জ্বলদর্চি

ভোট আসছে, এখন আমরা গণদেবতা হয়ে উঠি/ গৌতম বাড়ই

ভোট আসছে, এখন আমরা গণদেবতা হয়ে উঠি

টের পাচ্ছেন না? সাকিন কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে তো?
হাঁ আপনায় আর মনে করিয়ে দিতে হবে না। ঐ গেলবারে ভোটের পরে যে পঞ্চায়েত ভিআইপি হয়ে গিয়েছিলেন এখন আপনায় দেখলেই কেমন একটা কোলগেট হাসি দিচ্ছে দেখুন! আর বলছে কী শুনুন, কী রে ভাই আমায় তো দেখেও দেখিস না। এবারেও বৈতরণীটা ভাইটি পার করে দিস।

বৈতরণী মানে বুঝলেন না?  আরে ভোট বৈতরণী। আর এই কথা শুনে আলাদীন আর অলোকের মনে হচ্ছে, শালার গালে দু-থাপ্পড় চড়িয়ে দি।
রেশন একটা প্রাপ্য জিনিস, বরাদ্দ জিনিস। সেটাও মেরে দিবি এই তোরা রাজনীতি করতে আসা কাঙালের দল। জৈতু সাহা দাঁত খোঁচায় আর গাল দেয় এই রাজনীতি করতে এসে লুটপাট চালিয়ে যাওয়া লোভী মানুষগুলোকে দেখে। তাই ভোট এলে বোঝা যায়। বুঝতে পারবেন চারিপাশ দেখে।
চাকরির প্রতিশ্রুতি চলবে। ভালো ভালো কথা শোনা যাবে, সব জনগণের জন্য থুড়ি ভোটের মুখে গণদেবতার জন্য। রাজনীতি এই মুহূর্তে একটি ব্যবসা।কেন ব্যবসা নয় বলুন? একটু তলিয়ে দেখুন তো চোখের সামনে ফকির থেকে ষাটমাসে আমির হবার কতগুলো নিদর্শন আছে। রাজনীতিতে ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে। মিডিয়া হাউসগুলোতে দলাদলি আছে। আর এই দলাদলিতে অনেক কথাও পাব্লিকে বলাবলিও করে। লভ্যাংশ। জৈতু আর বিজেন তাই সগায়মিলে টিভি দেখে না। হলদিবাড়ি হাটে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম। উত্তরবঙ্গের। আগে একবার ভোটের মুখে দিনহাটা, ফালাকাটা হাটে গিয়ে দেখেছিলাম ভোটবাজারে কী গরম আর গরম। চারিদিকে শোনা যায়--ভোট দিম ক্যামকরিয়া, বাঘৎ পাছায় ছাপ মারিয়া। আর এখন গিয়ে হলদিবাড়ি হাটে শুনলাম, ভোট দিম ক্যাম করিয়া, হোগার মুখত লাথ মারিয়া।

মানে জনগণ বোকা নয়। যতই গণদেবতা বানাও মূর্খ ভেবে ভোটের মুখে। বোঝে কিন্তু ফাঁদের থেকে বেরোতে পারে না। ভোটের ময়দানে প্রতিপক্ষ দুটি একটি সরকারিপক্ষ আর একটি বিরোধীপক্ষ।জোটের হতে পারে বা ঘোঁটের। বিরোধীরা চেল্লাবেই বিরোধিতা করবার জন্য আর সরকারে আসীনপক্ষ বোঝাবে জনগণকে তারা কতটা ঠিক।

জনগণের কিছু অংশ বুঝবে কিছু অংশ বুঝবে না।আর কিছু অংশ চোখ থাকতেও অন্ধ আর কান থাকতেও কানা। অন্ধের মতন তারা দলের তাঁবেদারী করবে। আর এইভাবেই এক সুপরিকল্পিতভাবে জনগণের বৃহদঅংশের চিন্তাভাবনা ভোঁতা করে রাখা হয়েছে যুগ যুগ ধরে।

তবুও তো প্রশ্ন থেকে যায় এই যে এত এত চাকরি তা এরকম এক ধ্বস্ত সময়ে তৈরী হল কিভাবে? গালভরা চাকরির প্রতিশ্রুতি। সরকারি চাকরি নাকি সফেদ হাতি পোষা কোন কোন সংবাদপত্র গোষ্ঠী প্রায়ই বলে আর সরকারি কোষাগার থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটিকোটি টাকা উপার্জন করে তারাই। জনগণ তলিয়ে দেখেন না। সুবিধে নিলে কি নিরপেক্ষ থাকা যায়?

বাজারে মূল্যবৃদ্ধি স্বাধীনতার পরে সর্বাধিক অথচ সোচ্চার নয় তেমনভাবে কেউ-ই। ধর্ম নিয়ে, জাত নিয়ে ভণ্ডামী যদি ভাঙতেই হয় তবে ভাঙতে হবে প্রথমে তা নিজের থেকেই। এত দুঃখ, এত কষ্ট, এত লাঞ্ছনা সত্তর বছর পরে অগণিত দেশের মানুষ পেলেন। আবার কী  শুনবো শহরের রাস্তায় সেই একটু ফ্যান দেবে গো! মনে পড়ে ২০০১-এর জি-এইটের সম্মেলন। ইতালির জেনোয়ায়। কার্লো জিউলিয়ানিকে মনে পড়ে?বিশ্বায়নের প্রথম শহিদ। আমাদের বেঁচে থাকাটাই রাজনৈতিক। কেউ আমরা রাজনীতির বাইরে না।
মজুতদারদের স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হল। বণিকদের ঢালাও সু-ব্যবস্থা হল। মোট জনগণের দশ থেকে পনের বা কুড়ি শতাংশের এই দেশ। আর আমরা বাকি দেশের ভোটদাতা জনগণ যাদের জন্য বেঁচে থাকবার রাস্তাগুলো আবার যেন ক্রমাগত অবরূদ্ধ হয়ে আসছে। তবুও ভোট আসছে বা আসবে আপনি ঠিক জেনে যাবেন।আপনি জানবেন সেদিন যেই ফকির-কে আপনি ভোটদিয়ে জিতিয়েছিলেন তিনি একগাল হেসে কোটিপতি হয়ে আপনার কাছে একটি ভোট ভিক্ষে করছেন তার ভিক্ষের ঝুলি এবারেও যেন কোটিকোটি টাকায় ভোটের পরে উপচে পড়ে।

আপনার ছেলেমেয়েও জানবে এবার প্রচুর চাকরি বাজারে। আবার ভোট মিটলেই সরকারি কোষাগারের কত করুণ হালের গল্প শুনবে। তবুও তো ভোট আসে এই দেশে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি সব পয়সা দিয়ে কিনতে হয় সাধারণ জনগণের এই দেশে, এখনও। এই সময়ের বহমানতায়।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments