২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা
গুচ্ছ কবিতা
শ্যামল জানা
আলো
তুমি সেই দেমাকী শীতকাল...
তোমার নিজস্ব একটি চাঁদ আছে৷ কমলা রঙের!
তুমি ভোরের প্রথম পাতা ওল্টালে,
আশি শতাংশ কুয়াশা তোমার কথা শোনে৷
দয়া করে একটা-দুটো মেঘের বকলস তুমি খুলে রেখেছ...
অথচ, যতবার তুমি শূন্যে বৃষ্টি লেখো, ততবারই
বানান ভুল হয়ে যায়! তখন তোমার একটু রাগ হয়!
আর, জোরে হিমশীতল একটি ফুঁ দাও...! সাথে সাথে
উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটতে থাকে কনকনে হাওয়া...
এত কিছুর পরেও, আমি তোমাকে ঘৃণা করি শীতকাল!
কেন না, ফুটপাথের ওই ন্যাংটো শিশুটির জন্যে এখনও, একটাও
রোদ্দুরে বোনা সোয়েটার তুমি বানাতে পারোনি!
শারদীয়া
সবে উঁকি দিয়েছে দুটি স্তন৷ কিশোরীর৷
তখনো শেখেনি আগলে রাখার কৌশল!
তাই, নীচু হয়ে শিউলী কুড়োতে গেছে যেই,
অজান্তে, তার স্তন থেকে খুলে পড়েছে
চাকতি সমেত দুটি বৃন্ত... ...
আমি খয়েরি রঙের বিরল দুটি শিউলী ভেবে
কুড়িয়ে নিয়ে চোখের ড্রয়ারে রেখে দিই৷
সেই থেকে আজও,
যখনই কোনো আগোছালো কিশোরীকে দেখি—
তার স্তনের থেকে দু-পৃষ্ঠার গন্ধ পাই৷
এ পিঠে শিউলী ফুলের, আর, উল্টোপিঠে পুজোর গন্ধ!
আঃ
সেই বিশেষ দিনে—
“আ” স্বরবর্ণটিকে জোর করে হাঁ করিয়ে
তার মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম
“আঃ” সমেত আমার ডান হাতের শক্ত মুঠো...
গলগল করে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এসেছিল
আকন্দ আঠার মতো ঘন তরল জ্যোৎস্না...
আমি সেই সব জ্যোৎস্না কাচের বাটিতে
সংগ্রহ করে, ডীপ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম!
জ্যোৎস্নার আইসক্রীম হয় কিনা দেখার জন্যে...
সেই থেকে “আঃ” এই স্বরব্যঞ্জন বর্ণটিকে
সদ্য বিবাহিত মেয়েদের শ্রেষ্ঠ অলংকার বলা হয়...
বৃষ্টি
(ওল্ড টেস্টামেন্ট// নোয়ার নৌকো মনে রেখে৷)
সেই ঢাউশ নৌকো থেকে
চটি খুলে নেমে আসছে যে বাতাস,
আমি জানি সে আজ নখ্ কাটেনি!
তার গা থেকে অবিবাহিত জ্যোৎস্নার গন্ধ বেরোচ্ছে...
তবু তাকে আমি গায়ে না মেখে পাশ কাটিয়ে যাই৷
এত চতুর যে, সে আবার ফিরে আসে...
তুমি তখন সেই নৌকোকে মাখা ময়দার মতো টেনে লম্বা করছ!
তোমার হাতে লেগে যাচ্ছে শায়িত দিগন্তরেখা...
বাতাসটা ওই নৌকো থেকেই তো নেমে এসেছিল?
কিন্তু, ওখানে সে আর ফিরে যেতে পারবে কি?
নৌকাটিকে এখন ঈশ্বরের মাথার ফিতের মতো সরু লাগছিল!
তুমি একবারও রাবার বা পেন্সিল ব্যবহার না করে, তাকে
সযত্নে দিগন্তরেখার সঙ্গে মিশিয়ে দিলে...
তারপর সেই বাতাসটাকে ধরে, তার নখ্ কেটে দিলে,
চটি খুঁজে দিলে৷ বললে বেশ লাগছে...
এবার যাও, বৃষ্টি খুঁজে এনে সমুদ্রের ওপর রেখে এসো৷
তোমার গা থেকে তখনও অনন্ত জ্যোৎস্নার গন্ধ বেরোচ্ছিল৷
আমার দিকে সর্বস্ব চোখে তাকিয়ে বললে—
চলো, এবার ঘর বাঁধি৷ বৃষ্টি এল বলে...
ষাটতম জন্মদিনে
উড়তে গিয়ে বুঝতে পারছি—
মাঝে মাঝে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে একটি ডানা৷ বিষণ্ণতার!
অন্য ডানাটি তখনও আনন্দমুখর৷ লাল-নীল ছিটে...
এই দুটি ডানার ঠিক মাঝখান দিয়ে
তুমি গড়িয়ে দিচ্ছো আমার বাল্যকাল... ...
খুব সুখী এখানকার বিগলিত বাতাস!
অথচ যত বড় হচ্ছি, টের পাচ্ছি—
গোপনে, দু-একটা বাতাস হাতে নিয়ে
একটা একটা করে ক্রমশ ফিরেূ যাচ্ছে নিঝুম আলো...
আজ এই ছিঁড়ে ফেলা অবকাশ, মেঝেতে পেতে
তার ওই বিস্তৃত, মাড় দেওয়া অন্ধকারে ইস্ত্রি চালাচ্ছে
আমার গলা থেকে বেরিয়ে আসা একটা চকচকে হুপিন কাশি!
আর, ওই সমতল অন্ধকার ফুটো করে, প্রতি বছর
ট্রাপিজে নেমে আসে আমার এই জুতোপরা জন্মদিন
টাল খায়, একবারও পড়ে না... ...
আরও পড়ুন
গুচ্ছ কবিতা/ শ্যামলকান্তি দাশ
1 Comments
Bhari sundor lekha. Sharodiya anobodyo laglo
ReplyDelete