জ্বলদর্চি

পাসওয়ার্ড – অন্তহীন ডেটার স্রোতে ভেসে চলা বিপন্ন বিশ্বনাগরিক/ রাকেশ সিংহ দেব

পাসওয়ার্ড – অন্তহীন ডেটার স্রোতে ভেসে চলা বিপন্ন বিশ্বনাগরিক
 রাকেশ সিংহ দেব 

অভিনয় : দেব, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রুক্মিণী মৈত্র
পরিচালক : কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
মুক্তি – ২ অক্টোবর ২০১৯
রেটিং 3/5


খবর কাগজের পাতা খুললেই আজ নজরে পড়ে অনলাইন কেনাকাটা বা প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে টাকা। নিষিদ্ধ সাইটে ফাঁস হচ্ছে ব্যক্তিগত মুহূর্ত। সাইবার ক্রাইম শব্দটার সঙ্গে আমরা বর্তমানে খুবই পরিচিত। আজকের এই সময়ে আমরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অনলাইন। ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় এক ডিজিটাল যুগের বাসিন্দা। আমাদের কাজ, বিনোদন, অবসর, বিনিয়োগ সমস্ত জায়গা জুড়েই আজ অদৃশ্য ডেটার স্রোত। এই স্রোতে ভেসে চলেছে আমাদের জীবন। আমাদের জীবনের সব তথ্য চুপিসারে আমাদের অজান্তেই সংরক্ষিত হচ্ছে এই ডেটার মহাসাগরে। 

  কিন্তু সাধারণ মানুষ কি কোনওভাবে এই ক্রাইমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে? ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। যেখানে আন্তর্জাতিক সাইবার টেররিজম গ্যাং–এর নাম অনিয়ন ব্রাউজার। যার মাথা ইসমালভ (পরমব্রত) আর তার স্ত্রী মারিয়ম (পাওলি)। ভারতের একটা পুরনো ঐতিহাসিক দুর্ঘটনার সঙ্গে এরা জড়িত। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ভারতের ক্ষতি নয়, অন্য কিছু। এই কাহিনিকে রূপদান করতে রয়েছে রোহিত দাশগুপ্ত (দেব) নামে একজন পুলিশ অফিসার। যে আইন রক্ষার জন্য যেকোন পদক্ষেপ নিতে অকুতোভয়। দেশের সুরক্ষার জন্য ঘটনাচক্রে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া মানুষদের সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে আনতে এথিক্যাল হ্যাকারদের দিয়ে অ্যান্টি সাইবার সেল তৈরি করতেও পিছপা হয় না। এথিক্যাল হ্যাকার টিমের অন্যতম সদস্য নিশা (রুক্মিণী)। বিশেষ করে বলতেই হয় রুক্মিণীর কথা। পুলিশের টর্চারের সময় তার কষ্ট, প্রেমিকের প্রতারণা থেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পাব-এ নাচ সবেতেই বলিউড অভিনেত্রীদের সঙ্গে তুলনায় আসতে পারেন তিনি। বাংলা ফিল্মের নায়িকারা আর সেট প্রপার্টিজের মতো শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা ফ্রেম কম্পোজিশনের অঙ্গ হয়ে থেকে যেতে রাজি নন। তার ফিটনেস, বডি ব্যালান্স, তার অভিনয়ের নানান মুড ফিল্মের স্মার্টনেসের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে। দেব স্বভাবসিদ্ধ হিরোইজমের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন পরিণত অভিনয় প্রতিভা। 

  পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রোহিত দাশগুপ্তকে তাই মুগ্ধ হয়ে দেখতেই হয়। পরমব্রত (ইসমাইলভ) এবং পাওলি (মরিয়ম) তাদের যে কোনও ফিল্মের মতোই এই ফিল্মেও অতুলনীয়। এমন ধরনের কাহিনি নিয়ে এর আগে বাংলা ছবিতে কাজ হয়নি। সামাজিক দিক থেকে এই ছবি যথেষ্ঠ প্রাসঙ্গিক। মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার গল্প বলে। বাংলায় এই ধরনের ছবির প্রয়োজন রয়েছে। ছবির স্টাইলিং দারুণ। নায়ক দেব যত নম্বর পাবেন, তার থেকে এক নম্বর হলেও বেশি পাবেন প্রযোজক দেব এমন একটা ছবি তৈরি করার জন্য। তবে সব ভালোর মধ্যেও খুঁত রয়ে গেল ছবির শেষ দিকে। বিশেষ করে একটি দৃশ্যের অসঙ্গতি চোখে পড়ার মতো, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের চোখ কী ভাবে তা এড়িয়ে গেল সেটা অবাকই করবে। আসলে নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে এক অতি আধুনিক সময়ের চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হয়ত পরিচালক সবসময় নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেননি। সম্প্রতি মুভিটির ডিজিটাল এবং টেলিভিশন প্রিমিয়ার হয়ে গিয়েছে। সময় বের করে দেখে ফেলতেই পারেন অভিনেতা প্রযোজক দেবের এই ভিন্ন ধারার ছবিটি। 

রেটিং 
5 অসাধারণ 
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন 
1 না দেখলেও চলবে

পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments