জ্বলদর্চি

বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন -১৫ / পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

Sign of science in Almighty
বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন

পর্ব ― ১৫

পূ র্ণ চ ন্দ্র  ভূ ঞ্যা   

রিভার্স ব্ল্যাকহোল : হোয়াইট হোল

যে কোনও ধরনের মহামারি আশীর্বাদ না অভিশাপ? অধিকাংশ জনের মতে অতিমারি অভিশাপ-ই। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তির জীবনে মহামারি আশীর্বাদ হিসেবে এসেছিল। কারণ এমন দুর্যোগ কালের অফুরন্ত অবসর সময়ে তারা এমন কিছু গবেষণায় মগ্ন থেকেছেন যা সমকালীন সমাজ ও তার দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন এনে দেয় এবং যা তার অবশিষ্ট জীবদ্দশায় হয়তো আর দ্বিতীয়বার তেমন ঘটনা ঘটেনি। তেমন-ই একজন ছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন (১৬৪৩ ― ১৭২৭)। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রজীবনে প্লেগ নামক মহামারি চলাকালীন দীর্ঘ অবকাশ নিউটনের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ।

সময়টা ১৬৬৫ সালের গোড়ার কথা। হঠাৎ প্লেগ-এর মড়ক ছড়াতে শুরু করে গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজ বন্ধের সাময়িক নির্দেশিকা জারি করে। পড়ুয়াদের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মেনে হোস্টেল ছাড়ে সব পড়ুয়া, এমনকি নিউটনও। হোস্টেল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন নিউটন। 
                       সেখানে দু'বছর সময়কাল তিনি অতিবাহিত করেন। শিক্ষক অধ্যাপকদের সান্নিধ্য বিচ্যুত হয়ে তিনি একক প্রচেষ্টায় কঠোর অধ্যাবসায় শুরু করেন। গভীর সেই অধ্যয়নের ফলস্বরূপ মাত্র দু'বছরে বিজ্ঞানের তৎকালীন দুরূহ অমীমাংসিত বিষয় যেমন― আলোকবিদ্যা, গতিসূত্র, মহাকর্ষ তত্ত্ব ও ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন তিনি। এ হেন আবিষ্কারগুলি বাকি জীবনে তাঁকে অনেক সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এনে দেয়। ক'বছর পর ১৬৮৭ সালে বন্ধুবর এডমন্ড হ্যালি-র তাগাদায় বিজ্ঞানের এ হেন গূঢ় তত্ত্বগুলি তিনি "ফিলোজফায়ে ন্যাচুরালিস প্রিনখিপিয়া ম্যাথমেটিকা" পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেছিলেন।

সেই জগদ্বিখ্যাত পুস্তকে বস্তুর গতি সম্বন্ধে যে তিনটি সূত্র তিনি দিলেন, তার শেষতমটি পদার্থবিজ্ঞানে একটি নতুন সম্ভাবনার জন্ম দেয়। কী সেই সম্ভাবনা?

বস্তুর গতি সম্পর্কিত এ হেন শেষ সূত্রটি হল― "প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।" ধরা যাক, আপনি একটি স্থির দেওয়ালে হালকা ঘুসি মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালও আপনার হাতে সমান ও বিপরীতমুখী একটি ধাক্কা বল প্রয়োগ করবে। ঘুসি ক্রিয়া বল হলে আপনার হাতে দেওয়ালের ধাক্কা অবশ্যই প্রতিক্রিয়া। দেওয়ালের উপর আপনার প্রদত্ত ধাক্কা একটি ঘটনা হলে আপনার ওপর দেওয়ালের ধাক্কা একটি বিপরীত ঘটনা হিসাবে প্রতিপন্ন হবে। অর্থাৎ এই ব্রম্ভাণ্ডে প্রত্যেক ঘটনার নিশ্চিতরূপে একটি বিপরীত ঘটনা থাকবে, যাদের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্যে পরস্পর বৈপরীত্য অবশ্যম্ভাবী। দস্তুর মতো এটাই নিয়ম। যেমন ইলেকট্রনের বিপরীত কণিকা অ্যান্টি-ইলেকট্রন বা পজিট্রন আছে, প্রোটনের বিপরীত অ্যান্টি-প্রোটন কণিকা বর্তমান; ঠিক তেমনি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের বিপরীত ঘটনা রিভার্স ব্ল্যাকহোল বা শ্বেতগহ্বর থাকা আবশ্যক। শ্বেতগহ্বর বা হোয়াইট হোল! সে আবার কী জিনিস?
   আসলে ব্ল্যাকহোলের মতো শ্বেতগহ্বর হল মহাশূন্যে স্থান-কালের এমনই এক প্রকল্পিত সিঙ্গুলারিটি যা পদার্থ ও বিকিরণ নির্গমন করে, গিলে খায় না কোনকিছু। শ্বেতগহ্বর পদার্থকে আকর্ষণ করে, কিন্তু সাদাগহ্বর অভিমুখে আগত পদার্থ বা বস্তুপিণ্ড কখনও তার 'ইভেন্ট হরাইজেন' বা ঘটনা দিগন্তে পৌঁছতে পারে না। অর্থাৎ শ্বেতগহ্বর একটি ভরহীন ব্ল্যাকহোলের গাণিতিক প্রতিসাম্য অবস্থা। যদিও কৃষ্ণগহ্বরের মতো তার বাস্তব প্রমাণ এখনও মেলেনি। তাহলে এমন তথ্যের যৌক্তিকতা কী? আসলে বিজ্ঞানে এমন কিছু তথ্য ও তত্ত্ব আছে যা পণ্ডিতগণকে শ্বেতগহ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করতে সাহস যুগিয়েছে। ব্ল্যাকহোলের ভবিষ্যবাণীর পর পূর্বে উল্লেখিত নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র প্রথম শ্বেতগহ্বর সম্ভাবনার ধারণা উদ্রেক করে।

এছাড়া, আইনস্টাইনের বিখ্যাত "জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি" কৃষ্ণগহ্বর এবং শ্বেতগহ্বরের অস্তিত্বের মাইলস্টোন হিসাবে চিহ্নিত। এ হেন তত্ত্বে "আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ" (Einstein's Field equations)-এর সমাধানের সূত্র ধরে রিভার্স ব্ল্যাকহোল ঘটনার উপস্থিতি টের পান পণ্ডিতগণ। ১৯৬৪ সালে রাশিয়ার মহাকাশ বিজ্ঞানী ইগর দিমিত্রিয়েভিচ নভিকভ (জন্ম ― ১০ নভেম্বর ১৯৩৫) সর্বপ্রথম শ্বেতগহ্বর অস্তিত্বের সংকেত দিয়েছিলেন। অবশ্যই সাধারণ অপেক্ষবাদে। আবার হোয়াইট হোল প্রসঙ্গে কনাবাদী বলবিদ্যায় C.P.T. থিওরেম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

C.P.T. থিওরেম কী?
C-এর অর্থ কণিকার বিপরীত কণিকায় পরিবর্তন। P-এর অর্থ বিপরীত পার্শ্বপ্রতিবিম্ব গ্রহণ। এর ফলে ডান ও বামের পারষ্পরিক পরিবর্তন করা যায়। T -এর অর্থ সব কণার গতির অভিমুখ বিপরীতমুখী করা। অর্থাৎ কণার গতি পশ্চাৎমুখী করা। C.P.T. নিয়ম অনুযায়ী ― বিজ্ঞানের বিধিগুলি C, P ও T -এর যৌথ ক্রিয়ায় অপরিবর্তনীয়। আবার C ও P-এর যৌথ ক্রিয়ায় বিজ্ঞানের নীতিগুলি অপরিবর্তিত থাকলে শুধুমাত্র T -এর  ক্রিয়ার ক্ষেত্রেও সেগুলি ধ্রুবক থাকবে। আর সেক্ষেত্রে ব্ল্যাকহোলের টাইম রিভার্সাল অংশ হিসেবে বিপ্রতীপ হোয়াইট হোল অন্তর্ভুক্তিকরণের দাবি রাখে।

কিন্তু তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র সাদাগহ্বর সম্পর্কিত সমস্ত ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে। 

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রটি কী?
এই সূত্র অনুসারে ― কোন বদ্ধ তন্ত্র (Closed System)-এর এনট্রপি সময়ের সঙ্গে সর্বদা বৃদ্ধি পায়। 

এনট্রপি কী? 
এনট্রপি হল একটি ঘটনার বিশৃঙ্খলার পরিমাপ, কোন বিস্ফোরণ বা প্রাকৃতিক ঘটনায় যার পরিমাণ বাড়ে। কালের তাপগতীয় তীরের অভিমুখে সময়ের সঙ্গে এনট্রপি তথা বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। বিস্ফোরণ হোক অথবা দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ ― যে কোন প্রাকৃতিক ঘটনায় বিশৃঙ্খলা বাড়ে বই কমে না। তাই প্রাকৃতিক সমস্ত ঘটনায় এনট্রপি বাড়ে। এক কাপ গরম চা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয় যদি পারিপার্শ্বিকের উষ্ণতা কম থাকে। সেক্ষেত্রে তাপ বেশি উষ্ণতার চা থেকে কম উষ্ণতার পরিবেশে প্রবাহিত হয়। তাপ হল শক্তির একটি বিশৃঙ্খল রূপ। তাই পরিবেশে তাপ ছড়িয়ে পড়ে পারিপার্শ্বিকের বিশৃঙ্খল অবস্থা বাড়ে। তার ফলে এনট্রপি বৃদ্ধি পায়।

আবার বাইরে থেকে কোন বস্তু বা আলোক যেহেতু হোয়াইট হোলে প্রবেশ করতে পারে না, শুধু উগরে বের করে দেয়; তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে, হোয়াইট হোল নিজেই ঐ সব বর্জিত বস্তুপিণ্ড তৈরি করতে সমর্থ। সেক্ষেত্রে কোন বদ্ধ তন্ত্রে হোয়াইট হোলের মোট এনট্রপি বাড়ার পরিবর্তে কমে যাওয়ার কথা। অথচ আপাত সুশৃঙ্খল প্রকৃতিতে বিশৃঙ্খলা তথা এনট্রপি সর্বদা বাড়ে, কখনও কমে না। সুতরাং ব্রম্ভাণ্ডে শ্বেতগহ্বর থাকা একেবারেই অসম্ভব। 

কিন্তু যদি আমরা তার অস্তিত্ব কল্পনা করে নিই, তাহলে বোধহয় বিশ্বের এক বড় সমস্যা― বিগব্যাঙ-এর উৎপত্তিজনিত সমস্যার আশু সমাধান করে ফেলতে পারব। কিন্তু সে-সব কীভাবে সম্ভব?

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র লঙ্ঘনের জন্য ধরে নিতে পারি― হয় হোয়াইট হোলের অস্তিত্ব একেবারে অসম্ভব, নতুবা ক্ষণিকের জন্য হলেও তার অসাম্য উপস্থিতি সম্ভব। 

এই দ্বিতীয় সম্ভাবনার প্রসঙ্গ ক্রমে বলা যায় যে পদার্থ ও শক্তি যেমন সৃষ্টি করা যায় না, তেমনই তাদের ধ্বংস করাও অসম্ভব। বরং আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য E=mC^2 সমীকরণ মেনে তাদের একটি অন্যটায় রূপান্তরিত হতে পারে। অর্থাৎ ভর শক্তিতে ও শক্তি ভর-এ রূপান্তরিত হয়।
এ হেন পদার্থ ও শক্তিসহ সবকিছু গিলে খায় ব্ল্যাকহোল; পরিবর্তে হকিং রেডিয়েশন (★) নির্গমন করে। কৃষ্ণগহ্বর বিকিরণ বাদ দিলে তার গৃহীত খাবারগুলো তবে যায় কোথায়?
হকিং রেডিয়েশন নির্গমনে ব্ল্যাকহোলের ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে। শক্তি কমতে কমতে একসময় কৃষ্ণগহ্বরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ব্ল্যাকহোলে শক্তি কমে যাওয়ার ঘটনা 'ব্ল্যাকহোল বাষ্পীভবন' (Black Hole Evaporation) নামে পরিচিত। এর ফলে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়। এখন প্রশ্ন হল― ব্ল্যাকহোলের মৃত্যু আসন্ন হলে অথবা মৃত্যু ঘটলে তার মধ্যেকার পদার্থের কী হবে? এদিকে, পদার্থের বিনাশ হয় না। আর এখানেই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে হোয়াইট হোল ধারণার আবির্ভাব ঘটতে চলেছে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে অন্তিম দশায় একটি ব্ল্যাকহোল শ্বেতগহ্বর-এ রূপান্তরিত হয়; তাহলে বিগব্যাঙ সমস্যারও সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যায়। বিগব্যাঙ বিস্ফোরণকালটি যেন সংঘটিত হয় শ্বেতগহ্বরের কেন্দ্রকে― এমনই অভিমত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী হ্যাল হ্যাগার্ড-এর। ঐ মহাবিষ্ফোরণ কালে যে অফুরন্ত শক্তি ও পদার্থ নির্গত হয়, তা একসময় ব্ল্যাকহোল গিলে খেয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কৃষ্ণগহ্বরের শেষতম প্রান্ত থেকে হোয়াইট হোলের জন্ম হলে মনে করা যেতে পারে― শ্বেতগহ্বর থেকে বর্তমান বিশ্বের জন্ম হয়েছে। অর্থাৎ যে শ্বেতগহ্বর (বিগব্যাঙ) থেকে এই অনুজ ব্রম্ভাণ্ডের জন্ম হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে সংযুক্ত ব্ল্যাকহোলটি একটি পৃথক অগ্রজ ব্রম্ভাণ্ডের অংশ বিশেষ। এবং আমাদের সদ্য নব্য ব্রম্ভাণ্ড যেন অগ্রজ বিশ্ব (Parent Universe) থেকে পৃথক হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। সেক্ষেত্রে এই মহাজগতে এমন ছোট-বড় অনেক সমান্তরাল ব্রম্ভাণ্ড (Parallel Universe) আছে। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা কখনওই আমাদের তরুণ ব্রম্ভাণ্ডের বাইরের জগৎ ও তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত নয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : 
(★) হকিং বিকিরণ কী? কীভাবে জন্মায় এ হেন রেডিয়েশন?
শূন্যস্থান কী? শূন্যস্থান একদম শূন্য নয়, বরং বিকিরণের (ফোটোন কণা) আধার যা থেকে ক্ষণিকে জন্ম নেয় একজোড়া পারটিক্যাল― একটি কণিকা ও অপরটি তার বিপরীত কণিকা। পরক্ষণেই কণিকা―বিপরীত কণিকা সংযুক্ত হয়ে একজোড়া ফোটোন কণিকা ওরফে আলোক স্ফুলিঙ্গ (বিকিরণ) তৈরি করে। চক্রবৎ বিকিরণ থেকে কণিকা ও কণিকা থেকে বিকিরণে পরিবর্তন প্রতি মূহুর্তে ঘটছে শূন্যস্থানের ভেতর। 

এই একজোড়া কণিকার একটি পরা (ধনাত্মক) শক্তি সম্পন্ন ও অপরটি অপরা (ঋণাত্মক) শক্তি সম্পন্ন। অপরা শক্তির কণিকা স্বল্পায়ু হয়। কারণ বাস্তব সব কণাই স্বাভাবিক অবস্থায় ধনাত্মক শক্তি সম্পন্ন। এখন কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের খুব নিকটস্থ শূন্যস্থানে বিকিরণ থেকে একজোড়া কণিকা তৈরি হলে তার তিনটি সম্ভাবনা থাকে―
এক, কণিকাদুটি তৈরি হল ও জোড়া লেগে বিকিরণ উৎপন্ন করে পুনরায় ধ্বংস হয়ে গেল।

দুই, কণিকাদুটি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের অসীম মহাকর্ষজনিত টান তাদের জোরপূর্বক টেনে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। তারা আর বাইরে বের হতে পারল না। অর্থাৎ তাদের সলিলসমাধি ঘটল।

তিন, একজোড়া কণিকার মধ্যে অপরা শক্তির কণিকাটিকে ব্ল্যাকহোল তার ঘটনা দিগন্তে ঢুকিয়ে নিল। কিন্তু পরা শক্তির কণিকাটিকে সে ধরতে পারল না। এই পরা শক্তি সম্পন্ন কণিকা তীব্র বেগে ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্ত থেকে ছুটে দূরে পালিয়ে গেল। আর পালানোর সময় সে যতটা বেশি সম্ভব ব্ল্যাকহোলের শক্তি ঘটনা দিগন্ত থেকে চুরি করে নিয়ে গেল। ব্ল্যাকহোলের বাইরে অবস্থিত কোন পর্যবেক্ষক দেখবে কণিকাটি যেন কৃষ্ণগহ্বর থেকে নির্গত হল। এ হেন কণিকা (ফোটোন কিংবা বাস্তব কণিকা)-র স্রোত হল কৃষ্ণগহ্বর বিকিরণ বা হকিং রেডিয়েশন। আইনস্টাইনের {E = mC^2} সমীকরণ মেনে এই নিঃসৃত বিকিরণ ব্ল্যাকহোলের ভর ও ঘূর্ণন ক্ষমতা ক্রমশ কমিয়ে দেয়। এই ঘটনা 'ব্ল্যাকহোল এভাপোরেশন' (কৃষ্ণগহ্বর বাষ্পীভবন) নামে পরিচিত। এর ফলস্বরূপ ভর কমতে কমতে একসময় কৃষ্ণগহ্বরটি ভ্যানিশ হয়ে যাবে।

Post a Comment

0 Comments