জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা)/ রঞ্জন চৌধুরী

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
গুচ্ছ কবিতা
রঞ্জন চৌধুরী


আমি গাঁয়ের ছেলে নই 

আমি কি গাঁয়ের ছেলে?
না। 
আমি শহরের জলবাতাসে বড় হওয়া শহুরে নাগরিক। 

যে ক্ষেত ও কৃষকের ঘামে ভেজা কান্না কখন শোনেনি। 
যে ঘুটে ও গোয়ালের সম্পর্ক জানেনা। 
পুকুরের জলে সাঁতার কাটেনি। 
এঁটেল-ধুলো মাটি কখন মারায়নি।

যে গাছ বলতে বোঝে বনসাই
আর পাখি বলতে খাঁচায় পোরা লাভিং বার্ড। 

না, আমি গাঁয়ের ছেলে নই, শহুরে।

তবুও
যখন পেটে ক্ষিধে নিয়ে ভাত খেতে বসি
ফুলো ফুলো সাদা ভাতের ঘ্রাণে 
কেমন যেন সুদূর থেকে ভেসে আসা
গাঁয়ের মাটির গন্ধ পাই। 

          
যেখানে একদা একটা নদী ছিল 

স্কুল পাঠ্যে যেখানে একটা নদী ছিল 
সেখানা আজ পৌঁছালাম —

কিন্তু কোথায় নদী! কোথায় তার সুরধ্বনি!
শায়িত হয়ে আছে তার কেবল জীবাশ্ম। 
মাটির গ্রন্থে যেন শান্ত ঘুমিয়ে আছে
এক প্রত্নতাত্মিক ইতিহাস
যাকে অধ্যায়ন করতে হয়তো আগামীতে আসবে
অনেক যুবক-যুবতী
কাটাছেঁড়া হবে তার বুক
আর হয়তো আসবে কীছু স্মৃতিভূক নাবিক। 

যেখানে একসময় জলের বাহার ছিল, কল্লোল ছিল,
নৌকো ছিল, বিলাস ছিল, প্রেমপিরিত ছিল
সেখানে আত্মাহীনা হয়ে আছে যেন সভ্যতার
হারহিমহিম নিষ্ঠুর কন্কাল। 

যেখানে একদা একটা নদী ছিল
সেখানে আজ ফিরতি পথে গচ্ছিত রেখে এলাম
মাটিতলে সান্দ্র আমার শোকের পাহাড়। 

                  
চিঠি 

চিঠি দেয়া-নেয়া কি একেবারেই শেষ হয়ে গেছে! 

কত চিঠি এখনো জমে আছে
অলেখা হয়ে বুকের গভীরে
আমি ও চিঠি তাকিয়ে থাকি এ-ওর দিকে। 

সামনে জীর্ণ ডাকবাক্স, ভাঙা পোষ্টাপিস
অব্যক্ত লেখাগুলো আর কোনদিন কলমের আঁচড়ে
লেখা হবেনা বলে
               আমি ও চিঠি মন খারাপ করি। 

                  
শৈশবের ভোকাট্টা ঘুড়িটা 

শৈশবের যে ভুয়াদর রঙিন ঘুড়িটা 
ভোকাট্টা হয়ে গেছিল লাটাইয়ের সুতো ছিঁড়ে 
আজ সে আমার বার্ধক্যে ফিরে এলো পাখি হয়ে

আমি এখন আর ওকে ওড়াই না
হাত দিয়ে কাছে টেনে নিই
খুব যত্ন করে দানাপানি দিই

সেই থেকে সে দিব্যি আছে
লাল জবা গাছের ডালে দোল খায়
শিস্ দিয়ে গান করে
আর মাঝে মাঝে 'টুকি' বলে লুকিয়ে পড়ে

আমার তখন একটাই কাজ
হৈ হৈ নিয়ে এ-ঝোপে ও-গাছে তাকে খুঁজে ফেরা

             
লেখো

লেখো
লিখে রাখো, অমিলান্তিক, এমনি সব
হাঁড়িয়া, মৌটুসি, চাঁদ
যেন দরজা টানা ঘোমটা বহর

আরো লেখো
নাকি নাকি কথা
প্রেম, অভিমানী মুখ, হৃদয় অসুখ
কবি কি জড়ায়েছে অধর কামনায়

ফের লেখো
আনন্দ, হিল্লোল, যৌবন
সে তো পৎ পৎ কোমর দোলোন
সবেতেই অদ্ভূত চঞ্চল 

লেখো
লিখে রাখো, আনপর
কবির কাছে যে কবিতাই আপনজন
বাকি সব সম্মোহন 

          
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments