জ্বলদর্চি

ধুলোবালি/অমিতরূপ চক্রবর্তী


ধুলোবালি


অমিতরূপ চক্রবর্তী 


ছায়াও জেগে ওঠে জলের সশরীর 

শহর বিস্মৃত আকাশলীনা 

আমার করতল দেয় ও নেয় কিছু 

জীবন কেটে যায় তাকে ভুলি না


এই চারটি পংক্তি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন তাঁর স্মৃতির শহরের ১ নং কবিতায়। জীবন কেটে যায় তাকে ভুলি না- কাকে ভুলি না? ছেলেবেলাও কি নয়? সবারই ছেলেবেলাগুলি রোদ লাগা নির্জন জংগলে একটা রহস্যময় ভাঙা দুর্গের মতো- যার গলিঘুঁজি অন্ধকারে যাবার আগেই মানুষ বড় বা প্রত্যাশার থেকেও বড় হয়ে যায়। ওই মাকড়সাল জাল ধরা ফাঁকফোকর বা গলিঘুঁজির অন্ধকারে কী ছিল, তা জানাই হয়ে ওঠে না। কতদূর মনে পড়ে ছেলেবেলা? কোচবিহারে ছিল আমার ছেলেবেলার কয়েকটি অধ্যায়। মনে আছে জ্যাঠামশাইদের বাড়ির সদরের পুল ছুঁয়ে যে সাদা ধুলোভরা রাস্তাটা অনেক অনেকদূর অবধি দৌড়ে যেত, তার দুইদিকে ছিল ধানের নাড়া গজানো মাঠ। অনেকদূরে অন্য কোথাকার যেন নীল ধোঁওয়া ধোঁওয়া কাদের গাছপালা। দুপুরের রোদ সোনালি রাংতার মতো চকচক করত। বেশিরভাগ বাড়ির সামনেই তারে বা এই গাছ থেকে আরেক গাছের গায়ে টাঙানো দড়িতে মেলা থাকত জামাকাপড়। কী কারণে যেন সবথেকে বেশি মনে হয় লাল ছাপা শাড়িগুলি যেন বেশি মেলা থাকত। নাভি চেরা শায়া উল্টোমুখ হয়ে ঝুলত। আর ছিল বড় বড় জানালা বসানো লুঙ্গি। এই যে সাদা ধুলোভরা রাস্তাটা, যাতে রিকশা- সাইকেলের টায়ারের দাগ এ অন্যকে ছেদ করে যাবার প্রতিদ্বন্দিতা করত, এই রাস্তাতেই কোনওদিন চোখে পড়েছিল রাস্তার পাশে একটা প্রায় ন্যাড়া গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো একটি পুজো হয়ে যাওয়া কালীমূর্তি বা হয়তো বাতিল। তার গায়ের রঙ নীল। শোলার সাজ খুলে ঝরে পড়েছে । হাতের খড়্গও চুরি গেছে । ভুঁড়োপেট শিবের জটাজূট শিথিল। ওরকম ছেলেবেলায়, যখন একা হতে পারলেই চারপাশ নির্জন লাগে, বুকের ভেতরে মার্বেল কাঁপে, শ্বাস ঘন হয়ে পড়ে- ওইরকম ছেলেবেলায় একটা ন্যাড়া গাছের নীচে এরকম জনপরিত্যক্ত একটা কালীমূর্তি- যাঁর জিভ রক্তের অভাবে ধূসর- সেই কালীমূর্তিটাকে এখনও কেন মনে রেখেছি বা কেন সে এখনও আমার ছেলেবেলার স্মৃতিতে কোনও স্মরণীয় ঘটনার মতো ঝরে পড়া সাজে দাঁড়িয়ে আছে- আমি জানি না। আমাদের যেখানে বাড়ি ছিল, রাজমাতা দীঘির উত্তরদিকে, সেখান থেকে প্রতি সন্ধ্যায় একটি মন্দিরের সন্ধ্যারতির ঘণ্টাধ্বনি শোনা যেত । মন্দিরটি ছিলো দীঘির বাম পাশে, কিছুটা গাছপালায় ঢাকা একটা চৌহদ্দির মধ্যে। সেই মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর বিকেল ফুরিয়ে রাত হয়ে যাওয়া- আমার কাছে সমার্থক ছিল। তখন কি এমন ভাবতাম কিনা যে পৃথিবীর সব কোনায়, সব প্রান্তে বিকেল ফুরোলে রাত এমনিভাবেই হয় আর সবার ঘরে, ঘরের বাইরে আলো জ্বলে ওঠে- যেরকম আমাদের বা আমাদের আশেপাশের বাড়িগুলোর জ্বলে উঠত। ভেতরকার আলো সাদা। বাইরেকার আলো হলুদ। আমার বাবা ইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন, যদিও তাঁর উজ্জ্বল কোনও স্মৃতি আমার নেই। তাঁকে মনে করতে গেলে প্রথমেই একটা লাল-কালোয় ফুলছাপ দেওয়া এখনকার বাচ্চাদের ড্রয়িংখাতার মতো একটা অ্যালবামের কথা মনে আসে। এই অ্যালবামটি আমার বাবাকে বিয়ের সময় সাধন নামের কেউ উপহার দিয়েছিলেন। কেননা অ্যালবামের মোটা কভার পাতাটি ওল্টালেই একটা চারপাশে নকশাদার বর্ডার দেওয়া পাতায় তেমনটাই নিবকলমে লেখা ছিল- অধীরদার বিয়েতে সাধন। ধরেই নেওয়া যায় এই উপহারটি দেওয়া হয়েছিল আমার মা’কে, বৌ-ভাতের দিন। এখন আমি ভাবি যে, সাধন লোকটি যদি এই কথাটি লিখতেন- অধীরদা ও বৌদিকে সাধন- সেটা অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হত। অথবা এমন ননপেট্রিয়ার্কাল ভাবনার প্র্যাকটিস তখনও সাধন নামের বা সাধন নামের মতো একটা বৃহৎ সমাজে হয়তো চালু হতে আরও কয়েক দশক দেরি ছিল। 

তো, সেই অ্যালবামে ছিল বিচিত্র সব সাদাকালো দানাদার ছবি। দানাদার বললাম ফটোগ্রাফগুলির ম্যাটফিনিশ টেক্সচার বোঝাতে। আর বিচিত্র এই কারণেই যে, এইসব ছবিগুলোয় কেউ গাছের ডালে উঠে চোখে কালো চশমা দিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন, কেউ এ অন্যের পিঠে পিঠ দিয়ে বা কখনও কেউ আরেকজনের দুই পায়ের ফাঁকে সটান হয়ে শুয়ে আছেন- সাধারণত যেখানটায় হেলান দেওয়ার কথা ভাববেই না কেউ। একটা কথা এখানে বলা দরকার, এইসব ফটোগ্রাফের কুশীলবেরা সবাই ছিলেন মেল অর্থাৎ পুরুষ। মহিলারা সাধারণত প্রস্ফুটিত কোন ঝোপের পাশে, গাছের কালো বাকলে হেলান দিয়ে নয়তো পাথরে বা পাঁচিলে কনুই রেখে ক্যামেরায় তাকিয়েছেন। এইসব বিচিত্র ছবিগুলোর মধ্যেই ছিল আমার মা-বাবার একটা ফটোগ্রাফ। বাবার পরনে ছাই রঙের স্যুট। মা বাবার বুকের দেওয়ালে হাত রেখে মুখ ঘুরিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়েছেন। বাবার চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, চুল শক্ত আর কোঁকড়ানো। ওপরের ঠোঁটের নীচে আড়াল করা উঁচু দাঁত। আমি এখন আন্দাজ করতে পারি এই ছবিটা ৮০-র দশকের শুরুর কোনও একবছরের কোনও একদিন তোলা । পরে জেনেছিলাম কোচবিহার তখন অশান্ত। সন্ধের দিকে প্রায়শই করতে হবে, করতে হবে বা চলছে না, চলবে না- এইজাতীয় মিছিলের গর্জন শুনতে পেতাম। ঘরে বন্দী হয়ে মনে হত শহরটা যেন দূরে কোনও ভোজবাড়িতে গ্যাসচুল্লির ওপরে বসানো কড়াইতে সোঁ সোঁ করে ফুটছে। সেই ভোজবাড়িতে অনেক মানুষ, অনেক উথলে ওঠা আলো বা অনেক রকমের কোলাহল। কার ভোজ বা কীসের ভোজ- তা হয়তো আমার ওইবয়েসি সব ছেলেমেয়েদের বাবারাই একমাত্র জানতেন। 

হয়তো এমনই বয়সে আমি প্রথম মানুষ কেমন করে মাস্টারবেট করে- তা দেখেছিলাম। রাস্তার দিকে আমাদের বাড়তি একটা ঘর ছিল। যার ছিল কাঠ আর কোরেসিন ড্রামের টিন কেটে, তা দিয়ে বানানো দেওয়াল। একরত্তি বারান্দাও ছিল। সেখানে দাঁড়ালে রাস্তার কিছুই চোখে পড়ত না কারণ তার সামনে ঢেউটিনের বেড়া ছিল। এই বাড়তি ঘরটায় একপ্রস্থ খাট, বিছানা- বালিশ ছিল। অন্য আসবাব কী ছিল- তা মনে পড়ে না। একটা দরজার খিল খুলে বারান্দাটায় যাওয়া যেত। যে মানুষটি ওই বারান্দায় আমার সামনে প্রায় উন্মাদের মতো মাস্টারবেট করেছিল- সে সম্পর্কে আমার জ্যাঠতুতো দাদা। তার নাম আমার মনে আছে। সে এখন বিয়ে করে কোচবিহারের বাইরে দিব্য সংসারী। আমার সেই দাদাটির আবছা আবছা মনে আছে মাছ ধরার নেশা ছিল। প্রায়শই ও ছিপ টোপ নিয়ে আসত আমাদের বাড়ি। মনে হয়, মানে এখন মনে হয় বাড়ির সামনর দীঘিটায় ও মাছ ধরতে আসত। এমনই একদিন বেশ মেঘলা মেঘলা। ওই দাদাটির সঙ্গে কী কারণে যেন আমি বাইরের দিকের ঘরটির বারান্দায় গেছি। ওই বারান্দায়, যদি আমি এখন ছবিটা রিকনস্ট্রাক্ট করি- তাহলে আমার দিকে একটি চারপেয়ে কাঠের টেবিল। অযত্ন লালিত। তার পিঠে ধুলো আর তেলকাসটে ময়লা। আমার ঠিক মুখোমুখি অন্য দিকে সেই দাদাটি। ওর গায়ে ধুলোময়লা। ক্রমপর্যায় মনে নেই। মনে আছে ও চেন খুলে ওর লিঙ্গটি বের করে ওপরের নমনীয় চামড়াটা আপ অ্যান্ড ডাউন করছিল। আমি ভয়, ভয় কী?- ঠিক মনে নেই- তবে সবিস্ময়ে তাকিয়ে আছি। ওর মুখ নীচের দিকে ঝোঁকানো। আমার এখন মনে হয়- তা ছিল ওর কল্পনার মধ্যে প্রোথিত। একসময় দেখি ও ঝড় লাগা কোনও গাছের মতো দুলছে । উন্মাদের মতো কুঁকড়ে যাচ্ছে। তারপর দেখলাম ফোঁটা ফোঁটা সাদা রক্ত বেরিয়ে এসেছে ওর লিঙ্গের মুখ দিয়ে। সেই ফোঁটা ফোঁটা সাদা রক্ত বেরিয়ে আসার দৃশ্য আমার এখনও জীবন্ত হয়ে আছে। না, আমাকে দেখে ওর যৌন উত্তেজনা হয় নি। মাস্টারবেট চলাকালীন ও আমার দিকে একবারও তাকায় নি। হয়তো অন্য কেউ বা হয়তো, হয়তো অন্য কারও দুর্লভ সম্পদের দ্যুতি ওকে এমন কামতাড়িত করে তুলেছিল। যা থেকে এই শ্বেত রক্তপাত ঘটানো ছাড়া মুক্তি পাবার আর অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না।     

আমি এই ছেলেবেলার স্মৃতিচারণে এমন সব ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম না, যেখানে সংলাপধর্মিতা রাখা যেত। কারণ, আমার মনে হয় সংলাপধর্মিতার আগেও আরেকটি নির্বাক ছেলেবেলা সবারই থাকে। অনেকটা আলতামিরা গুহাচিত্র দেখার অভিজ্ঞতার মতো। আদিম অস্পষ্ট এবং রহস্যময়। 


২.

আমাদের রান্নাঘরের মাথায় ঝুঁকে পড়া যে করবীফুলের গাছ ছিল, তাতে মাঝেমাঝেই ঘুড়ি ফেঁসে যেত। এই ঘুড়িগুলি ওড়াতো রাজু নামের আমাদেরই পড়শি একটি ছেলে। আমাদের বাড়ির পেছনেই ছিল ওদের বাড়ি । পুরনো গথিকের জরাজীর্ণ একটি পাকা বাড়ি। দরজার মাথাগুলো গোল করে ঘোরানো। রাজু ছিল আমারই বয়েসি। ওর বাবা কী একটা সরকারী দপ্তরে কাজ করতেন। আমার মনে নেই কখন বা কীভাবে আমি রাজুদের বাড়ি যেতাম বা কে আমাকে দিয়ে আসত। তবে মনে আছে রাজুর মা আমাকে অ্যালুমিনিয়ামের থালায় ডাল দিয়ে ভাত মেখে খাইয়ে দিতেন । আমি মনে করতে পারি না কখনও আমি ওনার সামনে আসনপিঁড়ি হয়ে ভাত খেয়েছিলাম কি না। যতটা মনে পড়ে, তাতে সবসময়ই আমি দাঁড়িয়ে আছি আর উনি এক হাতে থালা উঁচু করে ধরে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। ডালে পেঁয়াজ রসুনের ফোঁড়ন দেওয়া হত। ডালে ঝ্যালঝ্যালে হয়ে যাওয়া ভাত আমি আর রাজু পালা করে গেরাসে গেরাসে খেতাম । একই থালা থেকে । সেই থালায় ছিল কবুতরের ডানার পালকের মতো কালো কালো ছিট। এই তুচ্ছ ব্যাপারটি কেন যে আমার মনে আছে। রাজুরা ছিল দুই বোন এক ভাই। বড় বোনের কথা আমার যতটুকু মনে আছে, তা হল ওর ছিল লম্বাটে তেলতেলে মুখ। আর ছোট বোনের মুখ ছিল গোল। নীচের ঠোঁট একটু বাইরের দিকে ওল্টানো।ওর নাম আমার মনে আছে কিন্তু ও-ও নিশ্চয়ই বিয়ে করে এখন কোথাও সংসারী আর আমিও তেমন কোনও লেখক নই যে, আমার লেখায় ওর নামটি থাকলে- তা খুব প্রীতিপ্রদ হবে। সুতরাং ওর নাম এখানে উহ্যই থাক। ওর কথা মনে আছে আমার। যে কারণে সবার মনে থাকে।মানে ওইবয়েসি সব ছেলেদেরই মনে থাকে। ফ্রক পরত ও। গাছে উঠে করবীফুল পাড়ত। আমি কখনও আমাদের উঠোন বা ঘরের দরজা থেকে দেখেছি করবীগাছটার ডালপালা ভীষণ দুলছে । কখনও ঝিরিঝিরি পাতার ফাঁকে দেখতাম ও দূরের একটা করবীফুল হাত বাড়িয়ে ছিঁড়ে আনার চেষ্টা করছে । মাঝে মাঝে আমার এক দূরসম্পর্কের মামা এসে থাকতেন আমাদের বাড়িতে। গাছে ওকে দেখতে পেলেই আমার মামাটি সুর কেটে ওর নাম ধরে ডাকতেন- ইয়ে শোন। ফ্রক পরা গাছের মধ্যে একটা বাঁদরের মতো দোল খেতে খেতে এই সুরের বা এই ডাকের ইশারা কী- আমি নিশ্চিত, ও বুঝতে পারত। কারণ যতদূর মনে পড়ে, ওই মামাটি থাকাকালীন ও কচ্চিৎ আসত আমাদের বাড়ি ভয় পাওয়া কাঠবেড়ালির মতো।ওর ডৌল ফর্সা হাত, নীবিবন্ধের কাছে ফ্রকের কুচির শুরু- আমার এখনও মনে আছে। ও আমাকে ডাকত ভাই বলে। ভাই- এই শব্দটা কী তখন আমার জন্য কোনও গুরুভার অর্থবহন করত?- মনে নেই। তবে মনে আছে এই অধ্যায়ের অনেক, অনেক পরের অধ্যায়ে নবম ও দশম শ্রেণিতে ব্যাঙের রেচনতন্ত্র আর জননতন্ত্র বুঝে আমরা সবাই যখন বড় হবার প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি- তারও অনেক অনেক পরে দেহদান বুঝে যাই, তৃ্প্তি দেবার প্রক্রিয়া বুঝে যাই বা শুধু অন্তর্বাস পরে নিজেই নিজেকে দেখলে উষ্ণ হয়ে উঠি- তেমনই এক সময় কাকতালীয়ভাবে গিয়েছিলাম ওদের বাড়ি। রাজুর তখন ষণ্ডা চেহারা। ওর পাশে আমি নিছকই লাজুক পাটকাঠি। ওর বাবা অবসর নিয়ে চেয়ারে বুড়ো হয়ে বসেছেন। ডাবরের লাল দন্তমঞ্জন ব্যবহার করেন। কাকিমা ধূসর। আমাকে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করলেন । স্টোভ জ্বেলে চা খাওয়ালেন। আমাদের বাবা-মায়ের উপদ্রুত জীবনের কথা শুনলেন। আমি জানলাম ওদের দিদির বিয়ে হয়ে গ্যাছে এক স্কুলশিক্ষকের সাথে। এবং তারপর দরজায় সিন্থেটিক কাপড় সেলাই করে বানানো পর্দা সরিয়ে যে বেরিয়ৈ এল- তাকে আমি গাছে চড়া মূর্তিটির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে সফলও হলাম আবার হোঁচটও খেলাম। তখন ওর উপলরাশি সরে গিয়ে জল গভীর হয়েছে। পাশেই বসে আমার কথা, আমাদের কথা জিজ্ঞেস করল। আমিও বুকে দুন্দুভি নিয়ে সব জানালাম। ততক্ষণে আমি চিনেমাটির একটা গর্তে ঢেলে দেওয়া সবটুকু চা শেষ করেছি, তখনই যেসব ঘটনাগুলো মানুষের সারাজীবনকে রহস্যময় হাসি নিয়ে তাড়া করে- তেমনই একটা ঘটনা ঘটল।


কাকিমা এ ঘর ছেড়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে গিয়েছেন। বেশি জানবার স্পৃহা বোধহয় ক্ষয়ে গিয়েছিল ওঁর। এই আলোচ্য ঘরে ম্যাড়মেড়ে একটা সাদা টিউবলাইট জ্বলছে। সেই উপলরাশি সরে গিয়ে নদী হয়ে ওঠা মূর্তিটি কী একটা আলোর পোকা কামড়ানোর হাত থেকে বাঁচতে গাউনের মতো পোশাক উরু অবধি তুলে ফেলে ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে বা পোকাটি কী পোকা বা আদৌ পোকা কি না- তা জানার চেষ্টা করতে লাগল। শুভ্র উরুর অনেকটা ওঠানো- যেন পর্যটনের জন্যে খোলা দরজা, তাতে বালির সৈকত, ছোট ছোট কোক বা আইসক্রিমের দোকান এবং এসবের সীমানা পেরোলেই এক অকূল সমুদ্র। কেন, কী কারণে সেই সমুদ্র সেদিন আমার সামনে নিজেকে খুলে ধরেছিল বা পর্যটকের অভাবে সেই সমুদ্রপাড়ের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, তাই আমাকে একবার বোঝাতে কি না- তা আমি আজও জানি না। যদি তাই হয়, তবে সে বৃত্তান্ত আমাকেই কেন শোনানো বা বোঝানো হবে- আমি আজও তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে নিজেকে একটা ফাঁকা মাঠে বাজ পড়ে জ্বলতে থাকা হতভম্ব তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি- দেখতে পাই।


আমার করতল দেয় ও নেয় কিছু 

জীবন কেটে যায় তাকে ভুলি না

----------------------

আরও পড়ুন


    http://www.jaladarchi.com/2020/11/ancient-india-history-and-science-8.html

                                      


Post a Comment

0 Comments