জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা / অশোককুমার লাটুয়া

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ  স্নেহাংশু 


গুচ্ছ কবিতা 

অ শো ক কু মা র  লা টু য়া 

শরীরের চেয়ে বেশি চাওয়া 

বহু ব্যবহারে এঁটো হওয়া অক্ষরের কবিতার মতো 
নারী ও পুরুষের সততা। 
নারী ও পুরুষ বুকে হাত রেখে 
বলো দেখি দুজনে 
কেউ আর অন্য পুরুষ, অন্য নারী চাওনি সারাজীবনে? 
নিজেকে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা মানে 
মিথ্যের ভ্রূণে 
অন্ধকারে 
নতজানু হওয়া। 
নতজানু হওয়া মানে সত্যিটাকে 
অস্বীকার করার প্রতিশ্রুতি। 
নদীও বহুগামী 
আদুরে আলো সবাইকে বাসে ভালো 
বাতাস সবাইকে ছুঁয়ে দিতে চায়। 
কখনো মনের গোপন খামে 
নির্জন অক্ষরে কেউ কি লেখনি 
অন্য কারো নাম? 
মনে মনে চাওয়াটা তো 
শরীরের চেয়ে বেশি চাওয়া। 
পাঁচজনের কাউকেই ফেরাতে পারেনি দ্রৌপদী। 
অর্জুনও ছুঁয়েছে চিত্রাঙ্গদা এবং উলুপী। 
একটি নারী একটি পুরুষ 
তুষ্ট কি একটি পুরুষ একটি নারীতেই — বুকে হাত রেখে বলো দুজনেই। 
বহু ব্যবহারে এঁটো হওয়া 
অক্ষরের কবিতা 
নারী ও পুরুষের প্রেমের সততা। 


বিবর্তন 
        
কত শব্দ ফসিল হয়ে গেছে। কত শব্দ হাড়গোড় ভেঙে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বিকৃত হয়ে গেছে। কত শব্দ অসুস্থ এখন। 
কত শব্দ জন্ম নিচ্ছে সময়ের স্রোত গায়ে মেখে। মুখ চোখ দেখে চেনা যায়না তাদের। উৎস খুঁজতে গিয়ে গবেষণায়  ( ! )  পৌঁছে যেতে হয়। 
বিবর্তন থেকে বিবর্তনে 
হাজার হাজার বছর পৃথিবী চলেছে ক্রমান্বয়ে। 
চলেছে মানুষ শব্দে শব্দে হেঁটে কত ঘাম, কত রঙ, কত গাঙ পেরিয়ে মহাজনের মতো। 
শব্দে চেনা যায় সমাজ সভ্যতা  সময় এবং ব্রহ্ম। 
চলো শব্দ কুড়োতে কুড়োতে শব্দের কাছে শাব্দিক প্রেমে 
শ্লীলতা কিংবা খিস্তির অন্দরমহলে। 

শেষ পাতার উপন্যাসে 
          
কাউকে অনুরোধ না করেই বৃষ্টি এসে নামে পাহাড়ে। 
পাহাড় থেকে বেরিয়ে এসে নদী পথে যেতে যেতে 
কাউকে ডেকে বলেনা — সমুদ্র কত দূরে। 
এগিয়ে চলার ইচ্ছা থাকলে 
গন্তব্যে পৌঁছানো যাবেই। 
অক্ষরগুলি শব্দ হতে হতে 
পৌঁছে যায় শেষ পাতার উপন্যাসে। 


একটাও অন্তত না-পাগল 
         
এই পাগলা এদিকে আয়। 
তখন থেকে ইতিউতি কি খুঁজছিস রাস্তার নোংরায়? 
— একটাও অন্তত না-পাগল মানুষ। 
খুঁজে পেলি? 
— মলাটহীন বই অনেক পেয়েছি কিন্তু পৃষ্ঠাহীন বই একটিও পাইনি। 
পড়তে পারিস? 
— পড়েছি তো অনেক হৃদয় মানুষের 
তবু বুঝতে পারিনি কিছুই। 
বৃত্ত থেকে বিন্দু নাকি বিন্দু থেকে বৃত্ত বিন্দুবিসর্গ কিছুই বুঝতে পারিনি আমি পাগলটার কথায়। মগজের ভিতরে ঝরে পড়ছে শুধু পাগলাঝোরার শব্দ ক্রমাগত। 
পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে 
খুঁজতে খুঁজতে চলে গেল পাগলটা। 
দাঁড়িয়ে আছি আমি অপেক্ষায় 
পাগলটার ফিরে আসার জন্যে। 
একটাও অন্তত না-পাগল মানুষ কেমন হয়  না দেখে 
এগোবোনা আমি আর  কোনোদিকেই। 


প্রিয় পাঠককে অজস্র ধন্যবাদ 
          
প্রিয় পাঠক, ইতিমধ্যে নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে 
এতক্ষণ আপনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি, কথা বলেছেন আমার কবিতার সাথে। 
চোখের সিঁড়ি দিয়ে হৃদয়ের গভীরে নেমে অনেক কাটাছেঁড়া বিশ্লেষণে বুঝতে পেরেছেন আমি আর আমার কবিতার মুখ এক অথবা এক নই। 
কত যে ফুল নষ্ট করেছি ছিঁড়ে 
কতবার বলেছি ফুলকে থাকতে দাও স্বাভাবিক গাছে 
— দ্বিচারিতা জন্ম নিয়েছে আমার বৃন্ত থেকে কবিতার ডানার মাঝে। 
ছেঁড়া কাঁথায় শীতের রাতে কত যে ঘুমের উষ্ণতা বুনেছি 
অথচ কবিতায় লিখেছি — 
সাদা মেঘ শরতের রেশমের চাদর। 
প্রিয় পাঠক, বুঝতে পেরেছেন 
ঠোঁটের নদী থেকে চায়ের কাপ কতদূরে? 
পাশের বাড়ির লাজুক মেয়েটির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে 
জীবনের জোছনায় নিস্ফল রাতে 
তাকে হারিয়ে 
উপেক্ষিত অনুভূতির দরজায় দাঁড়িয়ে আমার কলম লিখেছে পাগলের প্রলাপ — 
চিরহরিৎ যৌবন পর্ণমোচী হয়ে গেলো আর কোনো নারীর দিকে না তাকিয়ে। অথচ গোপনে কতবার গেছি 
নীল নির্জনে, শুঁকেছি রাতের রজনীগন্ধার নিষিদ্ধ শরীর গোপনে 
সেকথা কেউ কি জানে!!! 
কত প্রশ্নচিহ্ন, কত বিস্ময়চিহ্ন
কত কাটাকুটি জটিল খেলায় সাজানো জীবন রহস্যময় 
কবি ও কবিতার বিপরীত সমুদ্রে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়। 
জন্ম নেয় দ্বিচারীতার স্বর্গ এবং রসাতল। 
প্রিয় পাঠক, এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এতক্ষণ আপনি কার সাথে কথা বলেছেন। 
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, 
প্রতিটি মানুষের 
দ্বিচারীতাকে প্রকাশ্য বিশ্লেষণের মুখোমুখি বসানোর জন্য। 


 তবু আজো শেষ হয়নি 
          
সময়টা স্মৃতির ক্যানভাস।       
এখনো ঝাঁপিতে বয়স কুড়োতে কুড়োতে সংখ্যামাত্র অম্লান 
তোমার চোখের দিকে তাকালে মুছে যায় আত্মহননের সব গান। 
দেখা যায় আজো তোমার চোখে ভোরের স্তব অদ্ভুত 
ভালোবাসা 
বাস্তব। 
তোমার ঠোঁটে খুঁজে পাই কামনার শস্যকণা অগাধ 
ব্যাখ্যাহীন নীল সমুদ্রের আলো 
প্রগাঢ় হাতছানি রহস্যের অনুভব। 
তোমার চিবুকে এখনো খেলা করে 
আকর্ষণীয় বিকেলের মাছ রূপালী ঝিলিকে। 
তোমার জন্য আজো ত্যজ্যপুত্র হয়ে আছি আমি 
বসন্তের বাসভূমি থেকে একান্তে 
বহুদূরে শূন্য আকাশে 
নক্ষত্রবিরহী অবসাদে ব্যথার পরমানু। 
তবুও জেগে ওঠে অফুরান স্মৃতির বুদ্বুদ 
তবু আজো শেষ হয়নি পৃথিবীতে যাবতীয় 
প্রেমের প্রস্তাব এবং কাছে ডাকা আকাঙ্খার উৎসব। 
তিয়াসা, তীব্র তীক্ষ্ণ পিপাসা তবু যে আমার 
তোমার দিকে নদী হতে চায় 
প্রতীক্ষায় নির্জন সাক্ষাৎ। 

Post a Comment

0 Comments