জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /ওয়াহিদা খাতুন

 
ওয়াহিদা খাতুন 

এলো বৈশাখী

তুফান তুলে বিকেলবেলা বলছে কালবৈশাখী,
এলো বৈশাখী!
ঝরাপাতায় নূপুর বাজে,
ঘূর্ণি হাওয়ায় ভরা সাঁঝে ;
দুলছে শাখাশাখি!
এলো বৈশাখী!!

কাঁখে নিয়ে ফলের ঝুড়ি,
বৃষ্টি মেখে গুড়িগুড়ি ;
নানা স্বাদের ফলগুলি,
দুহাত ভরে দেয় তুলি;
খাচ্ছে নেচে পাখি!
এলো বৈশাখী!!

দমকা হাওয়ায় বেলকোনিতে,
বিজলী আলোর ঝলকানিতে,
থমকে দিয়ে চারিদিক,
নাচছে কেমন ধিতাক ধিক;
দেখছি বসে একাকী! 
এলো বৈশাখী!!
তুফান তুলে বিকেলবেলা বলছে কালবৈশাখী!
এলো বৈশাখী!!


তুই যে আমার বসত বাড়ি

তুই যে আমার বসত বাড়ি মনের আঙিনায় ;
ও বন্ধুরে, বলনা তুই হারালি কোথায়;
ও বন্ধুরে,বলনা তুই গেলিরে কোথায় ;
ঝিকিমিকি তারার মাঝে তুই যে হলি চাঁদ,
নিধি ভুলে তোরে শুধু দেখি সারারাত,
দিন কাটেনা রাত কাটেনা তোরি ভাবনায়,
তুই যে আমার বসত বাড়ি মনের আঙিনায় ;
ও বন্ধুরে,বলনা তুই হারালি কোথায় !!

বুকের মাঝে তুফান তুলে দূর বিদেশে যাইয়া;
দিব্যি আছিস মনের সুখে আমারে ভুলিয়া;
পাগলিনী হইলাম আমি তোরি প্রেমে পড়ে,
এমনি করে চললে পরে যাইব কখন মরে,
পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হইলাম তোরি যাতনায়;
তুই যে আমার বসত বাড়ি মনের আঙিনায়;
ও বন্ধুরে,বলনা তুই হারালি কোথায়! 
ও বন্ধুরে,বলনা তুই গেলিরে কোথায় !!


ও বেদিনী নাই কীরে তোর ঘর

ও বেদিনী নেই কীরে তোর ঘর,
বেদিনী তুই নাকি যাযাবর, 
সাপ খেলাইয়া বহুদূরে;
বীণ বাজিয়ে যাসরে সুরে;
তোদের কেউ নেইযে আপন পর!
ও বেদিনী নেই কিরে তোর ঘর!!

নানাভাগে নানা পেশায় ঘুরিস বনেবনে,
শিঙা ফুঁকে ওষধ দিয়ে সারাস কতজনে,
কেউবা করিস মাছের পেশা বেচিস চুড়ি,মালা;
খুশি রাখিস নানা খেলায় পেটে নিয়ে জ্বালা;
বারো বছর হলে তোদের জোটে এসে বর!
ও বেদিনী নেই কিরে তোর ঘর!
বেদিনী তুই নাকি যাযাবর!! 


আমি এক ভাঙা তরী
   
আমি একটা ভাঙা তরী,
পাঁকের জলে ডুবে মরি,
পালটা আমার ছেঁড়াখোঁড়া;
দাঁড়টা হলো ভাঙাচোরা,
এখন আমি কিযে করি !
আমি একটা ভাঙা তরী !!

পারের ঘাটে আমায় নেয়না;
পয়সা দেয়না দু-চার আনা,
পাটাতন টা গেছে ভেঙে,
অথৈজলে ভরা গাঙে,
কেউতো আর যাবেনা চড়ি !
আমি একটা ভাঙা তরী !!

জীর্ণশীর্ণ আমার দেহ,
খবর নেয়না আর তো কেহ,
হালটা গেছে টুকরো হয়ে;
দিনেদিনে গেলো ক্ষয়ে,
থাকি সদা পাঁকে পড়ি !
আমি একটা ভাঙা তরী !!


শালুক ফুল

শালুক ফুল,শালুক ফুল তোরে আমি খোঁপাতে বাঁধাইব,
তোর মালা গলায় পইর‍্যা মনের সুখে নাচটি দেখাইব,
কুচলা কালো দিঘির জলে থাকিস রে তুই হেসে ;
উদাস বাউল মনটা আমার তোর রূপে যায় ভেসে;
আমি পাগল হইয়া তোরি মাঝে বসতি বানাইব!
শালুক ফুল শালুক ফুল তোরে আমি খোঁপাতে বাঁধাইব!!

তুই আমারে দিলি চমক পড়ে নাকো চোখের পলক,
উধাও হাওয়ায় ঘুরেফিরে দেখে যাই তোর রূপের ঝলক,
পাথার জলে হেলেদুলে কিযে শোভা সাদা ফুলে,
পরাণ মাঝি তোরি টানে গান গেয়ে যায় পালটি তুলে,
তোর ওই গন্ধ মাইখা প্রাণ ভ্রমরী নিশিতে জাগাইব!
শালুক ফুল,শালুক ফুল তোরে আমি খোঁপাতে বাঁধাইব!!


আমার কথা কেউতো শোনে না
       
আমার কথা কেউতো শোনেনা,
       দয়াল তুমি ছাড়া কেউতো বোঝেনা,
বিনাদোষে অপরাধী,
আশায় আশায় বুকটা বাঁধি,
তোমার প্রেমে হলাম দিওয়ানা !
দয়াল তুমি ছাড়া কেউতো বোঝেনা !!

দুখের নদে বাইলাম তরী,
আমি সারাজনম ধরি,
কবে পাবো সুখের দেখা,
ঘুচবে কবে বিধির লেখা,
তুমি সেটা আমায় বলোনা ।
দয়াল তুমি ছাড়া কেউতো বোঝেনা !!

যাদের নিলাম আপন করে;
 হৃদয় মাঝে রাখলাম ধরে;
তারাই আমার দিলো ব্যথা,
বলবো কারে সেসব কথা,
এ জ্বালা সইতে পারিনা। 
দয়াল তুমি ছাড়া কেউতো বোঝেনা !!

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments