জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম -১৩/ নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

অন্য ধারার শর্ট ফিল্ম
কলমে- নিসর্গ নির্যাস মাহাতো
পর্ব- ১৩
বিষয়: স্ক্রিপ্ট

শর্ট ফিল্ম-এর অন্যতম স্তম্ভ স্ক্রিপ্ট বা চিত্রনাট্য। স্ক্রিপ্ট লেখার আগে নাকি পরে নামকরণ, তা নিয়ে বিতর্ক লেগে আছে দশকের পর দশক ধরে। তবে একথা অনস্বীকার্য নামকরণ আকর্ষণীয় হওয়া চাই। নাম দেখে বা শুনে আকৃষ্ট হয় দর্শক। চলচ্চিত্রের ভিত স্ক্রিপ্ট হলেও, অধিকাংশ পোস্টারে থাকে না স্ক্রিপ্ট রাইটারের নাম। তা রীতিমতো লজ্জার। 

সাধারণত, এ-ফোর সাইজের পাতার একদিকে যতটা স্ক্রিপ্ট লেখা যায়, দৃশ্যায়ণে তার সময়সীমা ১ মিনিট। স্ক্রিপ্ট রাইটার মূলত দুই ধরনের হয় মঞ্চ আর পর্দা'র। মানে, নাটক/যাত্রা/থিয়েটার/নৃত্যনাট্য আর চলছবি'র।  এক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয় শর্ট ফিল্ম। তাই উঠে আসবে এই ঘরানার স্ক্রিপ্ট রাইটার দের কথাই। 

বারবার বলে এসেছি, যেহেতু স্বল্পদৈর্ঘ্য তাই তাকে কম্প্যাক্ট হতে হবে। খুঁজে নিতে হবে অন্যধারা। স্বাভাবিক বিষয় থেকেও উঠে আসতে পারে ব্যতিক্রমী চিত্র। সেই কলমের জোর থাকা চাই। লেখার ওপরে ভিত্তি করেই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হবে দৃশ্যায়ন। অবশ্য লেখা শব্দগুলোকে রূপ দিতে গিয়ে ডিরেক্টর পরিবর্তন, সংযোগ-বিয়োগ করতেই পারেন। এক্ষেত্রে গল্পকার ও চিত্রনাট্যকারের অনুমতি নেওয়াটাও প্রয়োজন। 

স্ক্রিপ্ট লেখার ক্ষেত্রে চরিত্র, সংলাপ, দৃশ্যায়ন- সবদিকেই বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। কারণ তা পর্দায় ফুটে উঠবে বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্নভাবে। পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিপ্ট তাকেই বলা হয়, যেখানে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল, শট ডিভিশন, আলো, পোশাক, মেকআপ সবকিছু নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করা থাকে। মনে রাখতে হবে স্ক্রিপ্ট মানে শুধু মাত্র সংলাপ নয়।

স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে কখনোই ভালো সহবাস করে না। কখনো-সখনো দ্রুত ভালো কাজ নেমেও যায়, কিন্তু সব সময় তা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট রাইটারের মুড, ভাবনার ও লেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। এমনকি পরিবেশ বদলেরও প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে  রিলেট করতে না পারলে আদৌ ভালো স্ক্রিপ্ট দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। হয়তো একটা স্ক্রিপ্ট পড়ে বা তার দৃশ্যায়ন দেখে অনেক পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, আপামর দর্শক খুশি। কিন্তু দেখা যাবে স্ক্রিপ্ট রাইটার একটু বেশি সময় চাইছিলেন আরও ভালো কিছুর জন্য। তাহলে হয়তো তা ফুটে উঠতো অনেক সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে। 

একজন রাইটারের চরিত্রের নাম, ঘটনার বিবরণে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। তাঁকে মনে রাখতে হবে দৃশ্যায়নে সব সময় উঠে আসবে চরিত্রদের নাম, তাঁদের কার্যকলাপ ও স্থান। এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে দর্শক যেন কখনোই একঘেয়েমি না অনুভব করে। লেখার মধ্য দিয়েই সেই বসিয়ে রাখার দক্ষতা চাই।

আমরা যারা শখে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করি তাদের মধ্যে দক্ষ স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে উঠে আসে বেশ কয়েকজনের নাম-মনোরঞ্জন ঘোষ, সুমন্ত সাহা, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, সুলগ্না চক্রবর্তী।

স্ক্রিপ্টের বিষয় থেকে বাদ নেই কোনও বিষয়ই। তবে শহর তথা জেলা থেকে প্রায় চোখে পড়ে না কমেডি, অ্যাড, থ্রিলার, ডিটেকটিভ, অ্যানিমেশন ফিল্ম। খুব একটা চোখে পড়ে না ওয়েব সিরিজ নিয়ে কাজ। এইসব বিষয় নিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা- কাজ হলে সমৃদ্ধ হবে এলাকা।

শর্ট ফিল্ম যেহেতু লিটল ম্যাগাজিনের মতোই আন্দোলন, তাই কোনও কিছুর দাবি জানাতে সেই বিষয় নিয়ে পরপর স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যেতেই পারে। বিনোদনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা যাবে বার্তা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি, কর্ণগড়ের গড়কে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা বেশ কয়েকজন। রানি শিরোমনি ও কর্ণগড় নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি শর্ট ফিল্ম, 'শিরোমণি', 'দ্রোহ'। বিনোদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাস।

সংযোজন: শহর তথা জেলা থেকে লেখা হচ্ছে কেমন স্ক্রিপ্ট, কেমন কাজ হচ্ছে, তা জানতে আপনারা আসতে পারেন 'রিলিজ উইন্ডো'-র প্রদর্শনী গুলিতে। সম্প্রতি হয়ে গেলো দ্বিতীয় অনুষ্ঠান। প্রদর্শিত হয়েছে শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টরি, মিউজিক ভিডিও ও ফটো স্টোরি। মেদিনীপুর থেকে আয়োজন করা হচ্ছে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের।

(স্ক্রিপ্ট নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন শ্রী মনোরঞ্জন ঘোষের 'বিষয়: চিত্রনাট্য', প্রকাশিত: ম্যাগাজিন, ১ ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, শারদ-১৪২৬)

পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার পর কোথায় তা জমা দেওয়া যেতে পারে?বা কে তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবে?

    ReplyDelete