জ্বলদর্চি

অগ্নিগর্ভ একুশে ফেব্রুয়ারি/মুক্তি দাশ

অগ্নিগর্ভ একুশে ফেব্রুয়ারি

মুক্তি দাশ

আজ ভাষাদিবস। আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস। এ নিয়ে কিছু বলার আগে আপনাদের নিয়ে যাব সেই চিরকালের জন্যে অন্তরে গেঁথে থাকার মতো একটি দৃশ্যে। দৃশ্যটি এক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের। কোন চলচ্চিত্রের, কোন পরিচালকের, কারা চরিত্রে রূপদান করেছিলেন – এসব কিছুই বলে দেবার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু দৃশ্যের মধ্যে একটু ঘুরে এলেই ঝটিতি সব জলের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে।।

 তাহলে চলুন দৃশ্যটি দেখে নিই -

  রেলের কামরা। ট্রেন চলছে। আপাতত তিনজন যাত্রী। এবার সংলাপ শুনুন :

: তো আপ কাঁহাতক যা রহে হ্যায়?
: যোধপুর।
: ম্যয় ভি যোধপুর যা রহা হুঁ। রাজস্থান কা পটভূমিকামে এক কাহানি লিখনা চাহতা হুঁ। রহস্য-রোমাঞ্চ কাহানি। আবতক সাত্তাইশ কাহানি লিকখি হ্যায়। অল পাবলিশড। ইয়ে হ্যায় মেরা সাম্প্রতিকতম্‌ উপন্যিয়াস। দুর্ধর্ষ দুশমন। আপ ক্যায়া বাংলা পঢ়নে জানতে হো?
: হাঁ। বোলনা ভি জানতা হুঁ।
: তো কাঁহা শিখে?
: কলকাত্তা। আপনি হিন্দি চালিয়ে যেতে পারেন। বেশ লাগছে।
: আরে দূরররররর মশাই! আমি গড়পারের লোক। হিন্দি কি কেউ সাধে বলে নাকি?

  তাহলেই বুঝুন, বাংলাভাষার কী মহিমা! অচেনা মানুষও কেমন নিমেষে আপন হয়ে যায়!

  আজকের দিনটি একটি অগ্নিগর্ভ দিন! একটি রক্তস্নাত দিন! একটি সূর্যমুখী দিন! – এরকম বেশ কয়েকটি যুৎসই বিশেষণ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শব্দদু’টির আগে-পরে বসিয়ে গেলেও বুঝি এর অম্লান মহিমা সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করা যাবে না। একুশে ফেব্রুয়ারি তো আর ক্যালেন্ডারে মুদ্রিত নিছক একটি তারিখই নয়। একটি জাতির জীবনে তথা কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় স্ব স্ব মাতৃভাষার স্থানকে অবিচলিত রাখার, তার মর্যাদা ও অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখার রক্তাক্ত আলেখ্য একুশে ফেব্রুয়ারি। পঞ্চাশ দশকের সূচনায় ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত মর্মন্তুদ ঘটনাবলীর ভৌগলিক-ক্ষেত্র যদিও তৎকালীন পূর্ববঙ্গ, তবু এই প্রতীকী আন্দোলনের সার্বিক আবেদন তার রশ্মিটুকু ছড়িয়ে দিয়েছে আমাদের পশ্চিমবাংলা তথা আপামর বাঙালি-সমাজে। পশ্চিমবাংলার জনজীবনেও দলমতনির্বিশেষে তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সমান তাৎপর্যময়।

  দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে পর্যুদস্ত বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা ভারতবর্ষের মাটিতে প্রোথিত তাদের দু’শো বছরের শেকড়কে উৎপাটিত করে বিদায় নেবার সময় অখন্ড ভারতকে দু’টুকরো করে পরিণত করেছিল দু’টি ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রে – ভারতবর্ষ ও পাকিস্তান। এবং এটাই ছিল ভারতবাসীর উপর বৃটিশ শাসককুলের চরম ও শেষতম আঘাত। কফিনে ঠোকা শেষ পেরেক।

  ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানকে পরস্পরের জন্মশত্রু রূপে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্বের অনাকাঙ্ক্ষিত বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওদের ওপর। এতকাল যে-সমস্ত হিন্দু ও মুসলমান একই পরিবেশে, একই জলহাওয়ায় একান্ত নিকটজনের মতো, পরম আত্মীয়ের মতো পরস্পরের সুখ-দুঃখে, আনন্দ-বিষাদে, জয়-পরাজয়ে সমান অংশীদার হয়ে পাশাপাশি বসবাস করে আসছিল, তারাই আবার কোন্‌ দুষ্টচক্রের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে মেতে উঠল পারস্পরিক দাঙ্গায়!

  পাকিস্তানের অন্তর্গত করে পূর্ববাংলা বা পূর্ববঙ্গকে করা হয়েছিল পূর্বপাকিস্তান। সেই পূর্বপাকিস্তানের বাংলাভাষী মুসলমানদের চোখে রঙিন স্বপ্নের ঘোর লাগিয়ে বোঝানো হয়েছিল, সমগ্র মুসলিমজাতির জন্যে গড়ে তোলা হবে এক স্বাধীন বাসভূমি। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নসৌধ অচিরেই ধূলিসাৎ হল।

  ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার পল্টন ময়দানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের আকস্মিক উদ্ধত ঘোষণায় স্তম্ভিত হয়ে যান পূর্বপাকিস্তানের জনগণ – “Urdu and Urdu alone shall be the State language of Pakistan.”

  উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তার অর্থ, পশ্চিমপাকিস্তানের মতো পূর্বপাকিস্তানেরও শিক্ষাদীক্ষা, সরকারি কাজকর্ম – সবই হবে উর্দুতে! তার অর্থ, পূর্বপাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলার কোনোরকম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকবে না! তার অর্থ, মক্তব-পাঠশালায় দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরও বাংলার বদলে রপ্ত করতে হবে উর্দুভাষা! এর নাম নাকি স্বাধীনতা? মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত একটি জাতিকে কি আক্ষরিক অর্থে স্বাধীন বলা যায়?

  নিদারুণ ক্ষোভে ও আশাভঙ্গের বেদনায় পূর্বপাকিস্তানের জনগণ, বিশেষত ছাত্রসমাজ, একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তাদের রক্তে এবং শিরায়, চেতনায় এবং বোধে, ততদিনে এই উপলদ্ধিটুকু জন্মেছে যে, মাতৃভাষার স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। সুতরাং খুব সঙ্গত কারণেই তারা পশ্চিমপাকিস্তানের এহেন যুক্তিহীন আরোপিত প্রাধান্য বরদাস্ত করতে পারল না। উল্টে পশ্চিমপাকিস্তানের ঔপনিবেশিক মনোভাবটাই বরং তাদের কাছে নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ল।
  মাতৃভাষার সম্পর্ক দেশ ও কালের সংগে। ধর্মের সংগে কখনোই নয়। সুতরাং ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন জাতি বা রাষ্ট্রের গঠন হয়তো সম্ভব। তাই বলে ধর্মের নামে মাতৃভাষাকে ত্যাগ করে অন্য একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা বা তাকে মেনে নেওয়া কোনও দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব? পূর্বপাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) বাংলাভাষী মানুষদের পক্ষেও স্বভাবতই তা সম্ভব হয়নি। ভাষাকে ধর্মভিত্তিক করার পরিণামও বড় মারাত্মক। কেন না, তা মানসিক বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দেয়। যা কোনো দেশের পক্ষেই কাম্য নয়। তাছাড়া প্রাচীনভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে এবং তা পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে, এই ভাষা কোনো একটি বিশেষ ধর্ম বা জাতির নিজস্ব সম্পদ নয়। অতএব পস্চিমপাকিস্তানের ভাগ্যবিধাতারা যদি ভেবে বসে থাকেন যে, উর্দুভাষা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং যখন ইচ্ছে, যেমন ইচ্ছে যে-কোনো দেশের ওপর সেই ভাষা আরোপ করা যেতে পারে, তাহলে তার মতো ভ্রান্ত ধারণা আর কিছু নেই। প্রমাণস্বরূপ, কৃষণচন্দর, প্রেমচন্দ্র, প্রকাশ পন্ডিত, রাজেন্দ্র সিং বেদী, অমৃতা প্রীতম প্রমুখ দিকপাল সাহিত্যিকরা হিন্দু হয়েও উর্দুভাষাতেই বহু কালজয়ী সাহিত্য রচনা করে গেছেন। কিন্তু একটি বিশেষ ভাষায় সাহিত্যচর্চা করা, আর তাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া – দুটো এক কথা নয়।

  তাছাড়া উর্দু তো কোনোকালেই জনভাষা ছিল না। কারণ উর্দুর কোনো লোকসাহিত্য নেই। শহুরে ও কথ্যভাষা হিসেবে উর্দু অনেককাল যাবৎ ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। উর্দুর চেয়ে বরং মৈথিলী, ভোজপুরী, অঙ্গিকা, নাগপুরী ভাষাগুলি বেশি বিকশিত। উর্দুভাষার উৎপত্তি প্রসঙ্গে অজিত রায় তাঁর “উর্দুর ইতিহাস” শীর্ষক প্রবন্ধে জানিয়েছেন – 

  “ভারতবর্ষে উর্দুর জন্ম হয় লোকের মুখে মুখে। পরে একে ফার্সী লিপি (বিদেশী) দেওয়া হয়। পাঠান, তুর্কী, বেলুচী, আরবি, ইরানী, পখতুনী, মংগোল প্রভৃতি সৈনিকদের নিয়ে মোগল সামরিক বাহিনী গঠিত হয়ে্ছিল। এই বাহিনীর বেশিরভাগ ছাউনি পড়ত দিল্লি, মেরেঠ, বেরেলী, সাহারাণপুর প্রভৃতি এলাকায়। এসব অঞ্চলের কথ্য ভাষা ছিল ‘খড়ী’। অবসর বিনোদনের জন্যে সৈনিকরা যখন পথে-ঘাটে বেড়াতে বেরোতো, তখন তারা ‘খড়ী’ বুলি বলার চেষ্টায় তুর্কী, বেলুচী ইত্যাদি শব্দযোগে একটি নতুন ধরণের ভাষা তৈরি করে নিয়েছিল। তুর্কীভাষায় বাজারকে বলা হয় ‘উর্দু’। পরবর্তীকালে ঐ উর্দুর (অর্থাৎ বাজার) প্রচলিত ভাষাকেই ‘উর্দু’ আখ্যা দেওয়া হয়। যতদিন ‘খড়ী’ ভাষায় হিন্দী আর সংস্কৃত শব্দের প্রাধান্য ছিল ততদিন এই ভাষাকে হিন্দী, হিঁদরী বা রেখতা বলা হত। কিন্তু এই ভাষার ওপর আরবী আর ফারসীর প্রভাব পড়তেই এটা বদলে গিয়ে ‘উর্দু’ হয়ে যায়। তখন থেকেই উর্দু একটা আলাদা ভাষা হিসেবে চিহ্নিত।”

  সে যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সেই দম্ভপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘোষণার জবাবে উর্দুর বদলে বাংলা ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেবার দাবীতে তাৎক্ষণিক তৎপরতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হল “বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি”। আর সেই সংগে রাজনৈতিক স্তরে গঠিত হল “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ”। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলার বাঙালিসমাজের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পত্রপুষ্পে বিকশিত হয়ে যেন এক নতুন মাত্রা পেল।

  ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (বাংলা ৮ই ফাল্গুন) সারা পূর্ববঙ্গে ঘোষিত হল ধর্মঘট। পাকিস্তানের শাসক-সম্প্রদায়ও ১৪৪ ধারা জারি করে এই ধর্মঘট ব্যর্থ করতে তৎপর হয়ে উঠল। কিন্তু পূর্বপাকিস্তানের জনগণ তখন মরিয়া, উত্তাল। ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোর হতে না হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একে একে জমায়েত হতে থাকল নির্ভীকচেতা ছাত্রের দল। এবং অসংখ্য বাংলাভাষাপ্রেমী সাধারণ মানুষ। দল ও মত নির্বিশেষে। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল এগিয়ে চলল বিধানসভা অভিমুখে। আকাশ-বাতাস মুখরিত মুহুর্মুহু স্লোগানে – “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই…”

  যথারীতি পথ অবরোধ করে দাঁড়াল হিংস্র পুলিশবাহিনী। চললো বেপরোয়া লাঠি। ছোঁড়া হতে লাগলো কাঁদানে গ্যাস। মিছিল চত্রভঙ্গ করতে সবরকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হলো। শুরু হলো অসম যুদ্ধের। এক গ্লানিময় কলঙ্কিত অধ্যায়। গ্রাপ্তার করে বেশ কিছু আন্দোলনকারীকে তোলা হলো ভ্যানে। তবু ছাত্র ও আমজনতার ভেতর থেকে ভেসে এলো নব উদ্দীপনায় ভরা নির্ভীক কন্ঠস্বর – “মনে রেখ, আজ যদি আমরা পিছিয়ে পড়ি, তবে আগামী দিনে একটি একটি জাতির মৃত্যু হবে। যে-ভাষা আমাদের হৃৎপিন্ডের সংগে জড়িয়ে আছে, সেই ভাষা যদি না বাঁচে, আমরাও বাঁচব না।” 

  এরপরের ঘটনা ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে এক অতীব করুণ মর্মান্তিক অধ্যায়। আত্মবলিদান পর্ব। পুলিশী বর্বরতার নজির সৃষ্টিকারী ঘটনাসমূহে আর একটি অন্যতম সংযোজন। পুলিশের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়ল আব্দুল জব্বার, রফিকউদ্দিন, আবুল বরকত, শফিউর রহমান, আবদুস সালাম প্রমুখ কয়েকটি তরতাজা প্রাণ। বেয়নেটের আঘাতে আহত ও নিহত হন শতাধিক মানুষ। ঢাকার রাজপথে রক্তনদীর ঢেউ! প্রথম বসন্তের নির্মল বাতাসে ধোঁয়া-বারুদের সোঁদা গন্ধ!

  মাতৃভাষার জন্যে এই মহান আত্ম-বলিদানকে কোনোভাবেই তাৎক্ষণিক ভাবোচ্ছ্বাস বা আবেগপ্রসূত বলা যাবে না। এ হলো বহুদিনের অবরুদ্ধ বেদনার অমোঘ বিস্ফোরণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী শহীদুল হক লিখেছেন –

  “ভাষা-আন্দোলনের প্রস্তুতি, বিকাশ, বিস্ফোরণ এবং তৎপরবর্তীকালে এ আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাবের কথা বিচার করলে একথা আর কোনোমতেই বলা যায় না যে, ক্ষণিকের ভাবোচ্ছ্বাস এই বিরাট আন্দোলন ঘটিয়েছিল। আন্দোলনটি কখনই আবেগ বা উচ্ছ্বাস থেকে জন্ম নেয়নি।”

  এখানেই শেষ নয়, মাতৃভাষাকে যথোপযুক্ত মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্যে বাংলাভাষাপ্রেমীদের আত্মাহুতিই শেষ কথা নয়। বরং এটাই শুরু। এর প্রায় দু’দশক পরে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারই সূচনাবিন্দু। কবি ভাষায় –

“একুশ আমার রক্তে বাজায় অস্থিরতার সুর,
বিপ্লব জানি মহামহীরুহ, একুশ তো অঙ্কুর!”

  ১৯৫২ সালে বাংলাভাষার অধিকার অর্জনের সংগ্রাম আপামর পূর্ববাংলার বংলাভাষী মানুষের স্বাধিকার চেতনাকে জাগ্রত করেছে এবং কালক্রমে তা সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের প্রয়োজনীয়তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আন্দোলনের দুর্বার গতিপথেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পাকিস্তানের অঙ্গ। ১৯৫২ সালে যে-শ্লোগান ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ১৯৭১ সালে সেই শ্লোগানই আবার ধ্বনিত হয়েছে, ‘বাংলাভাষার রাষ্ট্র চাই।’ 

  ভাষা-আন্দোলনের এই নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাস আর কেবল বাংলা-ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। ক্রমে এর ব্যাপ্তি প্রসারিত হয়েছে। প্রতিটি দেশের মানুষ ও সমাজকে মাতৃভাষার প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও সীমাহীন আনুগত্যে উজ্জীবিত করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারির আসল মহিমা এখানেই। এবং এই মহিমান্বিত ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করেই ইউনেস্কো (UNESCO) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করেছে। এটা অত্যন্ত সুখের কথা এইজন্যে যে, জাতীয় ঐক্যবোধকে সুদৃঢ় করতে মাতৃভাষার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি এক সবুজ সংকেত।

পেজ-এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments