জ্বলদর্চি

পেন্ডিয়ালা ভারভারা রাও / সন্দীপ কাঞ্জিলাল


"তোমার কথাকে সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য মনে করি না। কিন্তু তা যাতে তুমি বলতে পারো তার জন্য প্রাণও দিতে পারি।"
                 - ভলতেয়ার।
"যখন কাঁপন লাগে চোখ জিভে/ বাতাসকে মুক্ত করে দেয় সুর/ গান যখন হয়ে ওঠে যুদ্ধেরই শস্ত্র/ কবিকে তখন ভয় পায় ওরা/ কয়েদ করে তাঁকে/"- শঙ্খ ঘোষ। 
" তিনি আগে মানুষ।/ তারপর কবি।/ তাই কবিতাকে নামিয়েছেন/ গনগনে তাপে ফাটা রুক্ষ মাটিতে।"
----- সন্দীপ কাঞ্জিলাল।
 
Pendyala Varvara Rao 
পেন্ডিয়ালা ভারভারা রাও
(জন্ম-০৩/১১/১৯৪০)

স ন্দী প  কা ঞ্জি লা ল 

২০শে এপ্রিল, ১৯৮১। শিঙা বাজছে ভীষণ শব্দে! শব্দ ছাড়িয়ে যাচ্ছে এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়। সেই শব্দে অর্ধ উলঙ্গ কালো কুচকুচে জোয়ান মদ্দের দল আর মেয়েরা কাঁখে কোলে বাচ্চাদের নিয়ে হাজির পাহাড়ের পাথুরে ছায়ায়, জংলা জমিতে। গ্রামকে গ্রাম, মহল্লাকে মহল্লা জুটলো সে সভায়। এত বড় অন্যায়ের বিহিত চাই। তারা যখন জমায়েত হচ্ছে, তখন সে সময় গাড়িকে গাড়ি পুলিশ হাজির। তারা সশস্ত্র এবং মারমুখী। কিন্তু সেই দলিত আদিবাসী তারাও মরিয়া, কারণ, যে জমি তাদের জীবন জীবিকা অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ, সেই জমি কেড়ে নিয়েছে জমি মাফিয়ার দল। 

জন্মসূত্রে আদিবাসী নয় এমন মহাজনেরা এলাকায় ঢোকে ব্যবসা করবে বলে। তারপর সাধাসিধে মানুষগুলোর কাছ থেকে দেদার খরিদ করতে থাকে কেন্দুপাতা, মহুয়ার শুকনো ফল, তেঁতুল ইত্যাদি। তারপর শুরু হয় কম দামে কেনা জিনিসগুলো চড়া দামে বেচা। বেশি ফলনের জন্য পরে শোধ করে দিলেও হবে এই আশ্বাসে গরীবকে দাদনের টাকা দেওয়া। সেই টাকা শোধ করতে পারে না যখন, তখন শুরু হয় জমি বন্ধক নেওয়া। অ-আদিবাসীদের হাতে চলে যায় জমির পর জমি। এগুলো পর পর ঘটতে থাকে অনিবার্যভাবেই। তারপর একসময় আদিবাসীরা অবাক হয়ে দেখে নাম হয়তো বদলায়নি, কিন্তু সব অর্থেই জমির হাতবদল হয়ে গেছে। মহাজনই এখন জমির আসল মালিক। তাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। মালিকানার কথা উঠলেই নাকের ডগায় ওড়ে তাড়া তাড়া কাগজ- দাদনের কাগজ, ঋণের কাগজ, বন্ধকের কাগজ। 

সভা শুরু হতে না হতে নেমে আসে আক্রমণ, লুটিয়ে পড়ে বাইরের আগ্রাসনের বিহিত চাইতে আসা ভূমিপুত্ররা। ৫০০০ এর বেশি লোক জড়ো হয়েছিল সেদিন ইন্দ্রাভেল্লিতে। সরকারি হিসেবে মৃত ১৩ জন। বেসরকারি হিসেবে ১০০ জনের ওপর। 
আর এইসব নিয়ে রাজনীতি, কবিতা উপন্যাস লেখালেখির অপরাধে অশীতিপর বৃদ্ধ "পেণ্ডিয়ালা ভারভারা রাও" কে আটকে রাখা হয়েছে জেলে। যার ভগ্ন স্বাস্থ্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, তবু তার সঙ্গে কারোর দেখা করার অনুমতি নেই। একমাত্র তাঁর স্ত্রী মাসে একবার দেখা করতে পারবেন। 

রাষ্ট্র চিরকাল এদের মতো মানুষদের বিপন্ন দেখতে চেয়েছে। সেই সাইবারবাদের জন্মদাতা চন্দ্রবাবু নাইডু হোক বা নবনির্মিত তেলেঙ্গানার শাসক বা খোদ দিল্লির মসনদে বসা শাইনিং ইণ্ডিয়ার প্রবক্তারা, যাদের চন্দ্রশেখর আজাদ ডাকেন, "কালা আংরেজ" বলে, এই ব্যাপারে সব শেয়ালেরই এক-রা,-- এইরকম মানুষেরা রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক। ফলে ছলেবলেকৌশলে আটকে রাখো এদের। বয়স, অসুস্থতা, নির্দোষিতার অকাট্য প্রমাণ বা অন্য কোনও কারণেও যেন মুক্তি না মেলে এদের। 
সত্যি তো ভারভারা রাওদের মতো শিল্পী লেখকদের কখনও সুবিধাজনক লোক না! আরো বাবা তোরা তো লেখবি, চাঁদ ফুলতারা, নয়তো প্রিয়ার হাসি মুখ আর একটু বেশি হলে তাকে উর্ধউলঙ্গ বা পুরো উলঙ্গ করে জ্যোৎস্না রাতে দাঁড় করিয়ে কবিতা উপন্যাস লেখবি। এসব ছেড়ে তোদের কি দরকার দেশ-কাল-রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর। কোথায় পাবে পদ্মশ্রী, আকাদেমি, তা-নয়- এখন ঠিকানা জেলখানা, খাবার জেলখানার, আর কয়েদির পোশাক, পেছনে একটা নম্বর। দেশে বিদেশে এই ভারভারা রাও- রা কবে বুঝবেন, রাজকাজে বাধা দিতে নেই। দিলে সমাজে স্থান হবে না। তোমার জায়গা কারাগার। অথচ আমরা যারা দু চার লাইন লিখতে পারি, শুধু একটা টিনের খলা বা প্রশংসাপত্র পাওয়ার জন্য কাউকে গোপনে দিচ্ছি অর্থ, নয়তো কোনো ব্যক্তিকে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি "কারণ-বারি"। শুধু কিছু লোক চিনবে, কবি সাহিত্যিক বলে সম্মান দেবে বলে। নইলে শাসক দলের নেতা নেত্রীরা এলে চেয়ারটা পেতে দিচ্ছি, অথবা নিজে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারটা দিচ্ছি এগিয়ে।কারণ, শুধু একটু ভালো থাকবো, সম্মানে থাকবো। 
১৯৭৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জেলই তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি। প্রান্তিক মানুষের কবি, অধ্যাপক ভারভারা রাও কে সমাজ থেকে নির্বাসন দিয়ে জেলে রাখার মধ্যে, তাই আমি অন্তত অন্যায় কিছু দেখিনি। কেন দেখবো বলুন? মনে করে দেখুন, সেই আথেন্সের সুদর্শন দার্শনিক 'প্লেটো' যিনি বলেছিলেন, সেই কবি লেখকরা আদর্শ রাষ্ট্রের উপযোগী, যারা রাষ্ট্র পরিচালকদের নির্দেশ অনুযায়ী শুধু নীতিসঙ্গত কথা লিখবেন। তাই তাঁর লেখা "রিপাবলিক"-এর শেষ অধ্যায়ে প্লেটো রায় দিলেন যে আদর্শ রাষ্ট্রের চৌহদ্দি থেকে কবিদের খেদানো ছাড়া উপায় নেই।
 
সব সাহিত্যিক এবং সাহিত্যরসিক স্বীকার করবেন যে সাহিত্যসৃষ্টির মূলে এমন এক শক্তি সক্রিয়, যার উপরে কোনও হুকুম খাটে না। এই শক্তিরই নামকরণ করা হয়েছে প্রেরণা। আধুনিক কালে মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্ররা এ শক্তিকে পর্যন্ত নিজেদের তাঁবেদার করার চেষ্টা করেছে। ফলে যদিও সে সব দেশে বছরে বছরে কেতাব ছাপা হয়েছে বিস্তর, কিন্তু সাহিত্য-প্রেরণা এসেছে শুকিয়ে। যাঁরা জাত-সাহিত্যিক, তাঁরা হয় দেশ ছেড়েছেন (যেমন টমাস মান কি ইভান বুনিন), নয় আত্মহত্যা করেছেন (যেমন মায়াকোভস্কি), নয় কারাগারে, দাসশিবিরে কি গ্যাসচেম্বারে প্রাণ দিয়েছেন। তবু অসীম ক্ষমতা সত্ত্বেও কোনও রাষ্ট্রশক্তি আজ পর্যন্ত খাঁটি শিল্পী-সাহিত্যিকের প্রেরণাকে পুরোপুরি আপন মুঠোয় আনতে সমর্থ হয়নি। এসব অভিজ্ঞতা প্রেরণা বিষয়ে প্লেটোর বিশ্লেষণকে স্পষ্টই সমর্থন করে। 

মনে রাখতে হবে সাহিত্যিক শাস্ত্রপ্রণেতা নন। তিনি মানবতন্ত্রী। কীটস এর ভাষায় "ঋণাত্মক সামর্থ্যই" কবি প্রতিভার বিশিষ্ট লক্ষ্মণ। একথাও ঠিক মুক্তিস্পৃহার প্রবণতা সমস্ত নিয়মশৃঙ্খলা ভেঙে ফেলার দিকে। অপরপক্ষে যুক্তি শুধু যে নিয়মানুগ তাই নয়, যা আপাতদৃষ্টিতে শৃঙ্খলাহীন তার মধ্যে নিয়মের সন্ধান করাই তাঁর কাজ। 

তার প্রমাণ তো হাতে নাতে পাচ্ছি আমরা। এই যে অধ্যাপক কবি সাহিত্যিক ভারভারা রাও। কিন্তু এই আশঙ্কা কি থেকে যায় না, যে রাষ্ট্র স্বাধীন মত প্রকাশকে মেনে নেয় না, সেই রাষ্ট্রের বুনিয়াদ অত্যন্ত দুর্বল, তাঁর শাসিত রাষ্ট্রের আদর্শ অত্যন্ত মারাত্মকভাবে ভ্রান্ত? ব্যক্তির স্বাধীন মতকে যে রাষ্ট্র অবদমিত করতে চায়, তাকে কি সুশাসিত রাষ্ট্র বলতে পারি?
যখন এই পাগল বিদ্রোহী কবি ভারভারারাও লেখেন- " পারলে তুমি বণিক ডেকে গোধূলিও দাও বেচে/ গোদাবরীও শুকিয়ে যাবে, থাকবে না কেউ বেঁচে।"
তখন কোন শাসক তোমাকে খাতির করবে? তাই করেওনি। যে রাজদণ্ড তৈরি বণিকের মানদণ্ড থেকে, সে কি চুপ থাকতে পারে। তাই সে চুপও থাকেনি। কারণ রাজনীতির উন্মাদরা কখনো সহ্য করবে না কবির পাগলামি। তাই তোমার স্থান লোকালয় নয় কারান্তরাল। তাই জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে ভারভারা রাও। তাইতো দার্শনিক 'নীটশে' বলেছিলেন, "প্রকৃত কবিও শিল্পী মাত্রই বিপ্লবী।" তিনি আরও বলেছিলেন, "গণতন্ত্র ব্যক্তিকে পর্যবসিত করে, অতি ক্ষুদ্র, গোলাকার, পলকা, বালুকণায়। গণতন্ত্রে সকলেই তুল্যমূল্য, যেখানে সংখ্যার প্রাধান্যে যারা নিতান্ত নিকৃষ্ট তারা প্রতিভাসম্পন্ন গুণীজনকে বিনাশ করে গুণহীন গড়পড়তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।"
ভীমা-করেগাঁও মামলা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ২৮ অগাস্ট যে ভাবে দেশের পাঁচ বিশিষ্ট মানবাধিকার ও সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হল, তা কিন্তু ফ্যাসিস্ট শক্তির রাষ্ট্র পরিচালনার একটা নমুনা মাত্র। এ বছরের ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও এ দলিত বিজয় দিবসে অধ্যাপক কবি ভারভারা রাও উপস্থিত ছিলেন যেখানে পেশোয়ারদের সঙ্গে দলিতদের জাতি দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই ৭৮ বছর বয়সী ভারভারা রাওয়ের গ্রেফতারী এবং হেনস্থার দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল শুধু একটি মওকার। পুলিশের কাছে ধৃত এক জন মাওবাদীর চিঠিতে নাকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে ভারভারা রাও লিপ্ত আছেন বলে অভিযোগ। শুধু ভারভারা রাও-ই নন, আরও চারজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নাভালকা, ভারনান গঞ্জালভেজ ও অরুণ ফেরেরাকে ও একই দিনে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তেলেগু কবি অধ্যাপক ভারভারা রাও তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময় জুড়েই সমাজের পিছিয়ে পড়া দলিত জনতার অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ তাঁর আমেরিকার নিশ্চিন্ত জীবন জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতবর্ষের শ্রমিকদের অধিকারের লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করেছেন। "অপারেশন গ্রিনহান্টের" কট্টর সমালোচক এবং পাথালগড়ি আন্দোলনের উপর সহানুভূতিশীল পাদ্রি স্ট্যান স্বামীর বাড়িতে ব্যাপক পুলিশি তল্লাশি চালানো হয়েছে। ভারভারা রাও- এর জামাতা অধ্যাপককে সত্যনারায়ণের বাড়িতেও পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালায়। তল্লাশি চলাকালীন পুলিশ অধ্যাপক সত্যনারায়ণকে যে সব অবান্তর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত প্রশ্ন করেছে বলে সংবাদপত্রের প্রকাশ, তা শুনলে প্রাগৈতিহাসিক গুহামানবেরাও লজ্জিত হতেন। "কেন মার্ক্সবাদ পড়েন? কেনই বা মাও দে জং- এর বই বাড়িতে? কেন গদরের গান শোনেন? কেনই বা বাবা অম্বেডকরের ছবি বাড়িতে টাঙানো?" ইত্যাদি ইত্যাদি। 

গত ষাট দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি আন্দোলন তাঁকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। তারপরে ঘটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী কাকুলামে সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহী। ১৯৬৯ সালে শুরু হয় পৃথক তেলেঙ্গানার রাজ্যের দাবিতে তীব্র গণ আন্দোলন। স্বাভাবিক ভাবে এর প্রভাব পড়বে তেলেগু সাহিত্যে। যখন প্রবীণ লেখকরা এই আন্দোলনে একাত্ম হতে পারছেন না, তখন তিনি তাঁরই মতাদর্শে বিশ্বাসী লেখক কবিদের নিয়ে গড়ে তোলেন- "রিভোলিউশনারী রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন" যা "ভিরাসম" নামে খ্যাত। 

অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ভারভারা। মাটিতে নেমে কৃষকের প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন, দিনের পর দিন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, স্বরূপ বুঝেছেন দশকের পর দশক। কৃষিজীবীর প্রতি বঞ্চনা ও নির্মম উদাসীনতা দেখে, তাঁর উপলব্ধি হয়েছে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলি শুধু ভোটব্যাংক হিসেবেই ব্যবহার করে এসেছে প্রান্তজনদের। 

এই উপলব্ধি প্রকাশ পেতে থাকে ভারভারার কবিতায়। দিনে দিনে তিনি হয়ে ওঠেন "বিপ্লবী কবি।" রাষ্ট্রের চোখে "বিদ্রোহী কবি"ও বটে। সভার পর সভা, ঘরোয়া আলোচনা, লেখালেখি ভারভারা ও তার বন্ধুরা তুলে ধরেছেন, সরব হয়েছেন কৃষক, প্রান্তিক, দলিত, আদিবাসীদের হয়ে। অন্ধ্রে সশস্ত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সে সময় সেখানকার পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দেখানো পথই অবলম্বন করে। রাজনৈতিক বিরোধিতাকে একেবারে নিকেশ করার পথ। একের পর এক ভুয়ো সংঘর্ষে অতি বাম রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যার অভিযোগ ওঠে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। মানবাধিকার কর্মী ভারভারা সে সময় থেকেই ভুয়ো সংঘর্ষের বিরুদ্ধে সরব, বারে বারে দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। 

ভারভারা রাও সব থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরেননি। তিনি ক্ষমতার অলিন্দে পা রাখার চেষ্টাই করেননি কোনও দিন। বরং চিরকালীন প্রতিবাদের কঠিন-কঠোর পথই বেছে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়। তাই জেলে গুরুতর অসুস্থ হলেও, স্মৃতিভ্রংশের মতো রোগে আক্রান্ত হলেও, রিপোর্টে কোভিড পজিটিভ এলেও আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া অশীতিপর বৃদ্ধ বন্দির চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত হয় না। সুকৌশলে ভারভারার মতো 'বিপজ্জনক' কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রয়াস চালাতে হয় রাষ্ট্রকে। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও তাঁর জামিন না মঞ্জুর হতেই থাকে।

১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। রাজদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেফতার নজরুল, আর তাঁকেই করছেন তাঁর নাটক 'বসন্ত' উৎসর্গ। আবার বামপন্থী পত্রিকা 'লাঙ্গল'-এর জন্য লিখেছেন আশিসবাণীও। ইংরেজ স্বাভাবিকভাবে পেয়েছল অন্য 'গন্ধ'। যদিও তখনকার সরকার ভয় পেত রবীন্দ্রনাথকে। এখন সরকার সাবালক। তাই ভারভারা রাও এর থেকে অন্য গন্ধ পেতে, তাঁকে এরেস্ট করতে দেরি করেনি। রবীন্দ্রনাথকে এরেস্ট করেনি বলেই তো বাতাস অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছিল। 
ভারতবর্ষের ফ্যাসিবাদের ইতিহাস লেখার অপেক্ষায় দিন গুনছে সময়। ইতিহাস যদিও সবসময় বলে এসেছে, ফ্যাসিবাদের দেশপ্রেমের সুবিধাবাদী শক্তি জনমানসে ছড়িয়ে বিরোধী মতবাদকে কিভাবে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে কিভাবে কারাগারে পচিয়ে মারে, সেই সঙ্গে বাকি সমাজকে কীভাবে তটস্থ রাখে।এটাই হলো অঘোষিত জরুরি অবস্থা। ফ্যাসিবাদী কৌশল। হয় তুমি আমার জয়গান করো, নইলে তুমি দেশ বিরোধী। এ দুয়ের মাঝখানে কোনো অবস্থান ফ্যাসিবাদ স্বীকার করে না।
----------
আরও পড়ুন

আজ কবি শ্যামলকান্তি দাশের জন্মদিন। শুভেচ্ছা জানালেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। স্কেচ- দেবাশীষ দেব।

Post a Comment

0 Comments