জ্বলদর্চি

দীর্ঘকবিতা / শ্যামলকান্তি দাশ


পরস্পর 

শ্যা ম ল কা ন্তি  দা শ

–একা যেতে ভয় করছে?
–করছে বইকি। বেশ ভয়।
চারদিকে শেয়াল খটাস ভাম।
জঞ্জাল। আবর্জনা।
দু’পেয়ে। চারপেয়ে।
ভাবলেই মাথা শূন্য।
বুক খালি।
হাত-পা শীতল।
আনন্দ পুলক সব ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

–বলেছেন ভালো ।
তা হলে চলুন যাই নিরাপদ নির্বিকার 
শান্ত নীল গভীর রাস্তায়।
কোথাও না থেমে আজ
একটু একটু করে
আপনাকে সুগোপনে বাড়ি পৌঁছে দিই।

–বাড়ি! ওরেব্বাবা! অতটা কষ্ট করে কাজ নেই। বাড়ি আর বাড়ি নয়। হট্টমন্দির।
পাখি সব করে রব।
রসবেত্তা। ভাবুক। বিদুষী।
বাড়িটাড়ি বাদ দিন। ভিড়। ভিড়। 
মারাত্মক ভিড়।

–তা হলে চলুন যাই কাছেপিঠে।
রেস্তোরাঁয়।
এ এক ভবের হাট।
নব নব আনন্দের অবাক ফোয়ারা
সুখাদ্য শ্রবণ করি।
আলাে। ছবি। আরাে প্রাণ। আরাে আরাে প্রাণ। তনুমন সিক্ত করে আসি।

–দুর, দুর। ওইসব আপনার কম্ম নয়। 
তা ছাড়া কেন-বা যাব রেস্তোরাঁয়।
ঠোঁটকাটা। নাকউঁচু। কানএঁটো হাসি।
তা ছাড়া আমিষ বড়াে।
খস্ খস্।  ঘস্ ঘস্।
 আমিষ। আমিষ।

–গবেষণা করে কোনাে লাভ নেই। চলুন। চলুন। ডানদিকের রাস্তা ধরি। রাস্তায় আবার।
ধুলাে দেখি। মাটি দেখি।

আকাশ অনন্ত দেখি। 
বৃক্ষ। গাছ। বনস্পতি। 
জলাশয়। অথবা মৃত্তিকা।
তা ছাড়া নতুন ফুল। সন্ধ্যা লেগে প্রেম লেগে অপূর্ণ চুম্বন লেগে ছবিচিত্রে পূর্ণ হয়ে আছে।

- কাব্যের অপূর্ব ছটা।
 বলছি কী, রাস্তা এখান থেকে 
ঠিকমতাে দেখা যায় না। 
সব রাস্তা সরু ও অপরিসর।
রাস্তা দু'ভাগ। 
হেঁতালের লাঠি নিয়ে প্রভুজন বসে আছে। পেঁদিয়ে বৃন্দাবন...। খাল খিঁচে দেবে।

–ঠিক। ঠিক। একেবারে ঠিক কথা।
 তা হলে কী আর করা?

–প্রান্তরে ফাঁকা মাঠে ধেই ধেই নৃত্য করি। গৌরনিতাই।
নয়তাে আসুন –আমরা দুটিতে মিলে
উড়ে যাই। অসীম আকাশে উড়ি
পূর্ব পশ্চিম দেখি। ঈশান নৈঋত। 
মানুষের মন দেখি। সাদাকালাে।
নারীর ভূষণ।
আমাকে আপনাকে দেখি। 
শােয়া। বসা। ওঠা। পড়া।
পতন। অভ্যুদয়।
দেখি কীরকম প্রেম। কত দূর। কতখানি কোথায়। কতটা।  
দেখি না মানুষ আজ
কি উপায়ে পারো!

সেই ভালো। সেই ভালাে।
–ওড়ার অপর নাম উড্ডয়ন। চলুন আকাশে। কিছুটা আকাশে আর কিছুটা হাওয়ায়।

–আমাদের ডানা আর তেমন পলকা নয়।
নয় আর কমজোরি। কঠোর। কঠিন।
মাঝে মাঝে মচকায়। কিছুতে ভাঙে না।

–তা ছাড়া ডানায় আজ কত রঙ। রঙধনু। 
ভাঁজে ভাঁজে কীসব রঙিন।

–আমাদের জোর কত বেড়ে গেছে। 
ভেবেছ কখনও?

এতটা উঁচুতে তবু আমাদের কী সাহস। 
বীর্যের কী দারুণ শৌর্য। দাপট।
উড়ে উড়ে উড়ে উড়ে এবার আপনাকে ধরি। তারপর দশ খণ্ড পাঁচ খণ্ড তিন খণ্ড সাত খণ্ড– টুকরাে করে কেটে কুটে ছড়াই কাকের মুখে– আপনাকে আমি আর আপনি আমাকে!

– আমাদের বাঁচামরা এইমতাে। একপ্রকার।
চাঁদেসূর্যে অপরূপ।
সুনির্মল পাখির মতন।

– আমাদের উড়ে যাওয়া সাংঘাতিক। সাবলীল। এ-আকাশ। জল। হাওয়া।
আরও দূর। আরও পর্যটন।
----------

Post a Comment

9 Comments

  1. বেশ । দারুণ। ব্লগখানাও।

    ReplyDelete
  2. অনবদ্য, অসাধারণ, কবিতা।
    দীর্ঘকবিতার এই ব্লগের আরম্ভে প্রিয় কবি, শ্রদ্ধার মানুষ শ্যামলকান্তি দাশ কে পেয়ে অত্যন্ত ভালো লাগলো। / পার্থপ্রতিম আচার্য

    ReplyDelete
  3. অসম্ভব ভালো লাগল প্রিয় কবির দীর্ঘ কবিতা।

    ReplyDelete
  4. জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়August 5, 2020 at 6:18 PM

    দারুণ শ্যামলদকান্তিদা!

    ReplyDelete
  5. জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়August 5, 2020 at 6:20 PM

    শ্যামলকান্তিদা

    ReplyDelete
  6. মন্তব্য করা ধৃষ্টতা। ভালো থাকবেন কবি।

    ReplyDelete
  7. এ কবিতার কাছে নিজেকেই খুঁজি বারবার। বারবার। হা দন্ত শাবক হয়ে ধূলোমাটি মাখি, আর খেলি কাটাকুটি।
    অভিনন্দন রইলো।

    ReplyDelete