জ্বলদর্চি

বদলে যাওয়া বাক্স / স্বপন পাল

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   


বদলে যাওয়া বাক্স 

 স্ব প ন  পা ল

একটা মনের নীচে অন্য মন চাপা পড়ে যায়,
বনস্থলী হলে তবু লেখা হতো কয়লা কাহিনী
পাহাড় কাঁপেনি তাই এতে নেই প্রকৃতির দায়,
গাছেদের সুস্থ দেখে, যে যার রুমালখানি
খুলে, মুখ মুছে ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতরে,
ব্যথার পুঁটলিগুলো ঝুলে থাকে কোণে অন্ধকারে।

বাক্স বদলে যাওয়া, ভ্রান্তি নিয়ে যেরকম হয়,
মানুষতো বাক্সই প্রায়, ভুল করে ঢোকে অন্য ঘরে
অবরে সবরে দেখা, এ মানুষটা সে মানুষ নয়।
ফি বছর বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন অক্ষরে অক্ষরে,
অপছন্দ, পছন্দ সমেত অথচ কোথাও বাক্সটিও 
অবশ্যই বদল হয়েছে, বদলে গেছে তার যাবতীয়।

সুখের জন্য কি না করেছি, শখের জন্যও কতো
শখ পরিচয় হলে, ভারী হয় সুখ ক্রমে ক্রমে,
আলমারির কাচে ঢাকা গলা তোলা ক্লান্ত জয়দ্রথ
আর দেওয়ালে টাঙানো সব শখের চিহ্নে ধুলো জমে।
সুখেরা অসুখ হয়ে পাহারা বসায় বাসি বিছানার পাশে
মুখ বদলে যেতে থাকে, বদল ঘটেই চলে পুরোন উল্লাসে।

ভালবাসার কথা ভাবতে ভালো লাগে এতদূর এসে
ডাঁটো কিম্বা আলগা তারা, হতে পারে সেও শর্তাধীন, 
কতজনকে যা বলার নয় তাও বলে দিয়েছি অক্লেশে
বলতে পারিনি তাকে, ভালবাসি তোকে রাত্রিদিন,
আবছা হয়ে যাওয়া মুখ জানিনা ঠিকানা কতদূর
আসেনি স্বপ্নেও সে, দেখে যেতে কিভাবে রয়েছে শত্তুর।

চলতে চাওয়া চলতে থাকা একদা কখনো এক হয়
যখন মেঘের দৃশ্য বদলে দিতে পারেনা বিকেল,
ছোট ছোট ক্ষতগুলো মারাত্মক পাকে অসময়
নিয়মের আলো আর অন্ধকার খুব বেআক্কেল।
বাঁশির দুপুর তখনও ধরায় ঘোর একা বিসর্জনে,
পীড়িত দেয়াল ছাদ চমকে ওঠে চেনা সুর শুনে।

যে কথা উগড়ে দিলে সব ভার অনায়াসে নামে
তাকেও জমিয়ে রাখি জরুরী চিহ্নিত বন্ধ খামে,
এভাবেই চলে যাবে যুদ্ধ যুদ্ধ সম্ভাবনা নিয়ে
বাক্সে থাকা ওষুধেরা নষ্ট হবে মেয়াদ পেরিয়ে,
তবু কারো না ধরে দুয়ার, যন্ত্রণায় থাকি ঘুমহীন
কাটিয়ে দিয়েছি রাত, করাতে কাটতে থাকা দিন।


বলে দেবো আর নয়, কামিয়েছো বহু দুঃখ সুখ
অভিজ্ঞতা ধার নয়, উপার্জন করতে যারা এসেছিল নিজে 
তীর্থে যাবে ওরা নাকি ভ্রমণে বেরোবে তা ওরাই ভাবুক,
বদলে যাওয়া বাক্স নিয়ে ভাববেনা ওরা তো সহজে।
সমান্তরাল কিছু রেখা ভবিষ্যৎ নামে যাবে ভেসে
ব্যথা চুরি গেলে ভোর কাচের গাড়িতে শোবে এসে।

যাবে সব সিঁড়ি ভেঙ্গে মেঘ ছেড়ে আরো একা নীলে
এতো দূর উঠে যাবে ভাবোনি, দেখোনি আশপাশও
অদৃশ্য হবার আগে দেখবেনা কতোদূর এলে?
কে আছে অপেক্ষা করে দোর ধরে, যদি ফিরে আসো?
উপরের নির্জনতা নির্মম টাঙিয়ে রেখে দেবে 
ফিরবে যে নিরুপায়, নীচে দেখো ঋতুদল মেতেছে উৎসবে।
 
এসব কি সুখের কারণে ঘটে যায়, একার আকাশ?
আর কেউ উড়বেনা, জুড়বেনা ভাগ কারো আর,
সব ছবি খুলে রাখা, দামে কেনা ফ্রেমের সন্ত্রাস
দেয়ালের বুকে ভার, স্থান নেই কান্না ঝোলাবার,
সময় বিলিয়ে আসা আলোময় অন্ধকার খাতে
সময় পুড়িয়ে আসা বৈদ্যুতিক চুল্লির সাক্ষাতে।

একটা মনের ভাঁজে আরো কত মনের ঠিকানা
ছোট ব্যথা ছোট সুখ পুঁটলি হয়ে ঝুলে থাকতে চায়,
ঘুমহীন রাতে তার ঘুমের ওষুধ হয়ে খোলে গিঁটখানা 
জেনে যায় হারজিত চিরদিন ভাইভাই খেলার বাসায়,
জলের অক্ষর হয়ে মুছে যাবে পাপ তাপ উষ্ণ ছোঁয়া খুঁজে
প্রতিটি ভ্রমণ তার স্মৃতি জুড়ে তীর্থ হবে প্রাসাদে গম্বুজে।

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

1 Comments