জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ১৭

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ১৭

ছোট্ট বন্ধুরা, কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। তারমানে স্কুল খোলার দিন এগিয়ে আসছে। স্কুল খোলার কথায় তোমরা নেচে উঠবে জানতাম।স্কুলজীবনে আমরাও পুজোর ছুটির গন্ধ পেলেই নেচে উঠতাম। আসলে কোভিট এসে খোলা-বন্ধের হিসেবটা বদলে দিয়েছে। করোনাকালের আগের শরতের দিনের অসাধারণ একটি ফটোগ্রাফি উপহার দিয়েছেন চিত্রগ্রাহক মৃণাল ঘোষ, যা এবারের ছোটোবেলা সংখ্যার প্রচ্ছদ। আমন্ত্রিত কবি বাসুদেব গুপ্ত ও মুক্তি দাশের ছড়ায় নতুন বছরের ও শীতের ঘ্রাণ। আমন্ত্রিত গল্পকার নিত্যরঞ্জন দেবনাথ ও অমিত মজুমদারের কলমে কিশোর-কিশোরী বেলার গল্প তোমাদের স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে করাবেই। আমন্ত্রিত চিত্রগ্রাহক ও লেখকদের ধন্যবাদ। আর ছোটোবেলা সংখ্যাটিতে যে সমস্ত ছোটো বন্ধুরা এঁকে ও লিখে রঙিন করে তুলেছে তাদের প্রতি রইল আমার নিরন্তর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।৷ - মৌসুমী ঘোষ

আসছে নতুন ছোটর দল 
বাসুদেব গুপ্ত
 
কে জানতো ভাই সত্যি হবে ঘোড়ার ডিমের ভবিষ্য,
তোড়ায় বাঁধা হাসির কথা ভুলেই ছিল কি বিশ্ব?
মানুষগুলো কোথায় গেল হনুমানের বংশধর?
মাস্ক লাগিয়ে মানহনুরা দিচ্ছে ভরে গাঁ শহর।
সামনে যদি হঠাৎ এসে কেউ  খুশিতে হাত বাড়াও,
আঁতকে উঠে ভিরমি খেয়ে চেঁচিয়ে বলে তফাত যাও।
হাসছে নাকি ভেংচানি দেয়, যায় না বোঝা সেলফিতে-
খাওয়া দাওয়াও বন্ধ বুঝি, কোভিড ব্যাটার  ফন্দিতে।

হঠাৎ জোজোর চোখ পড়ে যেই নতুন ঝোলা ক্যালেন্ডার, 
চমকিয়ে তার চোখ কপালে, লাগবে এবার ধুন্ধুমার।
উল্টে যাবে নিয়ম কানুন উল্টে যাবে বাঁ ডাইন,
এই বছরে হবেই চালু, একুশ সালের সেই আইন।
বলেই গেছেন কোন অতীতে রায় সুকুমার কি বিস্ময়,
শিবঠাকুরের আপন নিয়ম চলবে এবার বিশ্বময়।

সর্বনেশে এই একুশে কে দেখাবে নতুন পথ? 
কে শোনাবে নতুন আশা, কে চালাবে আলোর রথ?
ছোট্ট জোজো ভাবতে বসে,  হাজার হাজার ছোটর দল-
তারাই পারে মুছিয়ে দিতে পৃথিবীমার চোখের জল।
বাড়ছে তারা, জাগছে তারা, বুদ্ধিমান আর সমঝদার,
ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে করবে শাসন সাধ্যি কার?
আসছে তারা ছোটর দল ঐ, নিশান ওড়ে বিজ্ঞানের,
গড়বে তারা বিশ্ব নতুন, সব মানুষের সম্মানের।

শীতঋতুটা হোক না তাদের
মুক্তি দাশ


শীতের দিনে গঞ্জে-গ্রামে
উঠলো জেগে প্রাণ,
শীত মানে তো মাঠে মাঠে
সোনার বরণ ধান!
কাস্তে নিয়ে হুমড়ি খেয়ে
পড়লো মাঠে চাষী,
গোলায় তারা তুলবে যে আজ 
ফসল রাশি রাশি।
দুঃখের সাথে যেন তাদের
নেই কোনো সম্বন্ধ-
প্রাণভরে আজ শুঁকবে তারা
নতুন চালের গন্ধ।
সারাবছর জ্বলতো না যে
মরা উনুনগুলি-
তাতেই যে আজ রান্না হবে
পায়েস-পিঠেপুলি!
খিদেয় যারা দিশেহারা
খিদেয় যারা বন্য-
শীতঋতুটা হোক না তাদের-
কেবল তাদের জন্য!
সাতের তিন 
অমিত মজুমদার 


অদিতি বরাবরই অংকে একটু দুর্বল। কোভিড পরিস্থিতিতে গতবছর এইটে প্রায় সারা বছরই ক্লাস হয়নি। নাইনে ওঠার পরেও কবে ক্লাস শুরু হবে কেউ জানে না। ওদের বাড়ি অজ গ্রামে। সেখানে খুব ভালো অংকের প্রাইভেট শিক্ষকও নেই। যেখানে পড়তে যায় সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রী। স্যারও ঠিক অংকের নন। অনেকদিনের অভিজ্ঞতা সম্বল করে অংক করান। গ্রামের অবস্থা এমনই যে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনলাইন ক্লাসের চেষ্টা করেও খুব একটা সফল হননি। কারণ বেশীরভাগ ছাত্রীর বাড়িতেই স্মার্ট ফোন নেই। প্রায় সবই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার। অদিতি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হলেও অংকে কিছুটা কাঁচা। পাশাপাশি বয়েজ স্কুলের একই ক্লাসের সুমন অংকে খুবই ভালো। তাই বারবার সব পরীক্ষায় অদিতিকে পেছনে ফেলে দিতে পারে। 
        অদিতি ঠিক করে রেখেছে মাধ্যমিকে যত ভালো রেজাল্টই হোক না কেনো সে আর্টস নিয়েই পড়বে। ওদিকে সুমন মাধ্যমিকের পর সায়েন্সই পড়বে। সায়েন্স পড়তে অনেক খরচ হয় শুনে সুমন এখন থেকেই টাকা জমাতে শুরু করেছে। সুযোগ পেলেই মুনিশ খাটতে যায় সে। তার বাবার কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয় কারণ তাঁর নিজের জমি নেই। ভাগে চাষ করতে হয়। সুমনের আয়ের টাকাও সংসারে লেগে যায়। 
        অনেক চেষ্টা করেও অংকটা করতে পারছে না অদিতি। এদিকে রাত বাড়ছে৷ প্রাইভেটে একদিনও হোমওয়ার্কের সব অংক বাড়ি থেকে করে নিয়ে যেতে পারেনা সে। সুমন পারে বলে স্যার সবার সামনে সুমনের প্রশংসা করেন। 
        আজ একটা বাদে সব অংকগুলো হয়ে গেছে। অদিতি আর সুমনের মধ্যে পড়াশোনায় প্রতিযোগিতা থাকলেও তারা খুব ভালো বন্ধু। সে বাবার বোতাম টেপা ফোন থেকে ফোন করলো সুমনদের বাড়িতে। ফোনটা সুমনই ধরলো। সেটাও ছোটো বোতাম ফোন। ফোন ধরতেই অদিতি জানতে চাইলো অংকটা কেমনভাবে হবে ? সুমন বলল, "এই অংকটা পারছিস না ? একটু ঘুরিয়ে দেয়া আছে। তবে সহজই। যেভাবে বলছি সেভাবে কর। হয়ে যাবে।" 
        সুমন ফোনে যেভাবে বললো অদিতি সেভাবেই অংকটা করলো। উত্তর মিলে যেতেই খুব আনন্দ হলো তার। পরের দিন স্যার সুমনের সঙ্গে তারও প্রশংসা করবেন সবার সামনে। 
        পরের দিন সকালে পড়া। সবাই খাতা জমা দিয়েছে। স্যার সবার খাতা দেখার পর বললেন, "আজ একমাত্র অদিতিই সব অংকগুলো সঠিক করেছে।" অদিতির মুখ খুশিতে ভরে গেলো। অনেক দিন পর এত খুশি হয়েছে সে। 
        তারপরই স্যার ডাকলেন, "সুমন।"
        সুমন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "স্যার সাতের তিন নম্বর অংকটা বুঝতে পারছি না। ওটা করতে পারিনি।"
        স্যার অবাক হয়ে সুমনের দিকে তাকালেন। যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না। অদিতি বইতে তকিয়ে দেখলো সাতের তিন নম্বর অংকটাই গত রাতে সুমন তাকে ফোনে বলে বলে করে দিয়েছিলো। আর সুমন ভালো করে তাকিয়ে দেখলো অদিতির মুখ থেকে খুশির ঝলক মিলিয়ে যাচ্ছে। 
        স্যার হঠাৎ বললেন, "অদিতি, তিনের অংকটা বোর্ডে করে দে। আর সুমন বোর্ড দেখে অংকটা টুকে নে।"

বেস্ট ফ্রেন্ড

নিত্যরঞ্জন দেবনাথ


মা বললেন," কিরে মিমি, কার সঙ্গে কথা বলছিলি? কে এসেছিল?"
মিমি বলল," আমাদের ক্লাসে পড়ে।নাম মিনু। ছেড়ে দাও ওর কথা। আজ আবৃত্তির ক্লাস আছে মা।আর এক ঘন্টা পরেই বেরোতে হবে। তুমি যাবে তো আমার সঙ্গে?"
"সে না হয় যাবো। মিনু কেন এসেছিল, সেটাতো বললি না?"
"ওর নাকি জন্ম দিন আগামী রবিবার। আমাকে নেমন্তন্ন করতে এসেছে। সঙ্গে তোমাকেও যেতে বলেছে। তোমার সঙ্গে দেখা করতেও চাইছিল, ইচ্ছে করেই তোমাকে ডাকিনি।"
"কেন ডাকিস নি ? তোর যখন বন্ধু আলাপ করতাম।"
"বন্ধু নামেই।পড়াশুনায় একটু ভালো বলে স্যাররা খাতির করেন। আমরা কেউ পাত্তা দিই না।"
"এক ক্লাসে পড়িস। ওভাবে কথা বলছিস কেন?"
"বস্তির মেয়ে। আমরা কেউ ওর সঙ্গে মিসি না। ওর মা ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে মা। গেলে বন্ধুরা কি বলবে? আবার তোমাকে নিয়ে যেতে বলছে, সাহস কত? তাই তোমাকে না ডেকে ভাগিয়ে দিয়েছি।"
"ছিঃ মিমি ! বস্তির মেয়ে বলে হেয় করতে নেই। মনে রাখিস এই পৃথিবীতে তোর যা অধিকার ওরও ততটুকু অধিকার। পাকেচক্রে হয়ত ও গরিব ঘরে জন্মেছে, তার জন্য তো ও দায়ী নয়। দায়ী আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র। মানুষকে কখনো ছোট ভাবে দেখতে নেই। এটা পাপ, অন্যায়। ঠিক আছে ওর জন্ম দিনে আমিও যাবো তোর সঙ্গে।"
"তুমি যাবে? বন্ধুরা কিন্তু মুখের উপর না বলে দিয়েছে, বস্তিতে আমরা যাবো না। এখন আমরা গেলে ওরা কি ভাববে মা। প্রেস্টিজ থাকবে? তারথেকে না যাওয়াই ভালো মা।"
"বন্ধুরা ভুল বলেছে, যদি এমন কথা বলে থাকে ওদের সঙ্গেই তোর মেশা উচিত নয়।  মিনুকে বলে দিস, মাকে নিয়ে রবিবার যাচ্ছি।"
রবিবার মাকে নিয়ে গেল মিমি। প্রথমে কেক কাটা হলো।তারপর মধ্যাহ্ন ভোজের পালা। মিমি ও মায়ের জন্য একটি ছোট চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করেছে। আর সবাই মেঝেতে বসেছে। মাও ওদের সঙ্গে মেঝেতে বসেই খেলেন। যেখানে যেমন তেমনটাই নাকি মানিয়ে নিতে হয়। আয়োজন বিশাল না হলেও  আপ্যায়ন ও  আন্তরিকতায় ওরা মুগ্ধ। মিনু সকলের সঙ্গে  পরিচয় করিয়ে দিল, এই হচ্ছে মিমি, ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল এবং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
ফেরার সময় মিনু বলল," জানিস মিমি, আজ আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। "
মিমি বলল," জানি,  জন্ম দিন  সকলেরই কাছেই স্মরণীয়।"
মিনু বলল," নারে সে জন্য নয়। তুই আন্টিকে নিয়ে আজ আমাদের বাড়িতে এসেছিস। কি যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না।"
মিমি বলল," আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে। এতদিন তোর সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি। খুব অন্যায় করেছি। তুই সকলের সম্মুখে যেমন বললি, আমিও বলছি, আজ থেকে তুই আমার সত্যি সত্যি বেস্ট ফ্রেন্ড।"বলেই বন্ধুকে জড়িয়ে ধরল।
মা স্থির দৃষ্টিতে দেখছেন ওদেরকে। দুজনের চোখেই জল দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।


ভিনগ্রহীরা এলো কোত্থেকে?

প্রবাহনীল দাস, ষষ্ঠ শ্রেণি, একমি একাডেমী, কালনা, পূর্ব বর্ধমান অনেক অনেক যুগ আগে ব্রহ্মাণ্ডের কোন এক গ্রহে শুধু তিনজনই থাকত। তাদের তিনকুলে কেউ নেই। নিজেরাই একে অপরের বাবা, মা, বন্ধু, সবই। একজন হল এক চারমুখো বুড়ো, একজন চার হাতের নীল মানুষ, আর একজন ছিল ত্রিশূলধারী। একদিন তারা তিনজন মিলে একা ছোট্ট টিলার উপর বসে গল্প করছিল। নীল মানুষ বলল, “তোমাদের কেমন একা একা মনে হয় না? শুধু আমি আর তোমরা দু’জন। আর চারিদিকে কেউ কোথাও নেই। আর কাউকে তৈরি করলে হয় না?” ত্রিশূলধারী বলল, “বুদ্ধিটা খারাপ নয়। কিন্তু বানাবে কাকে? তাদের দেখতেই বা কীরকম হবে? তুমি কী বলো বুড়ো?”

কোনো কোলাহল নেই, শান্ত পরিবেশ তাই এই কথাবার্তা চলাকালীন চারমুখো বুড়ো ঘুমিয়েই পড়েছিলো। তাই হঠাৎ ডাক শুনে তড়িঘড়ি করতে উঠতে গিয়ে সে পিছলে খাদে পড়ে গেলো। খাদে জলের মত নরম কিছু ছিল, তাই তার হাড়-গোড় ভাঙল না। নীল মানুষ আর ত্রিশূলধারী বুড়োকে জল থেকে টেনে তুলল। দেখা গেলো, বুড়োর চার মাথার চুল আর দাড়িতে কী সব সাদা সাদা গোল গোল জিনিস আটকে রয়েছে। হঠাৎই তারা অবাক হয়ে দেখল, সেই সাদা গোল জিনিসগুলো ফেটে গেলো, আর তার থেকে বেড়িয়ে এলো বিভিন্ন জীব, যাদেরকে আগে তিন জনের কেউই দেখেনি। তাদের কেউ বা দুই পায়ে হাঁটে, কেউ বা সবুজ চুল নিয়ে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে এক পায়, কেউ বা আবার চার পায়ে হাঁটে আর কেউ আকাশে ওড়ে ডানা মেলে। বুড়ো বলল, “নিশ্চয়ই আমাদের ইচ্ছাতেই এরা জন্মেছে। আমরা আমাদের গ্রহকে অধ্যুষিত করতে পেরেছি।” আস্তে আস্তে এরা সবাই বংশবিস্তার করে তাদের গ্রহকে আরও জনবহুল আর উন্নত করেছিল।

ওই তিনজন কিন্তু মরেনি, তারা সবাই একটা অন্য ছোট্ট গ্রহে চলে গিয়েছিল, এবং মাঝে মধ্যেই ওই তারা আসতো, এবং এখনও তারা আসে তাদের গ্রহে, নিজেদের ইচ্ছা-সন্তানদের দেখতে।

আমি ভারতবর্ষ

অনুষ্কা চ্যাটার্জী, একাদশ শ্রেণী, দিল্লী পাবলিক স্কুল, দুর্গাপুর সহস্র পর্বতমালার মুকুট পরিবার সুযোগ কাহারি বা হয়? কেই বা দুশো বছর ধরে বহিরাগতদের অত্যাচার সয়? আমি সহ্য করেছি অত্যাচার, সহ্য করেছি অবিচার মেনে নিয়েছি বহুবার নিজের পরাজয়, নিজের হার। তবু যবে দেখলাম ক্রন্দন ধ্বনি ঢেকে দিচ্ছে মোর হৃদয় স্পন্দন,

যবে দেখলাম দ্রৌপদীকে নিয়ে করছে খেলা এক দুর্যোধন, মোর হৃৎপিন্ডে উঠল তবে স্রোত -

ধমনীর মধ্যে প্রবাহিত রক্তে তখন একটাই বার্তা - প্রতিশোধ। উঠে দাঁড়ালাম আমি, ছুঁড়ে ফেললাম আমার নীরবতা। দেখিয়ে দিলাম এ ধরণীকে মোর ক্ষমতা। শান্ত আমি,তবু নহি বাক্যহীন, হতে পারি তুচ্ছ, তবু নহি ক্ষীণ। পদতলে মোর টেউয়ের উশৃঙ্খলতা, বুকে মোর একশ আটত্রিশ কোটি মানুষের উন্মত্ততা। এখনও বুঝি যাচ্ছেনা মোরে চেনা? তবু বলি নহি আমি অজানা। আমি -আমি ভারতবর্ষ। কোথাও আমি উত্তাল, কোথাও আমি শান্ত। আমিই তো তোমাদের ভারতবর্ষ - সারাদিন কাজ করে আমিই ঘরে ফিরি হয়ে পরিশ্রান্ত। কখনও আমি ধনী, কখনও বা আমি গরীব, কখনও আমার হাতে মোমবাতি, কখনও বা প্রদীপ। আমি বাংলায় থাকি, আমি হরিয়ানায়, আমি এখন আসামে, আমি এখন কেরালায়। আমায় মনের চোরা কুঠুরির অন্তরালে নিয়ে সহস্র কোটি মানুষ করে বাস, আমি খেটে চলি বছরের পর বছর, মাসের পর মাস। আমি কোথাওবা পড়াশুনা করি, কোথাও করি বিপ্লব, কোথাও আমি উৎফুল্লতার আমেজে ভরিয়ে তুলি এ আকাশ- কোথাও বা আমি থাকি নীরব। আমি যতোটা ধনীর ততটাই গরীবের- যতোটা মুসলমানের ততটাই হিন্দুর। শিখ, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, শুদ্র আমি সব, কোথাও আমি অবলার সঙ্গী তো কোথাও আমি বিদ্রোহের রব। আমি যুগ যুগ ধরে নিজের পরিচয় উন্মোচিত করেছি এ পৃথিবীর সামনে, মোর বিবিধ সন্তানদের রেখেছি আমি যতনে। দেখিয়ে দিয়েছি একাত্মতার প্রকৃত অর্থ দেখিয়ে দিয়েছি কত তুচ্ছ মানব জীবনে নিজ স্বার্থ। আমিই শত শত হীরের টুকরো সৃষ্টি করেছি, তাদেরই হাত ধরে মোর মাটিকে পবিত্র করে তুলেছি। আমি শুধু দেশ নই,আমি মানুষের ভালোবাসার অঙ্গীকার। তাইতো, তাইতো এ ধরণীর সামনে গর্বে বলে উঠি বারবার - একটিই কথা – "আমি ভারতবর্ষ। আমি ভারতবর্ষ। হ্যাঁ, আমিই ভারতবর্ষ।"

প্রকাশিত

https://www.jaladarchi.com/2021/01/short-mahabharata-6.html?m=1


কালো দরজার ওদিকে 
আগমনী চক্রবর্তী, শ্রেণি- একাদশ, দি ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল

ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে কখনওই আমার নিজের কোনও ঘর ছিল না। তাই, একা শোবার অভ্যেস তো দূরের কথা, এক বসে পড়াশোনা করার জন্যেও মাকে দরকার হত। মা আমার পাশে সোফায় বসে থাকতেন। আগের বছর ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষার পর, মা- বাবা দুজনেই ঠিক করলেন আমি যেহেতু অনেক বড় হয়ে গিয়েছি, তাই এবার আমার একার একটা ঘর দরকার। করোনা চলে আসার ফলে সেই অভ্যাসটাও তৈরি হয়ে যাবে, এইরকমই আশা ছিল।

আমাদের দোতলার ঘর বলতে একটাই। একটা বিরাট শোবার ঘর। আর বাইরে একটা আরও বড় হলঘর। গত পনেরো বছর ধরে শোবার ঘরের বিশাল বিছানায় বাবা-মাকেই ঠেলে গুঁতিয়ে আমি নিদ্রামগ্ন হয়েছি। বাইরের হলঘরে দক্ষিণের জানালার ধার ঘেঁষে ছিল একটা ছোট্ট খাট। লকডাউন শুরুর দিকে ওই খাটে আমি সারারাত একা শুয়ে ঘুমোনো প্র্যাকটিস করেছি। একদিন সকালে হঠাৎ প্রচুর মিস্তিরি বাড়িতে এসে হাজির। তারা এসে দেখি এক ঘরের খাট অন্য ঘরে বদলাবদলি করছে। শুনলাম, এবার আমার নিজের ঘরের ব্যবস্থা হচ্ছে।

বাবা-মায়ের শোবার বড় খাট চলে গেল ওই বাইরের হলঘরে। আর শোবার ঘরের মাঝখানে এসে বসল বাইরের ঘরের সেই ছোট্ট খাট। পাশে এসে বসল পড়ার টেবিল আর চেয়ার। আমার উপচে পড়া বইখাতা রাখার জন্য দেওয়ালের গায়ে একটা তাক তৈরি হল। কিন্তু ঘরের মধ্যে আগে থেকেই জামাকাপড় রাখার যেসব বিশাল আলমারি ছিল, সেগুলো যে যার জায়গায় দিব্যি দাঁড়িয়ে রইল এইরকমই একটা আলমারি আমার বিছানার ঠিক বাঁদিকে। পাশে পশ্চিমের জানালা। আর এই আলমারিটা দেওয়ালের গায়ে লাগানো। তার মধ্যে বাবার শীতের জামা ভর্তি। বিশাল চেহারার ওই কুচকুচে কালো রঙের কাঠের আলমারিটাকে আমি খুব ছেলেবেলা থেকে ভয় পাই। খুব ছোটবেলা ইচ্ছে হয়েছিল ওই আলমারির ভেতরেই একটা ঘর বানানো যেতে পারে। কিন্তু যেদিন থেকে কতগুলো অদ্ভূত ঘটনা ঘটতে শুরু করল, তারপর থেকে আমি আর ভুলেও ভাবিনি সেকথা। অনেকবার হয়েছে, মা দুপুরে বাড়িতে নেই, আমি শোবার ঘরের খাটে শুয়ে গল্পের বই পড়ছি। ভরদুপুরে দিনের আলোয় এমনিতেও ভয় পাওয়ার কথাই নয়, কিন্তু একদিনের ঘটনার পর আমি আর দিনের আলোকেও ভরসা করতে পারিনি। সেদিন মনের আনন্দে খাটে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছি। খাটের একদিকে দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে কাঁঠাল আর তেজপাতা গাছের ওপর রোদ্দুর এসে পড়ছে। অন্যদিকে পশ্চিমের জানালা দিয়ে করবী আর মাধবীলতা দেখছি। হঠাৎ মনে হল, আমাদের ঘরের মধ্যেই কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে। আমার শ্রবণশক্তি সম্বন্ধে আমার একবিন্দুও সন্দেহ নেই। বাড়ির বাইরের গেটে যদি কেউ খুব মৃদুভাবে কাশে, আমি দোতলার ঘরে বসেও সেটা শুনতে পাই। কাজেই, আমি যে ভুল শুনেছি, তা’ একেবারেই হতে পারে না। যাই হোক, ঘরের মধ্যেই দরজায় টোকার আওয়াজ শুনে প্রাথমিকভাবে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। ঘরের দরজা তো খোলা। আর তাছাড়া, বাড়িতে আর কেউ কোত্থাও নেই। তা’ও বিছানা থেকে উঠে গিয়ে একবার দেখে নিলাম। শোবার ঘরের দরজা হাট করে খোলা, আর নিচের তলায় সদর দরজায় তো কেউ টোকা দেবে না, পাশে একটা আস্ত কলিংবেল রয়েছে যে! আবার ফিরে এসে বসলাম। বাইরে কাক ডাকছে। বাগানে ছাতারে পাখিদের ঝগড়া।

একটা টুনটুনি উড়ে পালাল। ‘হরেক মাল তিরিশ টাকা’ হেঁকে চলে গেল একটা লোক। তার ভ্যানে ভরতি রঙবেরঙের বালতি, গামলা, মগ। জমিয়ে বইটা পড়ছি। অনেকক্ষণ পড়ার পর হালকা ঘুম পাচ্ছে, অমনি হঠাৎ সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমার বিছানার পাশেই সেই বড় কালো দেওয়াল আলমারির ডানদিকের পাল্লাটা কোনও আওয়াজ না করে আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে! সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, কে যেন লাল-হলুদ চোখে তাকিয়ে রয়েছে হাট হয়ে খুলে যাওয়া আলমারি থেকে! প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠেছি। পরিত্রাহি চিৎকার। আর তক্ষুনি সেই ঠিকরে আসা চোখ হয়ে গেল বাবার শীতের জ্যাকেট। বিছানা থেকে নেমে একছুটে বারান্দায়। রোদে ঝলসে যাচ্ছে মার্বেলের মেঝে। আমি ভয়ে হাঁফাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে সাহস সঞ্চয় করে আবার ঘরে ঢুকলাম। কালো আলমারিটার দরজা তখনও খোলা। কিন্তু ভেতরে বাবার জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মা বাড়ি ফেরামাত্র বললাম সব। আমার মায়ের আর কি! অমনি পেয়ে গেল ভূতের গল্পের প্লট। কলম বাগিয়ে লিখতে বসে গেল। “প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেছে, বাড়িটার দোতলায় আর কেউ থাকে না। গোল্লু বিদেশে। সে পড়াশোনা শেষ করে এখন গবেষণায় ব্যস্ত। বাবা-মা চলে গেছেন। গোল্লু প্রাণে ধরে বাড়িটা বিক্রি করতে পারেনি। একতলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। পাড়ার অনেকেই বলেছেন, দোতলার শোবার ঘরে মাঝেমাঝেই হাসির শব্দ পাওয়া যায়। কে যেন হেসে হেসে কথা বলছে। ওপরতলায় আমি তো এত বছর ধরে একা একাই আছি। অদ্ভূত ব্যাপার! একটু হাসতেও পারব না? আমি কিন্তু অলৌকিক কিছুই দেখিনি।”

সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন পর্ব- ৭

গৌতম বাড়ই


এলাকার বিডিও সাহেব এলেন জিপগাড়ি নিয়ে

বেলা একটু গড়াতেই বাড়ির সেই ভিড় অনেকটাই হালকা হয়ে এলো। তবে আবার জিপগাড়ি নিয়ে বিডিও ছিরিং লেপচা আসতেই বেশ কিছু কৌতূহলী মুখের জটলা বেড়ে গেল। ছিরিং লেপচা বেশ কিছুক্ষণ পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলেন। ঘাড় কাত করে এদিক ওদিক তাকালেন। মুখে একটা হালকা হাসি এনে বাবাকে বললেন- ভালোই তো লাগছে দেখে। পেপারের কোয়ালিটি আর প্রিন্টিং- ও খুব উন্নত মানের। তবে কী সব চক্কর বক্কর ছবি দিয়েছে এ আমার খোপরীর দিমাকে গেলই না বিনয়বাবু।

বাবা সামনের চেয়ারে উঠে দাঁড়িয়ে বিডিও-কে বসতে বললেন। ছিরিং লেপচা বসলেন। বাবার সাথে মুখোমুখি বসে কথা বলছিলেন। এতদিন পরে আজ বুঝতে পারলাম আমার বাবা লোকটি বেশ মান্যগণ্য এবং অনেকেই চেনেন। এ সব দেখে ভালই লাগছিল। একটু বাদে মা চা করে একটা বড় টুল এনে রেখে গেলেন। বিডিও ছিরিং লেপচা বলছিলেন- কী দোরকার। কী দোরকার। 

বাবা বললেন- বিডিও সাহেব নিন চা খান। 

 বিডিও সাহেব লোকটি বেশ রসিক, বেশ মজা করে বললেন- এ আপনারা বাঙালীরা সোব কিছু খেয়ে নেন। তো আমিও চা খাইতেছি। শুরু করলাম। আপনি? বলে বাবাকে চায়ের কাপ দেখিয়ে ইশারা করলেন। 

বাবা বললেন- সকাল থেকে চারবার হয়েছে, আর নয়। 

তারপর বললেন- বিনয়বাবু আপনি ডরাবেন না। আমি ওসির সাথে কথা বলে নেব পুলিশের লোক সাদা- পোষাকে এবার গ্রামে খেয়াল রাখবে। এইসব কান্ডগুলো কারা ঘটাচ্ছে। তবে মজার কান্ড কী জানেন, আমিও বিনয়বাবু বিশ্বাস করি ঐ ভিনগ্রহের লোকেরা আছে এবং আলবাৎ আছে। আমাদের ডুয়ার্সের এই মনোরম নির্জন প্রকৃতি তাদের ভালো লাগতেই পারে!

আরও কিছুক্ষণ কথা হল, গল্প হল। বাবা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন বিডিও সাহেব-কে। বিডিও লেপচা সৌজন্য বিনিময় করে চলে যেতেই বাড়ির কাছারির উঠোন প্রায় জনশূন্য হয়ে এল। আমরাও সকাল থেকে এইসব হৈ- চৈ শেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। দিদি বলল- বাঁচা গেল। মা আমাদের তাড়া দিতে লাগলেন এই বলে- দুপুর একটা বাজে, তোরা সবাই চানটান করে খাওয়া- দাওয়া সেরে নে। বাবা গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে ঐ পোস্টারগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন - মা যা বলছে তোরা শোন। চান করে নে এক-এক করে।

আমরা বাড়ির ভেতর দিকে গেলাম। আমি বাড়ির এক কোণে মাদার গাছের তলার  দিকে তাকিয়ে দেখলাম  ভ্যারেন্ডার ঝাড়ে আর চমকে উঠলাম, আরে একী এক বামুনজীব তো চুপটি করে ওখানে দাঁড়িয়ে  তাকিয়ে আছে আমাদের বাড়ির দিকে। দিদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- হাঁ রে অমন করে ঐ দিকে তাকিয়ে কী দেখছিস? আমি বললাম- তুই কিছু দেখতে পারছিস ওদিকে ঐ মাদার গাছের তলায়?

দিদি বললে- কই না তো! কেন?

আমার কানে কেউ ফিসফিসিয়ে বলল-- বুদ্ধদেব ওরা কেউ-ই আমাদের কাউকে দেখতে পাবে না। একমাত্র তুমি ছাড়া। আমরা তোমাকে ঐ অদৃশ্যকে  দেখতে পাওয়ার দৃষ্টি দিয়েছি। সুশান্তকেও ঐ ক্ষমতা দেইনি আমরা সব দেখে বিচার করে। একমাত্র একজনকেই। সে তুমি বুদ্ধদেব।

দিদিকে বললাম-- জানিস দিদি এই এলিয়েনদের নিয়ে আমরা সবাই খাপছাড়া অল্প-স্বল্প একটু জানি। খুব বেশি কেউ- ই জানিনা। বেশিরভাগ মনগড়া গল্প। এই ধর চেহারা, ওদের যে লিকলিকে চেহারায় বড় কান শুধু থাকবে তার কী মানে আছে? ভিনগ্রহীরা তো শুধুমাত্র একটি মাত্র গ্রহ থেকেই আসে না। আবার সেই গ্রহ আমাদের সৌরজগতের অনেক বাইরে। যার কোন শেষ নেই। অসীম সেই জগত। আমি শুধু ভিনগ্রহীদের সেই উড়ন্ত চাকি নামবার রাতে নয়, মাঝে-মাঝেই আকাশ একদম পরিষ্কার থাকলে রাতের আকাশে তাকিয়ে থাকতাম আর কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম। সীমাহীন ঐ জগতের কথা ভাবলে নিজেকে এই ছোটো এট্টুকখানি মনে হয়। 

দিদি বলল- তোকে নিয়ে তো আমি দেখছি ভীষণ বিপদে পড়লাম। দেখ এইভাবেই মানুষ কিন্তু পাগল হয়ে ওঠে। তোকে এবার থেকে আমি রাতে মাঝে-মাঝে উঠে গিয়ে দেখে আসব। তবে মা-বাবাকে এখুনি বলছি না বুদ্ধু। তুই রাত জাগবি না বলে দিচ্ছি।

একটু রোদ পড়তেই গ্রামের সেই ফ্রী- প্রাইমারি স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতে গেলাম। বানজারাদের দল তখন বিকেলের বৈঠকে মজে আছেন। সারাদিন ওদের পুরুষ আর বয়সী মহিলারা এদিকে ওদিকে মালপত্তর নিয়ে  ফেরী করতে যান। বিকেলে ফিরে এসে চা খাবারদাবার নিয়ে অল্পবয়সী শিশু, কিশোর- কিশোরীদের গোল-গোল বৈঠক। মহিলা পুরুষেরা গল্পে মেতে আছেন, আমরা স্কুলের মাঠে খেলছি। আজ খেলার থেকেও আমাদের তিনবন্ধুর ঐ ভিনগ্রহীদের নিয়ে বেশি গল্পকথা হল। সুশান্ত আমাকে বলল- আজ তোদের বাড়িতে এলিয়েনরা পোস্টার মেরেছে জানি। তবে বাবার সাথে জটেশ্বর হাটে গোরু কিনতে গিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে এই ঘন্টাখানেক আগে এলাম। এসেই খেয়ে মাঠে, যতটা না আজ খেলতে তারচেয়ে বেশি তোর সাথে কথা বলতে। 

অনুপ বললে- আমি চুপিচুপি দেখে এসেছি ভিড়ের মধ্যে। বিনয়বাবু স্যার আছেন বলে ভয়ে তোর সাথে দেখা করতে পারিনি।

আমরা আজ অল্প একটু খেলে মাঠের ধারে বসে গল্প করছিলাম । খেলার মাঠ থেকে প্রায় পঞ্চাশ ষাট মিটার দূরে দু- চারটি কাঁঠাল গাছের তলায় ফাঁকা জমিতে বানজারাদের ছোটো- ছোটো নোংরা তাঁবু। ওখান থেকে দেখলাম ঐ লম্বা করে বানজারাটি, যার কানে দুল, রঙীন পাগড়ি তাড়াতাড়ি হেঁটে আমাদের কাছে চলে এল আর আমার দিকে হাত নাড়িয়ে বললেন-- এ খোকাবাবু তোমাকে আর সুশান্তকে ঐ তিন বাঁটুল ডাকতেছে।

অনুপ ভয় পেয়ে গোল্লা- গোল্লা চোখ করে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। সুশান্তকে দেখে মনে হল ও দৌড়ে এখুনি পালাবে। আমি বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বললাম- চল দেখি কী বলে? 

বাদবাকি বন্ধুরা কেউ একটু দূরে চলে গেল আর কেউবা ভয়ে দৌড় লাগালো। অনুপ আমতা আমতা করতে শুরু করল। 

বলল- তোরা দুজন যা।

আমি বললাম- তোর ভয় করছে? চল কিছু হবে না। আমি তো যাচ্ছি।

সুশান্ত বলল- যাবি? বুদ্ধ তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। এত সাহস পেলি কোথা থেকে? চল তাহলে।

আমি আগে, পেছনে সুশান্ত, আর একটু তফাত রেখেই আরও পেছনে অনুপ।লম্বু বানজারাটি আমাদের উঠতে দেখে বড়-বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল- ওহি উধারে ডাঁয়া তরফ পরথম তাম্বু। আমি বললাম- চিনি।

তাঁবুর সামনে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো--- বুদ্ধদেব, সুশান্ত ভেতরে এসো। আর যে ছেলেটি ভিতুর ডিম আছে, তাকে আসতে হবে না। 

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম তাঁবুর ভেতর থেকে গলার আওয়াজ পেয়ে অনুপ দৌড় লাগিয়ে পালাচ্ছে। আমি আর সুশান্ত ভেতরে একটু কিন্তু- কিন্তু করে ঢুকলাম। দেখি ঐ বাটিভর্তি কী নিয়ে চিবোচ্ছে যেন। এক বাঁটুল আমাদের দিকে বাটি এগিয়ে দিয়ে বলল- তোমরাও খেতে পার। আমি হাঁ বা না কিছুই না বলে তাঁবুর ভেতরের ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, এখনও বাইরে যথেষ্ট সূর্যের আলো রয়েছে। বললাম- ডাকলেন কেন? 

একজন বামন আমায় বললে- তোমার মনে কি এখনও সংশয় আছে? তোমাদের কি আমরা পয়জন বা বিষের বাটি এগিয়ে দিচ্ছি। দ্বিধা থাকলে খাবে না। বিশ্বাস করতে শেখো। ঐ বিশ্বাস সবচেয়ে বড় জিনিস। 

দেখি সুশান্ত ওদের গম্ভীর কথা শুনে আমার বাঁ-হাতটি ওর ডান হাতের মুঠো দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরেছে। আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে এখুনি সুশান্ত না ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠে! আমি হাত বাড়িয়ে বললাম- দিন বাটি খেয়ে দেখি।

আমার হাতে বামনটি খাবারের বাটিটি এগিয়ে দিল। দেখি সুশান্ত শক্ত করে চোয়াল চেপে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। যাতে ওকে জোর করে কেউ খাওয়াতে না পারে । 

এরপরে---- আগামী পর্বে। ছোট্টো বন্ধুরা তোমাদের কেমন লাগছে? জানাও জ্বলদর্চিতে তোমাদের ছোটোবেলাতে। এরপরে এলিয়েনদের নিয়ে জানাব ফেলে আসা দিনের  আরও অনেক রহস্যময় ঘটনা!



জানো কি ! 

আজকের বিষয় :  নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু


১. নেতাজি কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

২. সুভাষ বসুর পিতার নাম কি ছিল ?

৩. তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করো?

৪. এই বিখ্যাত দেশনায়ক এর উপাধি কি ছিল?

৫. ইনি কত বার জাতীয় কংগ্রেস এর সভাপতি নির্বাচিত হন?

৬. সভাপতি থাকার সময় এক বিখ্যাত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীর সাথে মতবিরোধ ঘটে। বলো তো  ইনি কে ছিলেন?

৭. নেতাজির জীবন সঙ্গিনীর নাম কি ছিল?

৮. নেতাজি ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করেন কোন সালে?

৯. ফরোয়ার্ড ব্লক এর সদর দপ্তর কোথায় ছিল?

১০. ২০২১ সালে ২৩ তারিখ জানুয়ারিতে কত তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো?

--------------------------

গত সপ্তাহের উত্তর

১.সুকান্ত ভট্টাচার্য  ২.ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়  ৩.মতি নন্দী ৪.বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়  ৫.সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়  ৬.সত্যজিৎ রায় ৭.নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ৮.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  ৯.সত্যজিৎ রায় ১০.শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. How to participate pls mention...
    Interesting news paper for kids

    ReplyDelete