জ্বলদর্চি

অশুভ জড়ুল পেরিয়ে/খুকু ভূঞ্যা

  ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


অশুভ জড়ুল পেরিয়ে


খু কু ভূ ঞ্যা

কিছু একটা আছে জেনেই রক্তে মাতাল দৌড়
ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে, কুয়াশা আর রোদ্দুরের পিছু।

প্রথম চোখের ওপর চন্দন বৃক্ষের ছায়া
যা দুলতে দুলতে নাড়িয়ে দিত 
বালিকা ঠোঁটের তিল
শুভ আলোর বার্তায় নেচে উঠলে 
বাম চোখের তীর প্রজাপতি উড়ে যেত 
অধরা আলোর দিকে
যে আলোর দীপ আগলে বসে মা
গর্ভগৃহে নদী ঢেলে নির্বাক তাকিয়ে
ভোর হওয়ার দিকে।

সেই ভোরের অয়ন ছুঁয়ে ভাবের চক্ষুদান
চোখ মেলে দেখলাম 
কুমারী স্বপ্নে আঁকা নতুন পৃথিবী
দীপ ধোয়া জলে পা ডুবিয়ে বসে, বলছে
জলের জগতে ভাসতে ভাসতে মরো বাঁচো
মেলে দাও বট শিকড়
স্নান শুয়ে থাক বাঁধে দেয়ালে

সেদিন থেকে বাধ্য নদী,আলো দিলে 
আলো খাই, ছায়া দিলে ছায়া
ইচ্ছের দায় বহন করে ভাঙতে চাইনি পাড়
তৃষ্ণা মরুলোকের প্রেত
কাঁটাফুলে ভরিয়ে দেবে খোঁপা
একটি চুমুর ক্ষতচিহ্নে ডুবে যাবে 
শুসনিঘাস কথা, এভাবে শেষ হলে 
জীবন জন্ম নেশাতুর সিগারেট ঠোঁটে
তবে প্রেমের অভাবে এ মন ভিক্ষাপাত্র হোক
দেখি তারও পরে জেগে আছে মোহনরাত
যে চাঁদের দহন পেরিয়ে সূর্য দেখায় পথে
আশ্বিনী আলোয় ফোটা কাশফুল 
মেঘে ভেসে যায়
কাল পরশু আগামীর কথাকাল
কেঁপে ওঠা দৃশ্য অশুভ জড়ুল পেরিয়ে
ভয়ের ভয় জিতে নিয়ে হাসে খিলখিল

ভয় এক অসুখ
নিরাময় চেয়ে হাঁটি লক্ষ্মী চাঁদের ছায়ায়
কেউ বা কারা যেন
অসুখের ছাঁচে ঢেলে দিল কোজাগর রঙ
মুছে গেল পৃথিবী পথের কেসুতি ফুল
খাঁ খাঁ মন্দির, ভগ্ন স্তুপের কান্না ঠেলে
জানালা খুঁজছে সাঁই

একি হোলো!
কাকলি হারিয়ে গেল জবাফুল জলে
সেদিকে তাকিয়ে কাশিকাকার 
ঢুলে আসছে ছায়া গলা ভর্তি 
যক্ষ্মার করুণ আর্তনাদ
আলো যতদূর ততদূরই অসুর কুয়াশা
এরপর সন্ধ্যাচরে বসে হিংসা খাবে মানুষ
একে অন্যের বুক চুসে গড়বে 
দিকে দিকে কংকাল জনপদ
অমৃত লোকের পাখি সুধা চাই-- সুধা চাই--
ডেকে ডেকে হেঁকে হেঁকে 
ফিরে যাবে তমসা গুহায়।

শৈলদিদি বলে ঘুমের কবর থেকে 
উঠে আসা স্বপ্ন খোঁজে প্রজাপতির শব; 
ফুলে ফুলে মরণ কৌতুক
লাশকাটা ঘরের দিকে তাকিয়ে 
কেরোসিন পোড়া বৌ--
কিছু পরে শনাক্ত হবে পৃথিবীর বুক, 
তারপর--? ওহে কলমীফুল মেয়ে
যে মাটিতে হাওয়া আলো প্রেম নেই
পাটপাতা অন্তরে লেখোনা চৈত্রগান
ফিরে যাও দৈত্য বাসরে
ভক্ষকে দিয়ে নদীকাল জ্বলে পুড়ে মরু হও
তারপর বসুধাকে বলো শেষ কথাটি,
হে ধরিত্রী দ্বিধা হও

নীলামাসি বলছে,
মাছিডোবা নীলমদে ডুবে গেছে কিশোর
ফ্রকপরা মালতী ফেরেনি ঘরে
স্বামীজী স্বপ্ন তাকিয়ে যুবক দুপুরের দিকে
শূন্যে বিলীন-- তারপর--
কতদূর যাবে ওহে চৈত্রদিনের ধূলিকণা
পরাশ্রয়ী ঝুমকোলতা আলো
পাবে না মাটি; তারচেয়ে বলো ডুবন্ত নীড়ে--

কিছুই বলিনি কাউকে, বিস্তর জানি
রক্তদিনের চাঁদ ছড়াবে না খৈফুল হাসি
তার চেয়েও করুণ ছায়া নামছে;মুখোশ আড়াল
তারও পরে আমি সেরে ওঠা ভোর, শান্তি পাখি
রক্ত পাত্রে ডোবাইনি চোখ
যে যার দহনে মরুক নিজের মতো
আমি কাশফুল ঝোরা;বোধন
টাটকা রেখেছি সত্য পূজার ফুল;
যাও যাও বিগড়ে দিও না
আজও সব আছে, মায়ের মেঘ রোদ সংসার
নুড়ির মতো ছড়াছড়ি।

ঐ তো আলোর দোল
শিশুটি হাসল যেই সব গাছ ভরে গেল ফুলে
মাটির অন্তর ছুঁয়ে বিথি খুঁজছে সরস্বতী স্রোত
ঘাস ফড়িং এর সাথে হাঁটতে হাঁটতে নীলু, দাদুর চোখে দেখছে আকাশ
সীমা রেখা মালবিকা শরীর 
আগুন নিয়ে পেরোচ্ছে চৌরাস্তা, নির্ভয়

আহা আলো আনন্দে সঙ্গম
ঐ যে জয়দীপ, আগুন থেকে আলো বাছছে
বিড়ি বাঁধা হাতে ছিঁড়ছে মাকড়শা জাল
সে গান গায়, 
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও--
সে কবিতা লেখে,
মরে মরে ফিরব আবার
হে অনিকেত
তোমার পায়ে দীপ জ্বালাতে
সে স্বপ্ন দেখে--
ছায়াপদ্মের নাল ভেঙে ভোর হয়ে আসছে।

ঐ তো বিলু ধ্যানে বসেছে
আঠারর শোক পাত্রে ছড়িয়ে দিচ্ছে 
বেগুনফুল আলো
চারপাশে কী নরম স্নিগ্ধতা
হেসে খেলে ভেসে যায় 
আরো কত নক্ষত্রের দেশে।

ঐ তো আমার প্রথম চোখ,,
মালতী বীজ দিয়ে বলছে,যাঃ ফুল ফোটা
অন্তর কোমল হোক
ছড়িয়ে পড়ুক জীবনে জীবনে
যাঃ ফুল হয়ে যা।

দ্যাখো ঐ তো বংশী পাগলা
লাল মোরামের বাঁক পেরিয়ে,মাঠ ঘাট 
চষে চষে স্তনঘাস খুঁজে খুঁজে আকুল, 
হলুদ অঘ্রাণে।

ঐ যে রাজু
একটি শিমুল চারার দিকে তাকিয়ে
আত্মহত্যা সরিয়ে চাষবাস শিখছে
চাবুকের দাগ লুকিয়ে লেখামাসি 
আগুন বাঁচায় আঁচে
রাজুরা ফিরবে সূর্য ওঠা ভোরে।

ওহে রক্তদিনের করবী দুপুর,ডেকো না
দেবীপক্ষে জন্ম নেওয়া সন্ধ্যা বনের ঝিঁ ঝিঁ
এক কলাই পৃথিবী নিয়ে সুর খুঁজি জীবনের।

যে চোখ পশ্চিমে ডুবে গেছে যাক
পুবের বেড়া দিয়ে দেখব চিরন্তন
লক্ষ্মীধান নিয়ে মা বসে সাগরপুরার মাঠে
চণ্ড্যার জল ভাঙে পলি নীরবতা
ঠাকুমা গড়ছে সবুজ খুশি ঘর, জনপদ
ঘাসফুল প্রজাপতির মাথায় হাত বুলিয়ে 
বাবা বলছেঃ
পৃথিবীটা সুন্দর, সবুজ অবুঝ স্বপ্ন 
অথবা আলোর অশ্রুপাড়া

তারই স্নায়ুতেই জেগে থাক এক মাটি জোনাক
ভোরের স্বপ্নে মগ্ন
ঘুম ভঙিও না হে দুরন্ত,
হে আমার মধ্যদিনের পাপ---
  ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

0 Comments