জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /বকুল জানা




  ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


ব কু ল  জা না


আত্মলীন 

একটা অন্তর্গত ডাক 
ক্রমে হারিয়ে যাই 

আলোর ঘরে আবছায়ার মতো ঘুরে 
চেতনা আচ্ছন্ন শরীর অশরীরী হয়ে ওঠে 
শ্মশান ধোঁয়ার মতো পাক খেয়ে উঠছি
ভেসে যাই রাত্রি ঘেরা শূন্যে আর 
নিঃস্ব অনুভবে দূর দূরান্তের আহ্বান ধ্বনি 
কত পেছনে পড়ে আছে জৈবিক জীবন 
বাতাসের মতো হাল্কা এ শরীর মিলিয়ে যাচ্ছে 
চোখের কাছে কোনো জগৎ নেই অনুভবের 
কেবল দুর্নিরীক্ষ্য এক আলোক বিন্দু 
       


কাটা শেকড় 

গভীরে চারিয়ে যাওয়া শেকড়েই বড় হচ্ছি 
ক্রমে তার শাখা প্রশাখা ; ব্যাধিও 
শেকড়ের এক শরীর থেকে আর এক শরীরে 
কান্ডে লতায় পাতায় মাথায়ও 
পচন ধরা অঙ্গ কাটতে কাটতে গলার কাছে পৌঁছাই 
কোথায় শেষ খুঁজতে খুঁজতে আসে আরো ব্যাধি 
সমূল উৎখাত প্রক্রিয়ার স্থগিত ভাবনায় 
অতলান্তের নিশানা ভরে বিরাট গর্ত 
কাটা শেকড়েই বড় হই ব্যাধির নামান্তরে 
             

এষণ

কাটাছেঁড়া দিন তো পেরিয়েছি অনেক 

তারপর নুড়িপাথর ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখি 
পৃথিবী অন্ধকার ভেতরে ঘুম নেই 
চোখে ঘোরে অদৃশ্য এক ছায়া 
নিঝুম রাত কোনো ইঙ্গিত দিয়ে যায় 

নিশুতি দরজায় কেউ কেউ আসে 
স্বপ্ন , সুখ নিয়ে প্রেম , কাতর যন্ত্রণাও 
তবু কেন বুঝিনি এত আঁধার ঘনঘোর 
আর তাচ্ছিল্যের মতো সরে যায় রঙ 
          


অনন্ত যাত্রা 

বাতাস কাঁপছে ঝিল্লি পাতায় 
নিশাচর ডানার শাপে 
শেয়ালী বিষাদের মতো এক হয়ে যাই 
রাতের গভীর তপস্যা যেন কালো মেঘ 
শিশিরের শব্দে সুখ দুঃখ ঝরে যায় 
আর অমৃত পানে শুষে নিই যত অন্ধকার 
গাছের হৃদয় ভরা স্তব্ধতা নিঃশব্দে মাখি 
এগিয়ে চলি অনন্ত যাত্রায় 
          

দাহ স্পর্শ 

ঊষালগ্নে আগুন স্পর্শে অঙ্কুর নির্বীজ 
ধান সেদ্ধর ধোঁয়ায় পাকিয়ে উঠছে শ্মশান শিখা 
হারায় নৈবেদ্য পবিত্র উপাচার প্রয়াসও 
ফুল দূর্বা প্রদীপ ছোঁবে না আর 

তবু এ সাধনা অনর্থক নয় 
ভিক্ষায় লব্ধ হতে কালাতিপাত 
মুটে মজদুর থেকে উচ্চ তলা আপামর 
নিরন্ন বুক বাঁধে একমাত্র সম্বল 
নরনারায়ণ সেবায় অন্নই লক্ষ্মী 
         
    ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু  

Post a Comment

0 Comments