জ্বলদর্চি

শুধু টিকা খোঁজে আর তারচেয়ে বেশি কাজ খোঁজে/গৌতম বাড়ই

শুধু টিকা খোঁজে আর তারচেয়ে বেশি কাজ খোঁজে

গৌতম বাড়ই

শতাব্দীতে নাকি একটি করে অমন প্যান্ডেমিক বা অতিমারী আসেই। আমরা যারা এই সময়টায় জীবন-যাপন করে চলেছি, সেই অতিমারীর দুঃসময়ের বিরাট এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যেই চলেছি।নবীন, প্রবীণ, শিশু, কিশোর সবার মনেই এর প্রভাব লেগে থাকবেই।শিশুদের স্কুল বন্ধ। কিশোর, যুবারা সেই দীর্ঘকালীন গৃহবন্দীর তিক্তস্বাদ পেয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষের মন। এত আতঙ্ক নিয়েও যে বেঁচে থাকতে হয় তা আমরা অনুভব করেছি। আমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছি। আমরা দেখেছি এক মেকী সম্পর্কের জীবন। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস বছরের শুরু থেকে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশে এবং বিদেশে।
লকডাউনের শুরুটা পরিকল্পনা মাফিক শুরু যেমন ছিল না, তেমনি রাষ্ট্রকেও দেখা যায়নি কল্যাণমুখর ভাবে এই দুর্দিনে বৃহত্তরভাবে তার নাগরিকদের --এখানে বলব সেই বৃহত্তর জনগণকে যারা প্রকৃত রাষ্ট্রের ধারক ও বাহক এবং রাষ্ট্রের প্রকৃত রূপদানকারী, তাদের বুকনিমারা গালভারী সন্দেশ না খাইয়ে একদম অকপটভাবে সাহায্য করতে।

অনেক তো প্রশ্ন ধেয়েই আসে, কূর্সিতে বসিলাম যাহাদের কল্যাণে তাহারা কী একটি এপিক বা আধার সংখ্যা মাত্র? তাহলে পরিযায়ী শব্দটি কেন?
আর পরিযায়ী যদি হয়, তাহলে শুধু দিন আনি দিন খাই বা শ্রমিকদের জন্যই এই শব্দটি প্রয়োগ হবে?এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জীবনের তাগিদে বা যেখানে পারিশ্রমিকের বন্দোবস্ত আছে তাদের প্রত্যেককেও কেন পরিযায়ী চাকুরে, পরিযায়ী রাজনৈতিক নেতা বলা হবে না? 

হয়ত একদিন অতিমারী অনেক মানুষ মেরে বিদায় নেবে কালের নিয়মে, রাষ্ট্রের ক্ষমতাও অন্য আর এক রাজনৈতিক দলের হাতে যাবে, শুধু জানা যাবে না সেই তথাকথিত পরিযায়ীরা কেন দলবেঁধে ছুটতে শুরু করল আর কত সংখ্যায় মরলো?

টিকা ঐ আসে ঐ হরষে...

এখন খবরের প্রথম পাতায়, টিভির ব্রেকিংনিউজে এই এক হয়েছে রা। করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন এসেই গেল! আসলে আমাদের যেমন কিছু কিছু মিথ্যে ভয় দেখিয়ে জীবন আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলা হয় আবার তেমনি কিছু কিছু স্বপ্ন দেখিয়ে এই আমজনতা আমাদের আশা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়।

এই এসেই গেল, সেই অগাষ্ট থেকে। যদি আসেও এই একশো ত্রিশ কোটির দেশে প্রথমে কারা পাবে?তারপর কারা? তারপর? তারপর? আর মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কী? আমরা এই মুহূর্তে জানতে পারবো না। যেমন জানতে পারিনা সঠিক পরিসংখ্যান ঠিক কত মানুষ এখনও বে-রোজগেরে? লকডাউনে কত লোকের রোজগার গেলো?
মাঝেমাঝেই দেখবেন শেয়ারবাজার তেজী ঘোড়ার মতন দৌড়াচ্ছে আর মাঝেমাঝেই শুনবেন এখনও শিল্পে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক নীচে। সাধারণ চাকুরীজীবি মানুষের মহার্ঘ্য ভাতা বছরখানেক সরকার আর দেবে না। সে দাম আকাশ বা মহাকাশ ছুঁয়ে ফেললেও না। ভর্তুকী দেবে শিল্পপতিদের কিন্তু আয়করে ছাড় নেই সাধারণের। অদ্ভুত এক সার্কাস চলছে মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে কাজের সময় বাড়িয়ে ক্রীতদাস করো আর রোজগারের অংশ ছেঁটে ফেলো। অল্প পারিশ্রমিকে বেশি কাজ করালে কোথাও তো একটা মুনাফার পাহাড় জমছে। তাহলে শ্মশ্রূমুখো বৃদ্ধ অর্থনীতিবিদের কথা মনে আসবেই। মনে আসতেই হবে।

কে যেন বলেছিল আমরাই গাধা। শুধু গাধা নয় তারচেয়েও বেশি বোধবুদ্ধিহীন। টিকা আসে আসুক, টিকা খোঁজে খুঁজুক। শেয়ারবাজার বুলরান দিক। শুধু জেনে রাখা ভাল অতিমারীতে বেঁচে গিয়ে তারচেয়েও বেশি জনগণ কাজ খোঁজে শুধু এই দু-হাতে রোজ।
---------
আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments