জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা)/আবীর ভট্টাচার্য্য

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
গুচ্ছ কবিতা
আবীর ভট্টাচার্য্য

সীতায়ন

তারায় তারায় দীপ্তশিখা জ্বলে, তোমায় ঘিরে ,
চিরন্তন আসা-যাওয়ার পথের ধারে ধারে;
এক কবোষ্ণ আত্মতৃপ্তি তোমায় অভ্যর্থনা করে!
তুমি নারী!তুমি সীতা!সবংসহা!
নাকাবন্দী পৌরুষ রামের,সে মহাকাব্যের ফের;
সাধ্য বা সাধনায়, সম্ভোগের বা বৈরাগ্যের,
তোমায় জড়িয়ে নিয়ে যে জীবন সৌভাগ্যের
পাওয়া তো হয়না তাই ; নর-নারায়নের!
প্রতিদিন আগুনের দাহ,প্রাত্যহিকতার ঘূর্ণতায়,
অনিশ্চয় তোমার অমৃত অগ্নিপরীক্ষার অপেক্ষায়;
কি করে বোঝাই সজনী!সোনার হরিণ অবাস্তব
রাবন,সূর্পনখা,মন্থরা ;এরা সব নাটকের কুশীলব 
শুধুমাত্র ছেলেভুলানো মিষ্টি গল্পলতা......
আধিপত্য বিস্তারেই আসলে পৌরুষের অন্তিম সার্থকতা।
নারী, তাই তুমি কালে বা আকালে যথার্থই সীতা।
                      

অহল্যা-উবাচ

ঐ শুনি যেন চরণধ্বনি,অস্ফুট দেবোপম স্বর.....
কে এলো গো?আলোকিত বনপথে নবীন কিশোর! 
বিশ্বামিত্র-ইচ্ছায় পাদস্পর্শ অভিশপ্ত প্রস্থরে,
যুগান্তের বিড়াম্বনা শেষ,জাগে প্রাণ,শরীর শিহরে!
বহুদিন ছিলাম একাকী,শুধুমাত্র নিয়ে নারীসাজ.....
ফুলতোলা,পতিসেবা,
অপরাপর নিত্য গৃহকাজ
তারও বাইরে যে জীবন,অনন্ত আকাশ....
পাখিদের ;ফুলেদের ;
আলোমাখা ভুলেদের
জানাই ছিল না,অন্তর্লীন স্বেচ্ছাচারী মন,
এভাবেও  ভেসে যায় !এতখানি আবেগপ্রবণ!
ইন্দ্র অথবা ইন্দ্রিয়ের পরবশে তাইতো বিচৃর্ণ
বজ্রনিষ্ঠ নীতিমালা,অজস্র কানুন;সমাজ-আকীর্ণ
এবং অতঃপর........ যথারীতি গৌতম-অভিশাপ, 
পুরুষের আজন্ম-অহং, প্রস্থরীভূত বাস্তুসাপ....
তবু, সব গল্প শেষ হলে,এভাবেও জাগে অভিঘাত 
রাজরাজ  নিয়ে আসে আরক্তিম নব সুপ্রভাত
রাতুল-চরণে রাখি কুন্ঠিত প্রণাম, তিনিও প্রনত,
শ্রদ্ধা-সম্মানের পূজাগন্ধী সে দানে,নারীত্ব পূজিত
আঃ!মুক্তি!.....এই তো প্রথম বাজে সুর ভৈরবের,
অন্তরে বিরাজ সুকল্যাণ মানবতা,পরম সুন্দরের।
                  

সম্পর্ক-বন্ধনে বা অবন্ধনে

সঙ্গোপনে পাহাড় লুকোয় আপন খাদের ডাক
মধ্যবর্তী সময়টুকু হয়তো স্থগিতবাক
পাথর ভেঙে হাজার স্রোতে গড়িয়ে পড়ে জল
 ভেজায় মন অনিঃশেষ ; ভাঙন অনর্গল।

 শেষ ট্রেনটি থামলো যখন প্ল্যাটফর্মে এসে
কে না জানি উদাসচোখে জানালা পাশে বসে
কুয়াশালীন ছায়াধুসর শীতার্ত এই সাঁঝে
ভিন্নতর সুরটি কেবল বাজে, আমার মনোমাঝে।

ক্লান্তমন, বুকের তলে ধিকিধিকি শীত-আগুন
কানেকানে কে যে বলে,জ্বলো,জ্বলো!হে ফাগুন!
হতেই চাই নদীর মত ভীষণ খরস্রোতা,
তীর ভাঙানি,কুল ভাঙানি, অসার অক্ষমতা। 

তোমার বুকেও আগুন ছিল,ছাইচাপা ও অনুজ্জ্বল
তাই লিখেছ,গোপন আখর রঙবেরঙে মোহন ছল!
আমার প্রবাস উতল করে হাহুতাসের সে বাতাস
বিরহ আজ ব্যথানিবিড়,সদ্যফোটা ডায়ানথাস.... 
                     

অন্বেষণ 

চারিদিকে অন্ধকার! হতাশা,গ্লানি কালো
কোথায় আলো ! কোথায় ওরে আলো!
কার বিরহে পরিব্যপ্ত ছায়া! আঁধার ছড়ালো?
এ আঁধার উত্তরণে কি করে যে আলোটুকু জ্বালি!

কার বাঁশি  নিশি-ভোরে বাজে, অভিলাষা মনে, 
 শুনি।এক আকাশ রামধনু-রঙে,বাঁধে আলিঙ্গনে;
 প্রতিধ্বনি ধ্বনিটির অনুগামী ; পিছে পিছে ধায়,
 চাঁদের মুকুরে আলো, সূর্যতেজ  বিম্বিত মায়ায় !
তুমি জানো? এই নক্ষত্রখচিত রাত চিরপ্রতীক্ষায়,
চাই শান্তি, চাই আশা; মুক্তি আলো-প্রত্যাশায়!
অথচ আজীবনই অধরা সে!আত্মগত,আত্মলীন।
কতকটা তোমারই মত ; চিরকালই.......
                      

প্রেমে বা অপ্রেমে

উর্মিমালার হৃদয় জুড়ে রক্তপ্রবাল দ্বীপ
 বিনির্মিত আশাবরী, পৌর্ণমাসি,অমা-বিপ্রতীপ
কাব্যপথে দোসরযাপন ছোট্ট আশা, ছোট্ট অভিলাষ
স্বভাবজয়ী চন্দ্রাননে উচ্ছসিত জোছনা-আভাস!
কথার মেঘে সুখের অভিসার,স্বপ্নযাত্রাপথ
অমিলন হৃদ-বিনিময়, বৃন্দাবনী মোহন-শপথ 
রামধনু স্বপ্ন আঁকে ঐ দূরদিগন্তের আকাশসীমায়
সৃষ্টিসুখ গর্ভফুলে;
নারীত্বের মাতৃজন্ম ধন্য হয় প্রসবব্যথায়
সদ্য ফোটা ফুলে জাগে প্রতূষের সুরনিমগন
শিশিরাশ্রু উথলিত  মাথুরের আত্মপ্রেমধন
ক্রন্দসী তারার আলো মুছে দেয় মোহময় ক্ষত
লগ্নপ্রেম বড়ো অসহায়, সুরবাক ভীষণ সংযত....

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments