জ্বলদর্চি

তিনটি কবিতা/ তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনটি কবিতা 

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


কৃষক হতে চাওনি বলে

হয়েছ মালিক, হয়েছ মজুতদার, হয়ে গেছো ব্যবসায়ী,
ওহে নেপথ্যে থাকা চুক্তিবদ্ধ আততায়ী।
বিলাসবহুল বিপণী বিতান, বাতানুকূল ঘর আর হিমঘরে বসে থাকো,
এতো খাটুনির ফসল তোমরা কম দামে কিনে রাখো,
পরে বেশি দামে বেচে দাও,
কৃষিকাজ হোক চাও!
কিকরে অথচ চাষির মৃত্যু চাও?

ওহে শৌখিন, তুমি কখনো কৃষক হতে চাওনি বলে,
ওগো সুন্দরী, তুমি কখনো কৃষাণী হতে চাওনি বলে,
সভ্যতা আজো আমার থেকে চোখ বাঁচিয়েই চলে।
বাবা-মা’রা কেউ কৃষক হতে কি বলে?
নাঃ! সব্বাই দেখি পড়াশোনা করে বড়োলোক হতে বলে।
জানো, জমিতে যখন বৃষ্টি নামেনা, শরীরে তখন ঘাম নামে,
ঘামে মিশে গিয়ে বোঝাও যায়না চোখ দিয়ে যদি জল নামে, 
অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির সাথে লড়ে চলি অবিরাম,
যাতে সকলের ভাত নামে।

জীবনে কিছুই না হলে তবেই চাষাভুষো হতে বলো,
তুমিই মিছিলে সমানাধিকার, সাম্যের কথা বলো!
সে সমর্থন যাইহোকগে, সত্যি অথবা মিথ্যে,-
আসলেতো চাও জিততে। 
আগে যা দিয়েছো প্রতিশ্রুতি বিরোধী পক্ষ থেকে, 
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে ঢুকে, যাও তা ভুলে,
তোমার দূরে দূরে থাকা, সামাজিক স্থান, আরাম বাঁচিয়ে রাখা, 
আমিতো যাইনি ভুলে। আমিতো যাবোনা ভুলে।
তোমার কৃষক না হওয়াকে পুষিয়ে চলেছে যে, 
তার হয়ে আজ পুরোপুরি তুমি ভাববেই আর কিভাবে?
তুমিতো বাড়োনি সেভাবে, 
তুমিতো হারোনি সেভাবে।

পন্থায় বাম হয়েছ কি ডান,
না যদি এখনো দিতে পারো সম্মান, খোলা রেখে শোনো কান,
খিদেয় মরলে মরবো তবুও ফলাবোনা আর আলু, ফলাবোনা গম, ধান,
এ আমার সংগ্রাম, এখন আন্দোলনের সময়,
ভাত, ডাল নয়, পরের ঋতুতে আগুন খাওয়াবো তোমায়।


সুপ্ত আগ্নেয়গিরি

সমাজে চাষির স্থান যেন ঠিক মায়ের মতো,
যেমন মা সকলের পাতে অন্ন দেওয়ার পরে খায়,
ভাবনারাও তেমন সবার পরে চাষির জন্য যায়।
জীবনে কে কতটা বঞ্চিত তার পূর্বিতা সূচী তৈরি হয়,
চাষির নাম নীচে থাকে, চাষি তবু চুপ রয়।
নেতারা বালি, উন্নয়নের বরাদ্দ টাকা লুনি নদী,
আগেই যায় শুকিয়ে, চাষি জমিই কোদলায়।
চাষির ভাগ্য বদলায় না, সরকার বদলায়।
আলুর বস্তা, লাঙ্গলের ভার বইতেই পারে যে,
অনেক দুঃখ, অবমাননাও সইতেও পারে সে।
এতদিন কতনা কষ্ট তাই রেখেছিলো গুপ্ত,
তোমার বিরোধী পক্ষে ভোট দিলে তাকে বলেছ অশিক্ষিত,
ভুল করেছিলে ভেবে যে চাষিকে আগ্নেয়গিরি যা মৃত-
আসলে তা ছিল সুপ্ত...


চাষির প্রেম

হতে পারে ঘামে তেল চিটচিটে মাথা, দাঁতে ছোপ
তার ঢোকা গাল, আশাহীন কোটরাগত চোখ,
প্রেম কি বুঝেছে তাদের, যাদের কঙ্কালসার দেহ!
মাটিকে কেইবা দিয়েছে বলোনা চাষির মতোই স্নেহ?
মাটি বারবার হয় অন্তঃসত্ত্বা, ফসল ফলে,
এভাবেই দিন এনে দিন খেয়ে চাষির জীবন চলে।
রেডিওতে বলো কৃষিকাজ ভালোবাসো,
আগে মাটির কাছেতো এসো!
কৃষাণী হলে কি সুচিত্রা সেনের মতো হাসি মুখে ফোটে!
তোমার মতন সুন্দরী কি চাষির কপালে জোটে?
মাটিতে থাকার স্বপ্ন, তুমিতো দেখোনি কখনো,
তাই যেমন এসেছ বেসে, দূর থেকে ভালবেসো...


জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 
সেমিকোলনের আত্মজীবনী - ১৫
সায়ন
হিংস্র 'মেষ কথা'

Post a Comment

2 Comments

  1. প্রতিটা লেখাই ভাবাতে শুরু করে...

    ReplyDelete
    Replies
    1. তথাগতDecember 30, 2020

      ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

      Delete