গুচ্ছ কবিতা
দিলীপ মহান্তী
এসো, প্রাণ...
এসো, এই কালো রাত্রির ধারা মেখে
আমরা দু'জন আগুনের কাছে নীল
খুঁজে আনি নদী জ্যোৎস্নার পথ থেকে
বইবে প্লাবন মাটি হবে লালে লাল
আকাশ রাঙিয়ে বইবে ফাগুন মাস
মনে পড়ে যাবে আষাঢ় ভাসানো দিঘি
তোমার তখন জনসভা সেরে ফেরা
আমি প্রতীক্ষায় রাস্তার ধুলো মাখি
সে সব ফল্গু খোঁজে পলাশের কাল
আবির মিছিলে ধেয়ে আসে একতারা
রাজধানী কাঁপে বাউলের পদভারে
এ কালবৈশাখী! রাঙ্গামাটি দিশেহারা
আজও অরণ্যে বেজে ওঠে সেই বাঁশি
পথহারা কোনো উদাসী খবর আসে
হারিয়ে যাওয়া মেঘের উঠোন থেকে
বাতাসে কেন যে শবের গন্ধ ভাসে
বদলানো দিন আরো কালো পথে ছুটে
পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীর চেনা প্রাণ
এসো সেই পথে আরো কোনো দ্বীপে যাই
গড়বো ভুবন, গাইব মাটির গান...
শক্তি পীঠ
তোমার জন্য বর্গভীমায় যাবো
তুলে আনবো আস্ত একটা দিন
রক্ত জবার গায়ে গায়ে আলপনা
সাধনায় পাওয়া একাগ্রতার ধ্যান
তোমাকে রাখবো পাঁজরের ফাঁকে ঢেকে
তোমার জন্যেই আর্তনাদের ঘ্রাণ
প্রতিদিন আমি নিজেকে ভেঙে ভেঙে
মাটির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি প্রাণ
দূর আকাশে কালো অক্ষরে কাল
কত রহস্য আর ছায়াপথ উপহার
এবার এসেছো দরজা ভাঙার ক্রোধে
ফুল বেলপাতার সামান্য উপচার
বাঁচিয়ে দিয়েছে তোমার মাটির চোখ
ওই দুটি পায়ে রচিত পথের রেখা
প্রত্যাশা শুধু মুখোমুখি জেগে থাকা
ওই আকুলতা দৃষ্টি আগুনে লেখা।
সাধন পীঠ
দীর্ঘ দহন প্রতীক্ষার অবসানে
কেটে যায় ঘন কুয়াশা মাখা ভোর
আমরা যখন দেবীর মূর্তি খুঁজে
পেয়ে যাই সেই তৃতীয় নয়ন তোর!
ঘোর ভাঙে লাল রক্ত জবার স্তূপে
সব যন্ত্রণা সব ব্যথা ঢালা ফুলে
মরতে মরতে দরজায় মাথা ঠুকে
দেখি প্রকাশ্যে কত তারা এলোচুলে!
কত অনাহার দ্বারকার তীরে তীরে
ওখানে কত গৃহহারা জনগণ
সব জ্বালা সব কোলাহল দূরে রেখে
সাধনায় খোলে বিষাক্ত আবরণ...
পথে হেঁটেছিল বামাক্ষ্যাপাদের দল
পথে পথে কত গণদেবতার সারি
অথচ আজকে ছবিগুলো সরে সরে
লালমাটি করে লাশ নিয়ে কাড়াকাড়ি!
কথা
কথার পাহাড়ে আগ্নেয়গিরি ছোটে
কত কত কথা ঘুমিয়ে পড়েছে মুখে
লাভা স্রোত মাখা গোপন দীর্ঘশ্বাস
প্লাবিত করেছে ভূশন্ডীর মাঠ
বেহিসেবি মন হাওয়ার পাখায় চড়ে
রাত্রিকে ডাকে চৌকাঠ পাহারায়
পথের বাঁকে বটগাছের ঝুরি
বাড়িয়ে দিয়েছে মাটির দিকে হাত...
ছায়া
ধুলো ওড়া পথে ক্লান্ত বিকেল নামে
রাস্তায় হাঁটে বন্ধুর মতো চোখ
হ্রস্ব দীর্ঘ ছায়ায় বাঁধানো মাঠ
এক মুঠো রোদ জাগিয়ে রেখেছে বুক
আকাশে ফুটেছে রাত্রির আলপনা
চারপাশে কত ব্লেড উড়ে উড়ে হাসে
পথ চলে গেছে জ্যোৎস্না মাখানো ঘাটে
পায়ের চিহ্ন বর্ষার মেঘে ভাসে...
তারা খসা
সন্ধ্যাতারা এগিয়ে এসেছে
চাঁদ চলে গেছে দূরে
ব্যর্থ রাতের বারান্দা থেকে
মোমবাতি শুধু জ্বলে...
রাতজাগা পাখি ডালে মাথা ঠুকে
পাতারা নীরবে ঝরে
এমনি করেই মহাকাশ জুড়ে
তারার মৃত্যু চলে...
ভোর
পাখিদের ভোরে সূর্য থামে না
হাওয়াও পায় না বাধা
সারা রাত যার জেগে কেটে গেছে
সে পথে নামে একা
ক্লান্ত পায়ে নদী তীর খোঁজে
স্রোতখানি বড় প্রিয়
পাথর ভাঙছে পাথর গলছে
গড়িয়ে যাচ্ছে ব্যথা...
নতুন পৃথিবী
পৃথিবী থেকে মানুষ হারাবে থেমে যাবে তার চলা
কক্ষপথে দিশেহারা চাঁদ বন্ধ স্বপ্ন ঢালা
তখন প্রকৃতি নির্জন হবে বাতাসেরা গতিহারা
পাহাড়ের বুক কেঁপে যাবে ক্রোধে সাগরও মনমরা
ধানখেত জুড়ে দীর্ঘ দিঘি ঘাসের বন্যা রংয়ে
নদী কেঁদে যাবে দুকূল ভাসিয়ে দু'পাশের পাড় ভাঙ্গে
আকাশে আকাশে মেঘ ঘষা খায়, বাতাসে বাতাস জ্বালো
ডালে ডালে কত পদাবলী গান রসধারা ঢালে ভালো
সেই পৃথিবীর ওপার থেকে তোমার কথা নড়ে
অপেক্ষা করে থাকবো আমি নতুন পৃথিবী গড়ে...
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments