জ্বলদর্চি

বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষ / মানবকুমার প্রামাণিক

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   

In the current situation, ordinary people have to deal with the coronavirus

বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষ

ডাঃ মানব কুমার প্রামাণিক

পৃথিবী জুড়ে মহাভারতের কুরুক্ষেত্র বিস্তারিত এখন । স্থলে জলে অন্তরীক্ষেও কুরুক্ষেত্র বিস্তার লাভ করেছে। ভৌগোলিক অবক্ষয় শুরু হয়েছে। আধ্যাত্মিক ক্ষয়ক্ষতি সামলানো দায়। লোভলালসার ক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। শেষ হওয়ার নয়। করোনা ভাইরাস আসন পেতেছে মানবদেহে। গত ছয় মাসের ক্ষয়ক্ষতি কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের মত হতাহত নির্দিষ্ট করে দিল--মানবদেহটিও একটি যুদ্ধক্ষেত্র।

     বিশ্বের সাথে ভারতবাসী করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ভোগ করছে। এই ভাইরাস অন্য আরও পাঁচটি ভাইরাসের মত প্রাকৃতিক না কৃত্রিম বর্তমান বিচার্য বিষয় নয়। ভাইরাসের গতি প্রকৃতি গত ছয় মাসের চেষ্টাতেও অনেকটাই বোধগম্যের বাইরে। সুতরাং এই ভাইরাস থাকছে এবং থাকবে। এই ভাইরাসের পূর্বে নানান ধরনের ভাইরাস মানবদেহে খেলা করে গেছে এবং মহামারী হিসেবে বিখ্যাত হয়েছিল।

    প্রতিটি মানবদেহে যুদ্ধ ক্ষেত্র আছে। অধিকাংশ সময় মানবদেহ ব্যক্তিগত ভাবে সংগ্রাম করে থাকে। যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী সম্মুখ সমরে এগিয়ে চলে আবার এক এক সময় পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় -পশ্চাদপসরণ যুদ্ধের রণকৌশল। বশ্যতা স্বীকার করাও এক ধরনের রণকৌশল। শক্তিশালী রাজাকে দুর্বল রাজা আক্রমণ করেন না। সংরক্ষিত দুর্গ আক্রান্ত হয় না। মানব দেহ অনেকের সুরক্ষিত। সহজে রোগগ্রস্ত হয় না। সেই সব দেহে ভাইরাস আক্রমণ করলেও রণে ভঙ্গ দিয়ে ওই দেহকে আরও পুষ্ট করে তোলে--Hard Immunity কথাটি এই কারণে যুক্ত হয়েছে।

  মধ্য শক্তিশালী মানব দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে খেলা করে। দেহে ওষুধের শক্তি যোগ হলে ওই ভাইরাস মাঠ ছেড়ে পালায়। সুতরাং সহজে রোগ মুক্ত হয় ওই সব মানুষ। দুর্বল চিত্ত ও দুর্বল দেহ যে কোন সময় অসুখে আক্রান্ত হয়। সুতরাং সবাই Covid 19 আক্রান্ত হবেন না, বলাই যায়। মানুষ Personality তৈরি করে। Personality যুক্ত মানুষের সামনে সাধারণ মানুষ নত মস্তকে সমীহ সহকারে কথা বলে। ব্যক্তিত্বের অনুরূপ শক্তিশালী দেহে রোগ আক্রমণের চেষ্টা করলেও রোগ কিছুটা নত মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকে। 

       করোনা আক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য সরকার হোক বা কেন্দ্রীয় সরকার হোক অনেক ভেবেচিন্তে যে সব সাবধানতার বাণী জনমানসে সঞ্চারিত করতে সচেষ্ট তাতে গুরুত্ব দেওয়া করোনা সময়ে প্রয়োজন। শঙ্কা সংশয় থাকবে, না থাকলে সাবধান হতে চায় না মানুষ। এই সময়ে বেশি ভয় বা বেশি নির্ভয় থাকা ঠিক নয়।
 
     সাধারণ মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা নিম্নমুখী। ঊর্ধ্বমুখী করা সহজ কথা নয় এই করোনা সময়ে। প্রথমে ভাবতে হবে কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে নিম্নমুখী না হয়ে একই অবস্থায় থাকা যায়। ধরুন আপনি ব্যবসা করছেন কিন্তু বিক্রি কম হচ্ছে। সুতরাং আপনার রোজকার নিম্নমুখী। এ ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে হবে, অর্থাৎ দোকানে আলো-পাখার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যারি ব্যাগ দোকান থেকে দেওয়া বন্ধ করতে সব দোকানদারদের সহমতে আনতে হবে। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করা সব সময় সঠিক পদ্ধতি ।
          
   সুতরাং করোনা কালে করোনা মোকাবিলা করতে পরিকল্পিত জীবন যাত্রার রদবদল সুনিশ্চিত করতে হবে সরকার ঘোষিত নিয়মাবলী মেনে। করোনা রোগ হলে কেবল চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা নয়, প্রতিষেধক ব্যবহার নয় কারণ করোনা বিদায় নিলে আবার অন্য কোনো নতুন ভাইরাস মহামারী বয়ে আনবে। পৃথিবী ছাড়িয়ে সৌর জগতে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ বছর 2020 সালে কম বেশি করে প্রায় ছয় মাস বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলার ছয় ঋতুর প্ৰকাশ দেখার সৌভাগ্য আবার কবে পাওয়া যাবে জানি না। সুতরাং 2020 সাল থেকে জীবন মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হওয়া এই করোনা কালে শুরু হওয়া জরুরী। খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্য সম্মত করতে হবে। যে সময়ের যে যে ফসল উৎপন্ন হয় সেই সেই ফসল খেতে হবে যেমন পটল যে সময় ফসল হিসাবে মাঠে থাকে শুধু সে সময় খাওয়া দরকার তেমনি ফুলকপি বলুন বাঁধাকপি, রাঙ্গালু, কচু, গাজর ইত্যাদির উৎপাদন সময় ধরে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। শরীর গঠনে সিজিনের ফসল, ফল, মাছ, মাংস খাওয়া দরকার ভালো খাদ্যপ্রাণ পাওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে যেটা বেশি জরুরি তা হলো পরিমিত আহার গ্ৰহণ করে vitality অর্থাৎ জীবনী শক্তির বিকাশ বজায় রাখা।

   এই করোনা কালে যেমন দশ দিনের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহজ নয়। তবু Blood Test মাধ্যমে Vitamin Profile দেখে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা
ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে মন প্রফুল্ল রাখা, শারীরিক
পরিশ্রম এবং মুক্ত বায়ুর সাথে সাথে সূর্য কিরণ সারা অঙ্গে লাগতে দেয়ার পরিকল্পনা সারা জীবনের জন্য গ্রহণে অঙ্গীকার করুন।

     বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহার করুন বাধ্যতামূলক ভাবে। নাক মুখ ভালো ভাবে ঢাকা দিন, চোখও ঢাকা দিন, মাথার চুলও ঢাকা দিন। হাত সব সময় সাবান দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। নাক,মুখ ও চোখে সহসা হাত দেবেন না। পরিকল্পিত ভাবে ওই তিনটি স্থানে হাত দেবেন। থুতু ফেলবেন না যেখানে সেখানে।
বাড়ির কারুর সর্দি,হাঁচি, কাশি, সর্দি হলে তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন। পথে, হাটে, দোকান, বাজারে হাঁচতে বা কাশতে দেখলে মুহূর্তে ওই স্থান ত্যাগ করুন। যারা হাঁচি, কাশি ও সর্দিতে আক্রান্ত তারা দয়াকরে বাড়ির বাইরে বের হবেন না। পথে ঘাটে থুতু ফেলা লোকদের সতর্ক করুন। সবাই যদি সবাইকে সাধারণ নিয়ম মেনে চলছেন কিনা খোঁজ খবর নিয়ে নিজে সতর্ক থাকেন তবে Covid 19 সংক্রমণের সংখ্যা কমবে। এমনি ভাবে ধীরে ধীরে এই করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করলেও ক্ষতি কর লক্ষ্মণ প্রকাশ পাবে না। পরে পরে মৃত্যু হার শূন্য তে এসে যাবে।
এরপর কোভিদ এ মৃত্যু হবে না। তবে Complication এ মৃত্যু হতে পারে।

     দিন-রাত্রি মিলিয়ে ৭/৮ ঘন্টা ঘুমোতে হবে। পরিশ্রম ও নিয়ম মাফিক ঘুম এবং জল পান সঙ্গে মল-মূত্র ত্যাগে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করুন।
     শেষ কথা বলি ব্রতচারী শরীর গঠনে এবং মনের বিকাশে একটি আদর্শ খেলা যা সব বয়সে উপকারে আসে।
------------------------------------
লেখক - বিশিষ্ট চিকিৎসক।

Post a Comment

0 Comments