ভালো লাগতো।
ক্যামেরার কাজ ভালো লাগলো। তবে এডিটিং একেবারেই ভালো লাগেনি। কয়েকটি সিনকে অহেতুক বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। দু ঘন্টা ধরে এ ছবিকে না টেনে ১০০মিনিটের মধ্যেই শেষ করা যেত বলে মনে হয়েছে।
0 Comments