জ্বলদর্চি

দীর্ঘ কবিতা / সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক



উন্মাদ-ছায়া

সৌ মে ন্দ্র  দ ত্ত  ভৌ মি ক

 

সেই যে এক পাগল, পাগলামীতে কাঁপে রাত-

বাতাস ভারী, মহা কলরোলে তার সাথেই

বিবাহ-বন্ধন।

কালবোশেখের আমেজখানি শিরায়-শিরায়

শোণিত-হ্রদে দিব্যি মাতোয়ারা, মাতন হলেই

সুস্থতায় মৃত্যু পরোয়ানা হঠাৎ জারি-তখন

হারায় তার কান্না, শান্তশিষ্ট ভদ্র পাড়ায়

শুধু শুধুই হাস্য-স্রোতে এখন-তখন গড়াগড়ি।

সেই পাগলের ভাঙা বাড়ি

জুড়বে কে কে? তেমন আঠা কোথায় এখন?

মায়ের আঁচলখানি ভরসা ভেবে

কিয়দক্ষণ সময় যায় মুখ লুকিয়ে,

‘হায়রে সোনা, তোর ভেতরের ছোট্ট শিশু

শিথিল পায়ে এখনো হাঁটে!’

এই সংসার কসাইখানা, ছেলের জগত ছিঁড়ছে খালি

              চোখে মুখে ছুঁড়ছে বালি

বিষ ঢালছে গ্যালন-গ্যালন।

 

সেই যে পাগল, পাগল ভেবেই

এড়িয়ে যায় মগজ বোঝাই পোকাগুলো।

এমন-কি তার ভালবাসার পরম জন

পরিহাসে ব্যঙ্গ-রসে জারণ করে,হরণ করে

বাঁচার প্রিয় মোহন-ধন,

তার কাছতেই ছুটছিল মন তীক্ষ্ণ দীর্ণ

হতাশ ছেড়ে আলোর খোঁজে,

অথচ সে সজাগ হল অন্ধকারেই

‘দূরছাই! এই মরদের সোহাগ তেমন

গাছ-গাছালির ছায়া দেবে আশা কই?’

জমকালো সব গয়না-শাড়ির মোড়কগুলোয় ওঠে উথলে

রণচণ্ডী, রণাঙ্গিনীর জীবনযাপন,

স্বর্তস্ফূর্ত কুলাঙ্গিনীর মনের জোরে তারস্বরে

ধ্বংস-আনন্দে রাজ্যস্থাপন।

সাদা-সিধে সরল মনন ছলছলানির খুব জোয়ারে

ভেসেই চলে নিজের গাঙে-

সে যে পাগল,পাগলামী তার অলঙ্কার

সেই ভূষণের নানান বর্ণে হাসছে কুটিলা,

তারপরেতেই

অধিক ভালো বিষয়-আশয় স্বামীর থেকে

অধিক কদর পেতে পেতেই হা-হা দারুণ আত্মহারা!

 

ফুটল না ফুল, ব্যর্থ প্রণয়!

মুখ লুকিয়ে প্রতারকটা ছিলই অজেয়,

মা ও ছেলে অবশ কাঁপুনি জ্বরে ভাবছে এ কেমন নারী!

দুঃখ তখন মহারুদ্রতেজে প্রবলতর মহামারী।

উন্মাদ-মন চায় পালাতে! কোথায় যাবে? জায়গা কোথা?

চারপাশেতে বাণভাসি জল থৈ থৈ থৈ।

 

নিথর পাষাণ মা-ও এখন তবে

জীবন ভেবেই নিরর্থক, নব পথটি ছেলের কাছে

জীর্ণ শূন্য ঘৃণ্য মৃতপ্রায়।

সেই যে এক পাগল, উথাল-পাথাল পাঁকাল পথটি

শুয়েই আছে চোখের কোণে,

সব কিছুতেই অবান্তর ভাবনাগুলো নোংরা ভর্তি

অন্ধ বদ্ধ কুঁয়োয়

ঘুরপাক খায়, ঘুরপাক খায়, ঘুরপাক খায়...।

 

 

Post a Comment

0 Comments