জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -১৬

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -১৬

প্রতিবারের মতো এবারও খুব যত্ন নিয়েই ছোটোবেলা সংখ্যা সাজিয়েছেন আমন্ত্রিত সম্পাদক মৌসুমী ঘোষ। অতুলনীয় ফোটোগ্রাফি উপহার দিয়েছেন ঋপণ আর্য। তাঁকে ও আমন্ত্রিত লেখকশিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। তরুণ লেখকশিল্পীদের শুভেচ্ছা।
বিশেষ আবেদন, আপনারা লেখা ও চিত্র সরাসরি বিভাগীয় সম্পাদকের কাছে পাঠাবেন।


নিঝুমবেলায় 
রামকিশোর ভট্টাচার্য

প্রাণে সুর নেই বুঝি তাই
আমরা ভয়েই পালাই
নিজেদের রাখছি তফাৎ সবার থেকে,
কত ঝড় রোগের তাড়ায়
ভাবনাও যায় উড়ে যায়
 কতদিন থাকবো তফাৎ বলনা কে কে!
আয়না চিৎ সাঁতারে
 যাবো রে ভয়ের পারে
দেখিনা সকালটাকে বুকের ভিতর,
খেলবো সাহস খেলা 
আমরাই রোজ দুবেলা
ইচ্ছে হয় কি না ভাই বল দেখে তোর?
করোনার হাজার প্যাঁচে
স্বপনও আটকে গেছে
 সাতরঙ হচ্ছে রোজই খুব ফ্যাকাসে,
খুঁজছি মনটাকে ভাই
বুঝি না সত্যি কি চাই
দেখি আজ নিঝুমবেলায় খুব একা সে।


ইচ্ছে হলে পড়ো
তৃষ্ণা বসাক
 
তিন্নি স্কুলে ভর্তি হল
হয়নি পুরো তিন,
কান্নামোছা হাসি মুখটি
শুধু ছুটির দিন,
এখনও তার লিখতে বাকি
একশ তিরিশ পাতা,
মা বকছে, বাবা বকছে
দাদুও বকছে যাতা!
দুগগা দিদি বাসন মাজে
তারই মেয়ে বুড়ি
কেমন খেলে এক্কা দোক্কা,
ওর দাদা ওড়ায় ঘুড়ি;
লুডো তোলা আলমারিতে,
জন্মদিনে বাবা
অংকে মাথা খোলার জন্যে
কিনে আনল দাবা!
অবর ডবর ঘি মৌরী
ইকিড়মিকিড় মানা,
আগে রাইম মুখস্থ হোক
ভাবো কাণ্ডখানা!
তিন্নি এখন স্বপ্ন দেখে
সে-ই শক্তিমান,
ইস্কুল, বেঞ্চ, রঙের বাক্স
সব ভেঙ্গে খানখান
বাবা মা তার সামনে
ভয়েই জড়োসড়ো
বলছে তারা- ছোটো, খেলো
ইচ্ছে হলে পড়ো!


প্রমিস
পারমিতা মন্ডল

ছোট্ট রুশা তার বাবা মায়ের সাথে থাকে শহরে।তার বাবা সেখানে একটা অফিসে কাজ করেন।রুশার দাদু ঠাম্মা থাকেন গ্ৰামের বাড়িতে। আগে রুশা প্রায় ই যেত ওখানে। কিন্তু এখন রুশার আট বছর। পড়াশোনা, স্কুল, আঁকা,নাচ নিয়ে সে এখন ভীষণ ব্যস্ত। কিন্তু প্রতিবছর ওরা তিনজন গ্ৰামের বাড়িতে যায় দুর্গা পুজোর সময়।গ্ৰাম্য পরিবেশ বেশ রোমাঞ্চকর রুশার কাছে।যদিও একটু মন খারাপ হয় বন্ধু দের জন্য তবু দাদুর গল্প ও ঠাম্মার আদর খেতে বড় ভালোবাসে সে।
এবার পুজোতেও গ্ৰামের বাড়িতে এসেছে বাবা মায়ের সাথে রুশা। এইসময় অরুনিমা দেবী মানে রুশার ঠাম্মা অনেক রকম রান্না করেন ওদের জন্য।
একদিন সবাই মিলে খেতে বসেছে। নানা পদের গন্ধে ম ম করছে চারিদিক। রুশার মা জিজ্ঞেস করে 
- মা,এই চচ্চড়িটা কি কি দিয়ে করেছ গো? দারুণ হয়েছে।
উত্তরে অরুণিমা দেবী বলেন
লাউয়ের ডগের সাথে কুমড়ো, ঝিঙে, আলু।
এটা শুনেই রুশা  বলে ওঠে
- ডগ, কোথায় ডগ!ডগ দিয়ে তরকারি! ওয়াক! মাম্মা, আমি খাব না।
এবার পাতে বেগুন ভাজা দেখে মুখ বেঁকিয়ে বলে
- ব্রিঞ্জেল!
- না দিদিভাই ,এটা কোন জেল নয়। এটা বেগুন। অরুনিমা দেবী বলেন।
আবার থালায় কিছু একটা দেখে রুশা বলতে থাকে
-ড্রামস্টিক আমি খাই না। সরিয়ে দাও এটাকে।
দাদু ঠাম্মা একে অপরের দিকে চাইছে দেখে রুশার মা বলে ওঠে
-ড্রামস্টিক মানে সজনে ডাঁটা। আসলে ও তো ইংরেজি স্কুলে পড়ে।
রুশা একটু বায়না করে। 
- গ্ৰ্যানি, এসব খেতে আমার ভালো লাগে না। আমাকে একটু পিৎজা বানিয়ে দাও না।
মিটিমিটি হেসে অরুনিমা দেবী বলেন
- কিন্তু দিদিভাই, ওটা কি জিনিষ? আমি তো জানি না।
এবার রুশা একটু বিরক্ত হয়ে 
- হাউ ডিসগাস্টিং! রাবিশ!
মুচকি হেসে অরুনিমা দেবী  বলে ওঠেন
- বিষ!হ্যাঁ ,ঠিক ঠিক,ওসব বেশি খাবে না। ওগুলো বেশি খাওয়া বিষের ই সমান।
- তুমি কিছু জানো না গ্ৰ্যানি।

সন্ধেবেলা দাদুর কাছে গল্প শুনছে রুশা।অরুণিমা দেবী থালায় একটা পিৎজা নিয়ে এসে রাখে রুশার সামনে। রুশা লাফিয়ে উঠে বলে
- পিৎজা! পিৎজা! কিন্তু...
হাসি মুখে নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অরুনিমা দেবী বলেন
- সব শিখতে হয় দিদিভাই।
কিছু একটা ভাবতে ভাবতে একটু চুপ করে থেকে ঠাম্মা কে জড়িয়ে ধরে রুশা বলে
- আমিও সব খাওয়া শিখে নেব গ্ৰ্যানি। প্রমিস!


সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন || পর্ব- ৬
চিত্র- সুব্রত দেব

গৌতম বাড়ই
তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে ঘুম ভেঙ্গে চোখ কচলাতে কচলাতেই দেখলাম আমাদের বাইরের ঘরে, অর্থাৎ কাছারি ঘরের দর্মার বেড়ার দিকে মুখ করে একটা বড়-সড় জটলা। কারণ, আমাদের ঘরে এবার সেই বিচিত্র রকমের পোস্টার কারা যেন মেরেছে। আমি দিদির মুখের দিকে তাকালাম। দিদি আমায় বললেন - যা সামনে গিয়ে দেখে আয়। 
  আমি সামনে গিয়ে পোস্টারের সামনে দাঁড়াতেই অদ্ভুত এক কান্ড ঘটে গেল। সবাই যখন বলছে-  এইসব হিজিবিজি কাটাকুটি তিনকোণা- চারকোণা পোস্টার সেঁটে কিছু এঁচড়ে পাকা বদমাশ ছেলে আশপাশের দু- তিনটি গ্রামের হবে,  লোককে ভয় দেখাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে এইসব করছে। আমরা এবার থেকে পালা করে সবাই রাত জাগব। দেওয়ানী মাধব রায় হুঙ্কার দিতে লাগলেন। আর আমি সেই হিজিবিজি পোস্টার পুড়োটাই পড়তে পারছি, তাও আবার বাংলায়। 

  লেখা আছে- পৃথিবীর লোকজন ভয় পেয়ো না। আমরাও তোমাদের মতন আর এক গ্রহের প্রাণী। তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব না। তোমাদের পৃথিবী দখল করব না। ওটা তোমরা হামেশাই কর এবং তাও নিজেদের মধ্যে। তোমরা হলে আমাদের থেকে নিকৃষ্ট প্রাণী। মহাকাশ কী প্রকান্ড ব্যাপার সবে, সবেই বলব, তোমাদের কাছে। দু-চারশ বছর তোমাদের হিসেবের অনেক কিন্তু আমাদের কাছে কিছুই না। আমরা এই সুন্দর নির্জন জায়গা দেখে, সরল মানুষদের দেখে কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীর এই এলাকায় রয়েছি। তবে তারও আগে আমাদের দু- চারজন তোমাদের মধ্যে এসে মিশে গিয়েছে। 

  আর একটা পোস্টার তাতেও কিছু লেখা। আমি অবাক হচ্ছি আর শিহরণ খেলে যাচ্ছে আমার  ভেতরে। কী করে এইসব প্রকাশ করব! আমার ভেতরে ওরা তাহলে বিশেষ কিছু  সঞ্চালন করে দিয়েছে, আমার কি সুপারম্যানের মতন মাথার ভেতরেও বিশেষ শক্তি জন্মেছে? আরও আরও লোকজন আসছে। জটলা বড় হচ্ছে। দিদি বললে- দেখলি!  এবার কলপাড়ে গিয়ে হাত- মুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ কর। বিনয়মাষ্টার অর্থাৎ আমার বাবা একটা বড় কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছেন আর তার চারধারে ভিড়। তবে বাবা সবার কথাই শুনছেন মন্তব্য করছেন না। করলেও অতি সন্তর্পণে দু- একটি। 

  দিদি বললে-- বুদ্ধু তুই ঠিকই বলেছিস। আমাদের এ গ্রাম, পাশের গ্রাম শুধু আর বলছি না। আমাদের বাড়ির মধ্যে আশপাশেও ঐ ইটিরা ঘোরাফেরা করে। দেওয়ানী কাকা একটা নিরেট মোটা- মাথার লোক কিস্যু জানে না। তুই বাথরুম থেকে আয় এদের অর্থাৎ ভিনগ্রহীদের নিয়ে আমার জানা কিছু গল্প বা তথ্য তোকে বলব। যা চটপট আয়।

  আমার ভেতরে অন্য একরকম আলোড়ন হচ্ছিল যা একমাত্র দিদিকেই বলা যায়। ভাবছি দিদিকে পুরোটা বলব, না খানিকটা। আমি তাই বলি- দিদি একটা কথা শুনবি?
দিদি বলে ওঠে - তুই দাঁত- মুখ- হাত সব পরিষ্কার করে আয় তো।

  আমি কলপাড়ে টুথব্রাশ হাতে নিয়ে পেস্ট মাখিয়ে গেলাম।

  আমার ভেতরের আলোড়নে মনে হচ্ছে দিদির কাছে সবকিছু উগড়ে দি। কী অদ্ভুত! আমাকে কেউ যেন নিয়ন্ত্রণ করছে। আমার সেই কিশোরসুলভ চপলতা কোথায়! আমি কলপাড় আর টয়লেট থেকে এসে (তখন টয়লেট থেকে বাথরুম শব্দটা বেশি ব্যবহার হত, এখন যেমন রিফ্রেশ রুম) দিদিকে বললাম - দিদি বল। কী বলবি বলেছিলি?

  দিদি বলল- এখানে আয়। 

  দেখি ভাই- ও বসে আছে। আমাদের দু- জনের মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প শোনবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। মা খোলা উঠোনে আশপাশের বাড়ির কাকীমা- জেঠীমা আর বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের সাথে গল্প জুড়েছেন। বাবা বাড়ির সামনের কাছারি ঘরের উঠোনে। আমাদের গল্প করবার এই মওকা। 
তিন ভাই- বোনে গল্প জুড়ে দিলাম। দিদি কথা বলতে শুরু করল।

  - জানিস,  কিছু বিজ্ঞানী যারা মহাকাশ  এইসব নিয়ে গবেষণা করেন, তারা বলেন আমরা, মানুষেরাও নাকি ভিনগ্রহের জীব। পৃথিবী গ্রহে  মানুষ- ও এলিয়েন!  একদল বিজ্ঞানী রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন জীবের সৃষ্টি মহাকাশে এবং মানুষই এলিয়েন। এই মতবাদ পালে হাওয়া পেয়েছে, কারণ পৃথিবীতে জীবন ও মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত এখনও মেলেনি। সে যা হোক, এখন এলিয়েন নিয়ে কিছু কথা বলি শোন মন দিয়ে --

  ভিনগ্রহ থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীর নির্জন প্রান্তরে নেমে আসে এরা। এদের শরীর মানুষের মতন। প্রকাণ্ড মাথার নিচে ছোট ধড়, সরু লিক লিকে হাত পা, বড় বড় টানা- টানা কালো চোখ। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে।  এরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকা গ্রহের বাসিন্দা। এদের নাম ‘এলিয়েন‘। বর্তমান পৃথিবীর প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন এই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।

  আমি উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম-- কিন্তু দিদি, শোন, এলিয়েনদের চেহারা নিয়ে আমার কিছু কথা বলবার আছে। 

  হঠাৎ কে যেন আমার কানে কানে বলে উঠল-- বুদ্ধদেব সময় হয়নি। তুমি সময় হলে কথা বলবে। আমরাই তোমাকে  বলে দেব কখন কী বলবে। এখন তোমাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। তোমাদের আশপাশের সব খবর প্রতি মুহূর্তে পাচ্ছি আমরা। তাই চুপ করে বসো।

  আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। দিদি বলল- কী রে? তুই কী বলবি বলেছিলি বল?

  আমি দিদির মুখের দিকে অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বসে পড়লাম। দিদি বলল- কী রে তোর শরীর খারাপ লাগছে?  ওহ! সকালের চা- মুড়ি খাসনি তো? দাঁড়া মাকে গিয়ে বলি।

  তারপর পরের পর্বে--------
বান্টির মর্নিং-ওয়াক
স্বাতন্ত্রী অধিকারী
সপ্তম শ্রেণি, ওয়েল্যান্ড গোল্ড স্মিথ স্কুল, কলকাতা

  “এই বান্টি, তুই এখনো খাওয়া শেষ করিসনি?”
 ভোর পাঁচটা বাজতেই শুরু হল মা’র তাড়া দেওয়া। বান্টিটাকে কি তাড়াই না দেয়। একটু শান্তিতে যে দুধটা খাবে সে উপায় নেই বেচারার। বান্টির এই কষ্ট সহ্য না করতে পেরে মুখ খুলতেই হল আমায়,
-“মা তুমি ছাড়ো, আমি দেখছি”, তার কাছে গিয়ে দেখি দুধের বাটির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে সে। আমি দেখেই বুঝে গেলুম, আদর না করলে ও খাবে না। দুধের বাটিটা মুখের সামনে দিয়ে মাথায় হাত বোলাতেই কাজ হল।
-“তাড়াতাড়ি খা, মর্নিং ওয়াকে যাবি তো নাকি।”, আমার কথার মানে বুঝে ৩ মিনিটের মধ্যে খাওয়া সেরে পুরো রেডি হয়ে গেল বান্টি।
-“ওরে সারে পাঁচটা বাজে আর কখন যাবি হাঁটতে!” মা রান্নাঘর থেকে বলল।

  -“আরে সবে তো সাড়ে পাঁচটা, এখন থেকে তাড়া দেবার কি আছে?” বাবা বলল। পাশের চেয়ারে বসেই কাগজ পড়ছিল বাবা।
আর দেরি না করে বান্টির কলারে লেস লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রবীন্দ্র সরোবরে হাঁটতে। বান্টি হল গোল্ডেন রেট্রিভার স্পিসিসের কুকুর। তার বয়স ৯ বছর। আমার ৩য় জন্মদিনের দিনই ওর জন্ম।
পার্কে ঢোকার মুখে আমার এক বন্ধু দিশার সঙ্গে দেখা হল। ওর সঙ্গে কথা বলছি এমন সময় দেখি লেসে টান পড়ছে। 
  -“ও বোধ হয় ওই কুকুরটাকে দেখে খেপে গেছে।” দিশা বলল। আমি লেসটা শক্ত করে ধরলাম। বান্টি এখনো দাঁত খিঁচিয়ে তাকিয়ে আছে কুকুরটার দিকে। গল্প করতে করতে আমি বুঝতেই পারলাম না কখন হাতের লেসটা আলগা হয়ে গেছে।
  বান্টি একটা হ্যাঁচকা টান দিতেই আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। হাত থেকে লেসটা খুলে গেল, আর বান্টি দৌড়ল কুকুরটার দিকে। শুরু হল লড়াই। আমি দিশার সাহায্যে উঠে দাঁড়ালাম। দু’জন লোক ছুটল পার্কের সুপারভাইজারদের ডাকতে।
বান্টি এখনো লড়ে যাচ্ছে কুকুরটাকে। আমি চেষ্টা করলাম ওকে টেনে আনার, কিন্তু দিশা বলল,“যাস না, ও যদি রাগের চোটে তোকে কামড়ে দেয় তখন বিপদ হয়ে যাবে।” ওর কথা শেষ হবার পর খেয়াল করলাম বান্টি আর অন্য কুকুরটা ক্রমশ লেকের ধারে চলে যাচ্ছে। ওদিকে পার্কের সুপারভাইজাররাও ছুটে আসছে। এমন সময় বান্টি এক কামড় বসিয়ে দিল কুকুরটার সামনের ডান পায়ে। কুকুরটা ব্যাথার চোটে লাফিয়ে লেকের জলে পড়ল। লড়াই শেষ হল। আমি বান্টিকে কোলে টানলাম। ক্ষত দেখে বুঝলাম বান্টির পিছনের বাঁ পায়ে কামড়ে দিয়েছে কুকুরটা। পার্কের সুপারভাইজার বিমলকাকু ক্ষততে ওষুধ লাগিয়ে দিলেন। আরো দুটো লোক অন্য কুকুরটাকে জল থেকে তুলে আনল। ওকেও ওষুধ লাগিয়ে দেওয়া হল।
আমি বান্টিকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে গেলাম। আর মা-বাবা কে বললাম বান্টির কান্ড-কারখানা।
রাত সাড়ে নটার ফোন 
অনন্বয় গোস্বামী, অষ্টম শ্রেণি, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল, চুঁচুড়া

ঠিক সাড়ে নটার সময় ফোনটা বেজে উঠলো। মা রান্নাঘরে রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত , তাই আমাকেই বললো - উজান ফোনটা ধর। দ্যাখ তো , কে ফোন করেছে?
   আমি কিন্তু জানি ফোনটা কার । মনে মনে হাসতে হাসতে আমি ফোনটা ধরলাম। হ্যালো ,  কে - অঙ্কিত - বল। 
ও বললো - হ্যাঁরে কালকে কি কম্পালসারি অ্যাটেনডেন্স?
   আমি বললাম না । তবে , কাল ইংলিশ লিটারেচার লেখাবে।
   ও বলল আমি কাল যেতে পারব না। লেখাগুলো তুই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিস। আমি বললাম - ঠিক আছে। 
 এরকম সপ্তাহে এক দুই বার কল আসতেই থাকে। আমি তাই এব্যাপার-এ 
অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
 স্কুলে আমার পাশেই বসে অঙ্কিত। পড়াশোনায় মাঝারি মাপের। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি - তুই মাঝে মাঝে স্কুলে আসিস না কেন?  
ও আমতা আমতা করে বলে - ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়।
    স্কুলে টিফিনের সময় রোজ-ই ক্রিকেট খেলা হয় অল্প করে। শুধু বুধবার দিন দুটো খেলার পিরিয়ড থাকে। এই দিন আমরা জমিয়ে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলি। আমরা তাই অন্য কোনদিন অ্যাবসেন্ট হলেও , বুধবার কেউ অ্যাবসেন্ট হইনা। অঙ্কিতের কোন ঠিক নেই। কোন বুধবার আসে কোন বুধবার আসেনা।     
      হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগের এক বুধবারে বেশিরভাগ ছেলেই সেদিন অ্যাবসেন্ট ছিল। কিন্তু সেদিন অঙ্কিত এসেছিল। তাই কিছুটা নিরুপায় হয়েই ওকে টিমে নেওয়া হয়েছিল। অঙ্কিত ভালো ব্যাট করতে পারে না , আবার খুব ভালো দৌড়াতেও পারে না। দুটো টিম খেলতে নামলো। আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন রোহিত আর অপর টিমের ক্যাপ্টেন আদৃত। রোহিত টসে হারলো। আদৃতের টিম  প্রথমে ব্যাট করে ষাট রান করল। 
    এরপর আমাদের ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামলে আস্তে আস্তে টিমের এক , দুই , তিন , চার নম্বর ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ফিরে গেল - টিমের রান তখন চার উইকেটে পঁচিশ। এবার ব্যাট করতে নামলো রোহিত। রোহিত ভালই খেলছিল কিন্তু সংকেতের একটা ইয়র্কারে একেবারে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেল। তখন রোহিতের স্কোর কুড়ি। এরপর আরো দুটো উইকেট যখন পড়ে গেল তখন নামল অঙ্কিত। উল্টোদিকে আমি। আমার স্কোর তখন দুই। ওকে বললাম তুই বলে ব্যাট ঠেকিয়ে এবার থেকে দৌড়ে একটা রান নিয়ে আমায় স্টাইক দিবি। ও কিন্তু মুখে কিছু বলল না। শুধু হাসলো। প্রথম বল হয়ে গেল। অঙ্কিত হাওয়ায় ব্যাট চালাল - কোনো রান হলো না। 
   আমি অঙ্কিতের কাছে গিয়ে বললাম - বলটায় ব্যাট লাগানোর চেষ্টা কর । আমাদের আর পাঁচটা বলে ছয় রান করতে হবে। পরের বলটা ও ব্যাটে ঠেকাতে পারলো না। আমি বললাম -  অঙ্কিত এবার একটা কিছু কর নইলে আমরা হেরে যাবো। ও শুধু বলল - দেখ না এত চাপ নিচ্ছিস কেন। পরের বলটা ব্যাটে ঠেকলো অঙ্কিত একরানের জায়গায় অবিশ্বাস্যভাবে দুই রান নিলো। পরের বলটা মারতে গিয়ে কানায় লেগে অনেকটা উঠে গেল, ফিল্ডার ক্যাচ ধরেও ফেললো, কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে ফিল্ডার পড়ে গেল বাউন্ডারি লাইনের ওপর। আমরা পেয়ে গেলাম মূল্যবান ছ-ছটা রান আর জিতেও গেলাম। 
   সবাই অঙ্কিতকে কাঁধে তুলে নাচতে লাগলো। আদৃত বলল -  তুই তো ভালোই খেলিস। তোর জন্যেই তো ওরা আজকে জিতে গেল। তাহলে আসিস না কেন? এবার থেকে বুধবার গুলো আর কামাই করবি না। 
    কিন্তু আমি জানি রাত সাড়ে নটার সময় আবার মায়ের মোবাইলটা বেজে উঠবে ।
শীত এলে
শুভ্রনীল সরকার
চতুর্থ শ্রেণি, হোলি চাইন্ড স্কুল, কালনা, পূর্ব বর্ধমান


শীতের আমেজ লাগল গায়ে 
হেমন্তর পরে,
সকালবেলায় উঠতে দেরি 
লেপ-কম্বল ছেড়ে। 

শীত নিয়ে আসে বড়দিন 
পিঠে-পুলির সাথে,
চড়ুইভাতির আনন্দেতে 
সবাই ওঠে মেতে।
জানো কি !
সংকলক : মনোজিৎ বেরা
আজকের বিষয় :  বিভিন্ন চরিত্র ও তাদের স্রষ্টা

১. রানার চরিত্রটি কার সৃষ্টি?
২.'পাণ্ডব গোয়েন্দা' কার অনবদ্য সৃষ্টি?
৩. 'কোনি' কোন লেখক/লেখিকার সৃষ্ট চরিত্র?
৪. অপু ও দুর্গা কোন বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের সৃষ্টি?
৫. কাকাবাবু ও সন্তু এই দুই গোয়েন্দা চরিত্র কার লেখনীতে আঁকা?
৬. তপসে কোন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকের সৃষ্টি?
৭. টেনিদার সৃষ্টিকর্তা কে?
৮. গোরা চরিত্রটি কোন নোবেল প্রাপক কবির সৃষ্টি?
৯. প্রফেসর শঙ্কু এক হাস্যরসপূর্ণ ও বর্ণময় চরিত্র। এটি কার তৈরি চরিত্র?
১০. লালু এক গ্রাম্য যুবক। এই বিখ্যাত চরিত্রটি কোন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক দ্বারা অঙ্কিত হয়েছে?

গত সপ্তাহের উত্তর 
১.ভানুসিংহ  ২.বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ৩.অনিলাদেবী  ৪.কলমগীর  ৫.প্যারীচাঁদ মিত্র ৬.কালীপ্রসন্ন সিংহ ৭.সমরেশ বসু  ৮.বিনয় ঘোষ ৯.পরশুরাম ১০. বিমল ঘোষ।

প্রকাশিত

পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 




Post a Comment

0 Comments