জ্বলদর্চি

নববর্ষের সেকাল ও একাল/ মহুয়া ব্যানার্জী

নববর্ষের সেকাল ও একাল 

মহুয়া ব্যানার্জী 

আমরা বাঙালিরা সবে সবে নববর্ষ উৎসব পালন করে একটা আনকোরা নতুন বঙ্গাব্দে পা রাখলাম । ১৪২৭ পেরিয়ে এল ১৪২৮। সূচনা হল আরও একটা নতুন বঙ্গাব্দের ,শুরু হল নবরূপে নববর্ষের পথচলা। নববর্ষ মানেই পুরনো বছরের সকল দুঃখ, যন্ত্রনা, বিষাদ, গ্লানি, নৈরাশ্য এবং জীর্ণতাকে বিসর্জন দিয়ে সুখ -শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় নতুন জীবনের আশ্বাসকে বরণ করে ,নতুন ভাবে বাঁচার আশায় বুক বাঁধা। দীর্ঘ বারো মাসের পাওয়া না পাওয়াকে পেছনে ফেলে নতুন আশার আলো নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার আর এক নাম-ই হল পহেলা বৈশাখ । তাই পহেলা বৈশাখ বাঙালীর ১২মাসের ১৩ পার্বণের মধ্যে যে একটি অন্যতম উৎসব মুখর পার্বণ সে তো আর বলার অপেখ্যা রাখে না। দুর্গাপুজোর পরেই এই নববর্ষ বাঙালীর কাছে এমন একটি উৎসব যাকে ভোজন প্রিয় বাঙালী নানা রকম খাওয়া-দাওয়া,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,নতুন জামা-কাপড় কেনা ,মন্দিরে-দোকানে-বাড়িতে পুজো করা , শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়, বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, হালখাতা ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বরণ করে আসছে । তাই নববর্ষ- আদতে বাঙালী জাতির কাছে এক ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন ,প্রকৃতপক্ষে যার তাৎপর্য হল নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উদযাপন করে স্বাজাত্যবোধ ও বাঙালিয়ানাকে বজায় রাখা ও সেই সাথে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা শিল্প ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে বিশ্ব দরবারে তাদের মর্যাদা প্রদান করা।

  মানুষের জীবনে বছরের যে কয়েকটি দিন সকল প্রকার গ্লানিকে ভুলিয়ে মনের মনিকোঠায় নতুন আনন্দের শিহরণ জাগিয়ে তোলে, সেই দিনগুলির মধ্যে অন্যতম হল নববর্ষের সূচনাকাল। পৃথিবীর প্রতিটি জাতিসত্তার কাছেই সেই জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত নতুন বছরের সূচনাকে পরম পবিত্র বলেই গণ্য করা হয়। বাঙালিও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তাই পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনে সংস্কৃতিসমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন যা সুদীর্ঘকাল ধরে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তাই এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বাঙালির উন্মাদনাও থাকে বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। এই দিনটিতে বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই  থাকুক না কেন সে তার জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উদযাপনে মেতে ওঠে। বাঙালি পুরুষেরা সাধারনত ধুতি ও পাঞ্জাবী এবং মহিলারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িতে নিজেদের সাজিয়ে তোলে। এছাড়াও এই দিনটি সংস্কৃতিপ্রিয় বাঙালির কাছে তাদের নিজেদের সংস্কৃতি চর্চারও একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন ,কারণ এই নববর্ষের উৎসব কে ঘিরে বাঙালিরা পরম আনন্দের পরিবেশে নানারকম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে নতুন বছরকে তাদের নিজেদের মত করে আপন করে নেয়।

নববর্ষ মানেই পুরানো বঙ্গাব্দের শেষ হয়ে নতুন বঙ্গাব্দের সূচনা। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে বসন্ত ঋতুর অন্তিম মাস চৈত্রের অবসানে বৈশাখের আবাহন। সেই হিসাবে চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিন অর্থাৎ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিকে আমরা পহেলা বা পয়লা বৈশাখ বলে থাকি। উর্দু শব্দ "পহেলা"র আভিধানিক অর্থ "প্রথম" আর বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস হ'ল বৈশাখ তাই আমরা এই নববর্ষ উৎসব কে "পহেলা/পয়লা বৈশাখ" ও বলি। এই নববর্ষ ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে ১৪/১৫-ই এপ্রিল পালিত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ ও আসামের বরাক ভ্যালির বাঙালীরাও এই উৎসবটি পালন করে থাকে বলে এটা বাঙালী জাতির সার্বজনীন লোক উৎসব বলেও বিবেচিত হয়। তবে আসামে এই নববর্ষ উৎসব "বিহু" নামে পরিচিত। গ্রেগোরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে নববর্ষ পালন করা হয় ১৪ই এপ্রিল। নববর্ষ উৎসবকে ঘিরে ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ প্রতি বছর যে মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন করে আসছে বর্তমানে তা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে নববর্ষ পালনের এক অন্যতম আকর্ষণ। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার যে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালের ৩০শে নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন UNESCO-র দ্বারা "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য", Cultural Heritage of Humanity হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। তবে বাংলাদেশে বর্তমান পহেলা বৈশাখের জনপ্রিয় ধরণটি এসেছে মূলত এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন আয়ুব সরকারের আমলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নিপীড়ন ও রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চার বিরুদ্ধে নিষেধাক্কা জারি করা হলে ১৯৬৪ সালে বাঙালি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেন এবং এর পরবর্তীতে সংস্কৃতি চর্চার বিরোধিতার প্রতিবাদ স্বরূপ বাংলাদেশের ঢাকার সাংস্কৃতিক সংগঠন "ছায়ানট" ১৩৭২ বঙ্গাব্দের ( ইংরেজি ১৯৬৫ সাল ) ১৪ই এপ্রিল রমনার বটমূলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের " এসো হে বৈশাখ এসো এসো " গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম শহুরে বর্ষবরণের যাত্রা শুরু করে।  
  এবার আসি পুরাকালের নববর্ষের কথায়। অতিতে যে নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান হত তার সাথে বর্তমান যুগের শহুরে নববর্ষ উৎসব পালনের সামঞ্জস্য কিন্তু ঠিক সেইভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। এই যে আমরা বলছি নববর্ষ মানে পুরানো বঙ্গাব্দ শেষ হয়ে নতুন বঙ্গাব্দের সূচনা তাহলে আমাদের বাঙালির এই বর্ষপঞ্জি শুরু হল কবে থেকে? কেই বা তার প্রচলন করলেন? তবে এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদের একটু অতীত কে ফিরে দেখতে হবে। আসলে এই বঙ্গাব্দের সূচনা ও নববর্ষ উৎসবের প্রচলন নিয়ে বেশ কিছু দ্বিমত রয়েছে ইতিহাসবিদদের মতে । কিছু ইতিহাস গবেষক বলেন এই প্রথা মুঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে তার শাসনকাল থেকে শুরু হয়েছিল। আবার কিছু গবেষকের মতে বাংলা বর্ষপঞ্জি মুঘল আমলের বহু পূর্বে বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা শশাঙ্কের শাসনকালের সময় থেকেই রয়েছে কারণ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ২,১ টি গ্রামে শশাঙ্কের  আমলের বহু প্রাচীন টেরাকোটার শিব মন্দিরের দেওয়ালের গায়ে বঙ্গাব্দের উল্লেখ মিলেছে।  
 প্রাচীন কালের ইতিহাস ঘাটলে সাধারণত আমরা ৩টি বর্ষপঞ্জি সৃষ্টির যুগ দেখতে পায় ,যার প্রথমটি হ'ল বৈদিক যুগ যেটা প্রাচীন পৌরাণিক কাল থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত , দ্বিতীয় যুগ অর্থাৎ বেদান্ত জ্যোতিষ যুগ যা ১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আর তৃতীয় যুগ বা সিদ্ধান্ত জ্যোতিষ যুগ যেটা ৪০০খ্রিস্টাব্দ থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত। আর আমরা জানি আকবরের শাসনকাল হ'ল ১৪ই ফেব্রুয়ারী ১৫৫৬ থেকে ২৭শে অক্টোবর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত । সুতরাং এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এটা বলা যায় যে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষের আবিষ্কর্তা নন। শুধুমাত্র খাজনা আদায়ের সুবিধের জন্য তিনি তারিখ -ই -ইলাহি বাদ দিয়ে নক্ষত্র -এর নামানুসারে লিখিত বঙ্গাব্দের নতুন ভাবে উপস্থাপনা করেন। 

আসলে অতীতে বাংলা নববর্ষ ছিল প্রধানত কৃষিনির্ভর ও অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে জমিদারের পুন্যা বা খাজনা আদায়ের থেকে বর্তমানে দোকানের হালখাতা সব ক্ষেত্রেই কিন্তু অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ-ই হচ্ছে এই উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর মুঘলরা তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শশাঙ্কের বর্ষপঞ্জি অনুসরণ না করে মুসলিমদের হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই প্রজাদের কাছ থেকে জমির খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরী পঞ্জিকা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় হিজরী বছর ৩৫৪.৩৬ দিনে সম্পূর্ণ হয়। ফলে সৌরপঞ্জির সাথে এর ১১ দিনের পার্থ্যকের কারণে ঋতু ও কৃষি ফলনের সাথে এর কোন মিল থাকত না, ফলস্বরূপ কৃষকরা অসময়ে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকতেন। মুঘল সম্রাট আকবর প্রথম এই অসুবিধের কথা চিন্তা করে খাজনা আদায়ের সুবিধের জন্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে  দিয়ে  প্রাচীন বর্ষপঞ্জির সংস্কার করে নতুন ভাবে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ফতুল্লাহ শিরাজী মূলত সৌর সন ও আরবি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন। বাংলা সাল গণনা শুরু হয় ৯৯৩ হিজরী বা ইংরাজী ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-ই মার্চ থেকে। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের বছর ৯৬৩ হিজরী বা ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫-ই নভেম্বর থেকে। সে সময় ৯৬৩ চন্দ্র সনকে ৯৬৩ বাংলা সৌর সনে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলা বর্ষপঞ্জির নতুন যাত্রা সূচনা করা হয়। অর্থাৎ বলা যায় বাংলা বছর গণনা ১ থেকে শুরু হয়নি শুরু হয়েছিল ৯৬৩ থেকে আর সেই হিসাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বয়স এখন মাত্র ৪৬৫ বছর। প্রথমে এই সনের নাম ছিল "ফসলি সন "পরবর্তী কালে তা বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি লাভ করে।

 আমির ফতুল্লাহ শিরাজীর বাংলা সন প্রবর্তনের ভিত্তি ছিল হিন্দু সৌর পঞ্জিকা যে পঞ্জিকার নাম ছিল শক বর্ষপঞ্জি বা শকাব্দ, সে পঞ্জিকা অনুসারে বাংলার ১২ মাস আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস, কিন্তু ৯৬৩ হিজরিতে ফতুল্লাহ শিরাজীর বর্ষপঞ্জি সংস্করণের সময় চন্দ্র সনের প্রথম মাস মুহাররম ( MUHARRAM ) ছিল বাংলার  বৈশাখ মাসে, তাই তখন থেকেই বৈশাখকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসাবে গণনা করা শুরু হয়। 

ইতিহাস বলছে মুঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই বাংলায় নববর্ষ উৎসবের শুরু। তবে সে সময় এটি ছিল প্রধানত খাজনা আদায়ের উৎসব। নববর্ষ উপলক্ষে বাংলা বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ বৈশাখ মাসের ১তারিখে কিছু উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত যাকে রাজপুণ্যাহ বা রাজকর আদায়ের উৎসবও বলা যায়। তখন প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে ফেলে আসা বছরের বকেয়া খাজনা ,মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকতেন এবং জমিদারের কাছারি থেকে নতুন বছরের বন্দোবস্ত গ্রহণ করতেন।ভূস্বামী ও জমিদারেরা এই দিনটিতে প্রজাদের নিয়ে পুণ্যাহ করতেন। সেই আমলে রাজপুণ্যাহ আর নববর্ষ ছিল সমার্থক। তাই জমিদারগণ পরের দিন মানে ১লা বৈশাখ প্রজাদের মিষ্টি  মুখ করানোর সাথে সাথে গান -বাজনা , যাত্রা , মেলা প্রভৃতি বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকৃতপক্ষে তাদের অর্থশোক ভোলানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে East Bengal State Acquisition Act এর অধীনে জমিদারি প্রথার বিলোপ হলে সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় পয়লা বৈশাখের এই রাজপুণ্যাহ উৎসব শুধু রয়ে যায় খাওয়া দাওয়া আর উৎসবের অংশটুকু ,তবে সেই যুগের রাজ্পুণ্যাহ যে বর্তমানে হালখাতা হিসাবে আজও বাঙালির জীবনে অমলিন হয়েই রয়ে গেছে তাতো এখন বলাই বাহুল্য। বলা যেতে পারে পরবর্তী কালে সময়ের হাত ধরে পহেলা বৈশাখ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে মিশে আরও আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠেছে  এবং সেই সাথে বাংলা নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনে কল্যাণ ও নব জীবনের প্রতীক হয়ে বছরের একটি অন্যতম শুভদিন হিসেবেও পালিত হচ্ছে।  

আমাদের জাতীয় চেতনা অর্থাৎ বাঙালি সত্তার সাথে পহেলা বৈশাখের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি বছর নববর্ষ বাঙালির মনে ও মননে ছোঁয়া দিয়ে যায় বাঙালিয়ানার। নবর্ষের ছোঁয়ায় নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাঙালির নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রথা,আচার ও অনুষ্ঠান। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উজ্জাপিত হয় নববর্ষ। বাঙালির চিরায়িত ঐতিহ্য মজবুত করতে প্রতিবছরই ফিরে আসে পহেলা বৈশাখ ,তাই কালের নিয়মেই এই করোনা আবহের মধ্যেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুধু ব্যতিক্রম ঘটেছে মানুষের মানবিকতার ও সামাজিক দ্বায়িত্ববোধের।  ফলস্বরূপ ১৪২৭ এর নববর্ষের গৃহবন্দী চিত্র আজ আবার পুনরাবৃত্ত, ১৪২৮ এর নববর্ষেও মানুষ আবার সেই একইভাবে প্রাণহাতে গৃহবন্দী। হৃদয়ের শুস্কতা ,সমারোহে আমোদ-প্রমোদের আয়োজন, ভোগবিলাসের সংকীর্ণ উল্লাস আজ এই করোনা পরিস্থিতির জন্য যে অনেকাংশেই দায়ী তা কিন্তু কিছুটা হলপ করে বলাই যায়। তাই এই কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তিমান প্রেমময় এর কাছে এই মুহূর্তে আমাদের সকলের শুধু এই টুকুই বলার যে নববর্ষ ১৪২৮ যেন খুঁজে পায় মনুষ্যত্বের শক্তি ও আন্তরিক প্রসন্নতা। ১৪২৮  হয়ে উঠুক মানুষের কল্যাণী ইচ্ছার ,সুখ-শান্তি ও মঙ্গলের। নব সূর্যালোকের ঝর্ণাধারায় সূচিত হয়ে আমরা সকলে অনুভব করি আগামীর আনন্দ স্পর্শ ও শুভবার্তা।  

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments