এবারের পুজোয়
ত প ন ত র ফ দা র
শরতের সোনালী আলো, শিউলির মন উদাসী সুগন্ধ, ফিরোজা আকাশে পেঁজা মেঘের ভেলা। সতেজ সবুজের মেলা। বৃষ্টির বিশুদ্ধ ধারায় স্নাত হয়ে গাছ গাছালি, ময়ূর ময়ূরী,মানব-মানবী, সবাই মিলনের সুযোগে অনাবিল আনন্দোচ্ছলে সবাই নিজেদের কে ব্যস্ত রাখে। কিন্তু এ বছরে যারা ধরণীর ধুলা মেখে ও ধুলা ছড়িয়ে আনন্দে মশগুল থাকে তাদেরই সব থেকে বিপদ হয়েছে। কোভিড মহামারি পৃথিবীর সবদেশের মানুষকে টলিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি মনের আনন্দে উজার করে মানুষকে দিয়েছে নির্মল বাতাস, মিষ্টি জল, সুস্বাদু ফল। মানুষকে সৃষ্টিকারী ইশ্বর একটা ইচ্ছাকৃত ফাঁদ ফেঁদে রেখেছে যার জন্য মানুষ নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়ল মেরে ক্ষতবিক্ষত হয়। প্রায় প্রতি একশ বছরের পরে এক একটা মহামারি মানুষের টনক নাড়িয়ে বলে দেয়, সাবধান নিজে বাঁচতে প্রকৃতিকে বাঁচতে হবে। ধর্মগুরুরা এই কথা বলেলেও শিষ্যরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বার করে দেয়। কারণ,প্রকৃতির ক্ষতি করলে তাৎক্ষণিক তার ক্ষতি হয় না। এবারের কোভিদের ধাক্কা সেই প্লেগ, কলেরা, ইবালো, এইডস, ডেঙ্গুর থেকে অনেক অনেক বেশি মানুষের আতঙ্কের মহামারি। পৃথিবীর স্কুল -কলেজ, সব ধর্মস্থান বন্ধ। স্বর্গে বসবাস করি সব দেবতাদের ত্রাহি ত্রাহি রব। মানুষ যদি না বাঁচে আমাদের পুজো করবে কারা?
অনেক অনুসন্ধান করে জানা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ৪৩০০ ধর্মের প্রচলন আছে। মোটামুটি বিশ্বের জনসংখ্যার পঁচাত্তর শতাংশ মানুষ পাঁচটি ধর্মেই আবদ্ধ রয়েছে। খ্রিস্টান, ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু এবং ইহুদী ধর্ম। প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব বিশ্বাস রয়েছে। হিন্দুরা বহু সংখ্যক দেব-দবীকে স্বীকৃতি দেয। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে কোনো দেবতা নেই মানুষই ঈশ্বর। মুসলমানরা একটি শক্তিশালী কিন্তু অজ্ঞাত ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে। খ্রীস্টানরা এমন এক প্রেমময় ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে যিনি তাঁকে চিনতে আমাদের তৈরি করেছিলেন।
জাতিধর্ম র্নিবিশেষে সব দেবতারা ভীত। ভীতিটা অসুররা স্বর্গ আক্রমণ করেছিল তার থেকেও অনেক অনেক বেশি। মানুষই যদি না থাকে নবীর আরাধনা করবে কে। দেবতাদের সাধারণ সভা ডাকা হলো, গণেশ চিঠির বয়ান করে চার হাত দিয়ে চোখের পলকে চিঠি লিখে ফেললো। নারদ ঢেঁকিতে করে, গ্রীকদেবতা মিনার্ভার পেঁচা উড়তে উড়তে সভার চিঠি বিলি করে দিল।
নন্দন কাননের সভায় সবাই ধ্বনি ভোটে ব্রহ্মাকে সভাপতি করলো, উনার চারিদিকে মাথা সর্বত্র ওই সি সি টিভির মতোই নজরদারি চালাতে পারবেন। পাঁচটি ধর্মের ডেলিগেটরা স্বীকার করলো তাদের সব উৎসব, উৎসাহ মাঠে মারা গিয়েছে। ঔই করোনা কে তাড়িয়ে না দিতে পারলে আমাদের ভাগ্যে শুধুই করুণার কান্না জুটবে। ইতিহাস বলছে দেবী দুর্গা অসুরকে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেছিল। আমরা সব ধর্মের ধর্মগুররা এক হয়ে বলছি এই কোভিডকে বধ করতে দুর্গাকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।
দুর্গার স্বামী শিব বললো দুর্গা যাবে কিন্তু অসুরকে বধ করতে সবাই অস্ত্রের যোগান দিয়ে ছিল। এখানে কি হবে। ব্রহ্মা কর্ডলেশ মাইকে বলতে শুরু করলেন, জেনে রাখা ভালো ত্রিশূল দিয়েছিলো আদিদেব৷ ত্রিশূলের তিনটি ফলার অর্থ তমঃ, রজঃ ও সত্য। যমরাজ দিয়েছিল গদা৷ যা আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। ইন্দ্র দিয়েছিলেো বজ্রাস্ত্র যা দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। নাগহার দিয়েছিল সাপ যা বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক। অগ্নিদেব দিয়েছিলো অগ্নি যা জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক। বরুণ দিয়েছিল শঙ্খ৷ যা জীব জগতে প্রাণের সৃষ্টি করে। চক্র তুলে দিয়েছিল বিষ্ণু, সমস্ত সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান করবে দেবী দুর্গা। বায়ু দিয়েছিল ধনুক ও তির৷ ইতিবাচক শক্তির প্রতিক৷ আমি দিয়েছিলাম পদ্ম৷ পাঁকে জন্মায় পদ্ম। কিন্তু তবু সে কত সুন্দর। অন্ধকারের মধ্যেও আলোর আবির্ভাব হয় সেই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।
শিব, বোম ভোলা বলে দাঁড়িয়ে উঠে বলে, বুঝতে পেরেছি কোভিড অসুরের থেকেও ভয়ংকর। সব দেবতা, সব র্ধমের কর্ণধারদের,সব দলের কোর-কমিটির আন্তরিক ইচ্ছা না থাকলে কোভিড কে কব্জা করা যাবেনা। ব্রহ্মা বললো, দুর্গা কিছু দিনের মধ্যেই তোমার র্মতে যাওয়ার দিন ধার্য্য করা আছে। তুমিই ঠিক করো কোন অস্ত্রে এই মহামারি থেকে মানুষ ও দেবতাদের রক্ষা করবে। স্লোগান দিল,-দুর্গা তুমি লড়াই কর, আমরা সবাই সাথে আছি।
দুর্গা সব দেশের কর্ণধারদের স্বপনে আদেশ দিলেন, বোধনের আগের দিন ঠিক রাত আটটায় মা দূর্গা সপরিবারে সরাসরি সম্প্রচারে আসবেন।
দেবী বললেন, সারা জীবন ধরে আমার আরাধনা করে সুবিধা পাবে তারাই যারা এবার আমার আগমনি থেকে বিসর্জনী, যে যার ঘরে বসে আমার পুজো করবে তাদের। কারণ কোয়ারিন্টিন করে করোনা মুক্ত ধরণী করবোই।
0 Comments