জ্বলদর্চি

বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন - ১৯ / পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন― ১৯
পর্ব― ১৯

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

আবিষ্কৃত ঘটনার কারণ অজ্ঞাত :

মল্লযুদ্ধ শুরু হয়েছে। লিলিপুটের সঙ্গে গোলিয়াথের। হাতির সঙ্গে মশার। কে জিতবে মহারণ? স্বভাবতই পাল্লা ভারী হাতি ও গোলিয়াথের। অসীম শক্তিশালী তারা। তাহলে কি লিলিপুট ডেভিড ও মশার জেতার সম্ভাবনা এক্কেবারে নেই? যদি মশা হাতির কানে ঢুকে পড়ে, তখন তো হাতির জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে সে? তার বেলা? তখন কি জয়-হারের প্রচলিত তত্ত্ব খাটে? সম্ভবত না। আর ডেভিড ও গোলিয়াথের অসম যুদ্ধের ইতিহাস অনেকের-ই অবগত।

এমনই এক অসম মহাযুদ্ধের সওয়ারি যুযুধান দু'পক্ষ― লিলিপুট এক প্রাকৃতিক দণ্ডচুম্বক এবং গোলিয়াথসম এই বিশালাকার পৃথিবী। সামান্য একটি লোহার পেরেকের জন্য সংঘর্ষ বেঁধেছে দু'জনের। ব্যাপারখানা কী? পণ্ডিতরা বাজি ধরেছে, কার ক্ষমতা বেশি― পৃথিবীর, না-কি দণ্ডচুম্বকের? হাতি-মশার যুদ্ধের সঙ্গে এই সংঘাত গুলিয়ে ফেলবেন না, প্রিয় পাঠক। কারণ অচিরেই স্পষ্ট হবে।

ধরা যাক, এক বা দু'ইঞ্চি সাইজের একটি লোহার পেরেক পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর পড়ে আছে। এ হেন পেরেকটিকে পৃথিবী তার অভিকর্ষ টান দিয়ে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করছে। ঠিক যেমন এক টুকরো পাথরখণ্ড কিংবা বড় পাথুরে চাঁইকে মাটি থেকে উপর দিকে ছুড়ে দিলে কিছুক্ষণ পর সেটি পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে। অভিকর্ষ বলের জন্য। শুধু তাই নয়, লক্ষ নিযুত কোটি কেজি ওজনের উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর চারপাশে পরিভ্রমণ করতে বাধ্য হয়। এ হেন মেদিনীর বিপুল ক্ষমতা সর্বজনবিদিত। এতদসত্ত্বেও পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ছোট্ট এক দণ্ডচুম্বক। কারণ সেও লোহার পেরেককে আকর্ষণ করতে পারে। 

এখন পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরে রাখা একটি লোহার পেরেকের কাছে দণ্ডচুম্বক নিয়ে গেলে পেরেকটি দণ্ডচুম্বকের দিকে সরে আসে। শুধু তাই নয়, চুম্বকের গায়ে এমনভাবে সেঁটে যায় যে পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে না আর। অথচ এ হেন বিশালাকার পৃথিবী নিজেই একটি বিরাট বড় চুম্বক। এই পৃথিবী চুম্বকের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তার বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে মহাশূন্যে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্র অতি শক্তিশালী মহাজাগতিক রশ্মি তথা কসমিক রশ্মির গতি অবরূদ্ধ করে তাকে মহাশূন্যে ফেরৎ পাঠায়। প্রবেশ করতে দেয় না পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। ফলে জীবকুল সুরক্ষিত থাকে পৃথিবীতে। অথচ সে একটা ক্ষুদ্র দণ্ডচুম্বকের কাছে পরাজয় স্বীকার করে কোন যুক্তিতে? এ প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত অজানা থেকে যায় পণ্ডিতদের কাছে।

এমন আরও ছোট-বড় অনেক ঘটনা আছে, যার কারণ এখনও অধরা। যেমন চার রকমের বল আছে ব্রক্ষাণ্ডে যথা― মহাকর্ষ, তড়িৎচুম্বকীয়, নিউক্লিয় এবং মৃদু বল। তড়িৎচুম্বকীয় বল মানে যে কণার বিনিময়, তা হল আলোর ফোটন কণা (আলো প্রকৃতপক্ষে তড়িৎচুম্বকীয় বলের এক নমুনা)। নিউক্লিয় বা স্ট্রং ফোর্সে যে কণার হাতবদল হয়, তা আসলে অসংখ্য গ্লুয়ন কণার সমষ্টি। উইক বা মৃদু বলের মূলে রয়েছে তিনটি কণার দেওয়া-নেওয়া। ডব্লিউ-প্লাস, ডব্লিউ-মাইনাস ও জেড-জিরো। অথচ ১৯১৫ সালে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ভবিষ্যৎবাণী হলেও মহাকর্ষ বল যে কণার অদলবদলের জন্য দায়ী বলে পণ্ডিতগণ অলরেডি নামকরণ করে ফেলেছেন, সেই গ্র্যাভিটন কণিকা এখনও আবিষ্কারের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খ্যাতনামা নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েনবার্গ তাঁর 'প্রথম তিন মিনিট'-এ (The First Three Minutes) ব্রহ্মাণ্ডের বিষয়ে কয়েকটি মোক্ষম প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। মহাবিশ্ব কোত্থেকে এসেছে? এর সঠিক উত্তর যদি বিগব্যাঙ হয়, তবে কীভাবে এবং কেনই বা এর শুরু হল? মহাবিশ্ব কি শেষ হয়ে যাবে? যদি শেষ হয়ে যায়, তবে কীভাবে হবে? 
             আবার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর বিখ্যাত 'A Brief History of Time'-এ (ভাষান্তরঃ শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত) পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত আধুনিক সব সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি :
   (১) আদিম মহাবিশ্ব কেন অত উত্তপ্ত ছিল?
   (২) বৃহৎ মানে ব্রহ্মাণ্ডে এত সমরূপ কেন? স্থানের সমস্ত 
         বিন্দুতে এবং সব অভিমুখে বিশ্বকে একই রকম 
         দেখায় কেন?
   (৩) কেন মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের ক্রান্তিক হারের এত
          কাছাকাছি হারে যাত্রা শুরু করেছিল, যে হার 
          চিরপ্রসারমান প্রতিরূপ থেকে পুনঃসঙ্কোচন 
          প্রতিরূপকে পৃথক করে, যার জন্য এখনও, এক
          হাজার কোটি বছর পরও মহাবিশ্ব প্রায় ক্রান্তিক হারে সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে? বৃহৎ বিস্ফোরণের এক সেকেণ্ড পর যদি সম্প্রসারণের হার এক লক্ষ মিলিয়ন মিলিয়ন (১০^১৭)-এর একাংশও কম হ'ত, তাহলে মহাবিশ্ব বর্তমান আয়তনে পৌঁছানোর আগেই পুনরায় চুপসে যেত।
   (৪)  বৃহৎ মানে ব্রহ্মাণ্ড খুবই সমরূপ এবং সমসত্ত্বসম্পন্ন (Homogeneous), তা সত্ত্বেও স্থানিক
          অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, যেমন― তারকা এবং
          আকাশগঙ্গাগুলি। মনে করা হয় এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে আদিম মহাবিশ্বে ঘনত্বের সামান্য
পার্থক্যের জন্যই এগুলি বিকশিত হয়েছে। ঘনত্বের এইসব হ্রাসবৃদ্ধির উৎস কী ছিল।

আরও অনেক ঘটনার সঠিক তথ্য এখনও অজানা। যেমন― কৃষ্ণগহ্বরের অভ্যন্তরীণ ঘটনাপুঞ্জ। হোয়াইট হোল ও ওয়র্মহোলের বাস্তব অস্তিত্ব। ডার্ক ম্যাটারস বা অন্ধকার ভরের উৎস, তার ধর্ম ও কাল্পনিক কণিকা সমূহের প্রকৃতি, বাস্তব কণার সঙ্গে তার ক্রিয়া-বিক্রিয়া। ডার্ক এনার্জির প্রকৃত স্বরূপ কী, কেন দিনকে দিন তার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ। পৃথিবীর লুকনো ইটি (এক্সট্রাটেরেস্টিয়াল বা অতিমর্ত্য জীব)-র খোঁজ। এই গ্রহে প্রাণের আবির্ভাবের কৌশল আবিষ্কার। বার্ধক্যের গ্রাস থেকে মুক্তির পথ নির্ণয়। ঈশ্বর কণা কীভাবে ও কোন নিয়মে জোগায় ভর। পদার্থের আদি উপকরণ কী ইত্যাদি। অজ্ঞাত কারণসহ আরও অনেক আবিষ্কৃত বা কল্পিত ঘটনাগুচ্ছ হয়তো অনুল্লেখিত থেকে গেল।

শেষমেশ যেমন ধরা যাক, প্রাণ। কীভাবে প্রাণের উৎপত্তি ঘটেছে? কোন জটিল ও কঠিন নিয়মে প্রাণের আবির্ভাব সম্পন্ন হয়েছে পদার্থের উপকরণে? বিষয়টি একটু খোলসা করে আলোচনা করা যাক। আচ্ছা প্রিয় পাঠক, বলুন এক্ষুনি খালি চোখে যে পৃষ্ঠাটি আপনি অধ্যয়নরত, তাতে আপনি যা দেখছেন তা কী? আপনি হয়তো বলবেন, 'বইয়ের পাতা, তার ওপর বাংলা বর্ণমালার বাক্য-শব্দ-অক্ষর।' এটাই কি বাস্তব? চিরায়ত ধারণা : যা বাস্তব, তা সত্য। কিন্তু আপনি যা দেখছেন বলে মনে করছেন, বাস্তবে তা সত্য নাও হতে পারে। বিশিষ্ট বিজ্ঞান-লেখক পথিক গুহের মতে, 'আপনি দেখছেন চোখ দিয়ে, তারপর আবার আপনার দৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছে একটা ছবি খাড়া করছে দৃষ্ট বস্তুর। আপনি কি নিশ্চিত, এই প্রক্রিয়ায় আপনি পাচ্ছেন এই পাতার সঠিক ছবি?' 

চোখের গঠন ভেদে একই বস্তুকে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী দেখে বিভিন্ন চেহারায়। ঠিক বোধগম্য হল না তো? আসলে এই পাতার কাগজটা কী দিয়ে তৈরি বলে আপনার ধারণা? এমন প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য বাস্তব নয়, এবার একটু কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে যে। এই পাতার একটা অক্ষরকে অন্তত দশ লক্ষ গুণ বড় করলে ছাপার কালির মূল উপাদানটা দৃশ্যমান হবে। এবার তাকে আরও একশো কোটি গুণ বড় করলে দেখতে পাওয়া যাবে উপাদান পদার্থের উপকরণগুলো― অণু অথবা পরমাণু। আরও দশ হাজারগুণ বাড়ালে উপকরণের কেন্দ্রস্থল নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। তাহলে প্রিয় পাঠক, এদের মধ্যে কোনটা সত্যি? একসঙ্গে সবগুলো, না-কি খালি চোখে আপনি যেটা দেখতে পাচ্ছেন সেটা? আপনি সামান্য দ্বিধায় পড়লেন!

এবার নিজের শরীরের দিকে তাকানো যাক। কী দিয়ে তৈরি আপনার শরীর ওরফে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ? পূর্বের কল্পনার আশ্রয় নিয়ে বলা যায় সর্বশেষ উপকরণ সেই অণু-পরমাণু-নিউক্লিয়াস-ইলেকট্রন-প্রোটন-নিউট্রনের সমাহার যে কোন প্রাণীর দেহ। আবার যেকোন জড় বস্তুও সেই একই উপকরণ দিয়ে তৈরি। তাহলে গণিতের কোন নিয়ম মেনে প্রাণীর মধ্যে প্রাণের উদ্ভব ঘটল, জড় বস্তুর মধ্যে নয়? কোন ঈশ্বরিক ক্ষমতার হস্তক্ষেপে ব্রহ্মাণ্ডে এমন বৈষম্য ঘটল তা জানতে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বহুদিনের ইচ্ছা। যদিওবা তাতে প্রাণ অন্তর্ভুক্ত হল, চেতনার আবির্ভাব হল কীভাবে? প্রাণ ও চেতনার অন্তর্নিহিত সম্পর্কই বা কীভাবে স্থাপিত হল? পদার্থের সংগঠনে একটি দেহ খাড়া করা গেল ঠিকই! কিন্তু তাতে মন নামক চিন্তার জগৎ যুক্ত হলো কীভাবে? কেন মনুষ্য ভেদে মনোজগতে পার্থক্য দেখা যায়?

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সূর্যেন্দুবিকাশ করমহাপাত্র তাঁর 'সৃষ্টির পথ'-এ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, 'মানুষের শিশুর ভ্রূণ কি চেতনাসম্পন্ন? যদি তার চেতনা থাকে, তবে আট মাস বা এক মাসের ভ্রূণে কি তার মাত্রা পৃথক হবে? এর সাধারণ উত্তর হবে হ্যাঁ। তাহলে চেতনা কি ক্রমশঃ বাড়ে? চেতনার রূপ ধর্ম কি গণিতের সংখ্যায় প্রকাশ করা যায়? চেতনার বিকাশের কি কোন আরম্ভ সীমা আছে যা পেরিয়ে গেলে যেমন সন্ধিউষ্ণতার ওপরে কোন জ্বালানী হঠাৎ জ্বলে ওঠে, তেমনি চেতনাও হঠাৎ বিকশিত হয়?' 

চেতনার উপস্থাপনায় মনে পড়ে গেল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমি' কবিতার কয়েকটি লাইন―
     "আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ
       চুণী উঠল রাঙা হয়ে।"
যদি চেতনায় পান্না ও চুণীর পূর্ব নির্ধারিত বর্ণ যথাক্রমে সবুজ ও লাল হয়, তবে তাদের আসল রঙ কী? যেমন ধরুন, আমরা সবাই জানি এবং প্রতিনিয়ত দেখছিও, গাছের পাতার রঙ সবুজ। প্রশ্ন হল, গাছের পাতা কেন সবুজ? এক্ষেত্রে সহজ যে উত্তরটি উঠে আসে তা এরকম, গাছের পাতার ওপরে সাদা রঙের আলো পড়লে সবুজ বাদে অন্যান্য সব বর্ণের আলোকে পাতা শোষণ করে, শুধু সবুজ বর্ণ প্রতিফলিত করে দেয়। বেছে বেছে সবুজ আলোকেই কেন প্রতিফলিত করে? ওই প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে বলেই পাতাটিকে সবুজ দেখি। তাহলে পাতার সবুজ আলো সাদা আলোর অংশবিশেষ যা আলোক উৎস থেকে আগত। সেক্ষেত্রে আমরা আলোক উৎসের (সূর্যালোক) সবুজ অংশটুকু দেখতে পাচ্ছি, ভায়া গাছের পাতা। তো, পাতার আসল বর্ণটি কী? তবে কি পাতা বর্ণহীন? আমাদের চেতনায় ধরা রয়েছে গাছের পাতা সবুজ, তাই সবুজ দেখছি। আবার বিক্ষেপনের ঘটনা দিয়ে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করলেও প্রশ্ন জাগবে, কেন শুধু সবুজ আলোর বিক্ষেপন হবে; অন্য বর্ণের আলো নয়? স্বভাবতই নিরুত্তর বিজ্ঞান। 
আসলে একেকটি তত্ত্ব (আবিষ্কৃত বা অনাবিষ্কৃত) প্রকৃতির একেকটি রহস্যের চাবিকাঠি। তার কলাকৌশল আয়ত্ত বা উপলব্ধি করে বিজ্ঞান। এই করায়ত্ত কলাকৌশল ঠিক না ভুল― এ হেন বিষয়টা একটি উদাহরণ দিয়ে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, 'বিজ্ঞানের চিন্তাধারা মানুষের মনের তৈরি। তাদের সৃজনে এই বিশ্বের কোনও ভূমিকা নেই। আমাদের সত্যকে জানার চেষ্টা অনেকটা অজ্ঞ লোকের ঘড়ির কলকব্জা বোঝার মতন। সে ঘড়ির ডায়ালটা দেখতে পায়। দেখতে পায় তার কাঁটাগুলো। এমনকী শুনতে পায় চলার শব্দও। কিন্তু ঘড়িটা খুলে সব কিছু প‍রখ করার কোনও উপায় তার জানা নেই। বড়জোর বুদ্ধি খাটিয়ে সে একটা ছবি আপনমনে খাড়া করতে পারে। ঘড়িটার কলাকৌশলের ছবি। কিন্তু ছবিটা মনে মনে বানিয়েও সে নিশ্চিত হতে পারে না। যে ছবিটা সে তৈরি ক‍রেছে, সেইটেই ঘড়ি চলার একমাত্র ব্যাখ্যা কিনা। সত্যিকারের কলাকৌশলের সঙ্গে তার মনগড়া ছবির তুলনা করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। তা সে পারবে না কখনই।' (ঈশ্বরকণা মানুষ ইত্যাদি : পথিক গুহ)

আর তাই বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার সরু অন্ধকার পথ ধরে এই অপরূপ সৃষ্টির স্রষ্টার খোঁজে হন্যে হয়ে পড়ে পণ্ডিত এবং ধর্ম। পণ্ডিত চায় স্রষ্টা তত্ত্বের বিনাশ ঘটিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সত্যের বিজয় পতাকা তুলে ধরতে। উল্টোদিকে ধর্মের মোড়কে জন্ম নেয় ঈশ্বর সম্বন্ধীয় চিন্তা ভাবনা। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম নানা রকম মনগড়া কায়দায় ধর্মভীরু মানুষের কাছে বিজ্ঞানের ঘটনাগুলো (আবিষ্কৃত/অনাবিষ্কৃত) উপস্থাপিত করে ঈশ্বরের চিন্তা অথবা তার অলীক প্রতিরূপ পরিবেশনে মত্ত হয় তখন।

----------------------
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments