গো বি ন্দ বা রি ক
শ্রাবণের বীজতলা মাঠে কৃষকের সবুজ মনে আনন্দের ঢেউ
মাটি যেন অভিসারিকা
ঋতু যেন মনের বসত
হাসি যেন বয়ে যায় মেঘে মেঘে
লাঙলের ফলায়, মাটিতে
ঝিরঝির বৃষ্টি বিনুনি কাদামাটি প্রস্তুত করে লাঙলের ফলা , মই যেন কষ্টের সমান ও সমান্তরাল উপপাদ্য কৃষকের জ্যামিতি
মজুর ও দিন গুণে চারা রোপিত হলে পাটিগণিতের ঐকিক নিয়ম বৃষ্টিতে হামাগুড়ি দেয়।এসব নিয়ম কৃষকের জানা নেই, তবুও
ঝরে পড়া ঘাম মাটিতে মিশলে জমিন
হয় সোনা
কবিতা লেখার আগে মনের জমিন
প্রস্তুত করে নিতে হয়,ফলা দিয়ে হৃদয়ের
আগাছা দমন করে মই নিয়ে কবিতার অক্ষর সাজিয়ে পরিমাণ মতো অভিজ্ঞতার সার ছড়িয়ে শব্দের চারা বোনো, হ'ল কি কবিতা?তাও নয়,সময়ে শব্দ-সেচন, আগাছা শব্দ-নিড়ান,
ক্লান্ত ও রাতের ঘুম,ভাব-ভাবনার নিরন্তর সংগ্রাম, তবেই কিনা কবিতার শীষে ক্ষীর
কৃষকের শরীরে যেভাবে মাঠ দিন-রাত
তরঙ্গ তোলে,পরনে পাঁচি ও ময়লা গামছায়
পেটের খিদে-তেষ্টা কাদামাটি মেখে কাটিয়ে দেয় অনন্ত যুগ। বর্ষাকাল।চাষের ঢেউ সারা
মাঠ জুড়ে। কালোজাম মেঘ ছাই শরীর নিয়ে
ঝড় তুলেছে জোনাকি-মনের দিগন্তে কবিও
"হেট হেট , হুর হুর" সুরগুলো যেন এক একটা
কবিতার-মাঠ, চষার বলদ
মই দেওয়া জমিন কবিতার খাতা
রুইয়ে দেওয়া চারা শব্দের ঝাড়লণ্ঠন
কাঁচালঙ্কা ,পেঁয়াজ,আলু ও পান্তা, সবুজ মাঠ
শান্ত কৃষাণীর কবুতর আঁচল।
কাদামাখা খেতে একদিন ভরে যাবে
সোনালী ধানশীষ, উঠোনে পাতবে জ্যোৎস্না
রূপোলি কৃষক
গৃহে দক্ষিণের বারান্দায় নির্জনে
যে-বৃষ্টি হাতে বুলিয়ে নাও, তারপর চোখে,
কপালে, বাঁধাচুলে, এলোমেলো দুঃখ রং গুলো
মিলিয়ে যায় তৃষ্ণার্ত বিনুনিতে
তোমার ইষ্টদেবতা যে-কৃষক __
অনন্য বৃষ্টিমুখর শ্রাবণ-পুরুষ।
শুধু মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে
কেন এই হা-ভাতে কৃষক-বৌ হয়ে
সব সুখ বিলিয়ে দিলে চোখের জলে
অভাব এখানে চৌকাঠে
ক্ষুধা দুয়ারে থালা পেতে
নারকেল তেল আর ফিতের দড়ি বাঁধা
মাঝে মাঝে এক চিলতে বিকেল
কেবল এক গোছা ধানচারা ভালোবাসার
গোলাপ হয়ে বেঁচে থাকা
মুখোমুখি কিছু কথা...
দিনান্ত গায়ে মেখে কখনো মাঠের
কৃষক হয় গোধূলির উড়ন্ত বলাকা,
কখনো ঝিমকালো মেঘ, পাগলা বৃষ্টি
এই রোদ্দুর তো এই নীল ওড়না।
বৃষ্টি ছুঁলে দেহ হয় প্রেম
মা কিছু পার্থিব তা হল মোহ
গৃহ হল অন্তর্লীন ভালোবাসার স্রোত
প্রেম মিশিয়ে দেয় অন্তর্লীন স্রোতে,এই হল
কৃষকের নক্ষত্র-যাত্রা।
মাঠের দিকে তাকিয়ে হুবহু একটি
ধরিত্রী তুলে আনে চোখের ব্যাকরণে
সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আলো-ছায়া,
লোড-নির্লোভ সবই মিশে যাবে মাটিতে --
এ এক অনন্ত আঁখিপট।
0 Comments