তিনটি কবিতা
সঙ্গীতা সাহু
অন্য দুর্গা
নারী জাতি, তুমি অবজ্ঞা কাকে
বলে জান ? যখন তুমি
নিতি নিতি অবজ্ঞাকে কোলে
পিঠে মানুষ করে তুলবে,
ঠিক পরিণতি পাওয়ার পর
তোমাকে ভ্রষ্টা আখ্যা দেবে।
সমাজ নিয়ম কাকে বলে জান?
সমাজে বেড়ে ওঠার পর, যখন
নিজের স্বাধীন মন উন্মুক্ত হবে,
তখন রই রই করে তাড়া করবে
নিয়ামক অন্য এক জাতি!
উপহাস্য কাকে বলে জান?
ভেঙ্গে চুরে সম্মান দেবে, যাদের
মাথায় হাত রেখে বিশ্বাস দেবে,
তারাই দৃষ্টান্ত দিয়ে বলবে -
তুমি কলঙ্কিত নারী! ভালোবাসা
নারী জাতি পায় না, হিমাগ্নিকে
ধারণ করতে পারে শিব।
তোমার ভারত আর আমার
রাম পর্বে পর্বে গন্ধকের
মত পুড়বে, চার কাণ্ডে
সাত কাণ্ড না হলেও
রাম-ভারতে সুখ নেই।
হিসেবে তোমাদের সুখ, নারী তো
স্পর্শ খোঁজে, যেখানে ষড়রিপুর
দমনে সৃষ্ট হয়, নতুন রিপুর?
নারী জাতি আশ্রয় মাগে।
সীতা, দ্রৌপদী, অহল্যা
সবাই পবিত্র। তোমরাই কাল্পনিক!
লড়াই করার সাধনায় সবাই ব্রতী।
যেদিন ইতিহাস হতে তোমাদের
বঞ্চনার অবসাদের মুক্তি হবে,
সেদিন তাঁদের প্রণয়কোষ্ঠ,
তোমার ইতিহাসে ধরা দেবে।
চার কাণ্ড নাই বা হোল। একটা
জগতকে পাবে, যেখানের
অনন্য হৃদকমলে তুমিও
বাধ্য হবে। হয়তো, সেদিনই
সাত খুন মাপ হবে?
পুষ্পদল
তুমি কোমলদলে আচ্ছাদিত
সুরভিত, সুকোমলিত
ঈশ্বরের এক অপূর্ব বিচিত্র সৃষ্টি।
তুমি রঙিন পাত্রে সুশোভিত
আমার কাছে এক নবসৃষ্টি।
কি জন্য প্রেরিত হয়েছিলে তুমি,
এই নশ্বর জগতে?
প্রতিদিন দিবাবসানে শুষ্কপ্রায় হয়ে কি
ভুঁয়ে পড়ার নিমিত্তে।
কিন্তু তুমিই তো সদ্য ভূমিষ্ঠের
প্রথম অচেনা দৃষ্টি।
প্রাণস্বরূপা নবকোমল নবযোজনার
প্রথম নির্মল বৃষ্টি।
তুমি দেবতার আরাধনার সামগ্রী,
তুমিই তো সম্পর্ক সৃষ্টির নব মাধ্যম।
তুমি বৈকুণ্ঠের যাত্রীযোজনার অলংকার
কখনও বা অলংকার নবোঢ়ার,
বিশ্বময় সকল জনমনে প্রশ্নাতীত কৃষ্টি।
উইপোকা
অশান্ত সমুদ্র পারাবারে
জীবিত শামুক খোলস ছাড়ে,
নতুন জীবন অসার হলে
মনুষ্যলোকেও কড়া নাড়ে।
সংসার সীমান্তে কুঁড়ির পরশে
যখন হিম লাগে, স্পর্শে লেগে
থাকা ছোটো ছোটো জীবাণুর কণা,
তখন অসীম আনন্দে হাই তোলে।
তীব্র সূর্যের আলো আরো তীব্র হলে,
মনুষ্য হৃদয়ে জাড় নামে ।
এক সময় ঠোকাঠুকি লাগতে লাগতে
কখনও পথ ভুলে চলে আসি।
নিবিড় অরণ্য তীব্র নীরবতায়
অন্ধকারের মধ্যে, নিটোল শান্তি নামায়।
মনে হয়, গোরস্থানে গরুর
আব্রুগুলো হিসেব কষছে।
ঠিক তারই অদূরে উইয়ের ঢিবিতে,
বৃষ্টির জলে উইপোকারা -
ডানা খসাতে ব্যস্ত ।
আমি তখন ক্লান্ত, মগ্ন হয়ে ড্রামা পড়ছি।
ড্রামাতে নীরবতার সন্ধানে উপুড় মন
বারে বারে কাদাখোঁচা পাখির মতো
খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে? বাধ্য - বাধকতার মধ্যে
না গিয়ে, আবার পড়ায় মন দিই।
যখন বাইবেলের শেষ লাইনে, জ্ঞান
খুঁজছি ! অদূরের সেই উই-এর ঢিবি
থেকে ডানা ছাঁটা শরীর এনে -
পোকাটি হেসে বলে - 'নীরবতা
আজ বাঁধন হারা, ভাঙ্গন ধরিয়ে
প্রশস্ত হোক ন'-এর ব-দ্বীপ।'
জীবন সভ্যতার নীলনদ, আজ তার
দুয়ার মন্ত্র সকল জনের জন্য অবারিত।
উচ্চারিত হোক মুক্তির স্তবগান, হোক
উচ্চারণ নোনা জলের জয়গান।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments