জ্বলদর্চি

একুশজন/ অলক জানা


একুশজন

অ ল ক জা না

হেরে যাওয়া, মূল্যবোধের জননী হতে পারে। পরাজয় থেকেও হাজার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রিয়জন কিংবা আকস্মিক কোন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত পীড়ন এবং সোহাগ বরাবর ভাগবণ্টন করে নেয় আমার একুশজন সহযাত্রী। আঘাত-আদরে সমান ভাবেই তাদের মধ্যে উদ্বিগ্ন-চঞ্চলতা লক্ষ্য করা যায়। নস্টালজিক কোন প্রস্রবণ জেগে উঠলে তার চুইয়েপড়া রেশ, স্বাদ, আতিশয্যে সম্পৃক্ত হওয়া কোন অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। পৃথিবীতে যাত্রা শুরু এবং ফেরার গন্তব্য পর্যন্ত আমি ও আমরা একটি একান্নবর্তী পরিবারের মালিকানা নিয়ে ক্ষেপ বদল প্রক্রিয়ায় সামিল হই।

আমরা লিখতে ভালোবাসি, গুটি গুটি পায়ে হাঁটতেও। কি লিখি, কেন লিখি, কাকে লিখি এই সব প্রশ্নের সারবত্তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা যদি না জন্মায় তবে আজীবনটা পণ্ডশ্রমের নামান্তর হয়ে পড়ে। আসলে এই সব বোধসচেতনতা সবার মধ্য ছোট-বড় যে আকারে থাক না কেন যৌথ পরিবারটি তার কিছু নিজস্ব নিয়মেই পরিচালিত। সেখানে স্বয়ং ঈশ্বরের হাতও পৌঁছতে পারে কিনা ঢের সন্দেহ আছে। কারণ আমি বিক্রি অথবা বিক্রিত হতে পারি তার আক্কেলসেলামিও দিতে পারি, কিন্তু আমার একুশজনের যৌথ পরিবারটিকে তার জন্য দায়ী দোষারোপ করা অর্বাচীনতা। এক্ষেত্রে পরিবারপ্রধান বলে একটা কথা আছে।

নেমন্তন্ন রক্ষা করতে একুশজন উপস্থিত। তুমিও একুশজন নিয়ে আমার বাড়ি আসো। যাওয়া আসা নিরন্তর চলতেই থাকে। কেবল সময়োচিত পালটে যায় পরিচিত প্রিয়মুখ। একের বদলে আর এক। আমৃত্যু একটা ক্ষত আগলে বেসামাল অজোর জীবনপ্রবাহের পক্ষে আমার কোন সমর্থন নেই। তার জন্য কিছু মনোযোগ থাক্, কিন্তু সেই ঘ্যানঘ্যান একটি বিষয় নিয়ে জীবনভর ছ্যাবলামো ছেলেমানুষিকে পাত্তা না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। আসলে তুমি ও তোমার একুশজন ডাকলে, তবেই না আমার যাওয়া। আমি মানে একুশজন। একুশে একুশে একাকার। একুশে একুশে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ। এ উপহার-পরাজয় আমার আছে, আছে তোমারও।

"আমরা একুশজন" মানেটা কী ? কেন দুই হাতের দশ, দুই পায়ের দশ মিলে কুড়িজন আর মগজসহ ধড় বাকি এক। কি মশাই হিসেব ঠিক আছে তো ?
স্পর্শের অনিবার্যতায় জড়ানো আঙুল সুখ-শিহরণে আপাদমস্তক থেকে যাবতীয় অস্থিরতার পারদ নেমে যায়। দুই হাতের দশটি আঙুল তখন একটি সেতুবন্ধনী। যাকে আশ্রয় করে পরবর্তী গন্তব্যের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে দুই পায়ের দশটি আঙুল। তাদের স্পর্শবাদে আমার মগজ আমার মেধা পায়ের আঙুলে এসেও নোঙর করা, খুব ব্যতিক্রমী ঘটনা কী ? একইভাবে হাতের আঙুলেও আমি তুমি সময়োচিত সবাই আশ্রয় নেয়। পিছলপথ পরিক্রমায় পায়ের দশটি আঙুল সৈনিক কর্তব্যে আমাকে নিরাপদেই বাড়ি পৌঁছে দেয়। 

পা-হাতের তালু আসলে একটি পাড়ার নাম। সামনে পেছনের বেড়াবাধা সরাতে হাতের আঙুলের সোচ্চার মূর্তি, জানি আমার মতো অনেকেই প্রত্যক্ষদর্শী। মগজ ধড় এগারোজন শরিক নিয়ে মাঝে মধ্যে বেকুব বন গেয়া। মানে ইন্দ্রিয়পাঁচ এবং রিপুছয়। এদের বেসাতি কারবার নিরন্তর চলছে।মগজ নিয়ন্ত্রণ করে ঠিকই কিন্তু প্রথাভাঙা বলে একটা ব্যামো আছে, তাকে সবসময় ঠেকানো দুষ্কর। পদাবলির অভিসার নিয়মে এখন আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত। অভিসারিকার নাম দেশপ্রেম নয়, টাকা ! পায়ের তালুপাড়ার জনাদশ গন্তব্যে নিয়ে যায় আর দশ আঙুলজন শুরু করে চেঙ্গিসলুঠ। আমরা কেন যে বারবার ভুলে যাই পঞ্চভূতের জিম্মায় আজন্মকাল বাঁধা পড়ে আছি ?

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন 
"ভারতীয় আধুনিক ইংরাজী কবিতার মা বলা হয়।"
কমলা দাশ ও তাঁর কবিতা।
অনুবাদ - তপনজ্যোতি মাজি। 

Post a Comment

0 Comments