'Shantilal O Projapoti Rohoshyo' cinema.
শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য : এক ট্যাটুতেই রহস্য চাবি
পরিচালক : প্রতিম ডি গুপ্তা
অভিনয় : ঋত্বিক চক্রবর্তী, পাওলি দাম, গৌতম ঘোষ
মুক্তি - ১৫ আগষ্ট ২০১৯
রেটিং – 2/5
প্রথমেই একটা কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো, ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’ কোনও গোয়েন্দা সিনেমা নয়। এটি নেহাতই একজন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারের কাহিনি। অবশ্য ‘ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ এক ধরনের গোয়েন্দাগিরি তো বটেই। সে কী ভাবে একটি ‘লিড’ ধরে এমন একটি স্টোরির পিছনে ছোটে যা নাকি বিনোদন জগতকে সম্পূর্ণ ভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে। সেই গল্পের মূলে আছে একটি প্রজাপতির ট্যাটু। সেই ট্যাটুর খোঁজেই শান্তিলাল কলকাতা থেকে চেন্নাই, সেখান থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত পোঁছে যায়।
শান্তিলাল ‘দ্য সেন্টিনেল’ নামক সংবাদপত্রের ওয়েদার রিপোর্টার। চিরাচরিত মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রতিনিধি হিসাবে শান্তি আদর্শ! মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে খায়, সকালে তাড়াহুড়ো করে কোনও রকমে অফিস যায়, নিজের ডেস্কে বসে মনে মনে ঈশ্বর-স্মরণ করে কাজে বসে, মুখ বুজে বসের রক্তচক্ষু সহ্য করলেও দিনের শেষে অফিস-তুতো দাদার কাছে দুঃখ করে বলে যে মিথ্যা রিপোর্ট লেখার এই নিত্যদিনের চাপ সে আর নিতে পারে না, তার বিবেকে লাগে। তার পর বাড়ি ফিরে আসে এবং এই রুটিনের জাঁতাকল চলে ৩৬৫ দিন। কখনও নিজের কাম-স্পৃহা নিবৃত্ত করার জন্য ডিভিডি চালিয়ে নিষিদ্ধ ছবি দেখে। কিন্তু এই অবসর অযাচিত ভাবে তাকে এনে দেয় তার কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় স্টোরি, সে জড়িয়ে পড়ে এমন এক রহস্যে, যা উন্মোচন করতে গিয়ে সাংবাদিক শান্তি হয়ে ওঠে গোয়েন্দা শান্তি, এবং এখান থেকেই রহস্য শুরু। আসলে ছবিটা এক অতি সাধারণ সাংবাদিকের গল্প। তাই ছবিতে সংবাদপত্রের ভেতরের নানা দিক, এক সাংবাদিকের অন্য সাংবাদিকের ‘স্টোরি’ চুরি করার চেষ্টা, দুটো কাগজের মধ্যে রেষারেষি, একটির স্টোরি অন্যটির ঘরে আনার চেষ্টা, এগুলো খুব ভালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ছবিটির অন্য কেন্দ্রে রয়েছে সিনেমা জগতের তারকা নন্দিতা, এবং তাকে ঘিরেই যাবতীয় রহস্য। তার অতীত জীবন নিয়ে এমন এক তথ্য জানতে পারে শান্তিলাল, যে সেই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সে পাড়ি দেয় চেন্নাই, তার পর সিঙ্গাপুর। রসহ্যময়ী এই নারী অভিনয় জগৎ থেকে রাজনীতিতে পা রেখেছেন, অতীতে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসা নন্দিতা যেমন ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পুরনো দিনগুলো ভুলতে চায়, তেমনই আবার গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে ধরেও রাখতে চায়। কারণ পুরনো দিনের নন্দিতাও তার অংশ, সে-ও নন্দিতা। একা দীর্ঘ পথ পেরনো ক্লান্ত অথচ দৃপ্ত নারীর চরিত্র পাওলি দাম ফুটিয়ে তুলেছেন আবেগ দিয়ে, নন্দিতাকে তিনি জীবন্ত করতে পেরেছেন। পাশাপাশি শান্তিলালের চরিত্রে ঋত্বিকও প্রত্যাশিত ভাবে বেশ ভাল। রকেট রঞ্জনের ভূমিকায় অম্বরীশ যথাযথ। ছবিতে একটি ক্যামিও রোলে দেখা যায় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কেও।
মূলত একটিই প্লট, একমুখী ভাবে ছবি এগিয়েছে। ছবির গল্প একমাত্রিক, অন্য কোনও সাব-প্লট তৈরির জায়গা দেওয়া হয়নি। সেটি কোনও ফাঁক বা সমস্যা সৃষ্টি করত না, যদি না সিনেমার চরিত্রগুলির কাহিনি আর একটু স্পষ্ট ভাবে ন্যারেটিভে আসত। মূল চরিত্র, অর্থাৎ যারা মূলত গল্পের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার সংখ্যা দুই। এক জনকে কেন্দ্র করে রহস্য আবর্তিত হয়েছে এবং আর এক জন তার উন্মোচন করেছে। ট্রেলার অনেক বেশি আশা দেখিয়েছিল। তবে দেখা গেল, জট ভাল রকম তৈরি হওয়ার আগেই ছেড়ে গিয়েছে। শান্তিলাল প্রজাপতির জট খোলার আগেই আপনারা দর্শকরা রহস্যের সমাধান করে দিতে পারেন। কিন্তু আনকোরা গোয়েন্দা ও প্রজাপতি রহস্যের সমাধানের থ্রিলটা নিতে ছবিটা দেখতেই পারেন।
রেটিং
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে
0 Comments