মেদিনীপুর শহরে নজরুল প্রসঙ্গ
আ জ হা র উ দ্দী ন খা ন
নজরুল মেদিনীপুরে প্রথম এসেছিলেন ১৯২৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী। এর আগেও তিনি এসেছিলেন, তবে তখন তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেননি। সাধারণত নজরুলের নাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর 'অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থের জন্য। বিশেষ করে 'বিদ্রোহী' কবিতা তাঁকে নজরুল হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়। রবীন্দ্রনাথ একটা গান লিখেছিলেন- 'অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে'। গানটি অবশ্য নজরুল সম্পর্কে নয়। রবীন্দ্রনাথ স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে গানটি লেখেন। তবুও লােকে মনে করে যে যেহেতু 'অগ্নিবীণা' নজরুলের কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল, রবীন্দ্রনাথ তা মনে করে গানটি লিখেছিলেন। কিন্তু তা সত্য নয়। যাই হােক, নজরুল মেদিনীপুরে এসেছিলেন তিনদিনের জন্য। যেদিন প্রথম আসেন সেদিন তাঁকে দেখার জন্য দারুণ ভিড় হয়েছিল। কারণ তখন তিনি জনপ্রিয় কবি। তাছাড়া তিনি অপরিচিত লােকজনকেও আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর হৃদয়বত্তা খুব প্রখর ছিল। সেই হিসেবেও নজরুল জনপ্রিয়।
তবে নজরুলের মেদিনীপুরে আসার সঙ্গে এক বিয়ােগান্তক ঘটনাও জড়িয়ে আছে। তিনি খুবই সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। মেদিনীপুরে টাউন স্কুলের মাস্টারমশাই জ্যোতি দাসের মেয়ে কমলা দাস। অনেকেই নজরুলের গলায় মালা পরিয়ে তাকে স্বাগত জানান। কমলা দাসও তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু তিনি মেয়ে হয়ে যেহেতু নজরুলের গলায় মালা পরিয়েছিলেন, ফলত তখনকার সমাজ এই বিষয়কে ভালভাবে নিতে পারেনি। এই ঘটনায় সমাজের বক্তব্য ছিল মালা দেওয়া হয়েছে মানে বিয়ে হয়ে গেছে। এই সমাজনিন্দার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটি নাইট্রিক অ্যাসিড পান করে মৃত্যুকে বরণ করে। আমার লেখা বইয়ের প্রথম দুটো সংস্করণে মেয়েটির নামটি আমি দিইনি। কারণ তখনও মেয়েটির বাবা বেঁচেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমি কমলা দাসের নামটি উল্লেখ করেছি। নজরুলের চেহারার সৌন্দর্যে অনেক মহিলা মােহিত হয়েছিলেন একথা ঠিক, কিন্তু এরকম ট্রাজিক ঘটনা মেদিনীপুর ছাড়া কোথাও আর ঘটেনি।
মেদিনীপুরবাসীর প্রতি নজরুলের উদ্দীপনা : মেদিনীপুর বাসীর উদ্দেশ্যে তিনি 'ভাঙার গান' কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন। কেননা তখন মেদিনীপুরের চারিদিকে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলন সাড়া ফেলেছিল। ইংরেজের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মেদিনীপুরের লােকেরা বিদ্রোহ ঘােষণা করেছিল। আমরা সবাই জানি ক্ষুদিরামের, প্রদ্যোতের ফাঁসির কথা। এই আত্মত্যাগ মেদিনীপুর শহরবাসীকে যেমন উদ্দীপ্ত করেছিল তেমন গােটা ভারতবর্ষেও এক আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল।
নজরুল চর্চা : এ যুগে নজরুলের বিখ্যাত কবিতাগুলি আবৃত্তি হয় প্রধানত। অবশ্য তাঁর প্রায় হাজারখানেক গান নজরুলগীতি বলে রেকর্ড হয়ে আছে। এখনতাে সব সি.ডি-র যুগ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ধারা যেমন আছে তেমনি নজরুল গীতির ধারাও আছে। সেইদিক থেকে রবীন্দ্রগীতির পর নজরুলগীতি নামােল্লেখ করতে হয়।
নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ : নজরুলকে আমি খুব সুস্থ অবস্থায় দেখেনি। অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেছিলাম। তখন তাঁর তীব্র অর্থাভাব। সে কারণে মেদিনীপুর কলেজের উদ্যোগে মেদিনীপুর কলেজ একাদশ ও কাঁথি একাদশ মিলে একটা চ্যারিটি ফুটবল ম্যাচ হয়েছিল। সেখান থেকে যে চারশাে পাঁচশাে টাকার মতো উঠেছিল, তা আমরা নজরুলকে দিতে গেছিলাম। সে সময় আমি নজরুলকে দেখেছিলাম। তখন তাঁর পাগল অবস্থা। তাঁকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখা হােত - না হলে তিনি বাইরে বেরিয়ে যেতেন। আর তাঁর স্ত্রীও পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। উঠতে বসতে পারতেন না। সবসময় শুয়ে থাকতেন। পরিচারিকা ভাত মেখে খাইয়ে দিত - এরকম অবস্থা। নজরুলের শেষ জীবনটা খুব কষ্টের গেছে।
(সাক্ষাৎকার ও অনুলিখন : অনুপ মাহাত)
3 Comments
সমৃদ্ধ হলাম
ReplyDeleteনতুন তথ্য পেলাম।
ReplyDeleteঅজানা কিছু নতুন তথ্য জেনে সমৃদ্ধ হলাম 🙏 অনেক ধন্যবাদ আজহারউদ্দীন স্যার ও গৌতম বাবুকে 🙏❤️
ReplyDelete