জ্বলদর্চি

আবৃত্তির পাঠশালা-১০ / শুভদীপ বসু

আবৃত্তির পাঠশালা-১০
শুভদীপ বসু

বিষয়-অলংকার

একজন আবৃত্তিশিল্পীর কাছে আবৃত্তির ব্যাকরণ জানাটা অত্যন্ত জরুরি। কবিতার অন্যতম অঙ্গ অলংকার।
অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক ইত্যাদি বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে যখন কাব্যের সৌন্দর্য সম্পাদন করে ও রসের উৎকর্ষ সাধন করলে তাকে অলংকার বলে। 

অলংকার মূলত দুই প্রকার-
ক) শব্দালংকারখ)অর্থালংকার
ক)শব্দালংকার-শব্দের ধ্বনি ঝংকার এর ফলে যে শ্রুতি মাধুর্যময় অলংকারে সৃষ্টি হয় তাই শব্দালঙ্কার।
'এ নহে কুঞ্জ কুন্দকুসুমরঞ্জিত'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শব্দালঙ্কারপাঁচপ্রকার-১.অনুপ্রাস২.যমক৩.শ্লেষ ৪.বক্রোক্তি৫.পুনরুক্তবদাভাস।
খ)অর্থালঙ্কার- শব্দের অর্থ রূপের আশ্রয়ে যে সমস্ত অলংকার সৃষ্টি হয় তা অর্থালংকার।
এটি পাঁচ প্রকার-১.সাদৃশ্যমূলক২. বিরোধমূলক৩.গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক৪.শৃঙ্খলামূলক৫.ন্যায়মূলক

  অনুপ্রাস-একটি বর্ণ বা একগুচ্ছ বর্ণ বারবার ব্যবহৃত হয়ে যে ধ্বনি মাধুর্য সৃষ্টি করে তাকে অনুপ্রাস বলে।
'কুলায় কাঁপিছে কাতর কপোত'-ক ধ্বনি টি চারবার ব্যবহৃত হয় যে ধ্বনি সাম্যর সৃষ্টি করেছে তাই অনুপ্রাস। এটি পাঁচ রকমের- অন্ত্যানুপ্রাস,ছেকানুপ্রাস, বৃত্তানুপ্রাস,শ্রুতানুপ্রাস,লাটানুপ্রাস।
১.অন্ত্যানুপ্রাস-কবিতার এক চরণের শেষে যে ধ্বনি থাকে পরবর্তী চরণের শেষে সেই একই ধ্বনি থাকলে তাকে অন্ত্যানুপ্রাস বলে।এক্ষেত্রে মিলযুক্ত কবিতা অন্ত্যানুপ্রাস।
'তবু আগুন বেণীমাধব আগুন জ্বলে কই?/কেমন হবে আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই।'-জয় গোস্বামী
২.ছেকানুপ্রাস-একটি ব্যঞ্জন গুচ্ছ যদি সংযুক্ত বা বিযুক্তভাবে একই ক্রমে মাত্র দুবার ব্যবহৃত হয় তবে তাকে ছেকানুপ্রাস বলে।
'অঙ্গে রাখি না কারোই অঙ্গীকার'-এখানে ঙ্গ ধ্বনিটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে।
৩.বৃত্তানুপ্রাস-একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যদি একাধিকবার ধ্বনিত হয় কিংবা ব্যঞ্জন গুচ্ছ যথার্থ ক্রমানুসারে সংযুক্ত বা বিযুক্তভাবে বহুবার ধ্বনিত হয় তবে তাকে বৃত্তানুপ্রাস বলে।
'এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা'-এখানে ঙ্গ ধ্বনি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে এবং শ্রুতি মাধুর্য সৃষ্টি করেছে তাই এটি বৃত্তানুপ্রাস।
৪.শ্রুত্যানুপ্রাস-বাগযন্ত্রের একই স্থান থেকে উচ্চারিত বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রুতি মধুর উচ্চারণ সমাবেশকে শ্রুত্যানুপ্রাস বলে।
'স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই' -এখানে স ও শ ধ্বনির মিল শ্রুতি মাধুর্য সৃষ্টি করেছে তাই শ্রুত্যানুপ্রাস।
৫.লাটানুপ্রাস -তাৎপর্য মাত্র ভেদে একই শব্দের পুনরাবৃত্তি কে লাটানুপ্রাস বলে।
 'পুড়ছিল ওই শ্মশানভরে কাঠের রাশি/পুড়তে আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি।'
ভালোবাসার শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে তাৎপর্যের বদল ঘটলেও অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
৬.সর্বানুপ্রাস- এক চরণের আদি, মধ্য,অন্ত শব্দের ধ্বনির সঙ্গে অন্য চরণের আদি,মধ্য,অন্ত শব্দের ধ্বনির অনুপ্রাস সৃষ্টি হলে তাকে সর্বানুপ্রাস বলে।
'গগনে ছড়ায়ে এলোচুল,
চরণে ছড়ায়ে বনফুল।'
-এখানে দুটি চরণে এর প্রত্যেকটি শব্দের সাথে পরবর্তী চরণের প্রত্যেকটি শব্দের শেষ ধ্বনির মিল হয়েছে।
(এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে আলোচনা করব।)
পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments