জ্বলদর্চি

লোককথা বোকা তাঁতি - ২০


লোককথা বোকা তাঁতি 

গল্প - ২০

সু ব্র ত  কু মা র  মা ন্না 


'পিঠেটা এসে পড়ে বােকার মাথায়'

বােকা তাঁতির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালাে ছিলাে না। কোনো কাজ সে বুদ্ধি খাটিয়ে ঠিকঠাক করতে পারত না। একদিন এক সাধু তাঁতির বাড়ীতে ভিক্ষা করতে আসে। বােকার বাড়ীতে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার পর তাঁতিকে দেখে সাধু বলে, "তােমার সামনে খুব বিপদ, তােমার মৃত্যুযােগ দেখা যাচ্ছে। তবে দেখবে, যেদিন তােমার মাথার উপর অর্ধেক চাঁদ ভেঙে পড়বে আর তুমি দেখতে পাবে যে যম তােমাকে আনতে আসবে। সেদিন তুমি মারা যাবে।

সেই কথা শােনার পর থেকে তাঁতি খুব ভয়ে ভয়ে থাকে। কোন কাজ তার মন বসে না। ঠিক মত খেতেও পারে না। শুধু তার মনে ভয় আর ভয় - মরে যাবার ভয়।

একদিন রাতে তার স্ত্রীর কাছে বলে - "আমি তো আর বেশিদিন বাঁচবাে না- আমার সাধ-আহ্লাদ পূরণ করাে আমার এখন আসকে পিঠে খেতে মন হচ্ছে"। বােকার বৌ চোখের জল মুছতে মুছতে চাল বাটে, কড়ায় তেল বােলায়। কড়াইয়ের চোঁ ..চোঁ শব্দের সঙ্গে কান্নার শব্দ মিশে যায়। শেষে দুয়ারে খাবার জায়গা করে বােকাকে যত্ন করে পিঠে খেতে দেয়। পাশে বসে তালপাতার পাখায় বাতাস করে।

বােকা আনমনে খেতে থাকে। সেই সময় রান্নাঘর থেকে একটি গেছে ইঁদুর পিঠের থালায় উঠে পিঠে খেতে আরম্ভ করে। বােকার স্ত্রীর আওয়াজ পেয়ে একটি পিঠে নিয়ে পালায়। বারান্দার চালে বসে পিঠে খেতে খেতে হঠাৎ মুখ থেকে পিঠেটা পড়ে যায়। আর সেটা এসে পড়ে বােকার মাথায়। বােকা ভাবে অর্ধেকটা চাঁদই তার মাথার উপর পড়েছে। এবার বুঝি মরার সময় হয়েছে। মরার কথা ভাবতে ভাবতে রাতের অন্ধকারে বােকা কবর স্থানে যায়। কিছুটা মাটি খুঁড়ে গর্ত করে বসে থাকে। আর বারবার উঁকি মেরে দেখে যে যম তাকে আনতে আসছে কি না।

দেখতে দেখতে ভােরের আলাে ফোটে। সকালে কাজে যাবার পথে গ্রামের লােক তাঁতিকে দেখতে পায়। জিজ্ঞাসা করে, “তুমি এখানে এইভাবে বসে আছাে কেন ?” তাঁতি তাদের সব কথা বলে, সেই কথা শুনে সবাই হাে হাে করে হেসে ওঠে। বলে, কেউ কখনাে তার মৃত্যুর কথা জানতে পারে ? হাসতে হাসতে বােকাকে চ্যাংদোলা করে টেনে হিঁচড়ে গর্ত থেকে বার করে। বােকা কান চুলকাতে চুলকাতে বাড়ীর পথ ধরে।

Post a Comment

0 Comments