জ্বলদর্চি

ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা-৯


ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা

পর্ব- ৯ (শেষ পর্ব)       

সৌ ম্য দী প  চ ক্র ব র্ত্তী

 
উত্তর-আধুনিক কালের ইংরেজি সাহিত্য:

 উত্তর-আধুনিক কালকে আধুনিক কালের থেকে আলাদা করে অনেকেই ভাবতে চান না। অনেকেই মনে করেন উত্তর-আধুনিক কাল আসলে আধুনিক কালের প্রলম্বিত দশা। তবু বেশ কিছু সাহিত্যের ইতিহাসকার উত্তর-আধুনিক কাল বলে এক ভিন্ন যুগকেই চিহ্নিত করেছেন। আগেই বলেছি মডার্ন পিরিয়ড বা আধুনিক যুগ ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার যুগ, আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝোঁককে আরো প্রবল ভাবে আমরা প্রবাহিত হতে দেখছি উত্তর-আধুনিক কালের ইংরেজি সাহিত্যে। পার্থক্য শুধু এটাই, মডার্ন পিরিয়ডে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু রীতি অনুসরণ করা হয়েছিল, কিন্তু উত্তর-আধুনিক কালের ইংরেজি সাহিত্য বিষয়বস্তু ও তা উপস্থাপনের রীতি সমূহকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আকারহীন এক কাঠামো নির্মাণ, বিনির্মাণ ও অবিনির্মানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে উত্তর-আধুনিক কালের ইংরেজি সাহিত্য।

প্রথমেই বলা যাক নাটকের কথা। একালের নাট্যকারদের মধ্যে উঠে আসে আর্নল্ড ওয়েস্কার, টম স্টপার্ড, ফ্রাঙ্ক মার্কাস, পিটার নিকোলাসের নাম। শেকসপিয়রের 'হ্যামলেট' নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে টম স্টপার্ড আধুনিকতা এবং উত্তর-আধুনিকতার মেলবন্ধনে লিখেছেন 'রোসেনক্রান্জ এন্ড গিল্ডেনস্টার্ন আর ডেড'-এর মতো নাটক। চিত্র-নাট্যকার হিসেবেও স্টপার্ড বন্দিত। শেকসপিয়রের জীবন অবলম্বনে তৈরী ফিল্ম 'শেকসপিয়র ইন লাভ'-এর চিত্রনাট্যের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে 'অ্যাকাডেমি' পুরস্কারে ভূষিত হন। ওয়েস্কারের 'চিকেন স্যুপ উইথ বার্লেই', 'রুটস্', মার্কাসের 'দি ফরমেশন ডান্সার্স', 'নোটস অন আ লাভ অ্যাফেয়ার', নিকোলাসের 'আ ডে ইন দি ডেথ অফ জো এগ' উত্তর-আধুনিক কালের উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
অভিনব বিষয় ও তার ততোধিক অভিনব উপস্থাপনা নিয়ে একালের উপন্যাস এক নতুন ধারার সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়। ইভলিন ওয়-এর 'ব্ল্যাক মিসচিফ', 'আ হ্যান্ডফুল অফ ডাস্ট', সি. পি. স্নো-এর 'টাইম অফ হোপ', 'কোরিডোরস অফ পাওয়ার', উইলিয়াম কুপারের 'সিনস ফ্রম প্রভিন্সিয়াল লাইফ' এই অভিনবত্বের কথাই বারবার বলে যায়। এছাড়াও  এসময়ের উল্লেখযোগ্য ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম হলেন কিংসলেই অ্যামিস, অ্যালেন সিলিটো ও অ্যানথনি বার্জেস। অ্যামিসের 'লাকি জিম', সিলিটোর 'স্যাটারডে নাইট এন্ড সানডে মর্নিং' এবং বার্জেসের 'বেডস ইন দি ইস্ট', 'আ ক্লক ওয়ার্ক অরেঞ্জ' একালের উৎকৃষ্ট উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম। উত্তর-আধুনিক কালের মহিলা ঔপন্যাসিকদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উঠে আসে পামেলা হ্যান্স ফোর্ড জনসন ও ডোরিস লেসিংয়ের নাম। জটিল পরিস্থিতির উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে মানব মন ও জীবনের জটিলতাকে 'দি লাস্ট রিসর্ট', 'দি হাম্বলার  ক্রিয়েশন'-এ তুলে ধরেছেন জনসন। আবার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে আশা-হতাশার মিশ্রনে জীবনবোধের এক অনন্য চালচিত্র আমরা পাই লেসিংয়ের 'দি গ্রাস ইস সিংগিং' এবং 'আ রিপল ফ্রম দি স্টর্ম'-এ।
বিষয়, ভাষা ও আঙ্গিকের বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এ কালের ইংরেজি সাহিত্যে কবিতার এক বিশেষ জায়গা রয়েছে। উত্তর-আধুনিক কালের ইংরেজি সাহিত্যের অনেক কবির কলম সমসাময়িক কালেও নিরন্তর কাব্য-সৃষ্টি করে চলেছে। এসময়ের কবিদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উঠে আসে ডি. জে. এনরাইট, টমাস গান, টেড হিউস, সীমাস হিনি, অ্যালান রস, এলিজাবেথ জেননিংসের কথা। পানশালায়, রাস্তার ধরে, হালকা মেজাজে কবিতা লেখা, পাঠ ও তার চর্চার মধ্যে দিয়ে ব্রিটেনে বিশেষ জনপ্রিয়তা পাওয়া 'ব্যারো পোয়েটস'-দের মধ্যে ডি. জে. এনরাইট অন্যতম। তাঁর কাব্য-সংকলন 'সাম মেন্ আর ব্রাদার্স', 'দি ওল্ড অ্যাডাম'-এ তিনি আড্ডার মেজাজে, বিদ্রুপের ছোঁয়ায় সমাজ-জীবনের নিষ্ঠুরতা, কপঠতাকে তুলে ধরেছেন। 'ব্যারো পোয়েটস'-দের অন্যতম টমাস গান যুক্তি-নির্ভর ভাবে অবক্ষয়ের সমাজ-চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর 'ফাইটিং টার্মস', 'দি সেন্স অফ মুভমেন্ট', 'মলি'-র মতো কাব্য-সংকলনগুলিতে। মানব-কেন্দ্রিকতা থেকে দূরে সরে এসে টেড হিউস এক অচিরাচরিত আঙ্গিকে, পশু, পাখিদের জগৎকে সামনে রেখে নৈরাশ্য ও অবক্ষয়ের দিক গুলি তুলে ধরেছেন। তাঁর 'দি হক ইন দি রেইন', 'হক রুসটিং', 'ক্রো', 'থট ফক্স' সেকথাই বলে যায়।প্রগতির আলোয় প্রকৃতির অনালোচিত, উপেক্ষিত দিক গুলি নিয়ে, নস্টালজিয়ার মোহময় আবেশে 'ডেথ অফ এ ন্যাচেরালিস্ট', 'ডিগিং'-এর মতো কবিতা উপহার দিয়েছেন নোবেলজয়ী কবি সীমাস হিনি। অ্যালান রস ছন্দের ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে জীবনের ভাঙা-গড়াকে তাঁর 'সামথিং অফ দি সী' কাব্য-সংকলনে উপস্থাপিত করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবাবেগকে সার্বিকের স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কৌশলে সামনে এসেছে এলিজাবেথ জেননিংসের 'আ ওয়ে অফ লুকিং', 'রিলেশনশিপস' এর মতো সংকলন।

সমসাময়িক কালের সাহিত্যের রূপরেখা অঙ্কন ও তার মূল্যায়ন অসম্ভবের এক নামান্তর। সাহিত্যের ধারা সতত প্রবাহমান, ইংরেজি সাহিত্যের ধারা তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিনিয়ত বিবিধ বিষয়, চিন্তাকে বিবিধ আঙ্গিকে সাহিত্যে রূপদানের প্রক্রিয়া চলছে। আবার মানব-জীবন ও সংস্কৃতির হাত ধরে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে সাহিত্যের সংজ্ঞা ও তার পরিভাষা। আর এসবের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ইংরেজি সাহিত্যের অবয়ব। নয়টি পর্বে বিন্যস্ত 'ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা' শীর্ষক ধারাবাহিকে সীমিত কথায় ইংরেজি সাহিত্যের ধারাকে কিছু মাত্র বোঝার, গতিপথকে কিছু মাত্র চেনার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস রইলো।

Post a Comment

0 Comments