জ্বলদর্চি

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত - ১৩ / সুদর্শন নন্দী


শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত  

পর্ব-১৩

সু দ র্শ ন  ন ন্দী

১৮ই জুন ১৮৮৩ পেনেটির (পানিহাটি) মহোৎসব। নবদ্বীপ গোস্বামীর সংকীর্তন দলের সাথে ঠাকুর নাচছেন আর মাঝে মাঝে গাইছেনঃ 
নদে টলমল টলমল করে- গৌর প্রেমের হিল্লোলেরে। 
এই গানটি ঠাকুর একাধিকবার গেয়েছেন দেখতে পাই। রচয়িতা জানা যায় নি। পুরো গানটি কথামৃতে নেই।   
ঠাকুর কলকাতায় বেনেটোলায় অধরের বাড়িতে এসেছেন। ৩১শে আষাঢ়, শুক্লা দশমী, ১৪ই জুলাই ১৮৮৩, শনিবার। অধর ঠাকুরকে রাজনারাণের চন্ডীর গান শোনাবেন। রাখাল, মাস্টার প্রভৃতি সঙ্গে আছেন। ঠাকুরদালানে গান হচ্ছে। রাজনারায়ণ রামপ্রসাদের গান ধরলেন:

      অভয় পদে প্রাণ সঁপেছি ৷
      আমি আর কি যমের ভয় রেখেছি...
 এই গানটি ছাড়াও রাজনারায়ণ কমলাকান্তের একটি গান শোনানঃ 
সমর আলো করে কার কামিনী!
সজল জলদ জিনিয়া কায়, দশনে প্রকাশে দামিনী। ...
গান শুনে ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন। এই গানটি আরও দুবার রামলালকে গাইতে শুনি।  
 
পরের গানের উল্লেখ পাই ১৮৮৩, ২১শে জুলাই। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অধরের বাড়ি এসেছেন। রামলাল, মাস্টার, অধর আর অন্য অন্য ভক্ত তাঁর কাছে অধরের বৈঠকখানায় বসে। সন্ধ্যা হয়েছে। বৈঠকখানায় আলো জ্বালা হল। ঠাকুর জোড়হাতে জগন্মাতাকে প্রণাম করে নিঃশব্দে  মূলমন্ত্র করলেন। তারপর  মধুর স্বরে নাম করছেন। বলছেন, গোবিন্দ, গোবিন্দ, সচ্চিদানন্দ, হরিবোল! হরিবোল!   
রামলাল এবার গান ধরলেন:
ভুবন ভুলাইলি মা, হরমোহিনী।
মূলাধারে মহোৎপলে, বীণাবাদ্য-বিনোদিনী......
 
(গানটির রচয়িতা মহারজ নন্দকুমার’ গানটি ঠাকুর অধরের বাড়িতে আরেকবার গেয়েছিলেন ১০ই অক্টোবর ১৮৮৩)। 

রামালাল আবার গাইলেন:

ভবদারা ভয়হরা নাম শুনেছি তোমার,
তাইতে এবার দিয়েছি ভার তারো তারো না তারো মা......
 
  এই গানটির রচয়িতা মধুকান, পুরো নাম মধুসুদন কিন্নর। ঠাকুর এই গানটি একবার( ১৫ই ডিসেম্বর ১৮৮৩) দক্ষিণেশ্বরে গেয়েছিলেন। 
ঐদিন ( ২১শে জুলাই, ১৮৮৩) ঠাকুর অধর সেনের বাড়ি থেকে গেলেন যদু মল্লিকের বাড়ি। সেখানে মা সিংহবাহিনীর নিত্যসেবা। বৈঠকখানায় বসে ঠাকুর ভাবেই আছেন, গাইলেন:
গো আনন্দময়ী হয়ে আমায় নিরানন্দ করো না।
গাইবার পর ঠাকুর এবার যদুকে বললেন, “কি বাবু, কি গাইব? ‘মা আমি কি আটাশে ছেলে’ -- এই গানটি কি গাইব?” এই বলে ঠাকুর গাইছেন:
মা আমি কি আটাশে ছেলে।
আমি ভয় করিনে চোখ রাঙালে......
 
রামপ্রসাদের এই গানটি গাওয়া হলে ঠাকুর বললেন, “আমি মার প্রসাদ খাব।”

এবার ত্রৈলোক্যনাথ স্যন্যালের লেখা বহুল প্রচারিত গানঃ 
আমায় দে মা পাগল করে (ব্রহ্মময়ী) 
আর কাজ নেই জ্ঞান বিচারে......
কথামৃতে গানটির প্রথম উল্লেখ দেখি ১৮৮৩, ১৯শে অগস্ট। দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্র ও বিশ্বনাথ উপাধ্যায় উপস্থিত রয়েছেন। রয়েছেন বলরাম, মাস্টার। দুপুরবেলা নরেন্দ্র ও বিশ্বনাথ বাইরে কথা বলছেন। ঠাকুর সেখানে গিয়ে বললেন, কি কথা হচ্ছে সব? তারপর কথাপ্রসঙ্গে ঠাকুর শুদ্ধাভক্তি শুদ্ধাজ্ঞানের কথা বলতে নরেন্দ্র ঐ গানটির উল্লেখ করলেন। 
গানটির নবার উল্লেখ পাই। নরেন্দ্র, ত্রৈলোক্য,ব্রাহ্মভক্তদের কণ্ঠে শোনা গেছে গানটি।

১৮৮৩, ১০ই অক্টোবর। অধরের বাড়িতে ৺নবমীর পূজা। শ্রীরামকৃষ্ণ সন্ধ্যার আরতি দর্শন করে ভাবাবিষ্ট হয়ে ঠাকুরদালানে দাঁড়িয়ে মাকে গান শোনাচ্ছেনঃ 
তার তারিণী। এবার তারো ত্বরিত করিয়ে,
তপন-তনয়-ত্রাসে ত্রাসিত, যায় মা প্রাণী......
 
 এরপর ঠাকুর পুরবে উল্লেখিত “ভাব কি ভেবে পরাণ গেল” গানটি শোনালেন।
শ্রীযুক্ত সারদাবাবু পুত্রশোকে অভিভূত। বন্ধু অধর তাঁকে ঠাকুরের কাছে নিয়ে এসেছেন। তিনি গৌরাঙ্গ ভক্ত। তাঁকে দেখে শ্রীরামকৃষ্ণের শ্রীগৌরাঙ্গের উদ্দীপন হল। ঠাকুর গাইছেন:
আমার অঙ্গ কেন গৌর হল।
কি করলে রে ধনী, অকালে সকাল কৈলে, অকালেতে বরণ ধরালে......
 
গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত। কথামৃতে ঠাকুরকে তিনবার গাইতে দেখি গানটি। 
 ঠাকুর আবার গাইলেনঃ
      পাড়ার লোকে গোল করে মা,
আমায় বলে গৌর কলঙ্কিনী...
 
গানটির রচয়িতা রূপচাঁদ অধিকারী।

বলরামের পিতা বৈষ্ণব।এবার শ্রীরামকৃষ্ণ গোপীদের উদ্‌ভ্রান্ত প্রেমের গান গাইলেন:
শ্যামের নাগাল পেলাম না গো সই।
আমি কি সুখে আর ঘরে রই...
 
গানটির রচয়িতা অজ্ঞাত। কথামৃতে গানটি মোট দুবার ঠাকুরকে গাইতে দেখি।

Post a Comment

0 Comments