জ্বলদর্চি

অনুসন্ধানীর ডায়েরি-১/ সন্তু জানা


অনুসন্ধানীর ডায়েরি  - ১

সন্তু জানা  

অখণ্ড মেদিনীপুর পর্ব : ১  

বিষয় : বাবু কার্তিক চন্দ্র মিত্র 

ভাবা যায় না! আজ থেকে ১৫০ বছর আগে তৎকালীন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী  কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন একজন মেদিনীপুরবাসী!

 হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য । তিনি হলেন বাবু কার্তিক চন্দ্র মিত্র। ঐতিহ্যশালী 'মেদিনীপুর টাউন স্কুল'- এর প্রতিষ্ঠাতা সেকালের স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিদ বাবু কার্তিক চন্দ্র মিত্র। উনবিংশ শতকের শেষার্ধে আজ থেকে ঠিক ১৫০ বছর আগে কলকাতার মাটিতে মেদিনীপুরের জয়গান  রচনা করেছিলেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। ১৮৭০ সালে সারা বাংলার মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ১২ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর স্তরে  দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ইংরেজি অনার্স বিষয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের কৃতি ছাত্র কার্তিক চন্দ্র মিত্র। ১৮৪৮ সালের জুলাই মাসে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত চক গণেশ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন এই  'মেদিনীপুর - রত্ন'। 

তবে, এখানেই শেষ নয়। বাবু  কার্তিক চন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম মেদিনীপুরবাসী হিসেবে  F.A , B. A এবং M . A পরীক্ষাতেও প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মেদিনীপুরবাসী 'ঈশান স্কলার'। পরবর্তীকালে, B. L (আইন ) ডিগ্রি লাভ করে তিনি দীর্ঘকাল ধরে মেদিনীপুর জজ কোর্টের প্লেডার হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। 
 কত কাল ধরে কংসাবতীর পথ ধরে কত জল গড়িয়ে গেছে ! ধীরে ধীরে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছেন বাবু কার্তিক চন্দ্র। প্রসঙ্গত, 'মেদিনীপুরের ইতিহাস' রচনাকার মহামান্য যোগেশচন্দ্র বসুর স্বহস্তে লিখিত ১২০ বছর পূর্বে রচিত একটি দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি 'বসু - বংশ' সম্প্রতি উদ্ধার করেছি মেদিনীপুরের রাঙামাটি থেকে। সেই পাণ্ডুলিপির সূত্র ধরে ইতিহাসে এই প্রথমবার জানা যায় একটি বিশেষ তথ্য যে, উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে যোগেশ চন্দ্র বসুর প্রপিতামহ মুন্সী রামধন বসুর জেষ্ঠ্য কন্যা পদ্মাবতীর সঙ্গে জকপুর নিবাসী  কুলীন জমিদার গোবিন্দরাম মিত্রের বিবাহ হয়। এই গোবিন্দরাম ছিলেন মেদিনীপুরের উজ্জ্বল নক্ষত্র কার্তিক চন্দ্র মিত্রের পিতামহ।

জকপুরের জমিদার বসু - পরিবার মেদিনীপুরের নতুন বাজারের নিকট রাজ অট্টালিকা নির্মাণ করেন উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে। পরবর্তীকালে কার্তিক চন্দ্র পারিবারিক গৃহ সেই রাজ অট্টালিকাটিকেই ইংরেজি বিদ্যালয়ের রূপদান করেন। প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টি ছিল নবজাগরণের কেন্দ্রস্থল। শুধু তাই নয়, প্রাক স্বাধীনতাকালে  সশস্ত্র বিপ্লবের আঁতুড়ঘর ছিল এই শিক্ষালয়টি। এই কারণে ইংরেজ শাসক কোন ভাবেই নিজেদের শাসনকালে স্কুলটিকে সরকারি মান্যতা প্রদান করেনি।

 কিন্তু, আমরা আজকের প্রজন্মের কতজন  মেদিনীপুরবাসী মনে রেখেছি এই মহান মানুষটির কথা?

জানা আছে কি ?

১।  বাবু কার্তিক চন্দ্র মিত্র কত সালে 'মেদিনীপুর টাউন স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন ?

২ । কার্তিক চন্দ্রের জন্মস্থান 'চক গণেশ' গ্রামটি বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোথায় অবস্থিত?

৩ । ১৮৭০ সালে সারা বাংলার মধ্যে কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে মাত্র কত জন ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন ?


(আগামী ৫ দিনের মধ্যে সঠিক উত্তর ৯৭৩৩৭৮৭৪১৫ wts app নম্বরে টাইপ করে, নিজের নাম, ঠিকানা,  পেশা লিখে পাঠাতে পারেন। সঠিক উত্তরদাতা দের নাম পরের শনিবার প্রকাশিত হবে। উপরে আলোচিত বিষয়ে কোন নতুন তথ্য থাকলেও জানাতে পারেন।)

পরের সপ্তাহে হাজির হব অখণ্ড মেদিনীপুরের আরও চমকপ্রদ কোনও বিষয় সম্ভার নিয়ে। সঙ্গে থাকুন।


প্রতি শনিবার এই ধারাবাহিক প্রকাশিত হবে।  আপনাদের অভিমত পেলে ভালো লাগবে।  

Post a Comment

0 Comments