জ্বলদর্চি

দুঃসময় / প্রতাপ সিংহ

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   


দুঃসময়


প্র তা প  সিং হ

১. 
লোকটি আগন্তুক নয়, এ-বাড়ির স্বজন,
কিন্তু এমন দুঃসময়ে কেউ তাকে
বসতেও জায়গা দেবে না। ভয়, ভয়
সংক্রমনের ভয় সাপের মতো জড়িয়ে ধরেছে।

২. 
শহর বিদ্যুৎহীন, জল নেই, আলো নেই,
বড় বড় গাছ পড়ে রাস্তাঘাট ঢেকে গেছে,
দুঃসময় সরাসরি ঘরে ঢুকে পড়েছে,
পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছি।

৩. 
তুমি একটা ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। আম্পান।
আসুরিক শক্তি নিয়ে হাঁ করে
আমাদের গিলে খেতে আসছ।

৪. 
এই ভয়াল মহামারী থেকে কবিতাই
আমাদের বাঁচাতে পারে।
তোমার বোধহয় জানা নেই
কবিতাও ছোঁয়াচে, সংক্রামক।

৫. 
আমরা একদিন এই নিষ্ঠুর সময় থেকে
যেভাবেই হোক বেরিয়ে আসব। আসবই।
কেউ আমাদের রুখতে পারবে না,
সেই নতুন দিনের অপেক্ষায় আমরা
জোটবদ্ধ, প্রতিজ্ঞার আগুনে ঝলসে
উঠছি। জয় আমাদের হবেই।

৬. 
সমস্ত দুর্যোগের নাম প্রতিরোধ। প্রতিরোধ
করতে করতে দুর্যোগ ঘন হচ্ছে। নীরন্ধ্র
অন্ধকারে রাস্তা চিনতে পারছি না। হঠাৎ
কেউ একটু আলো দেখাল। দুর্যোগের
নাম তাহলে আলো।

৭. 
দরজায় দরজায় দুঃসময়ের ছবি টাঙানো। বারবার কড়া নাড়ছি, কেউ দরজা
খুলছে না। অন্ধকারের ভিতর থেকে
কেউ শীর্ণ হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এবার
বোধ হয় গলা টিপে ধরবে। দুঃসময়
আর কাকে বলে!

৮. 
আমাদের খামখেয়াল,হঠকারিতা আর
নির্বিচার দস্যুতাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য
প্রকৃতি এবার উঠে পড়ে লেগেছে। প্রকৃতির
রসে আমাদের এইমাত্র সর্বনাশ হয়ে
গেল। সবে শুরু, এখনো অনেক বাকি...

৯. 
আমরা দলে দলে বেরিয়ে পড়েছি মজা
দেখতে। যতবার করোনা ভাইরাস সম্পর্কে
সতর্কীকরণ শুনছি, ততবার আমাদের
মধ্যে তাথৈ তাথৈ হচ্ছে। লকডাউন তো
কথার কথা, ওটা কিচ্ছু নয়, ওটা কিচ্ছু নয়।
আমরা অমৃতের পুত্র, কে আমাদের
শাসন করবে, কেই - বা ভয় দেখিয়ে
ঘরে ফেরাবে! আরে মশাই, আমাদের
ভয় দেখানো অত সোজা নয়।

১০. 
কোনো দুঃসময়ই স্থায়ী নয়। যেমন
নিঃশব্দে, গোপনে গোপনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে,
তেমনই একদিন নিঃশব্দে চলেও যাবে।
শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা, এই যা।
আমরা এই দুঃসময়ে একদিন
হটিয়ে ছাড়ব।

১১. 
ওগো দুঃসময়, ওগো দুর্যোগ, ওগো
দুর্বিপাক, এবার মানে মানে বিদায় হও।
আমরা হারতে শিখিনি, হেরে যাব না।
হারতে হারতেও আমরা প্রবলভাবে
উঠে দাঁড়াব, তোমাদের ঘাড় মটকে দেব।

১২. 
আমরা আর কত মৃত্যু দেখব? মৃত্যু
দেখতে দেখতে নীল হয়ে গেলাম।
তবু মৃত্যু কমছে না। মৃত্যুর ছোবল
খাচ্ছি দিনরাত।

১৩. 
২০০,৩০০,৪০০,৮০০ হাঁটতে হাঁটতে
জিভ বেরিয়ে গেল। ট্রেনের লাইনে তোমাদের রক্ত গাঢ় হয়ে আছে, রাজপথে ট্রাকের তলায় তোমাদের স্পন্দন চিরকালের মত স্তব্ধ হয়ে গেছে। পেট শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। তবুও হাঁটার বিরাম নেই। পরিযায়ী শ্রমিক, এরই নাম হয়তো জীবন। একটা চোখধাঁধানো জীবন।

---------------------------------
সংগ্রহে রাখার মতো বই--

 

Post a Comment

0 Comments