জ্বলদর্চি

অ্যাঁতেলেকত্যুয়েল বনাম আঁতেল-২৭


অ্যাঁতেলেকত্যুয়েল বনাম আঁতেল
পর্ব- ২৭

"দাম্পত্যসুখ সবসময় জুয়া খেলার মত, তা এমন এক ব্যপার যে, বিশেষ লক্ষ্য রেখে বাঁচতে হয়।"
         -----বালজাক।


 সন্দীপ কাঞ্জিলাল 

বুদ্ধিজীবী ও সমাজ --৫

কিছুদিন আগে বহুল প্রচারিত এক টিভি চ্যানেলে 'বুদ্ধিজীবীতে ভরসা নেই' বিতর্কসভার আয়োজনে, তার সঞ্চালক প্রসিদ্ধ ডাঃ কুণাল সরকার মহাশয় বললেন, "বুদ্ধিজীবীরা বাঘের মতো বিপন্ন। অন্তত দুনিয়া জুড়ে রাজনৈতিক আবহাওয়া তাদের পক্ষে খুব স্বাস্থ্যকর ঠেকছে না।" 

বুদ্ধিজীবী বলতে যারা বুদ্ধি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ডাক্তার শিক্ষক শিল্পী লেখক প্রভৃতি। কিন্তু আজকের দিনে প্রকৃত জিনিয়াস বা প্রতিভাধররা সব কি যে-যাঁর মর্যাদা পান? জোর গলায় বলা যায়-- মোটেও পান না। শাসক দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতারা টাকার বিনিময়ে গরীব অসহায় ভালো ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করে, পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে নিম্ন মেধা সম্পন্নদের চাকুরী পাইয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকতায় এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগে, আবার টলি পাড়ায় শোনা যায় অনেক কেচ্ছা-কাহিনী, এবং টাকার খেলা। পয়সা দিয়ে বাইর থেকে পড়িয়ে আনা কিছু ডাক্তার। লেখক শিল্পীদের অবস্থানও আমরা দেখছি। আর এদের বুদ্ধিজীবী সাজিয়ে আপামর বাঙালি জনসাধারণের মনে নিজেদের সরকার সম্বন্ধে প্রশংসাসূচক বাক্য আওড়ানো। এক একটা সরকারের পতনের খবরের তীব্রতা আন্দাজ করতে পেরে, এরা রাতারাতি গিরগিটির মত রং বদল করে। যারা সত্যিকারে বাঘ নয় তাঁদের যদি বাঘ সাজিয়ে গভীর জঙ্গলের ঘন অন্ধকারে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাঁরা তো বিপন্ন বোধ করবেন। এটা কোনো আলোচনার বিষয় হতে পারে না। তাহলে এসব বানানো বুদ্ধিজীবীর উপর কি সত্যি ভরসা করা যায়। তবে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা এখনও তাদের মেরুদণ্ড সোজা রেখেছেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সমাজ কাউকে বলেনি আপনি বুদ্ধিজীবী! বা আপনি বুদ্ধিজীবী হয়ে আমাদের পথ দেখান। তাঁরা নিজেদের মান সম্মান বিত্ত বৈভব বাড়ানোর জন্য বুদ্ধিজীবী সেজেছেন। আর যারা নিজেদের বিবেকের খাতিরে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, দিকভ্রান্ত জনগণকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই নমস্য। তাঁরা নিজেদের কখনো অসহায় বা বিপন্নবোধ করেন না। 
আর যারা বুদ্ধিজীবী সেজেছেন, তাঁরা জল মেপে পা ফেলান, তাঁরা দেখেন কখন কোনদিকে গেলে, সর্বোচ্চ সুখ পাওয়া যায়। যেমন ঋতু পরিবর্তনে পোশাক পাল্টায় মানুষ, তাঁরাও সেইভাবে নিজেদের সাজগোজ করেন। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল 'বালজাক' এর একটি প্রেমের গল্প। যার অনুবাদ করেছেন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক 'নীরদচন্দ্র চৌধুরী।' সেই গল্পের নায়ক একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর সেই ছেলেটি আবার একটি মেয়ে যার নাম 'ডাচেস', তাঁর প্রতি অনুরক্ত হয়ে বিবাহিতা স্ত্রীকে অবহেলা করে। তখন বিবাহিত স্ত্রী, সেই মেয়েটির কাছে একদিন গেছেন। তখন সব কথা শুনে 'ডাচেস' সেই বিবাহিতা মেয়েটিকে বলল- "যে বেশী ভালোবাসে তাকেই বেশী অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তার চেয়েও কষ্টকর ব্যাপার উদাসীনতা সহ্য করতে হয়। যদি সত্যিই অধিকার রাখতে চাও তবে...।" 
তখন বিবাহিতা মেয়েটি উত্তর দিল- "ম্যাডাম, সর্বদাই কি করে লাভ ক্ষতির হিসেব করব, বিশ্বাসঘাতকতা করব, চরিত্রের কৃত্রিমতা দেখাবো? এভাবে জীবন যাপন করা যায়? আপনি কি পারবেন?" 
ডাচেস তখন হেসে উত্তর দিল, "ভাই, দাম্পত্যসুখ সব সময়ই জুয়া খেলার মত, তা এমন একটা ব্যাপার যে, বিশেষ লক্ষ্য রেখে বাঁচতে হয়। আমি যখন তোমাকে বিয়ের কথা বলছি, তখন তুমি যদি ভালোবাসার কথা বলতে থাকো, তাহলে আমিও তোমার কথা বুঝবো না, তুমিও আমার কথা বুঝবে না।"

মনে করি স্বামী জনগণ, বিবাহিতা মেয়েটি প্রকৃত বুদ্ধিজীবী এবং ডাচেস নকল বুদ্ধিজীবী। তাহলে যারা প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তাদের অনেক দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতেই হবে, জনগণকে প্রকৃত ভালোবাসার জন্য। আর নকল বুদ্ধিজীবীরা জনগণের সাথে সম্পর্কটিকে জুয়া খেলার মতো ভাবে। তাঁরা বাঁচে একটা বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে। নকল বুদ্ধিজীবীরা যখন বিয়ের কথা ভাবে, আমরা জনগণ তখন ভালোবাসার কথা বলি, তাই ওরা কি করছে আমরা বুঝতে পারি না, ওরাও কি করছে আমরা বুঝতে পারি না। তাই এইসব বুদ্ধিজীবীরা পক্ষপাত দুষ্ট, একপেশে এবং অভিসন্ধিমূলক- যথার্থই বলেছেন বাদশা মৈত্র, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদার ও অনান্যরা।
আর একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য মহাশয় বললেন, 'বুদ্ধিজীবী' রা যন্ত্রণাদায়ক ইনজেকশনের মতো। ছোটোরা কখনও তার উপকারিতা বোঝেন না। যদিও ইনি খোলসা করে কিছু বলেননি- ছোটোরা কারা। জনগণ না যারা শাসকপক্ষ বা বিভিন্ন দলের নেতা নেত্রীরা। যদি জনগণ 'ছোটো' হয়, তবে জ্ঞান গরিমায় 'ছোটো'? না এরা 'ছোটো লোক'? অনেকে জ্ঞান গরিমায় ছোটো হতেই পারেন। তাই এদের ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক। তাইতো তাঁরা বলে- "করি তো কার তাতে কী? আমরা তো সামান্য লোক/ আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।" আর যদি এদের ছোটলোক বলা হয়- তবে তার দায় বক্তা ও এড়াতে পারেন না। কারণ তাদের উন্নতির জন্য বক্তার কোনো প্রকার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। মানুষ পরিবর্তনশীল অস্তিত্বে নিত্যতার সন্ধান করে। ফলে কল্পিত হয় ঈশ্বর দেবদেবী, সত্তা, বিমূর্ত ধ্যানধারণা। পরিবর্তনশীল ধারণাকে স্বীকার করে নেবার সামর্থ্য অধিকাংশ মানুষের নেই। সেইজন গড়পড়তা মানুষ আশ্রয় নেয় ধর্মে, প্রতিষ্ঠানে, নিয়মকানুনে, সুনিয়ন্ত্রিত ধ্যানধারণায়। তাদের কাছে সত্যের চাইতে নিরাপত্তা বেশী কাম্য, নিরন্তর জিজ্ঞাসার চাইতে সুনিশ্চিত উত্তরে অনেক বেশি আগ্রহী। কারণ চেতনার চাইতে অস্তিত্ব অনেক বেশি প্রবল। কারণ আমরা যদি ইতিহাস তৈরিতে ব্রতী হই, তবে সেই ইতিহাসে কোনও নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি নেই, নেই কোনও নির্ভরযোগ্য আশ্বাস। তাই তারা প্রকৃত বুদ্ধিজীবীদের উপর ভরসা করতে পারে না। কিন্তু যদি প্রকৃত বীর, মায়ামোহযুক্ত সত্যকামের দেখা পায়, তবে নিশ্চিত তারা সঙ্গ দিতে প্রস্তুত। তাদের বোঝাতে হয়, এই ইনজেকশন যন্ত্রণাদায়ক হলেও তা কিন্তু রোগ সারাবে। আর যদি নকল বুদ্ধিজীবী হয় তবে জনগণ তাদের এড়িয়ে চলবেন, কারণ সে তো সত্যি যন্ত্রণাদায়ক। আর একটা কথা মনে রাখা দরকার, যারা জনগণকে ছোটলোক, মূর্খ ভাবে। আদপে তারাই মহামূর্খ। 
আর যারা শাসক তাঁরা তো বুঝবেন না। কারণ, সত্যি তো প্রকৃত বুদ্ধিজীবী সবসময় শাসকের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। আবহমানকাল থেকে ওরা কখনো পরস্পর মিলিত হয় না, বা মিলিত হতে পারে না। আর প্রকৃত বুদ্ধিজীবী ন্যায় নিষ্ঠ কথা, মেকী অহং সর্বস্ব রাজনীতিবিদদের কাছে তো ইনজেকশনের মতো মনে হবেই। এ আবার নতুন কথা কি? 
আর একজন বিদগ্ধ কবি 'সুবোধ সরকার' মহাশয় বললেন, "১০০ বছর না হলে কাউকেই মহাপুরুষ বলা যায় না, রবীন্দ্রনাথও তাঁর সময়ে বুদ্ধিজীবী ছিলেন।" যদিও মহাপুরুষ কাকে বলে আমি সত্যি জানি না। আমার এই ছোট্ট মাথায় যতটুকু বুঝি,তাই  'যোগবশিষ্ঠ' থেকে একটি শ্লোক মনে পড়ে, "তরবোহপি হি জীবন্তি জীবন্তি মৃগপক্ষিণঃ।/ সজীবতি মনো যস্য মননেন হি জীবতি।" এর অর্থ করলে দাঁড়ায়- তরুলতাও জীবনধারণ করে, পশুপক্ষীও জীবনধারণ করে, কিন্তু সেই প্রকৃতরূপে জীবিত যে মননের দ্বারা জীবিত থাকে। সোজা কথায় তিনিই প্রকৃত অর্থে জীবিত যিনি মানুষের মনে চিরকাল বেঁচে থাকেন। কবি মহাশয় বোধহয় বলতে চাইলেন, যাঁকে ১০০ বছর ধরে মানুষ মনে রাখবে তাঁর মানব কল্যাণের জন্য তিনিই মহাপুরুষ। যাঁর চিন্তা ভাবনা গরীব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে বেঁচে থাকার পথ দেখায়, যিনি মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়ার চিন্তাভাবনায় নিজেকে সমর্পণ করেছেন, তাঁকেই মহাপুরুষ বলবো। আমি এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩০৫ সনে অগ্রহায়ণ মাসে "বিদ্যাসাগর" প্রবন্ধ হইতে কিছুটা উল্লেখ করবো। যেমন তিনি লিখেছেন, "কোনো মনস্বী ইংরাজ লেখক বলিয়াছেন, "এমন লোকটি পাওয়া দুর্লভ, যিনি নিজের পায়ের উপর খাঁড়া হইয়া দাঁড়াইতে পারেন, যিনি নিজের চিত্তবৃত্তি সম্বন্ধে সচেতন, কর্মস্রোতকে প্রবাহিত এবং প্রতিহত করিবার মতো বল যাঁহার আছে, যিনি ধাবমান জনতা হইতে আপনাকে ঊর্ধ্বে রাখিতে পারেন এবং সেই জনতাপ্রবাহ কোথা হইতে আসিতেছে ও কোথায় তাহার গতি, তৎসম্বন্ধে যাহার একটি পরিষ্কৃত সংস্কার আছে।" প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে নানা রকমের বাসনা প্রবৃত্তি কাজ করে। এর একটির দাবি মেটাতে গেলে, অন্য দাবিকে অবহেলা করতে হয়। এমনকি অনেক সময় তাদের অবদমিত করারও প্রয়োজন পড়ে। মহাপুরুষ তাঁরা যাঁরা তাদের জীবনের অন্য সব কামনা বাসনাকে অবদমিত করে, কেবল মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। তাই তাদের জীবনে নানা দুঃখ কষ্ট অশান্তি সহ্য করতে হয়। তাঁরা মহাপুরুষ! তাঁরাই বীর! তাই রবীন্দ্রনাথ Hero সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, "The hero is he who lives in the inward sphere of things, in the True, Divine and Eternal, which exists always, unseen to most under the Temporary, Trivial: his being is in That; he declares that abroad, by act or speech as it may be, in declaring Himself abroad."

অর্থাৎ, "তিনিই বীর যিনি বিষয়পুঞ্জের অন্তরতর রাজ্যে সত্য এবং অনন্তকে আশ্রয় করিয়া আছেন- যে সত্য দিব্য ও অনন্ত পদার্থ অধিকাংশের অগোচরে চারি দিকের তুচ্ছ এবং ক্ষণিক ব্যাপারের অভ্যন্তরে নিত্যকাল বিরাজ করিতেছেন; সেই অন্তরাজ্যেই তাঁহার অস্তিত্ব; কর্মদ্বারা অথবা বাক্যদ্বারা নিজেকে বাহিরে প্রকাশ করিয়া তিনি সেই অন্তররাজ্যকেই বাহিরে বিস্তার করিতেছেন।"
গীতার ৩ নং অধ্যায়ে ১৩ নং শ্লোক, যেখানে বলা হয়েছে-"যঞ্জশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈবঃ,/ভুঞ্জতে তে ত্বঘং যে পচন্ত্যাত্মকারণাত।।" অর্থাৎ যাঁহারা দেবযঞ্জাদি পঞ্চমহাযঞ্জের অনুষ্ঠান করিয়া যঞ্জাবশিষ্ট ভোজন করেন,তাঁহার সর্বপাপ হতে মুক্ত হন।যাঁহারা শুধু আপনার জন্য পাক করেন,তাঁহারা নিশ্চিতই পাপ অর্থাৎ পাপময় অন্ন কেবল ভক্ষণ করেন।

সেইরূপ রবীন্দ্রনাথের লেখায় পাই "আনন্দময়ীর আগমনে, আনন্দে গিয়াছে দেশ ছেয়ে/ হের ঐ ধনীর দুয়ারে, দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে।" যখন সারা দেশ আনন্দময়ীর আগমনে আনন্দিত, ধনীর ঘরে আনন্দের ছটা। তখন কাঙালিনী মেয়ে যার মা নেই, বাপ নেই, ছিন্ন বসন, বন্ধু নাই, কেউ নাই- সংসারে সে একা। তখন সকলে নিজের আনন্দে মাতোয়ারা, বিভোর। খাওয়া নেই, শীর্ণ দেহের সেই মেয়েটির রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি তো নিশ্চয় মহাপুরুষ, এ আর নতুন কথা কি। 

সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বলেন, "বুদ্ধিজীবীরা সমাজকে প্রশ্ন করতে শেখায়। ৩৭০ নিয়ে মাতামাতিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি ঘোরানো চলছে। তখন বুদ্ধিজীবীরাই স্বাধীন স্বর।" 
অবশ্যই ঠিক কথা বলেছেন। প্রকৃত বুদ্ধিজীবী কাকে বলব? যারা নির্ভীক, যাদের ইচ্ছাশক্তি প্রবল, কোনো বিপদে তাঁরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয় না, তাঁরা ভাবে না জীবন শুধু ভোগের জন্য, ত্যাগের মহিমায় যাঁরা মহিমান্বিত এবং জীবন রসিক। যিনি ক্ষমতা ও ক্ষমতার দালালদের কাছ থেকে শতহাত দূরে অবস্থান করেন। যেমন সার্ত্র। যিনি বলতে পারেন, "এবার বুদ্ধিজীবীদের সময় হয়েছে শ্রমিকদের কাছ থেকে শেখার।" যিনি চিৎকার করে বলে উঠেন, "এক নতুন বাড়ি তৈরি হতে চলেছে যেখানে বাস করবে আগামী দিনের সত্য।" গরীব শোষিত মানুষের কথা ভেবে বললেন, "আমি বেআইনি কাজে বিশ্বাসী।" যাঁকে সে দেশের রাষ্ট্র গ্রেফতার করতে ভয় পায়। গ্রেফতার করলেও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়- তিনি বুদ্ধিজীবী। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ভয় পেয়ে বলে উঠেন, "ভলত্যেরকে কি বন্দি  করে রাখা যায়?" 
যেমন 'এমিল জোলা'। যিনি রাষ্ট্রপতিকে বলতে পারেন আপনি অপরাধী! সুতরাং 'I accuse...' 
যিনি মানুষের কথা ভেবে রাষ্ট্রকে বলেন, "তোমার হাতে তরবারী আমার হাতে কলম। দেখব কে জেতে?" 

আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী কবি ভারভারা রাও! যাকে নিয়ে প্রখ্যাত কবি বিভাস রায়চৌধুরী বলেন, "...এক কথায় কবির অধিক।" কবি ভারভারা রাও যিনি লেখেন "কসাই" কবিতায়, "প্রকৃত কসাই- এর পরিচয় রাষ্ট্র।" যিনি লেখেন, "যদি তুমি বিবাদ কর/ পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে তোমায়,/ সাবধানে থেকো, পুলিশ মানে অসুর।" এখানে বিবাদ মানে গরীব মানুষের স্বার্থের জন্য লড়াই। আর যেমন গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গি, প্রাবন্ধিক গৌতম নওলাখা প্রভৃতি।
অসাধারণ এই মানুষরা ধীর স্থির প্রসন্নচিত্তে বিপদের মধ্যেও বাস করতে পারেন। তাঁরা ভালোবাসে মানচিত্রহীন উত্তাল মহাসমুদ্রে নৌকা ভাসাতে। অজেয়কে জয় করতে তাঁরা আগ্রহী, তাঁরা জীবনশিল্পী, কারণ তাঁরা নিজেদের প্রয়াসে নিজেদের গড়ে তোলেন।আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম বলেই তাঁরা যথার্থ স্বাধীন। 

অতএব যাঁরা প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তাঁদের স্বর স্বাধীন।
বুর্জোয়া অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য দেশ যখন অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে বেসামাল হয়, তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য -ধর্ম শাস্ত্র মন্দির মসজিদ অধাত্ম্যবাদ জাদুমন্ত্র কুসংস্কার জাতীয়তাবাদ বা অন্য কোনো নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে এবং তা মানুষের সামনে হাজির করে। যাতে মানুষ এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারে। যেন বুর্জোয়াশ্রেণীর ভুল ত্রুটি সব মানুষ ভুলে যায়।আর তার জন্য তারা manufactur করে অর্থ উপঢৌকন ক্ষমতার বিনিময়ে কিছু নকল বুদ্ধিজীবী। তারা যেখানে সুযোগ পায় বুর্জোয়াশ্রেণীর হয়ে গলা ফাটায়। তারা যে ভাড়া করা বুদ্ধিজীবী। তাই লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার সঠিক কথাই বলেছেন।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন

Post a Comment

1 Comments

  1. নিজের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয় এই ক্রমশ চলমান আলোচনা টি, লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ

    ReplyDelete