জ্বলদর্চি

বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক-১৭/অসীম ভুঁইয়া

Bengali grammar and debate
বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক
পর্ব ১৭
অসীম ভুঁইয়া

বাংলা শব্দদ্বৈত 

বাংলা তথা অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ভাবের বিচিত্র প্রকাশ বা অর্থের ব্যঞ্জনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে শব্দ নির্মাণের অন্যতম এক বিশেষ প্রক্রিয়া শব্দদ্বৈত বা  শব্দদ্বিত্ব। নামকরণ দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, একই শব্দের দুবার প্রয়োগই বোধহয় শব্দদ্বিত্ব। বিষয়টি কিন্তু পুরোপুরি তা নয়। শব্দদ্বিত্বের ক্ষেত্রে দুটি শব্দ যে হুবহু একই হবে এমন কোনো কথা নেই। আসলে নামকরণটি একটু ব্যাপক অর্থেই গ্রহণ করা হয়েছে। 

   আমরা মূলত চার ধরনের শব্দের শব্দদ্বৈত লক্ষ্য করি। যদিও এদের উপবিভাগের সংখ্যাও কম নয়। যাইহোক, আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা এগোনো যাক।

১. "কাঁদো -কাঁদো" দুধের শিশু কখনো হাসে "খিলখিল",
"টলমল" ছোট্ট পায়ে, বাড়ছে শিশু "তিলতিল।"
২."রাতদিন" বসে আছি 
  মৃত্যুর "কাছাকাছি।" 

এই কাঁদো-কাঁদো, খিলখিল, টলমল, তিলতিল, রাতদিন, কাছাকাছি প্রভৃতি শব্দগুলির প্রতিটি দুবার করে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো সমার্থক শব্দ হিসেবে, কখনো বা ধ্বন্যাত্মক-অনুকারাত্মক , বিপরীতার্থক বা ব্যাতিহার  শব্দ হিসেবে। বাংলা ভাষার অনন্য সম্পদ এই  যুগ্মশব্দগুলি ভাব বা  অনুভূতিকে বিশিষ্টতা দান করে। অর্থের মাত্রাকেও ব্যাপকতা দেয়। ব্যঞ্জনা সৃষ্টিকারী এই বিচিত্র শব্দগুলিকেই শব্দদ্বৈত বলে। 

   অর্থাৎ, শব্দের বৈচিত্র্য ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তথা অনুভূতিকে বিশিষ্টতা দানের জন্য "ব্যাপক অর্থে" একই শব্দের দুবার (কখনো একাধিকবার) প্রয়োগকে শব্দদ্বৈত বলা হয়। একে শব্দদ্বিত্ব, শব্দজোড়, দ্বিরুক্তশব্দ প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রেও আমরা শব্দদ্বৈত বা শব্দদ্বিত্ব এ দুটি নামেরই পক্ষপাতী।
 
   শব্দের শ্রেণিভাগ:

   শব্দদ্বৈতের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণি নির্মাণ ভীষণই সমস্যার। বেশিরভাগ শ্রেণিবিভাজনগুলোই বিতর্কের অবকাশ রাখে। তা সত্ত্বেও সাধারণ পাঠকদের জন্য একটু অন্যধরনের শ্রেণি নির্মাণের চেষ্টা করা হল।

   প্রাথমিকভাবে শব্দেদ্বৈতের  তিনটি শ্রেণি: 
 ১. পদের শ্রেণি অনুযায়ী একই শব্দের শব্দদ্বিত্ব। ২.সমার্থক ও বিপরীত শব্দের শ্রেণি অনুযায়ী শব্দদ্বিত্ব ও
৩. ধ্বনি ও শব্দের অনুকরণ অনুযায়ী শব্দদ্বিত্ব।

১.পদের শ্রেণি অনুযায়ী একই শব্দের শব্দ দ্বিত্ব:
 ।i. বিশেষ্য পদ: ঘরেঘরে, মাঠেমাঠে, দলেদলে, ডালেডালে, মাথায় মাথায়, ঠান্ডা ঠান্ডা, গরম গরম, চোখে চোখে, গাড়ি গাড়ি, পায়ে পায়ে, প্রভৃতি।
বাক্য: ক: "ঘরে ঘরে" যত ভাই বোন আছে যারা /প্রতি ঘরে যেন পৌঁছতে পারে ভাত।"
 খ: "বেলা যায় 'মেঘে মেঘে' /তবুও উনুন জ্বলে না তোর।" গ: 'বউ বউ' করে লোকটা পাগল।
ঘ: 'মুখে মুখে' রটে গেছে সব কেচ্ছা। 
ঙ. তুমি চলো "ডালে ডালে" আমি পাতায় পাতায়।

 ii. বিশেষণ পদ : ভালো ভালো, কালো কালো, সাদা সাদা, সুন্দর সুন্দর, খারাপ খারাপ, লাল লাল, ভাঙ্গা ভাঙ্গা, ফোলা ফোলা, লম্বা লম্বা।
ক. "ভালো ভালো" কথা বলে বেশ ভুলিয়ে দিলে বলো।
খ. ওরে "ন্যাকা ন্যাকা" কথা একদমই সহ্য হয় না।
গ. "বড়লোকের বিটি লো 'লম্বা লম্বা' চুল।"
 iii.  ক্রিয়াপদ: অসমাপিকা ক্রিয়া: যেতে-যেতে, খেতে খেতে, বলতে বলতে, দেখতে দেখতে, লিখতে-লিখতে, ভাবতে ভাবতে, ডাকতে না ডাকতে, ঢুকতে না ঢুকতে, চাইতে না চাইতে।( এগুলো না সূচক।)
 বলে বলে, দেখে দেখে, শুনে শুনে, লিখে লিখে, হেসে হেসে। 
বাক্য: ক: "যেতে যেতে' পথে হল দেরি।"
খ: "দেখতে দেখতে" কতগুলো বছর কেটে গেল!
গ: "ডাকতে না ডাকতেই" সে এসে হাজির।
ঘ:"... দেখে আমি "হাসতে হাসতে কাশতে কাশতে"  মরি।" 

সমাপিকা ক্রিয়া: বলো বলো, দাও দাও, করো করো, চলো চলো, গাও গাও, শুনি শুনি, যাই যাই।
বাক্য: ক: "বলো বলো বলো সবে।"
 খ: "দেখি দেখি" কী এনেছ? গ: "শুনি শুনি", কী বলেছে?
 
  সর্বনাম পদ:  কে কে, কাকে কাকে, যাকে যাকে, যে যে, যার যার, কবে কবে, নিজে নিজে, তারা তারা, কোন কোন, সেই সেই।
 বাক্য: ক: "কে কে" আসবে আজ? 
খ: "যে যে" যাবে রেডি হয়ে নাও।
গ:  "কবে কবে" যেন ক্লাসের ডেট?
 ঘ:  "যার যার" জিনিস তার তার থাক।
 
  অনুসর্গ/ আবেগ শব্দ         (প্রথাগত অব্যয়):  পৃথক-পৃথক, যেমন যেমন, ভেতরে ভেতরে, আগে আগে, সঙ্গে সঙ্গে, দূরে দূরে, পাশে পাশে, সামনে সামনে, হায় হায়, ছিঃ ছিঃ, তেমন তেমন, 

   বাক্য : ক: "ভেতরে ভেতরে" তুমি তো সবই জানতে।
 খ: "ছিঃ ছিঃ" এভাবে বলতে পারলে?
গ:  "মাঝে মাঝে" আসে, একটু দেখা করেই চলে যায়।
ঘ:  "দূরে দূরে' গ্রাম জ্বলে ওঠে দীপ আঁধারেতে..." 

  ক্রিয়া-বিশেষণ: আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে, জোরে জোরে, ছুটে ছুটে, হেঁটে হেঁটে, ঘুরে ঘুরে, নেচে নেচে, 

   বাক্য: ক: "আস্তে আস্তে" বলো, কেউ হয়তো শুনে ফেলবে।
খ:  "ভালোয় ভালোয়"  কাজটি হয়ে গেল যাইহোক।
গ: " তুমি খুব "নেচে নেচে" পরীদের মাথা খাচ্ছ।"
ঘ:  শেষ পর্যন্ত কথাটি সে "ভয়ে ভয়েই" বলল।
 
উল্লেখ্য, অসমাপিকা ক্রিয়াও ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে প্রয়োগ হতে পারে।
 
  ব্যতিহার শব্দ: সমাসের ক্ষেত্রে ক্রিয়া বিনিময় বোঝায়। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে ক্রিয়া বিনিময়ের প্রশ্নই নেই। এগুলো মূলত বিশেষ্য বাচক শব্দ। 
যেমন: কানাকানি, মারামারি, কাটাকাটি, খুনোখুনি, গালাগালি, রাতারাতি।
বাক্য: ক: নিজেদের মধ্যে "মারামারি" করে কোনো লাভ আছে?
 খ: সুজয় ও কৌশিকের মধ্যে শেষ পর্যন্ত "হাতাহাতি"  হয়ে গেল।
গ:  "রাতারাতি" যে ও এমন চেঞ্জ হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।
ঘ: " করে "হানাহানি," তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার।"
ঙ: শিশুটির এত প্রতিভা "জানাজানি" হতেই, গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম উঠে গেল।

অর্থাৎ, পদের শ্রেণি অনুযায়ী একই শব্দ একাধিকবার ব্যবহৃত হলে, তাকে একই শব্দের শব্দদ্বিত্ব বলে।

সমার্থক ও বিপরীত শব্দের শ্রেণি অনুযায়ী শব্দদ্বিত্ব:
i. সমার্থক শব্দ:  দরদাম, ধন-দৌলত, পোশাক-পরিচ্ছদ রাজা-বাদশা, মাথামুণ্ডু, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মাঠ -ময়দান, কল কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য, পাহাড়-পর্বত, লজ্জা-শরম, ঠাকুর-দেবতা, বন-বাদাড়,  মন- মেজাজ।
 
প্রায় সমার্থক শব্দ: চালাকচতুর, গরিব-দুঃখী, কাগজ-কলম, ভাবগতিক, আদব-কায়দা, উল্টোপাল্টা, হাসি ঠাট্টা, ভেবেচিন্তে, বেঁচেবর্তে, খেয়ে দেয়ে। 
এই শব্দগুলো বিশেষ্য বা বিশেষণ হলেও, কিছু ক্রিয়ারও সমার্থক শব্দদ্বৈত হয়।
বাক্য:  ক. "কল-কারখানা" প্রায় সবই বন্ধ, কোথায় কাজ পাব?
খ:  তোমার "ভাবগতিক" দেখে কিন্তু আমার ঠিক ঠেকছে না।
গ:  যা বলবে "ভেবেচিন্তে" বলো।
ঘ: বুড়োটার একটু "উঁকি ঝুঁকি" মারা স্বভাব আছে।
ঙ: বাপমরা মেয়েটাকে তার সৎ মা "ঝি চাকরের" মতো রেখেছে।

   বিপরীত শব্দ:  ভালো-মন্দ, রাতদিন, আলো অন্ধকার, জন্ম-মৃত্যু, আকাশ-পাতাল, অল্পবিস্তর, হাসিকান্না, ভাঙ্গা গড়া, আকাশ পাতাল।
বাক্য: i: "সত্য মিথ্যা" জানি না, আমাকে যা বলেছে আমি তাই বললাম।
 ii: "জন্ম মৃত্যু' পায়ের ভৃত্য।" iii. "ফুরায় এ জীবনের সব 'লেনদেন।" 
iv: "আলো অন্ধকারে" যাই মাথার ভেতর এক বোধ কাজ করে।"
V:  মৃত্যুকে জেনেছি
"অল্পবিস্তর।"
 
অর্থাৎ, সমার্থক ও বিপরীত শব্দগুলি দুবার ব্যবহৃত হলে, তাকে সমার্থক- বিপরীত শব্দের শব্দ দ্বিত্ব বলে।

    ৩. ধ্বনি ও শব্দের  অনুকরণজাত শ্রেণি  অনুযায়ী শব্দদ্বিত্ব: 
i.  ধ্বন্যাত্মক শব্দ: ঝনঝন, ঝমঝম, ধকধক,  হিসহিস বজবজ, বনবন, টিকসি টিকসি, দপদপ, ধবধব, লকলক।  
বাক্য: ক: মাছিটা তখন থেকে কানের কাছে "ভনভন" করছে। 
খ: "ধবধবে" সাদা বক।
গ: "সাঁই সাঁই" করে তিরটি  ছুটে গেল।
ঘ:  "ক্ষুধায় -তৃষ্ণায়" মাথাটা তার বনবন করে ঘুরছে।

   অর্থাৎ, যুগ্ম ধ্বন্যাত্মক শব্দ বা একক ধ্বন্যাত্মক শব্দ দুবার  ব্যবহৃত হলে তাকে ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্ব বলে। 
 
অনুকার শব্দ:  টুকরো-টাকরা, চাকর-বাকর, ঢিলেঢালা, অদল-বদল, আঁকাবাঁকা, বুদ্ধিশুদ্ধি, বোকাসোকা।
বাক্য: ক: তোর ভাই  "হাইফাই" ব্যাপার, তোর সঙ্গে কি চলতে পারি?
 খ: "অমৃত- ইসাব 'অদল-বদল, ' অদল বদল' অদল বদল এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল।"
গ: " আহা ওই "আঁকাবাঁকা" যে পথ যায় সুদূরে।"
ঘ:  তোমার আর কবে "বুদ্ধিশুদ্ধি" হবে?

   অর্থাৎ, অনুকার শব্দগুলি শব্দ দ্বিত্ব হিসেবে ব্যবহৃত হলে তাকে অনুকার শব্দদিত্ব বলে।
 
  তবে অনুকার শব্দ মানেই তা শব্দদ্বিত্ব  ।
 
   কয়েকটি  বিশেষ দিক:
 ১.একক ধ্বন্যাত্মক শব্দ  দুবার বা তার বেশি ব্যবহৃত হলে তা শব্দদ্বিত্ব। তবে যুগ্ম ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলিকে শব্দদ্বৈত বলা যায় কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ আছে। কয়েকজনের মন্তব্য দেখে নেওয়া যাক:
২:  মুহম্মদ শহীদুল্লাহ - "ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বৈত" কারণ এরা একইসঙ্গে দ্বৈতরূপে ব্যবহৃত হয়।
৩. পবিত্র সরকার - "যমজ ধ্বন্যাত্মক শব্দ", কিন্তু শব্দদ্বৈত নয়, কারণ এরা এককভাবে কোনো অর্থই বহন করে না। যেমন: হুড়মুড়। শুধু  হুড় বা মুড় বললে কোনো অর্থই আসে না।
 ৪. বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-  "ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি।" 

আমাদের প্রস্তাব: ১. একক  ধ্বন্যাত্মক শব্দ দুবার ব্যবহৃত হলে তা অবশ্যই শব্দদ্বিত্ব। যেমন: খুকখুক কাশি।
 শুধু খুক এরও অর্থ হয়। যেমন: খুক করে কাশছে।
২.   যুগ্ম ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলোকে শব্দদ্বিত্ব না বলে "একক অর্থের যমজ শব্দ" বলা হোক। যেমন: পইপই  করে বলছি। এখানে শুধু পই এর অর্থ নেই।
 ২: একই শব্দ দুবারের বেশি ব্যবহৃত হলে ব্যাপক অর্থে তাকেও যে শব্দদ্বিত্ব বলা হয়, তার উদাহরণ: হুহুহুহু করে ঝড় আসছে। 
"বলো বলো বলো সবে।" 
৩: একক ধ্বন্যাত্মক শব্দ যেমন দুবার বা তার বেশি প্রয়োগ করা যায়, তেমনি অনেক যুগ্ম  ধ্বন্যাত্মক শব্দ আবার একক হিসেবে প্রয়োগ করা যায় না। যেমন: খুকখুক, ঢকঢক : একক  ধ্বন্যাত্মক শব্দ দুবার  প্রয়োগ।
সা৺ সা৺ সা৺সা৺: একক ধ্বন্যাত্মক শব্দ দুবারের বেশি প্রয়োগ।

   কিন্তু, যুগ্ম ধ্বন্যাত্মক শব্দ  ঝিকিমিকি, ঝকমক : একক হিসেবে ঝক , মক, ঝিকি বা মিকি হিসেবে প্রয়োগ করা যায় না।
৪:  যুগ্ম অসমাপিকা ক্রিয়াগুলিকে ক্রিয়া বিশেষণ রূপেও প্রয়োগ করা যায়।
 যেমন: "ছুটে ছুটে" যায়।
৫:  যুগ্ম প্রথাগত অব্যয়, ( যাদের আমরা  অনুসর্গ বলছি)  অনুসর্গ হয়ে দুবার ব্যবহৃত হতে পারে।
 যেমন: "পাশে পাশে" হাঁটো। "দূরে দূরে" থেকো।
৬:  অনেক বিপরীত শব্দদ্বিত্ব একটিই অর্থ বহন করে।
যেমন: "ভালো- মন্দ" খাও।-  এখানে "মন্দ" অর্থটি নেই। শুধু "ভালো" অর্থটিই বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ ভালো খাওয়ার কথাই বলা হচ্ছে। একই ভাবে "অল্পবিস্তর" জানি। এখানে "বিস্তর " অর্থটি  অপ্রাসঙ্গিক। "অল্প" জানার কথাই বলা হচ্ছে।

মতামত জানাতে পারেন।
Mail id: ashim.bhunia1982@gmail.com
Whatsaap 7001888143
West Bengal, India
পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments